somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাপান-উতরের দোদুল দোলায় রবীন্দ্রনাথ

০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাকবি আলাওল তার ‘সতী ময়না লোরচন্দ্রানী’ কাব্যের উত্তরপর্বে কবিদের সম্পর্কে বলেছেন :
‘কদাচিৎ নহে কবি সামান্য মনুষ্য/ শাস্ত্রে কহে কবিগণ ঈশ্বরের শিষ্য।’
রবীন্দ্রনাথ সামান্য মনুষ্য ছিলেন না, তিনি ছিলেন ‘ঈশ্বরের শিষ্য’ তুল্য। কবি হিসেবে সারা বিশ্বের সারস্বত পরিম-লে ছিলেন নন্দিত ও সমাদৃত । । তারপরও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাঙালি লেখক- বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে একটা তর্ক-বিতর্ক চালু রয়েছে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এই তর্কটা আরও প্রবলভাবে আমাদের সংস্কৃতি ও রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্র-সাহিত্য নিয়ে আমাদের দেশে যে-তর্কটা চালু রয়েছে, সেটা কেবল বিশুদ্ধ সাহিত্যিক তর্ক নয়। এর সঙ্গে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি জড়িয়ে আছে আষ্টেপিষ্টে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা শুধুমাত্র নির্ভেজাল সাহিত্যিক চর্চার মধ্যে পরিসীমিত থাকেনি, এই চর্চা সাহিত্যিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিম-ল ছাপিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আছড়ে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ বরাবর পূর্ববাংলায় ও বাঙালি মুসলমান সমাজে উপাস্থাপিত ও আলোচিত হয়েছেন রাজনীতির মোড়কে । পাকিস্তান-যামানায় রবীন্দ্রচর্চা ও রবীন্দ্র-বিরোধিতা ছিল সরাসরি রাজনীতির বিষয়। বাঙালি মুসলমান সমাজের একটি বিশাল অংশ চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে ইসলামের সর্বব্যাপক আবর্তে নিজেদের সবকিছু সঁপে দিতে, কিন্তু প্রগতিশীল অংশ চেয়েছে রবীন্দ্রনাথকে সাথে নিয়ে নিজ ও নিজ জাতিসত্তার বিকাশ ঘটাতে। বলা বাহুল্য যে, ষাটের দশকের বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ও স্বাধীকার-আন্দোলন এবং রবীন্দ্রচর্চা হাতে-হাত ধরে এক সাথে চলেছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা পরিপুষ্ট হয়েছে আবহমান বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও রবীন্দ্র-দর্শনের বৃক্ষছায়ার নিচে । সেই থেকে শিক্ষিত বাঙালির অন্তরে রবীন্দ্রনাথ একটি স্থায়ী আসন করে নেন। আশা করা হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা থেকে সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিতর্ক উঠে যাবে, তাকে মান্য করা হবে আমাদের সংস্কৃতির প্রধান পুরুষ হিসেবে। তার ভাবনা আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রয়োগ করা হবে,তাকে গ্রহণ করা হবে সমস্যা-সাফল্য, উৎসব-পার্বণের পরম আশ্রয় হিসেবে। কিন্তু তা হয়নি, রক্তের দাগ মুছে তার একটি গানকে আমরা জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেছি বটে. তবে রবীন্দ্রনাথকে বাংলাদেশের ঘোলাটে রাজনীতির কবল থেকে মুক্ত করতে পারিনি। রাজনীতির ডাইকোটমিতে বিভক্ত, ক্ষত-বিক্ষত বাঙালি মুসলমান সমাজ আবারও তাকে রাজনীতির ময়দানে টেনে এনে ক্ষমতার-রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনকে কেন্দ্র করে বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের মধ্যে পরস্পর বিরোধী যে দুটি ধারার জন্ম হয়েছিল, সেখান থেকে বাঙালি মুসলমান সমাজ আর বেরুতে পারলো না। বলতে দ্বিধা নেই , পয়লা বৈশাখ নববর্ষ উদযাপন,মঙ্গল শোভাযাত্রা, শহীদ মিনার-স্মৃতিসৌধে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ নিয়ে যতদিন বিতর্ক থাকবে, ততদিন রবীন্দ্রনাথ নিয়েও বিতর্ক থাকবে। তাছাড়া, বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিম-ল ও উচ্চগর্বী এলিটদের মধ্যেই সীমিত আছে, বিশাল জনজীবনে রবীন্দ্র দর্শনের ছাপ পড়েনি বললেই চলে। যারা এদেশে রবীন্দ্রচর্চা করেন তারা রবীন্দ্রনাথকে জনমনে সঞ্চারিত করার তাগিদ অনুভব করেন বলেও মনে হয় না। তাই বাংলাদেশের লোকজীবনে লালনের উপস্থিতি যতটা স্পষ্টতর, অকরুণ হলেও সত্য, রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ততটা উজ্জ্বল নয়। সাধারণ মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথ এখনও অধরা মাধুরী। এই যখন বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চার বাস্তবতা, তখন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রচর্চার মধ্যে অনিবার্যভাবেই পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
রবীন্দ্রচর্চার এহেন বাস্তবতা আমাদের স্বস্তি দেই না, বরং বাংলাদেশ নামক জাতি-রাষ্ট্রের জাতীয় সংহতির নড়বড়ে দিকটা স্পষ্ট করে তোলে। হতাশাব্যঞ্জক হলেও সত্য, রবীন্দ্রনাথ এখন তীব্র রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক আবেগ ও বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। এই আবেগের আতিশয্য ও মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব রবীন্দ্রনাথকে যথার্থভাবে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এক ধরনের বাধা ও ভাবালুতা তৈরি করছে। এই ভাবালুতার কারণে কোনো কোনো প-িত রবীন্দ্রনাথকে বাউল হিসেবে দাঁড় করানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ যদি বাউল হন, তাহলে উনিশ শতকে বঙ্গদেশের অভিজাত কারা ? আর ব্রাত্যজনের নায়ক লালনকেই বা কোন দলে ফেলা হবে ? তবে হ্যাঁ, রবীন্দ্র-সাহিত্যে বিশেষত গানে বাউল-দর্শনের ছাপ খানিকটা যে আছে তা অবশ্যই স্বীকার করি, তবে তাঁকে বাউল বলতে আমি রাজি নই।
দুই.

