বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা যেন ঠিক একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। টানা তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৬ বছরের মাথায় এসে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় অসিদের। সে ক্ষত শুকাতে না শুকাতে নেতৃত্ব থেকে পন্টিং এর বিদায়। নতুন কান্ডারী মাইকেল ক্লার্কের নেতৃত্বে অসিদের সম্ভ্রম পুনরুদ্ধারের মিশন। অপরদিকে বাংলাদেশের অবস্থা যেন আরো নাজুক। প্রথমবারের মত নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজনের যে সুযোগ পেয়েছিল সে সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেনি মোটেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি ম্যাচই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ঠেলে দিয়েছে অনেক পেছনে। আকাশচুম্বি প্রত্যাশার মৃত্যু ঘটিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন একধরনের মৃত্যুপুরী। আর সে মৃত্যুপুরী থেকে উঠে আসার রাসত্মা যেন খুঁজছে সাকিবরা এই সিরিজ থেকে। তবে পন্টিং এর মত অতটা হতভাগা নন সাকিব। টাইগারদের নেতৃত্বের ভার এখনো বিশ্বের এক নাম্বার অল রাউন্ডারের কাঁধে।
বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতিকে পেছনে ফেলে এসে আবার মাঠে নামছে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়া। দুদলেরই সামনে একটাই পথ। বিশ্বকাপের ক্ষত মুছে নতুন করে শুরু করা। তবে পথটা বাংলাদেশের জন্যই বেশি বন্ধুর। কারণ বিশ্বকাপের ব্যর্থতা এবং পদ হারানোর যন্ত্রণায় পুড়তে থাকা পন্টিং যে ক্ষোভের বড় অংশটা ঝারবেন টাইগারদের উপর। আর নতুন দায়িত্ব পাওয়া ক্লার্কের জন্যও যে এই মিশনটা যে ব্যর্থতার চোরা গলি পেরিয়ে আলোতে আসার। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে তার একটা নমুনাতো দেখিয়েছে অসিরা।
বিশ্বকাপের পরে এই দুই দল প্রথম মাঠে নামছে। তবে এই সিরিজটা অস্ট্রেলিয়ার জন্য একধরনের ওয়ার্ম আপ সিরিজ। আগামী আগষ্টে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ ছাড়া আর কোন সিরিজ নেই অস্ট্রেলিয়ার। তাইতো উপমহাদেশে দীর্ঘ সময় পরে মাঠে নামার জন্য একটা প্রসত্মুতিমূলক সিরিজ যেন খেলতে এসেছে ক্লার্কের দল। আর সে সিরিজে টাইগারদের পরীক্ষাটাও নিতে চান প্রথমবারের মত পূর্ণাঙ্গ অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া মাইকেল ক্লার্ক। আর বাংলাদেশের জন্যতো নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই এই সিরিজ। যেখান থেকে বিশ্বকাপের হারানো আত্মবিশ্বাসকে খুঁজে নিতে হবে সাকিবের দলকে।
অস্ট্রেলিয়া দলে অধিনায়কের পদে বদল হলেও দলের সব রসদ কিন্তু মওজুদ। পুরো দল নিয়েই টাইগারদের বিপক্ষে লড়তে এসেছে ক্লার্কের দল। অপরদিকে বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দলে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। দলের সাবেক অধিনায়ক দেশ সেরা পেসার মাশরাফিকে দলে নেওয়া হলেও তার খেলার ব্যাপারে রয়ে গেছে সংশয়। এছাড়া আশরাফুল আর জুনায়েদ সিদ্দিকীকে বাদ দিয়ে দলে ফেরানো হয়েছে অলক কাপালী এবং তরুণ শুভাগত হোমকে। দলে নেই নাঈম ইসলামের মত অল রাউন্ডার। এত পরিবর্তনের সাথে বাংলাদেশ দল পাচ্ছেনা দলের বোলিং কোচ ইয়ান পন্টকে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি ফিরে গেছেন দেশে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া