somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জসীমউদদীন কী কেবল-ই পল্লিকবি ?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আবদুল্লাহ আল আমিন

বাংলা সাহিত্যে জসীমউদদীনের আবির্ভাব বিশ শতকের তৃতীয় দশকের কল্লোল যুগে। তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘কবর’ ১৯২৫ সালে কল্লোল পত্রিকায় যখন প্রকাশিত হয়, তখন তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের বি এ শ্রেণির ছাত্র। আবশ্য এরও আগে ‘মিলন রাগ’ নামক কবিতাটি মোসলেম ভারত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ‘কবর’ কবিতাটি পাঠ করে তৎকালীন বাঙালি বিদ্বৎসমাজের অন্যতম পুরোধাপুরুষ, মৈয়মনসিংহ গীতিকা সংগ্রাহক দীনেশচন্দ্র সেন কবিকে লেখেন, ‘ দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনির মতো তোমার কবিতা পড়ে আমি কেঁদেছি।’ কী এমন ছিল এই কবিতায়, যা পাঠ করে বাংলার বিদ্বৎসমাজের এই পুরোধা-পুরুষ অশ্রুভারাক্রান্ত ও বিমোহিত হন এবং স্বল্পকালের মধ্যেই কবিতাটি অন্তর্ভূক্ত হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার বাংলা সাহিত্যসংকলনে? এটি ছিল একটি আখ্যান-কবিতা। এক বেদনা-মথিত মুসলমান গৃহস্বামী একমাত্র পৌত্রকে তার দাদি,বাবা,মা, ফুপু, বড়বোনের কবর দেখিয়ে বেদনা-বিধুর চিত্তে পরিবারের করুণকাহিনী বর্ণনা করছেন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে শোকাবহÑ বলার অবকাশ রাখে না যে, কবিতাটি পাঠ করে সংবেদনশীল পাঠক মাত্রই আলোড়িত ও অশ্রুভারাক্রান্ত হবে। আখ্যানধর্মী এ কবিতা তরুণ কবিকে এনে নতুন রাজ্য জয়ের বরমাল্য। এ কথা বললে অতিশায়িত হয় না যে, লোকোত্তর প্রতিভার অধিকারী না হয়েও প্রথম কবিতা দিয়ে জসীউদদীন জনচিত্ত জয় করে নিতে সক্ষম হন। অভিনন্দন লাভ করেন বিদগ্ধ পাঠককূল এবং বাংলার প্রতিষ্ঠিত সারস্বত সমাজের। এ ক্ষেত্রে তার সাফল্য ছিল, ইংরেজ কবি বায়রনের মতো তাৎক্ষণিক। কল্লোল যুগের কবিতা-ভুবনে তিনি ছিলেন নূতন আগন্তুক, কিন্তু কে জানে- হয়তোবা তার পাঠপ্রস্তুতি ছিলো অনেকদিনের, নইলে পল্লীর বেদনা-মথিত মাধুর্যময় জীবনের তলানি পর্যন্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করার সবল-দৃষ্টিভঙ্গি তিনি পেলেন কোথায়! তার স্পিরিটের শেকড়মূলই বা কোথায় ? উনিশ শতকের সূচনালগ্ন থেকে শিক্ষিত বাঙালির জীবনের সবকিছু যখন সর্বগ্রাসী শহর দখল করে নিয়েছে অথবা নিতে উদ্যত হয়েছে, তখন তিনি নিরাভরণ- পল্লীর পুরাতন রতœভা-ার নূতন করে আমাদের সামনে উন্মোচন করলেন; বয়ে আনলেন কল্পরাজ্যের আনন্দবার্তা। তিনি প্রথম যৌবন থেকেই কলকাতা শহরে বসবাস করেছেন, কিন্তু বঙ্গজীবনের অতুলনীয় গ্রাম্যসম্পদ হারিয়ে ফেলেননি। জসীমউদদীনের কবি-জীবনের যখন উন্মেষকাল , তখন বাংলা কাব্য-ভুবনে রবীন্দ্রনাথ এক ও অদ্বিতীয় অধীশ্বর; তার জনপ্রিয়তাও ধূলি-ধূসরিত বাংলার শ্যামল-প্রাঙ্গণ ছেড়ে আলোয়-ভরা আকাশ ছুঁয়েছে। কবিতা-গান-নাটক-শিল্পকলায় মুগ্ধ ও অভিভূত করে রেখেছেন বাঙালির রসিকচিত্ত, সারা বিশ্বের সারস্বত সমাজের মুখ তখন জোড়াসাাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পানে। বাঙালি বিদ্বৎসমাজের উদযোগে তাকে নিয়ে চলছে নানা ধরনের ঢক্কানিনাদ। উনিশ শতকীয় বঙ্গীয় রেনেসাঁর ভাঁটা-পড়া ক্ষীণ-¯্রােতটা বিশ শতকেও প্রবল বেগে বহমান থকে রবীন্দ্রনাথের বহুবিধ তৎপরতার মাধ্যমে। বঙ্গসমাজের মূল নায়ক বিশ শতকের তৃতীয় দশক পর্যন্ত তিনি-ই, বাঙালির সকল শুভকর্মের সূত্রধর তাঁকেই গণ্য করা হয়- যেন সিদ্ধিদাতা গণেশ। এর-ই মধ্যে করাচি থেকে ফিরে এসে অকস্মাৎ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির মধ্যগগনে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিলেন কাজী নজরুল ইসলাম । এক সময়ের ইংরেজদের অনুগত হাবিলদার অল্প সময়ের মধ্যে হয়ে উঠলেন বাঙালির প্রাণের কবি। কবি হিসেবে অধিকার করে নিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গশীর্ষ , তার সাহিত্যদ্যুতির উজ্জ্বলতর বিভা চারদিক ছড়িয়ে পড়লো বিপুল গৌরবে। তার রক্তমাতাল কবিতা-গান বাংলার তরুণচিত্তে উন্মাদনা সঞ্চার করলো, প্রেম ও দ্রোহের এক অমোঘ আবর্তনে দলে দলে মানুষ , বিশেষত তরুণরা নজরুলকে ঘিরে অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ হলো। আর বাংলার মুসলমান সমাজ আড়মোড়া ভেঙে হতাশা, গ্লানি ও সংকোচের বিহ্বলতা কাটিয়ে ইহজাগতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেতে চাইলো প্রতিবেশী হিন্দু সমাজের সাথে প্রতিযোগিতা করে সমকক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে। সেই সঙ্গে , রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বধর্ম ও সম্প্রদায়ের গৌরব বাড়াতেও চাইলো । তাই বিশ শতকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দশক নানা কারণেই বাঙালি মুসলমানের জন্য এক গৌরবম-িত, ঘোর লাগা কালপর্ব। অবশ্য মুসলমান এলিটদের মধ্যে জাগরণের আভাস পাওয়া যায় বিশ শতকের প্রারম্ভ থেকে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ‘বর্ধমানের নবাব আবদুল জাব্বার (১৮৩৭-১৯১৮) ইংরেজি শিখে হয়েছিলেন প্রধান সদর আমিন। হুগলির আবুল হুসেন বিলেত ও আমেরিকায় ডাক্তারির সবচেয়ে বড় ডিগ্রি লাভ করেন। মেদিনীপুরের স্যার আবদুর রহিম ((১৮৬৭-১৯৫২) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ পাশ করেছিলেন ইংরেজিতে। নোয়াখালির আবদুল আজিজ (১৮৬৭-১৯২৬) ইংরেজি শিখে শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পদ লাভ করেছিলেন। মেদিনীপুরের আবদুল্লাহ আল মামুন সোহরাওয়ার্দি (১৮৭০-১৯৩৫) মুসলমানদের মধ্যে থেকে সর্বপ্রথম পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা থেকে (১৯০৮)। কুমিল্লার আবদুর রসুল (১৮৭২-১৯১৭) অক্সফোর্ড থেকে বিএ এবং এমএ পাশ করে ব্যারিস্টার হয়েছিলেন। বর্ধমানের আবুল কাসেম ইংরেজি শিখে দ্য- মুসলমান-সহ কয়েকটি পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন। গজনফর আলি খান (১৮৭২-১৯৫৯) বিলেতে গিয়ে প্রতিযোগিতামূলক আইসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম আইসিএস হয়েছিলেন।’ (গোলাম মুরশিদ : হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, ঢাকা, ডিসেম্বর, ২০১৩। পৃষ্ঠা : ১২২-১২৩।) ইংরেজি শিক্ষার সুফল দেখে বিলম্বে হলেও বাঙালি মুসলমান এগিয়ে এসেছিলেন উচ্চশিক্ষার দিকে। এদের মধ্যে এই প্রয়াস শুরু হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে আর পূর্ণতা লাভ করে বিশ শতকের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশকে। তবে নি¤œবর্গের হিন্দু ও মুসলমান, যারা গ্রামে বসবাস করতেন তারা ইংরেজি শিক্ষার সুফল ভোগ করতে পারেননি। রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান এলিটদের উন্মেষকালে নজরুল ও জসীমউদদীনের কবি হিসেবে বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে আত্মপ্রকাশ, যা বলাই বাহুল্য। তবে আগে নজরুল, কয়েক বছর পর জসীমউদদীন। নজরুল-কাব্যে মানবিকতার কথা যেমন উচ্চারিত হয়েছে, তেমনই প্রেম ও দ্রোহের কথাও উঠে এসেছে দারুণভাবে। বাংলা সাহিত্যে তার মতো করে আর কেউ বিদ্রোহের বাণী শোনাতে পারেননি ইতোপূর্বে। তিনি তার গান-কবিতা দিয়ে ধর্ম, রাজনীতি, সরকার, সমাজ- যা কিছু মানুষের মানবিক মর্যাদাকে খর্ব করে-তাকে ভেঙে চুর্ণ করতে চেয়েছিলেন। মানবিকতা, স্বাধীনতা আর অসাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তিনি ছিলেন দারুণভাবে উচ্চকণ্ঠ। বাঙালি মুসলমানমান সমাজকেও এগিয়ে দিয়েছিলেন সামনের দিকে কবিতা-গানের মাধ্যমে উত্তাপ ছড়িয়ে। একদিকে, তিনি মুসলমানদের জন্য জাগরণ গান গেয়েছিলেন, আবার অন্যদিকে, তাদের উজ্জীবিত করার জন্য গৌরবগাথা রচনা করেন। তার সাফল্য ও সৃষ্টিকর্ম মুসলমান কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছিল। নজরুলের কয়েক বছর পর জসীমউদদীন বাংলা সাহিত্যজগতে আবির্ভূত হন এবং রাতারাতি খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। তবে তিনি নজরুলের পথে যাননি, তাকে অগ্রজ ভেবেছেন কিন্তু, অনুসরণ করেননি। নজরুলের কবিতা-গানে যেখানে রাজনীতির মাতামাতি, পৌরাণিক কাহিনীর ঘনঘটা, নাগরিক জীবনের আলোছায়ার উপস্থিতি রয়েছে, সেখানে জসীউদদীনে ওইসব বিষয় নেই বললইে চলে। তার প্রিয় প্রসঙ্গ গ্রাম ও গ্রামীণ জনজীবন, লোকসাহিত্য, পুঁথিসাহিত্য ও মঙ্গলকাব্য। এ কথা জোর দিয়েই বলা যায় যে, ‘গ্রামীণ উৎসব,পালা-পার্বণ ও প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি জসীমউদদীনের আকর্ষণ ছিল। যদিও তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতার অনুরাগী ছিলেন, তবু তার কবিতারচনার শুরুতেও রবীন্দ্রনাথের কোনো প্রভাব দেখা যায় না।’ ((আনিসুজ্জামান : জসীমউদদীন। কালি ও কলম, নবম বর্ষ, দ্বাদশ সংখ্যা, মাঘ ১৪১৯।) জসীমউদদীন নিজস্ব একটি সাহিত্যদর্শন নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন রবীন্দ্র-প্রভাব বলয়ে অবস্থান করেও। এবং সেই দর্শনের সঙ্গে মিল রেখে তিনি নিজের জন্য একটি সাহিত্যভাষাও নির্মাণ করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই কারণে তার সকল রচনাই নিজস্বতা-চিহ্নিত, সব সৃষ্টিই এক-একটি অসাধারণ কারুকৃতি। সৃজনউৎসবে মেতে ওঠা মননফসল।

২.