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রবীন্দ্রনাথের ভাব-ভাবুকতা ও কাব্যাদর্শ নিয়ে বঙ্গদেশে এ জোর সাহিত্যিক বিতর্ক সব সময় চালু ছিল। কিন্তু ষাটের দর্শকে রবীন্দ্রনাথ-বিতর্কের সলতেটা জোরেসোরে উসকে দেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের প্রসাদভোগী বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকরা। ১৯৬৭ সালে ২১ জুন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে তথ্যমন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভবিষ্যতে রেডিও পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি সংস্কৃতির মূল্যবোধের পরিপন্থী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচার করা হবে না এবং এ ধরনের অন্যান্য গানের প্রচারও কমিয়ে দেয়া হবে।’ এর আগে মাহে-নও পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যের ধারা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে সৈয়দ আলী আহসান বলেছেন, ‘আমাদের সংহতির জন্য যদি প্রয়োজন হয়, আমরা রবীন্দ্রনাথকেও অস্বীকার করতে প্রস্তুত আছি’। পাকিস্তানি শাসক ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানের বিপন্ন সংহতির পটভূমিতে দাঁড়িয়ে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থেই রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করার তাগিদ অনুভব করেছিলেন। তাদের মনে হয়েছিল যে, পাকিস্তানের সংহতির স্বার্থে পূর্ববাংলার জনগণকে বাঙালির আবহমান ঐতিহ্য ও রবীন্দ্রনাথ থেকে বিচ্ছিন্ন করা জরুরি। তারা বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভিত্তির জন্য রবীন্দ্রনাথ তেমন জরুরি নন। বরং তাকে বর্জন করাই পাকিস্তানের সংহতির জন্য উত্তম। এই রবীন্দ্র-বিরোধিতার পিছনে কাজ করেছে সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তবে, হ্যাঁ রবীন্দ্র-প্রতিভা মূল্যায়নে বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা বরাবর একই দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছেন, তা বলা যাবে না। সৈয়দ আলী আহসান পাকিস্তান আমলে একরকম বলেছেন, স্বাধীনতার পর মত পরিবর্তন করেছেন। একরামদ্দীন ( ১৮৮২- ১৯৪০) রবীন্দ্র-প্রতিভা নামক গ্রন্থে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ এমন একজন কবি ‘যাঁর রচনা কাব্যজগতে বিপ্লব আনয়ন করে’। তিনি আরোও লিখেছেন , ‘রবীন্দ্রনাথের হৃদয় যুক্তিপ্রধান, ভাবপ্রধান নয়’। ঢাকা মুসলিম সাহিত্য-সমাজের প্রাণপুরুষ কাজী আবদুল ওদুদ রবীন্দ্র কাব্যপাঠের পর বাকি জীবনে পবিত্র দায়িত্বজ্ঞানে ও গভীরনিষ্ঠায় রবীন্দ্র-প্রতিভা তুলে ধরার কাজটি করে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ‘বাড়ির কাছের মুসলমানদের জন্য কী করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি বাস্তবিকই মুসলমানের পরমবন্ধু ব্যতীত আর কিছু নন। তিনি আরও বলেন,
‘ মুসলমানির অর্থ যদি হয় সত্যপ্রীতি, কা-জ্ঞা-প্রীতি, মানবপ্রতি, জগৎপ্রীতি, ন্যায়ের সমর্থন ও অন্যায়ের প্রতিরোধ, তবে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বড় মুসলমান এ যুগে আর কেউ জন্মেছেন কিনা সে-কথা এই সব সমালোচকদের গভীর বিচার-বিশ্লেষণের বিষয় হওয়া উচিত।’ ( ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ’, ১৯৪১)
