somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিয়েল লাভ। (গল্প)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'দোস্ত তুই আমার জন্য কিসু একটা কর।'শাহিনের স্বরে যথেষ্ট কাকুতি ঝরে পড়ে।
ফরহাদ, যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলা, কাকুতিটা উপেক্ষা করে দাঁত বের করে হাসতে থাকে। 'এইটা তোর কত নম্বর হইল?'
'ফাইজলামী বাদ দে। এইবার আমি সিরিয়াস। সত্যি সত্যি-ই সিরিয়াস।' শহিনের গলাটা কিছুটা দুখী দুখী শোনায়।
ফরহাদ একটু থমকায়। তবুও হাসির রেশ টানতে টানতে বলে 'মামা, তোমারে দেখতে মজাই লাগতাসে। সারাজীবন প্রেম ভালোবাসা নিয়া ফাইজলামী করসো, বড় বড় ডায়লগ দিসো, এখন কইতাছ রিয়েল লাভ (real love)। ফিলিংস টা কেমন মামা? চিন চিন ব্যথা করে বুকে?' বলতে বলতে শাহিনের বুকে হাত রাখে ফরহাদ।
শাহিন চুপ। মাথাটা একটু নিচু করে বসে থাকে।

কথা হচ্ছিল ফরহাদের বাসায়, ফরহাদের রুম এ বসে। ফরহাদ -শাহিন একই ভার্সিটিতে পড়ে, সাবজেক্ট আলাদা। দুজনের স্কুল, কলেজ ও এক, থাকেও একই পাড়ায়। দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড না হলেও কাছের ফ্রেন্ড।

বুক থেকে হাত সরিয়ে একটা চেয়ার টেনে শাহিনের মুখোমুখি বসে ফরহাদ। 'ঠিক আছে মামা এবার বলো আমি ঠিক কিভাবে তোমাকে হেল্প করতে পারি। মিথির লগে আমার পরিচয় আছে, একটু কথা বার্তাও হয়।'

'পরিচয় তো আমার সাথেও আছে, যদিও কথা বার্তা তেমন হয় নাই। কিন্তু কিভাবে যে ওকে আমার অনুভূতি জানাব, তাইতো বুজতেছি না।'
'মামা তুমি আবার হাসাইলা। তোমার এত দিনের অভিজ্ঞতা...'
'দিস কেস ইজ টোটলি ডিফরেন্ট' রাগ আর উত্তেজনা একত্রে প্রকাশ পায় শাহিনের কন্ঠে।
'রিলাক্স মামা রিলাক্স, ইংলিশ ফুটানোর দরকার নাই। আসো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করি'
... ... ...
দুই ব্ন্ধুর আলোচনা চলতেই থাকে।
... ... ...
দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা।
... ... ...
'ঠিক আছে মামা, এখন তুমি বাসায় যাও। আগে আমি মিথির সাথে তোমার ব্যাপারটা আলাপ করি। ওর মনোভাবটা বুঝি। আমি গ্রিন সিগনাল দিলে তুমি আগাইও।'
'যা করার তারাতারি কর। আর সিগনাল যেনো গ্রিন-ই হয়, রেড না হয়।'
'টেনশন নিও না মামা,টেনশন নিও না। আগামী সপ্তাহে পহেলা বৈশাখ এর আগেই রেজাল্ট পাইয়া যাবা।'
'ও.কে. দেন বা-ই-ই।'
'বা-ই-ই।
আজ পহেলা বৈশাখ। ভার্সিটিতে উৎসবের আমেজ। সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু নিলয় কে নিয়ে শাহিন ক্যাফেতে বসে আছে।
চায়ের সাথে সিগারেটের ধোয়াঁ গিলতে গিলতে নিলয় বলে 'ফরহাদ তোকে কখন জানাবে?'
'ক্যম্পাসে আসুক আগে।' নিজের অস্থিরতা লুকিয়ে জবাব শাহিনের। চোখ ক্যাফের দরজা দিয়ে রাস্তায়। একটার পর একটা রিকশা ঢুকছে ক্যাম্পাসে। সে কি আসে? সে?.... নিদেনপক্ষে ফরহাদ।
পাশের খালি চেয়ার ২টায় চাঁপা আর রুমালী এসে বসে। হাতে একগাদা টিকেট ফ্লিম ফেস্টিভ্যালের। ' শাহিন,নিলয় তোরা দুইটা টিকেট নে।' রুমালী বলে।'দে দুইটা।' নিলয় টিকেট নিয়ে টাকা দেয়।
'শাহিন,তুই নে দুইটা।' চাঁপা বলে শাহিনের চোখের দৃষ্টি অনুসরণের চেষ্টা করে।
' আমার কাছে টাকা নাই।'
' টাকা লাগবে না। তোরে দুইটা সৌজন্য টিকেট দেই। নে রাখ।'
'রাখ, রাখ। কাজে লাগবে।' নিলয়ের ইঙ্গিতময় গলা।
শাহিন কোনো কথা বলে না। চাঁপা ২ টা টিকেট টেবিলে চায়ের কাপে চাপা দিয়ে উঠে যায়। রুমালীও ওর পিছন পিছন যেতে যেতে বলে ' একটু নিউমার্কেট যাবো, তোরা কেউ যাবি?'
' সাড়ে বারোটার পরে গেলে আমাকে নিয়ে যাস, আমি ক্যাফেতেই আছি।' নিলয় বলে।
সময় গড়ায়। গমগমে জনতার ভিড়ে নির্জন দুই বন্ধু নিশ্চুপ। চায়ের বিল বাড়ে, কমে গোল্ডলিফের প্যাকেটের স্বাস্থ্য।অপেক্ষা অসহ্য বোধ হয়।
'বারোটা টা বেজে গেল, আর কত?'
'তুই বস, আমি একটু ডিপার্টমেন্ট আর শহীদ মিনারে ঢূঁ মেরে আসি।' শাহিন উঠে দাঁড়ায়।
'টিকেট দুইটা পকেটে রাখ,মিথিকে নিয়ে ফিল্ম দেখতে যাস।'
বুকপকেটে টিকিট রাখতে রাখতে শাহিন বলে 'চায়ের বিল দিস না,আমি এসে দেব।'
'আচ্ছা,যাহ।'
ক্যাফে থেকে বেরিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যায় শাহীন। আর্কির ছেলে-মেয়েরা আলপনা আঁকছে ওখানে। শহর থেকে বাচ্চা সহ মা-বাবা, আর্ট কলেজ, মেডিকেল আর অন্য কলেজের ছেলে মেয়েরাও আজকে ঘুরতে এসেছে এখানে। চাঁপা কে দেখা যাচ্ছে টিকিট বিক্রির চেস্টা করছে। পরিচিতদের সাথে যত সম্ভব কম শব্দে, হাতের ইশারা, দেঁতো হাসি আর চোখের ভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শহীদ মিনার পেরিয়ে যায়। ছাত্রী হলের দিকে একবার যাবে নাকি? কল দেবে মিথি কে? কিভাবে কল দেয় কে জানে? রুম নাম্বার ও জানা নাই। আচ্ছা চাঁপা বা রুমালী কে বলবে, বললে ওরা করবে। উল্টা ঘোরে শাহীন, দু কদম এগোয় , থামে ২ সেকেন্ড, আবার উল্টা ঘোরে। নাহ, তপনদার দোকানেই যাই।
তপদার আড্ডার বুড়ি ছুঁয়ে একাডেমিক বিল্ডিংয়ের চার চার টা তলাই এক পাক ঘোরে শাহিন। ফরহাদের দুই ক্লাশমেট কে জিগ্গেস করে। ফলাফল শুন্য।
এবার? কই যাবে শাহিন? হলের দিকে না রেজিস্টার বিল্ডিংএর সামনের মাঠে, ফরহাদের বাসায় না ক্যাফেতে।অস্থির,অস্থির,অস্থিরতা।
তিন রাস্তার মুখে এসে উপরে মুখ তোলে শাহিন। বৈশাখের নির্দয় নীল আকাশ। আস্তে আস্তে দৃষ্টি নিচের দিকে নামায়। বাস ডিপোর মুখে বিশাল গোবিন্দচুঁড়া হলুদ ফুল ফুটিয়েছে, কোলের কাছে বেগুনী ফুলের জারুল একটা। জারুলের ছাতার নিচে কৃষ্নচুঁড়া !!! নাহ,কৃষ্নচুঁড়া না। কৃষ্নচুঁড়া শাড়ি পড়া চৌদিক আলো করা ও কে? মিথি নয় কি! মিথি-ই তো। সাথে ওটা কে? ফরহাদ। পান্জাবী গায়েঁ ফরহাদের এক হাতে মিথির হাত ধরা কেন? যাদেরকে এতক্ষণ খুঁজসিলো তাদের কে একসাথে খুঁজে পেয়ে এমন লাগসে কেন? মাথায় ঘুরছে...