জসীমউদদীন নিজেকে রবীন্দ্রানুরাগী হিসেবে দাবি করলেও আধুনিক বাংলা কবিতার ভুবনে তাঁকে এক ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক-ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয়। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম ও ত্রিশ দশকের আধুনিক কবিদের সমসাময়িক ছিলেন, কিন্তু শিল্পযাত্রায় তিনি ভিন্ন পথের যাত্রী । জসীমউদদীনের কবিতায় উপনিবেশবাদ ও সা¤্রাজ্যবাদবিরোধিতার অগ্নি ও উত্তাপ কিংবা মহাত্মাা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নেই, বণিক-সভ্যতার পাদপীঠ কলকাতার চোখ ধাঁধাঁনো স্থাপত্যশৈলীর পরিপাট্যও নেই। আধুনিক নর-নারীর যাপিত-জীবনের হাহাকার নেই, ‘বাধ ভাঙা প্রাণের উচ্ছ্বাস’ নেই; নেই নগরের হতাশা, ক্লেদ, অবসাদ এবং ক্লান্তি। তার কবিতার দিগন্ত জুড়ে রয়েছে- কেবল পল্লিজীবনের হর্ষ-বিষাদ, প্রেম-বিরহ-মৃত্যু, নয়ন ভুলানো ফসল-ভরা মাঠ, আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, উড়ন্ত হংস-বলাকা, মরাল-কপোত, রাখালের চোখ-জুড়ানো কালো রূপ, মুসলমান লেঠেলদের মারামারি, গ্রামীণ বিয়ে ইত্যাদি। বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী প্রমুখ আধুনিক কবিরা যখন কলকাতা শহরকেই কবিতার মুখ্য বিষয় করে তুলেছিলেন, অবশ্য এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন জীবনানন্দ দাশ। তখন জসীমউদদীন গ্রামবাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য দিয়ে কবিতার অঙ্গসৌষ্ঠব নির্মাণ করছিলেন ওই একই সময়ে। তাই সমসাময়িক তিরিশি কবিদের কবিতার সঙ্গে জসীমউদদীনের কবিতার মিল খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন। রবীন্দ্রনাথের মতো তিনিও কলকাতা শহরকে কবিতায় তেমন পাত্তা দেননি বা দিতে পারেননি। শহর নামক মথুরাপুরীতে বাস করেও পল্লিবৃন্দাবনের জন্য গভীরতর বেদনা অনুভব করেছেন আমৃত্যু। বুকের ভেতরে সারাজীবন আগলে রেখেছিলেন ফরিদপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের তাম্বুলখানা গ্রাম, যেখানে তিনি ভূমিষ্ঠ হন। তাঁর ধ্যানময়তা জুড়ে ছিল কুমারনদবর্তী গোবিন্দপুর গ্রাম যেখানে পিতা মৌলভী আনসারউদদীন মোল্লা ( মৃত্যু: ১৯৪৭), পিতামহ ছমিরউদদীন মোল্লা, প্রপিতামহ আরাধনা মোল্লা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ‘ নকসী কাঁথার মাঠ’ লেখার প্রথমপাঠ ¯েœহময়ী জননী আমেনা খাতুনের কাছ থেকে তিনি নিয়েছেন কিনা কে জানে! মায়াভরা পল্লীর শ্যামলছায়ায় ‘দূরাগত রাখালের বংশীধ্বনি’ শুনে যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, তিনি কী তার সত্তাকে পল্লির মায়ালোক থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেন ? পারেন না। তাই সাহিত্যে নাগরিকতার জয়জয়কারের কালেও তিনি পল্লিমায়ের জয়গান গেযেছেন হৃদয়-উৎসারিত ভালবাসা দিয়ে। বলা বাহুল্য যে, বিশ শতকের সূচনালগ্নে শহর আমাদের জীবনের ভরকেন্দ্র দখল করে নেয়। রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, রুচি, মূল্যবোধ সবকিছুকেই এক নতুন সমীকরণের মুখোমুখি দাঁড় করায় উদীয়মান পুঁজি নিয়ন্ত্রিত নগর-সভ্যতা। কবিরা নগরকেন্দ্রিক অস্থিরতা, অন্তঃসারশূন্যতা, হতাশা,ভাঁড়ামি, পিশাচবৃত্তি ও নিষ্ঠুরতাকে তাদের ধ্যান-অনুধ্যানের মর্মমূলে নিয়ে আসেন। কিন্তু জসীমউদদীন বিশ শতকীয় নগর-চেতনার গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাননি। তিনি তিরিশি কবিদের মতো আরোপিত ও বহিরাগত মত এবং জ্ঞানভাষ্য দ্বারা নিজেকে পরিচালিত করেননি। আবার, নজরুল-কাব্যের অস্থিরতা, চাঞ্চল্য, বিক্ষোভ, তরঙ্গ-বিভঙ্গ দ্বারাও প্রভাবিত হননি তিনি । কারণ জসীমউদদীন মনে করতেন, নজরুলের জীবনবোধের মধ্যে সুস্থিরতা ও স্থিতপ্রজ্ঞা নেই। ব্যক্তি, সাময়িকী-সম্পাদক ও রাজনীতিক নজরুলের অনুগামী ছিলেন তিনি, কিন্তু কাব্যযাত্রায় নিজেকে চালিত করেছেন পূর্ববাংলার জনগণের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বাস্তবতার নিরিখে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই, তিনি পল্লিজীবন ও তার অনাবিল প্রকৃতির মাধুর্যম-িত রূপের ছবি আঁকতে চেয়েছেন একের পর এক। তিনি কখনই কবিতাকে নন্দনতাত্ত্বিক জটিলতার ঘেরটোপে আটকে রাখতে চাননি। তাই বিশ শতকের প্রখর সূর্যালোকে বাস করেও বৈষ্ণব যুগের ছায়াভরা পল্লীর রূপ-মহিমা বর্ণনায় মুখর থেকেছেন সারাজীবন। অনুসন্ধিৎসু চিন্তানায়ক আহমদ ছফা তার ‘নিকট ও দূরের প্রসঙ্গ’ গ্রন্থভুক্ত ‘স্মরণ : দীনেশচন্দ্র সেন’ শীর্ষক প্রবন্ধে দীনেশচন্দ্র সেনকে বড়মাপের চিন্তানায়ক হিসেবে উল্লেখ করেন। জসীমউদদীন অবশ্যই দীনেশচন্দ্রের ভাবশিষ্য ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলার লোকসাহিত্য, পল্লিসমাজ এবং লোকসংস্কৃতিকে দীনেশচন্দ্র সেনের মতো অতটা হৃদয়গ্রাহী করে আর কেউ গ্রহণ করেননি। তিনি দীনেশচন্দ্রের যাবতীয় মননচর্চার মধ্যে আবিষ্কার করেছেন বঙ্কিমচন্দ্রের কাউন্টার-থিসিস হিসেবে। পরিণত ও উচ্চমাপের চিন্তানায়ক তথা রাষ্ট্রচিন্তক হিসেবে ছফার নিকট বঙ্কিমের গুরুত্ব ছিল। কিন্তু আহমদ ছফা মনে করতেন , বঙ্কিমের চিন্তার মধ্যে মারাত্মক গলদ ছিল, উঁচুদরের চিন্তানায়ক হয়েও তিনি নিজেকে ভ্রান্ত পথে চালিত করেছেন। বঙ্কিমের নির্ভরতা ছিল বেদ, গীতা, বৈদিক সাহিত্য, ব্রাহ্মণ্যবাদ, রামায়ণ-মহাভারত ইত্যাদির ওপর। এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই তিনি তাঁর রাষ্ট্রভাবনার কাঠামো দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। অন্যদিকে, দীনেশচন্দ্র সেন শাস্ত্র ও ধর্মকে পরিহার করে সমাজ ও মানুষকে গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। বঙ্কিম যেখানে হিন্দুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, সেখানে দীনেশ চেয়েছেন অসাম্প্রদায়িক মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করতে। আসলে দীনেশচন্দ্র সেন কাজ করেছিলেন বঙ্কিমের পুরো প্রকল্পের বিপরীতে। দীনেশের কাজের মধ্যেও গভীরভাবে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ছিল, তার চিন্তার মধ্যেও ছিল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি । এছাড়াও দীনেশচন্দ্র সেন কলকাতাকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী ও সাহিত্যিক এবং তিরিশি কবিদের কাউন্টার-থিসিস হিসেবে জসীমউদদীনকে আবিষ্কার করেন । কবির রচনা লোকসংস্কৃতিপ্রেমী দীনেশ সেনকে এমনভাবে আকর্ষণ করেছিল যে তিনি জসীমউদদীনের কবিতার গুণমুগ্ধ পাঠকে পরিণত হয়ে পড়েন। জসীউদদীনের কবিসত্তার প্রতি তিনি অনুরাগ প্রকাশ করেই তার গবেষকীয় দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি তাকে প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যধারার বিপরীতে তুলে ধরার সংকল্প নিয়ে লেখালেখি আরম্ভ করে দেন। দীনেশচন্দ্র সেন কেবল প্রবন্ধ রচনা করেই কবিকে উৎসাহিত করেননি, সেই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যতালিকায় ‘কবর’ তালিকাভুক্ত করে দেন। এমন বিরল ঘটনা বাংলাদেশের কোনো কবির ক্ষেত্রে ঘটেনি। দীনেশচন্দ্র সেনের পৃষ্ঠপোষণা ও আশীর্বাদ জসীমউদদীনের আত্মপ্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিল। ‘নকসী কাঁথার মাঠ’ ও ‘ সোজন বাদিয়ার ঘাট’ কাব্যের দীনেশকৃত সমালোচনা প্রকাশনার পর কবির কাব্যের প্রতি শিক্ষিত মহলের অনুরাগ ও প্রীতি জন্ম নেয় এবং তিনি একজন পল্লীপ্রাণ কবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। দীনেশচন্দ্র সেনের পৃষ্ঠপোষণা ও আন্তরিক সমর্থন ছাড়া জসীমউদদীনের পক্ষে কাব্যিক-সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠা মোটেই সহজতর হত না। এছাড়াও কবির আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে দীনেশচন্দ্র সেন তাঁকে ৭০ টাকার মাসিক বৃত্তিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পল্লিগীতি সংগ্রাহকের কাজে লাগিয়ে দেন। এতে তার ব্যয়সংকুলানে সুবিধে হয়েছিল। জসীমউদদীন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিরলতম ব্যক্তি যিনি সাহিত্যচর্চার সূচনালগ্নেই বড়মাপের প-িত, সাহিত্যবোদ্ধাদের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষণা লাভ করেছিলেন। দীনেশচন্দ্র সেন ছাড়াও তিনি রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ ও প্রীতি বাংলাদেশের সাহিত্যিক ও সারস্বত পরিম-লে কবির প্রতিষ্ঠা এনে দিতে ভূমিকা রেখেছিল। বন্ধু মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও কল্লোল সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ কবিকে অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। অবনীন্দ্রনাথ ‘নকসী কাঁথার মাঠ’এর একটি ক্ষুদ্র ভূমিকাও লিখে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথও জসীমউদদীনের কাব্য পড়ে মুগ্ধ হয়ে মন্তব্য করেছিলেন,‘ অতি সহজে যাদের লিখবার ক্ষমতা নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তাঁরা কখনই লিখতে পারে না।’ রবীন্দ্রনাথের প্রশংসাপত্র কবিকে খ্যাতিমান করতে সাহায্য করেছিল।। পরবর্তীতে আরো সুধীজনের প্রশংসা লাভ করেন এবং তার নামের সঙ্গে ‘পল্লিকবি’ অভিধাটি যুক্ত হয়। তবে তার নামের সঙ্গে ওই অভিধাটি লেপ্টে দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ জসীমউদদীন পল্লী দরদি কবি হলেও পল্লিকবি বা গ্রাম্য কবি ছিলেন না। তার কাব্যের ভাষা, শব্দচয়ন, ছন্দপ্রকৌশল, রূপক-উপমা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি পল্লিমুখী ছিলেন না। তিনিও আধুনিক যুগের আধুনিক কবি। তিনি কেবল আধুনিক কবি নন, আধুনিক যুগের স্বতন্ত্র বাকরীতির কবি। তবে তিরিশি কবিরা যে অর্থে আধুনিক জসীমউদদীন সেই অর্থে আধনিক নন। কারণ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যে অর্থে আধুনিক সেই অর্থে শামসুর রাহমান আধুনিক নন। আবার জীবনানন্দ দাশ যে অর্থে আধুনিক, সৈয়দ শামসুল হক সেই অর্থে আধুনিক নন। আধুনিকতা বিষয়টিই আপেক্ষিক। ভাবের-দিক থেকে রবীন্দ্র প্রভাব-মুক্ত, মুক্তিপিয়াসী কবিতাকে যদি আধুনিক কবিতা বলে গণ্য করা হয়, তবে সে বিবেচনায় জসীমউদদীনের কবিতা অবশ্যই আধুনিক কবিতা। তার আসল পরিচয় তিনি পল্লিবোধ, পল্লিপ্রকৃতি, পল্লিঐতিহ্যে ও পল্লিইমেজের কবি। তার ভাববিদ্রোহ কেবল তিরিশি কবিদের বিরুদ্ধে ছিল না, তার বিদ্রোহ ছিল তাবৎ এস্টাবলিশমেন্টের বিরদ্ধে, এমনকি উনিশ শতকীয় সাম্প্রদায়িক সাহিত্যচিন্তার বিরুদ্ধে।
৩.
জসীমউদদীন মানুষ হিসেবে ছিলেন সহজ-সরল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন। এই আসাম্প্রদায়িক চেতনা অর্জন করেন কবিগানের লড়াই থেকে, যাত্রার আসরে হাজির হয়ে কখনও-বা দানু মোল্লার কণ্ঠে মদনকুমার-মধুমালার পালা শুনে। নদীবর্তী শ্মশান ঘাটে গেরুয়া-ধারী সন্ন্যাসীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, কালীপূজার ম-পে বসে রামপ্রসাদী গান শুনে কতভাবেই না আপ্লুত হয়েছেন তিনি ! তাঁর আত্মস্মৃতি জীবনকথা’য় (১৯৬৮) বলেছেন, ‘ আমার পরদাদার নাম আরাধন মোল্লা। একেবারে বাংলা নাম।’ তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, বাঙালি হিন্দুর ইতিহাস আর বাঙালি মুসলমানের ইতিহাস আলাদা নয়। বরং এক ও অভিন্ন। কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, কালিদাস রায়, সাবিত্রীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায়, বন্দে আলী মিয়া প্রমুখ কবিরা পল্লিজীবন ও ঐতিহ্য নিয়ে কাব্য-রচনা করেছেন। তারাও পল্লীপ্রাণ কবি ছিলেন। তাদের কাব্যেও ধ্বনিত হয়েছে প্রাণ উজাড় করা মেঠো-সুর,তারাও গেয়েছেন চাষি, জেলে, জোলা প্রভৃতি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ছোঁয়া জীবনের গান। তারপরও তারা অনেকেই পল্লী প্রকৃতিকে দেখেছেন হিন্দু অথবা মুসলমানের চোখে। কিন্তু জসীমউদদীন যে পল্লির রূপ-প্রতিমা অংকন করেছেন, সেখানে হিন্দু-মুসলমান সবাই রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে ফাটল ধরে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে বাস্তুভিটা, বসতবাড়ি, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে হিন্দুরা পশ্চিমবঙ্গ অভিমুখে এবং মুসলমানরা পূর্ববাংলা অভিমুখে যাত্রা করে। বাংলাদেশের পল্লিজীবন বিপর্যস্ত ও ল-ভ- হয়ে যায়, করুণ স্মৃতি নিয়ে মুখ গুজে পড়ে থাকে অসংখ্য দেবালয়। এসব বিষয় স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে কবি বেদনা অনুভব করেন। তাঁর মানবদরদি চিত্ত প্রতিবেশী হিন্দুর বাস্তুত্যাগে কেঁদে ওঠে। দেশভাগের পর রচিত ‘মাটির কান্না’ (১৯৫৮) কাব্যের ‘বাস্তুত্যাগী’ কবিতায় হিন্দুশূন্য, পরিত্যক্ত পল্লীর বেদনামথিত রূপ তুলে ধরেন দরদ দিয়ে:
দেউলে দেউলে কাঁদিছে দেবতা পূজারীরে খোঁজ করি,
মন্দিরে আজ বাজে নাকো শাঁখ সন্ধ্যা-সকাল ভরি।