যতটা না গুছানো এক দল বাংলাদেশ ততটাই ছন্নছাড়া । তারপরও নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশ যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য সমীহ জাগানো এক দল। এই একটা জায়গা ছাড়া আজকের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার আগে আর কোন প্রেরণা নেই স্বাগতিকদের সামনে। সেই কবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ তাতো মনেই নেই। আর বিশ্বকাপ? এই সিরিজে খেলতে নামার আগে বিশ্বকাপের কথাটা বোধহয় মনে না করলেই ভাল হবে বাংলাদেশের জন্য। কারণ ৫৮ আর ৭৮ এর দুঃসহ স্মৃতি মনে করা মানেতো আবারো ব্যর্থতার চোলা গলিতে পা বাড়ানো। দুঃসহ সেই স্মৃতি ভুলে আজ বাংলাদেশকে নতুন করেই শুরু করতে হবে সবকিছু। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের ভাবনায়ও তাই। সে কথাটাই বললেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপ এখন আমাদের কাছে অতীত। পচা অতীত ঘেঁটে কোন লাভ নেই। দৃষ্টি দিতে চাই এখন কেবল সামনে। তবে সে সামনের দৃষ্টিটা একেবারে পরিষ্কার নয় তা জানেন সাকিব। তারপরও লক্ষ্য কেবল সামনে এখন। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলে সামনের দৃষ্টিটা খানিকটা ধূসর হয়ে যাচ্ছে সাকিবের। আবার ব্যাপারটা এমন নয় যে অস্ট্রেলিয়া একেবারে অজেয়। বরং চাপটা এখন অস্ট্রেলিয়ার উপরই বেশি। বিশ্বকাপের যে ব্যর্থতা একবারে কুরে কুরে খাচ্ছে ক্লার্কের দলকে সেটাকে কাজে লাগাতে পারলেই আবারো নতুন সূর্য উঁকি দেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।
অপরদিকে ১৬ বছর পর বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ার যন্ত্রণাটা যে এখনো ভুলতে পারছেনা অস্ট্রেলিয়া তাতো দিবালোকের মত পরিষ্কার। আর তাই ক্ষোভটা যে পুরোটাই ঝারবে বাংলাদেশের উপর দিয়ে তা একরকম জানিয়েই দিয়েছে মাইকেল ক্লার্ক। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের ঘোর এখনো কাটেনি অসিদের। আর সে ঘোরের মাঝে থাকতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বাংলাদেশের কন্ডিশন নিয়েও তাই খুব একটা চিনিত্মত নন ক্লার্ক। এই উপমহাদেশের দুই দেশ ভারত এবং শ্রীলংকার মাটিতেইতো দেড় মাসের মত কাটিয়ে দিয়েছে অসিরা। কাজেই কন্ডিশনের চাইতে তারা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ভাবছে বেশি।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচটা যখন খেলতে নামবে বাংলাদেশ তখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে একমাত্র জয়ই কেবল প্রেরণা। তবে সে প্রেরণার চাইতে বাংলাদেশের সামনে এখন কঠিন পথ। পরিসংখ্যা দিক থেকে একেবারে আকাশ পাতাল ফারাক দু দলের মধ্যে। ১৬ মোকাবেলায় বাংলাদেশের একমাত্র জয়ের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ১৫ টি। তবে আজকের ম্যাচে মাঠে নামার আগে যথারীতি একটা জায়গায় এগিয়ে স্বাগতিকরা। তা হলো সেই স্পিন আক্রমণ। রাজ্জাক, সাকিব, রিয়াদদের তুলনায় অসিদের স্পিন আক্রমণ অনেকটাই বিবর্ণ। সে একটা জায়গা বাদ দিলে আর সব জায়গায় পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে এরকম অনেক পিছিয়ে থাকা অবস্থা থেকেই তো ফিরে এসেছে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে। আজ সে রকম আরো একবার না হয় মাথা উঁচু করেই ফিরে আসুকনা সাকিবরা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




