somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৈত্র সংক্রান্তি....

১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চৈত্র সংক্রান্তির সাথে আমার ছেলেবেলাটি এক অসম্ভব সুখের অনুভূতিতে জড়াজড়ি করে আছে। শৈশবের সুখস্মৃতির ভেতর গোটা চৈত্র মাসের প্রচন্ডতা একটি বিশাল ব্যাপার। ফাগুন মাসের কোমল মনোরমতা গলে প্রকৃতি কেবল তার দাবদাহের প্রচন্ডতা জানান দিচ্ছে। আমাদের ডে স্কুলের পরিবর্তে মর্নিং স্কুল শুরু হয়েছে। আনন্দের কোন সীমা নেই। দুপুর বারোটার ভেতর স্কুল ছুটি তারপর এক ছুটে সাথীদের নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ। যতক্ষণ পারো ডুব সাঁতার। খাওয়া দাওয়া ভুলে পরে মার কাছে মার খাওয়া।
ঘটনাটি ঘটে ঠিক এই সময়। প্রতি বছর। ভর দুপুর। চারদিক খাঁ খাঁ করছে। মানুষ একটু শীতলতার খোঁজে হাহাকার করছে। এই সময় ওরা হাজির। ছোটখাটো একটি গানের দলের মত, মানুষের বাড়ীর আঙিনায় নেচে নেচে গান করে। সে এক রহস্য ঘেরা অনুভব। দলের মানুষগুলোকে আমার মনে হয় ভিন্ন কোন গ্রহের। ওদের পোষাক, সাজ, চুল এসব ঠিক পৃথিবির মানুষদের মত নয়। আমি ভেবে পাইনা ওরা কোত্থেকে কিভাবে এত তাড়াতাড়ি আমাদের পৃথিবিতে হাজির হতে পারলো। পরনে বিচিত্র রঙের শাড়ি, মুখের রঙ, শরীরের কাঠামো বিচিত্র টাইপের, হাতে একটি করে রঙিন রুমাল, সেই রুমাল সামনের দিকে নেড়ে নেড়ে ওরা নেচে নেচে গান করে আমার শিশুমনে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। ওরা অষ্টক দল। গান শেষে গৃহস্হ খুশি মনে বাড়িয়ে দেন টাকা, চাল আরও কত কি?
আমি মোহাবিষ্টের মত ওদের ফলো করি। আমার মনে হয়, জগৎ সংসার মিথ্যে, আমি শুধু ওদের সাথে থাকতে চাই। কিন্তু বিধাতা উপরে বসে থাকেন মানুষের জীবনের সুখ কেড়ে নিতে, মানুষের সুখ তিনি বেশিক্ষণ সইতে পারেন না। আমার খোঁজ পড়ে,আমাকে ঘাড়ে করে বাড়িতে হাজির করা হয়, সেখানে মা লাঠি নিয়ে অপেক্ষা করেন। বিধাতা তোমার দুনিয়ায় এত নিষ্ঠুরতা? অষ্টক না দেখতে পারলে বেঁচে থেকে কি লাভ?

চৈত্র মাসের শেষেরদিনটি ছিলো ভারি চমৎকার। বিশাল মাঠটি ঝাড় মোছা করা হতো। ঠাকুরদের বাড়ীর মেয়েরা সকাল থেকে ব্যস্ত নানা পুজো পার্বনে। স্হানীয় যুবকদের ঘুমনোর অবসর থাকতোনা। নানান দোকান স্টল, নাগর দোলা প্রস্তুতিতে তাদের নাওয়া খাওয়া থাকতোনা। সব চাইতে লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটতো যখন ঠাকুরদের পুকুর থেকে চড়ক গাছটি তোলা হতো। চড়ক গাছটি ছিলো স্বাভাবিক গাছের চাইতে লম্বা। সারা বছর চড়ক গাছটি ঠাকুরদের পুকুরে বাস করে, গাছটি সাক্ষাত দেবতা। প্রান আছে। বহু পূণ্যবান বয়োজেষ্ঠ্যরা গাছটিকে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠতে দেখেছেন! আমরা শিশুরা, নাওয়া খাওয়া ভুলে শ্বাস বন্ধ করে সকাল থেকে পুকুরের পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম। শুধু কি শিশুরা? বুড়ো গুড়ো সব এসে ভীড় করতো। বয়ষ্করা ছোটদের ধমক দিয়ে দুরে থাকতে বলতেন। চড়ক গাছের রোষের মুখে পড়লে নাকি আর রক্ষা থাকবেনা। প্রতি বছর যে একটা দুইটা বাচ্চা এই পুকুরে ডোবে সেটা কিসের কারনে? চড়ক গাছ পা ধরে টেনে পাতালে নিয়ে যায়। কি রহস্য কি রহস্য! জীবন্ত রহস্যের ভেতর দাড়িয়ে থেকে দেখতাম সেই জীবন্ত চড়ক দেবতাকে তোলা হচ্ছে। বুড়ো ঠাকুর মন্ত্র পড়তেন, গংগা জল ছিঁটোতেন, সুবর্ন কংকন পরা ফর্সা রমনীরা ঊলুধনী দিতেন, আমার দিকে তারা ফিরেও তাকাতেন না। আর ফিরে তাকানোর সময় থাকতোনা অতি উৎসাহি এক বুড়ো যুবকের দলের। ওরা চড়ক গাছটি মাটিতে পুঁতবে, দড়ি বাঁধবে, আরও কত কি। কত কি।
তার জমবে খেলা। উৎসব। উৎসব।
অনেক দিন নাকি অল্প দিন। আজও সেই দিনগুলি হাতছানি দেয়। সেখানে ঘুরছে চড়ক গাছ। বাঁজছে বাঁশি। জিলিপি পাপড়ের সুগন্ধে মৌ মৌ করছে আঙিনা। রঙিন বরফকুচির মেশিন শব্দ তোলে ভুলে যাওয়া সংগীতের মত। রঙিন কাপড়ে সদ্য কেনা পুতুলটিকে জড়িয়ে, দেখে দেখে যেন সাধ মেটেনা সেই শিশুটির...। সেই শিশুটি...।
সবাইকে চৈত্র সংক্রান্তি এবং বৈশাখি শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×