স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বিতীয়বারের মত উদ্যোগও ব্যর্থ হলো। আরব আমিরাতে তিন যুবককে হত্যাকারি আসামিদের ক্ষমা করল না নিহতের পরিবার। দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা আজ শনিবার উপজেলা নির্বাহী কর্তাকর্তাকে এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বললেন, আজ শনিবার আবারো তাদেরকে বুঝানো হবে। এর পরও যদি তারা সমঝোতায় না আসেন তাহলে আগামীকাল রোববার জেলা প্রশাসককে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হবে।
জানা যায়, ইতোমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমঝোতার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর গত বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নিহতের দুই পরিবার, অভিযুক্ত দুই পরিবার, ফটিকছড়ি উপজেলার চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তিন ইউপি চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে সমঝোতার বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নিহত দুই পরিবারকে বুঝিয়ে সমঝোতার দায়িত্ব দেয়া হয়। অবশেষে স্থানীয় প্রতিনিধিদের উদ্যোগও ব্যর্থ হয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত দুই পরিবারকে নানাভাবে বুঝানো হয়েছে। তারা কোনো মতেই রাজি হচ্ছে না। প্রতিনিধিদের নিহত জামালের মা বলছেন- ‘আমি তাদেরকে ক্ষমা করব না। আমার ছেলেকে যেভাবে টুকরো টুকরো করা হয়েছে তাদেরকেও সেভাবে টুকরো টুকরো করতে হবে।’ অন্যদিকে নিহত আইয়ুব-তৈয়বের মা ও বোনদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা ইতোমধ্যে নগরীর মনসুরাবাদের যে বাসায় থাকতো গত বৃহস্পতিবার সেই বাসায় গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। আবার গ্রামের বাড়িতে ও তাদের খোঁজে পাওয়া যায় নি।
নিহত জামালের ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ওসমান গণি বাবু আজাদীকে বলেন, আমরা কয়েক দফা জামালের মায়ের কাছে গিয়েছি, তাকে অনেক করে বুঝিয়েছি। কিন্তু তিনি কোনো কিছু বুঝতে রাজি হচ্ছে না। তার এক কথা ‘আমার ছেলেকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাকেও সেভাবে হত্যা করতে হবে।’ জামালের মা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতার হত্যাকারিদের যদি এত বছর পর বিচার হয়, তাহলে আমার ছেলের হত্যাকারিদের বিচার হবে না কেন।’
সুন্দরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আজম আজাদীকে বলেন, আমরা গত বৃহস্পতিবার আইয়ুব-তৈয়বের মা বোনের শহরের বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে তাদের পাওয়া যায়নি। আবার গত বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে আসলাম সেখানেও তাদের খোঁজ মিলেনি। এ ব্যাপারে আমাদের আর করার কিছু নেই। আজ শনিবার আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে জানিয়ে দেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জনা খান মজলিস আজাদীকে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়ার পর তারা অনেক চেষ্টা করেছেন। তাদেরকে অনেক করে বুঝানো হয়েছে। আজ শনিবারও তাদেরকে আবারো বুঝানোর চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো তাদেরকে সাধ্য মতে বুঝানো, এতে যদি তারা রাজি না হয় তাহলে আমাদের তো আর কিছু করার থাকে না। আজকের উদ্যোগটাও যদি ব্যর্থ হয় আমরা আগামীকাল রোববার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবরে জানিয়ে দেব।
প্রসঙ্গত, আরব আমিরাতে তিন বাংলাদেশী যুবককে হত্যার দায়ে অপর দুই বাংলাদেশীর শির্নেদের আদেশ হয় ওই দেশের আদালতে । নিহত তিন বাঙালি যুবক হলো- ফটিকছড়ি উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ছোট ছিলোনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আইয়ুব (২৮) ও মোহাম্মদ তৈয়ব (২৫)। এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। নগরীর আগ্রাবাদের দায়রা পাড়ার মোহাম্মদ হারুনুর রশিদকে। ২০১১ সালের ২ মে আরব আমিরাতের রাস আল খাইমায় হারুনুর রশিদ এই দুই সহোদরকে ঘুমন্ত অবস্থায় জবাই করে হত্যা করে।
অন্যদিকে একই উপজেলার রোসাংগীরি ইউনিয়নের আজিম নগর গ্রামের জামাল উদ্দিনকে (প্রকাশ ইউনুছ) ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে নানুপুর ইউনিয়নের মাইজভাণ্ডার গ্রামের শাহাব উদ্দিন। আরব আমিরাতের আইনে তাকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। অভিযুক্ত দুই আসামিকে আরব আমিরাত পুলিশ গ্রেফতার করে।
আগামী ৩০শে জানুয়ারী দন্ডাদেশ প্রাপ্ত দুই আসামীর শিরচ্ছেদ করার দিন ধার্য করা আছে। আজকের চেষ্টা ব্যর্থ হলেই তাদের নিশ্চিত শিরচ্ছেদ।
সূত্র: এখানে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