তুলসীতলা সে জঙ্গলে ভরা, সোনার প্রদীপ লয়ে,
রচেনা না প্রণাম গাঁয়ের রূপসী মঙ্গল কথা কয়ে।
এ চিত্র সাতচল্লিশপূর্ব একটি হিন্দু পল্লীর নিরাভরণ চিত্র। কবির অভিজ্ঞতা এতই গভীর যে হিন্দু-অধ্যুষিত গ্রাম বা পল্লীর চিত্র আঁকতে গিয়ে তাঁকে কোনো ধরনের কৃত্রিম-কল্পনার আশ্রয় গ্রহণ করতে হয় না। কোনো এক কুলবধূর আলতা ছোপানো চরণের রঙে রাঙা পদ্মদীঘির জল, দোলমঞ্চ, পূজার দূর্বাশীষের থালা, ঝুলনের দোলা,নাটমন্দিরের ছবি কল্পনা করে কবি যেন কেমন বিহ্বল হয়ে ওঠেন। কবি স্মৃতি-কাতর হয়ে বাসস্তুত্যাগী হিন্দুদের স্বদেশে ফিরে আসার আহবান জানান:
এই দীঘিজলে সাঁতার কাটিতে ফিরে এসো গাঁর মেয়ে,
কলমি-লতা যে ফুটাইবে ফুল তোমারে নিকটে পেয়ে।
ঘুঘুরা কাঁদিছে উহু উহু করি, ডাহুকেরা ডাক ছাড়ি,
গুমরায় বন সবুজ শাড়িরে দীঘল নিশ্বাসে ফাড়ি।
জসীমউদদীনের চিত্ত শৈশব থেকেই উদ্ভাসিত ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার উজ্জ্বল আলোয়, যা বলাই বাহুল্য। তার শৈশব কেটেছে এক উদার ও অসাম্প্রদায়িক পরিবেশের মধ্যে। তখনকার দিনে ফরিদপুর শহরে কিংবা তৎসংলগ্ন গ্রামগুলিতে হিন্দু-মুসলমান সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির বসবাস করতো। পাকা মুসলমান খুব কম দেখা যেত। লক্ষ্মীপূজা, হাওয়াই সিন্নি ও গাস্বী উৎসবে গ্রামবাংলার হিন্দু-মুসলমান মেতে থাকতো। হওয়া বিরির সম্মানে হাওয়াই সিন্নি হতো লক্ষ্মী পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায়। হাওয়া শিরনির পর ফরিদপুরের কদমতলা নামক স্থানে বিশাল মেলা হত। এ মেলায় কবিগান, জারি, যাত্রাগান, গাজীর গানের আসর চলতো সারারাত ধরে। সেময় আশ্বিন ও কার্তিক মাসের সংক্রান্তির দিনে গাস্বী উৎসব হতো। হিন্দুরা আশ্বিন মাসের শেষদিনের আগের রাতে এবং মুসলমানরা পরের রাতে গাস্বী উৎসব করতো। গাস্বী উৎসবকে জসীমউদদীন অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ উৎসবকে হিন্দু-মুসলমানের জাতীয় উৎসব হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব রেখেছিলেন। এমন উদার পরিবেশে যার বেড়ে ওঠা, তিনি বড়মনের মানুষ হবেন না, তো কে হবেন? তাঁর আত্মস্মৃতি জীবনকথা (১৯৬৪) গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘হিন্দুপাড়ায় এই পাঠশালা আমার কাছে বড়ই আকর্ষণের বস্তু হইয়া উঠিল। হিন্দুদের বাড়িতে বাড়িতে নানা রকমর ফুলের গাছ। শীতকালে রক্তগাঁদা আর বড়গাঁদার রঙে আর গন্ধে উঠানের অর্ধেকটা আলো হইয়া থাকে। গাঁদা ফুলের চাইতেও সুন্দর হিন্দু বউরা কপালভরা সিঁদুর পরিয়া উঠানের সুনিপুণ করিয়া চালচিত্র আঁকিত। কার্তিক পূজা ও লক্ষ্মী পূজায় জোকার দিয়া শঙ্খ বাজাইত। বিবাহের উৎসবে ঢোল সানাই বাজিত। আমাদের মুসলমান পাড়ায় গান-বাজনা নাই। কারোও বাড়িতে ফুলের গাছ নাই। ওহাবি আন্দোলনের দাপটে গ্রাম হইতে আনন্দ-উৎসব লোপ পাইয়াছে।’ নিজ ধর্মের প্রতি তার ছিল গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগ, কিন্তু কট্টরপন্থী ওয়াহাবি মতাদর্শকে গ্রহণ করতে পারেননি। মিলাদ মাহফিলে কোরান-হাদিসের করুণ কাহিনীগুলি শুনে কেঁদে আকুল হয়েছেন, তারপরও অন্যধর্মের উৎসবে যেতে বিলম্ব করতেন না। তিনি গান-বাজনা, পালা-পার্বণ, হিন্দুদের নানা রকমের কৃত্যাচার যেমন পছন্দ করতেন, তেমনই মওলানা- মৌলবিদের মাহফিলে উপস্থিত থাকতেও গর্ব অনুভব করতেন। মৌলভীদের সঙ্গে থেকে থেকে দরুদশরিফগুলি হেফযো করে নিয়েছিলেন শৈশবেই। মিলাদের সময় তিনি সুর করে দরুদশরিফগুলি পড়তেন এবং শোনাতেন। শৈশবে তার ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে তিনি মৌলভী হবেন। কিন্তু তা আর হওয়া হলো না; হলেন কবিÑ পদ্মা-মেঘনা- বুড়িগঙ্গা বিধৌত জনপদের কবি। পল্লীর রুপ-লাবণ্যে-মুগ্ধ কবি জসীমউদদীন ছিলেন বড় আবেগী ও ¯েœহকাতর দরদি মানুষ । তার মায়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু ‘কেদারীর মা’র সঙ্গে হিন্দুপাড়ায় পূজা দেখতে যেতেন। ‘কার্তিক পূজার রাত্রে হিন্দুপাড়া হইতে মেয়েলি কণ্ঠের গান ভাসিয়া’আসতো, তখন তার বালকমনটি পাগল হয়ে উঠতো। তিনি খুব ভোরে কেদারীর মার সঙ্গে ঘট কুড়াতে যেতেন। কার্তিকপূজার ছোট ছোট ঘট দিয়ে তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে নানা রকমের খেলায় মেতে উঠতেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উৎসব ও কৃত্যচার দেখে দেখে কৈশোরে তিনি হিন্দুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন। ‘কালী, দুর্গা, শিব প্রভৃতি সকল হিন্দু দেবদেবীদের প্রতি’ জন্মায় অগাধ বিশ্বাস। এ বিশ্বাসের ঘোর অনেকদিন তাকে বইতে হয়েছে। তার এই বিশ্বাসে আঘাত হানেন এ সি সেন নামের রাজেন্দ্র কলেজের এক প্রফেসর। প-িতপ্রবর এই প্রফেসর ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের লোক। তাঁর মাধ্যমে রাজা রামমোহন রায়ের জীবনী, কেশব সেনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা, অজয়কুমার চক্রবর্তীর মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের জীবনী, জগদীশবাবুর গৌরাঙ্গ লীলামৃত, গিরীশ বসু তাপসমালা, রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি,বলাকা প্রভৃতি গ্রন্থগুলি পাঠ করে কিশোর জসীমউদদীনের মধ্যে জন্ম নেয় এক নতুন অধ্যাত্মবোধ। মি. সেনের ¯েœহ-সান্নিধ্য তাকে ব্রাহ্মভাবাপন্ন করে তোলে। সত্যিকারের সরল মানুষ বলতে যা বোঝায়, জসীমউদদীন ছিলেন তা-ই। এ কারণে সম্ভবত সব ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন সারাজীবন। ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্র-সংগীত প্রচার বন্ধ করা হলে পূর্ববাংলা জুড়ে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়, জসীমউদদীন সেই আন্দোলনে পালন অগ্রণী ভূমিকা। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে লেখক-কবি-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিকর্মীদের সঙ্গে তিনিও স্লোগান মুখরিত উত্তাল রাজপথে নেমে আসেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা, কিন্তু তার বাকশাল ব্যবস্থা (১৯৭৫) কবি মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ে তিনি বেদনার্ত হয়েছিলেন। তার ক’মাস পর ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবির অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী ফরিদপুরের অম্বিকাপুর গ্রামের পারিবারিক গোরস্থানে দাদির কবরের পাশে ডালিম গাছের তলায় সমাহিত করা হয়।

চার.
রবীন্দ্রনাথ থেকে আরম্ভ করে আরও অনেক সমালোচক বলেছেন, জসীমউদদীনের কবিতার ‘ছন্দের গতি খুব সহজ’। রবীন্দ্রনাথসহ সমালোচকদের এই মন্তব্যে কবি পুলকিত হয়ে বলেছেন, ‘ ইহা যদি আমার গুণ হইয়া থাকে, তবে এই শিক্ষা আমি পাইয়াছি আমার দেশের অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত কবিয়ালদের কাছে। তাঁহারাই আমার কাব্যজীবনের প্রথম গুরু।’ তিনি আরও বলেছেন, আমার কবিতায় তেমন চাতুর্যভরা মিল বা অনুপ্রাসের বর্ণচ্ছটা নাই। সত্যিই, জসীমউদদীনের কবিতার একটি নিজস্ব ঢং, আঙ্গিক, ফর্ম,স্টাইল রয়েছে, যা কেবল-ই তার নিজের। তিনি আলপনার নকশা আঁকার মতো বোল কেটে কবিতা রচনা করতে পারতেন। এ এক দূর্লভ গুণ! এই বিরলপ্রজ মানুষটি বাংলার বিশেষত পূর্ববাংলার জনমানুষের মনের ভাষা গভীরভাবে বুঝতে পারতেন এবং সেই ভাষাকে কাব্যে রূপান্তরিত করতেও পারতেন। এ কারণে সম্ভবত তিনি তার জীবৎকালেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গবিন্দু ছুঁতে পেরেছিলেন খুব সহজেই। জসীমউদদীন ‘উর্বশী’ করতে পারেননি রবীন্দ্রনাথের মতোন। আবার বিষ্ণু দেও মতো ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’ কিংবা জীবনানন্দের মতো ‘বনলতা সেন’ রচনা করেননি। তিনি গ্রামের মেয়ে দুলি ও সাজুর জীবনালেখ্য নিয়ে রচনা করেন ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ও ‘নকসী কাঁথার মাঠ’-এর মতো কাব্যগ্রন্থ। ‘সোজন বাদিয়া ঘাট’ পড়ে মুগ্ধ হয়ে রবীন্দ্রনাথ কবিকে লেখেন : “তোমার ‘ সোজন বাদিয়ার ঘাট’ বইখানি বিশেষ প্রশংসার যোগ্য। কিছুমাত্র অবকাশ পেলে সমালোচনা লিখে দিতুম।.. তোমার এই লেখা পাঠক-সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।” ( ভূঁইয়া ইকবাল সম্পাদিত ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ’। পৃ: ৮২) ‘নকসী কাঁথার মাঠ’ সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ জসীউদদীনের কবিতার ভাব-ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজে যারা লিখতে পারে না, এমনতর খাঁটি জিনিশ তারা প্রকাশ করতে পারে না।’ তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গ্রামীণ সমাজ ও তার জনজীবন নিয়ে রচনা করেন ‘বালুচর‘, ধানক্ষেত। ‘বালুচর’ কাব্যের প্রায় সব কবিতাতে-ই ফুটে উঠেছে এক রোম্যান্টিক কবির ব্যর্থ প্রেমের হাহাকার। এ কাব্যের অন্তর্ভূক্ত সতেরোটি কবিতাতেই কবি প্রকৃতির মধ্যে নিজ বেদনা ছড়িয়ে দিয়ে প্রকৃতিকেও বেদনা-মথিত ও ভারাক্রান্ত করে তুলেছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ কাব্যটি পাঠ করে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ‘রূপবতী’ কাব্যে রূপের তৃষ্ণায় চঞ্চল কবি রূপ ও প্রেমের জয়গান গেয়েছেন, এখানে পল্লী প্রকৃতির কোনো উল্লেখযোগ্য চিত্র নেই বললেই চলে। আর ‘ভয়াবহ দিনগুলিতে’ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা, নৃশংসতা, অক্লেশে নরহত্যার মর্মস্পর্শী বর্ণনা রয়েছে। এখানে প্রেমের উচ্ছ্বাস নেই; নেই প্রকৃতি-প্রীতির ভাবালুতা। তবে বাংলার মাটি-জল-হাওয়া ভালবেসে কবি কলমকে শাণিত হাতিয়ারে পরিণত করেছেন। ‘মাগো জ্বালিয়ে রাখিস আলো’ কবির সর্বশেষ খ- কবিতার সংকলন। এ কাব্যেও তিনি মাটি, মানুষ,নদী ও নিসর্গের প্রতি গভীর ভালবাসা ব্যক্ত করেছেন। জসীমউদদীনের সব কবিতাগ্রন্থে হিন্দু-মুসলমান ঐতিহ্য ফিরে ফিরে এসেছে গভীর মমতায়। ফিরে এসেছে ঢেউ খেলানো সবুজ থানক্ষেত, উদাস-দুপুর, পাখিদের কলতান,আম-জাম-বাঁশবন ঘেরা পল্লী। তার কাব্যচর্চার বড় সাফল্য হল এই যে, শত শত বছর ধরে অবহেলিত যে গ্রাম; যেখানে বাংলাদেশের হৃদয়, সেই সামন্তবাদী ও পুঁজিবাদী শোষণে জর্জরিত, সাহিত্যে উপেক্ষিত যে মানুষ, তিনি তাদের আনন্দ- বেদনা, সুখ-দুঃখের ছবি এঁকেছেন। পল্লীর রূপ-লাবণ্য বর্ণনা করতে গিয়ে সরল-সহজ মানুষের যাপিত জীবনের নানাদিক বিভিন্নভাবে চিত্রিত করেছেন। কেবল কবিতা নয়, গানেও তিনি পল্লীর শোক-তাপ-বিরহ-প্রেম গাথা রচনা করেছেন। বলা বাহুল্য যে, তিনি প্রচুর গান রচনা করেছেন। এসব গান আজো গ্রামবাংলার জনজীবনের প্রাণের বীণায়তোলে সুরের ঝংকার । জসীমউদদীন রচিত শচীন দেব বর্মনের রেকডকৃত ‘নিশিথে না যাইও ফুলবনে রে ভোমরা’ আব্বাসউদদীনের কণ্ঠে গাওয়া ‘ আমার হাড় কালা করলাম রে’ অথবা কুমুদ সেনের গাওয়া ‘ বাঁশরী আমার হারিয়ে গিয়েছে বালুর চরে’ প্রভৃতি আকুল করা গান আমাদের চিত্তে শিহরণ জাগায়। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের সাথে জসীউদদীনের গানকেও বাংলা সাহিত্যের অমূল্য ভাব-সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। তিনিও ছিলেন বড়মাপের লোকসংগীত ¯্রষ্টা। তিনি বাংলার শিশুদের মধ্যেও বেঁচে থাকবেন। শিশুদের জন্য লিখেছেন ‘হলদে পরীর দেশে’ এবং ‘বাঙালির হাসির গল্প’। ‘ চলে মুসাফির’,‘ স্মৃতির পট’,‘ জীবন কথা’ প্রভৃতি গ্রন্থগুলি কবিকে এক শক্তিমান গদ্যশিল্পীর আসনে বসিয়েছে, যা কেউ-ই টলাতে পারবে না। তার গদ্যের ভাষা ঝরঝরে, নির্মেদ, প্রাঞ্জল এবং সর্বতোভাবে আধুনিক। তাহলে, কেন তাঁর নামের সঙ্গে পল্লিকবি অভিধাটি লেপ্টে দেয়া হবে? বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। জসীমউদদীন তার কবিতা,গান,নাটক ও গদ্যে গ্রামীণ জনজীবন ও ঐতিহ্য ফিরে এসেছে বারবার। তিনি বাংলার কৃষক সমাজকে পরম আত্মীয় মনে করতেন। পূর্ববাংলার জনজীবন, নদী, নিসর্গের সাথে তার সখ্য-সম্পর্ককে তিনি কবিতায় রূপদান করেছেন নতুন আঙ্গিকে। মাটি ও ফসলেন গন্ধে জেগে ওঠা - ভোরের আলোয় বাংলার অপরূপ রূপে বিহ্বলিত হওয়া এক মহৎ কবিপুরুষের নাম অবশ্যই জসীমউদদীন। তিনি ভালবাসতেন বাংলার মানবিক জ্যোৎ¯œায় কম্পিত হতে । তাই বলে, কেবল-ই পল্লিকবি হিসেবে তাকে বৃত্তবন্দি করা বোধ হয় ঠিক হবে না। আর যারা তাঁকে গ্রাম্যকবি বা লোককবি মনে করেন, তারা শিল্প-সাহিত্য বোঝেন না, জসীমউদদীনও বোঝেন না। আসলে, তিনি ছিলেন শিল্প-কাব্যে লোক ঐতিহ্য ও লোকচেতনার নবনির্মাণের কুশলী শিল্পী এবং গ্রামবাংলার সরল-সহজ মানুষের সত্যিকারের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি|

আবদুল্লাহ আল আমিন: গবেষক ও প্রাবন্ধিক। সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, মেহেরপুর। মুঠোফোন : ০১৮১৬- ০৫৬৯৩৪


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×