"দেখেছিলাম আলোর নিচে অপূ্র্ব সে আলো
স্বীকার করি দুজনকেই মানিয়ে ছিলো ভালো
জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার পুঁড়িয়ে দিলো চোখ
বাসায় এসে বলেছিলাম ওদের ভালো হোক।।"

ফরহাদ -মিথি শাহিনের দিকেই আসে। ফরহাদ এর মুখে হাসি, তিৃপ্তির না অপরাধের? 'মামা, তোমাকে পরিচয় করাই দেই। এ হচ্চে মিথি। আর মিথি, এ হচ্চে শাহিন। দোস্ত আমার।'
'স্লামালিকুম ভাইয়া।' মিথির রিনরিনে কন্ঠ। শাহিন উত্তর দেয় না। ফরহাদের উদ্দেশ্যে অস্ফুট স্বরে বলে 'তোকে আমি অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছি।'
' আরে মামা বুঝনা আজকে একটা বিশেষ দিন। সকাল থেকেই মিথির সাথে আছি।' স্বর নিচু করে বলে ' আফটার অল, ও আমার স্পেশাল ওয়ান।' ছোট করে একটু চোখ টিপ দিল ফরহাদ।
বুকের কাছে খচ খচ করে উঠল কী? ফিল্মের টিকেট। বুক পকেটে হাত ঢুকায় শাহিন, তুলে আনে দুটি কাগজ নাকি টুকরা হৃদয়। ফরহাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে।' কংগ্রাচুলেশন। তোদের জন্য ২টা সিনেমার টিকেট, আজকের বিকেলের শো।'

একবার ও মিথির দিকে না তাকিয়ে, ফরহাদের হতবিহ্বল দৃষ্টি বাঁচিয়ে ক্যাফের দিকে এগুতে থাকে শাহিন। কেউ কি তার অপেক্ষায় আছে ক্যাফেতে!
............................................................................................
সমালোচনা কাম্য। সামনে এগুতে সাহায্য করবে।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×