বলতে প্রলুব্ধ হচ্ছি যে, ১৯২৬ সালে ঢাকা সফরে এলে ১০ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলে প্রাধ্যক্ষ এএফ রহমানের সভাপতিত্বে কবিকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন ও আবুল ফজল। সংবর্ধনা-সভায় কবিকে প্রদত্ত মানপত্রে বলা হয়: “ হে পুণ্যচিত্ত, অনন্ত রূপ-পিয়াসী সাধক! আমাদের আদর্শ কর্মপ্রাণ, ¯েœহ-প্রবণ, ভক্তবীর হযরত মুহম্মদের জীবনের মূলমন্ত্রটা তোমার একটা ছন্দে বেশ সুন্দর অভিব্যক্ত হইয়াছে-‘ বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়।/ অসংখ্য বন্ধন মাঝে মহানন্দময়/ লভিব মুক্তির স্বাদ’।” মানপত্রে আরও বলা হয়, ‘তোমার এই ছন্দটা সেই পুরুষ-সিংহের প্রতি আমাদের ভক্তি অধিকতর প্রগাঢ় করে তুলে এবং নব নব ভাবে মরুর যোগীকে দেখিবার ইচ্ছা জাগায়’। নবি করিম (সা.)-এর জীবনাদর্শ ও মূলমন্ত্র ‘কর্মের মধ্যে মুক্তি’র বার্তা ‘তামসিক ভারতে’ রবীন্দ্রনাথই নতুন করে ঘোষণা করেছেন- এ কথাও মানপত্রে উচ্চারণ করা হয়। শিখা গোষ্ঠীর লেখকদের মধ্যে কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ও আবুল ফজল ছিলেন আমৃত্যু রবীন্দ্রানুরাগী। যদিও ওদুদ ব্যতীত বাকি তিনজন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক হয়েছিলেন। তারপরও সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রশ্নে তারা বুদ্ধির মুক্তির চেতনাকেই লালন করেছেন এবং রবীন্দ্র-মূল্যায়নে উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। মোতাহের হোসেন চৌধুরী ‘সংস্কৃতি-কথা’ গ্রন্থেও একটি প্রবন্ধে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ‘শুধু কবি নন, মহাপুরুষ, আর ‘ শুধু মহাপুরুষ না বলে’ তাঁকে আধুনিক অথবা বিকাশধর্মী মহাপুরুষ বলা উচিত।’ (রবীন্দ্রনাথ) আবুল ফজলও আমৃত্যু রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী ছিলেন। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় প্রণীত রবীন্দ্র-জীবনীর ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সওগাত (১৯৩৩) পত্রিকায় লেখেন: রবীন্দ্রনাথের জীবনী ‘ কোনো একজন ব্যক্তিবিশেষের জীবন-কথা নয়, বরং একটি জাতির যুগ বিশেষের ইতিহাস।’ ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলনের এই মুক্তপ্রাণ অগ্রপথিক এর চার দশক পর তিনি জিয়াউর রহমানের সরকারের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা হয়েছিলেন, ক্ষমতার স্বাদ পেতে টুপি মাথায় দিয়ে বিভিন্ন সিরাত মাহফিলেও যোগ দিয়েছেন, কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাননি। জিয়ার আমলের বিমান বাহিনীর প্রধান এমএ জি তাওয়াবের( যিনি ধর্ম নিয়ে অত্যধিক বাড়াবাড়ি করতেন।) সঙ্গে বিভিন্ন সিরাত মাহফিলে যোগ দিয়ে নিজেকে প্রচ- ধার্মিক হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন ( এহেন আচরণের জন্য কারো কারো কাছে তিনি হাসির খোরাকে পরিণত হন), কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রতি বিরূপতা বা উদাসীনতা প্রদর্শন করেননি কখনও।
সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পাকাপোক্ত করার জন্য পাকিস্তান- আমল থেকে অদ্যাবধি একদল সাম্প্রদায়িকতাবাদী লেখক-বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক নজরুলকে রবীন্দ্রনাথের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তাদের কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথকে বাতিল করে নজরুলকে ‘মুসলমানের বিশ্বকবি’ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। নজরুল সাহিত্যের অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক দিকটা ঢেকে দিয়ে তাকে মুসলমানের কবি করে তুলতে চেয়েছেন। এহেন উদ্দেশ্য প্রণোদিত সাহিত্যিক-অপতৎপরতা পাকিস্তান আমলেও ছিল , এখনও রয়েছে। রাখঢাক না রেখেই বলছি, নজরুলচর্চার সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন, তাদের অধিকাংশই প্রগতি ও আধুনিকতা-বিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে শক্তিশালী করতেই এরা নজরুলচর্চা করেন। এরা মুক্তিযুদ্ধ মানে না, আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি প্রচ- বিরুপ। সাহিত্য-সংস্কৃতিবোধে নি¤œরুচিসম্পন্ন পাকিস্তানি ভাবাপন্নদের কেউ কেউ নজরুলের সাহিত্য নিয়ে বাগাড়ম্বর করে চলেছে আজ অবধি। তারা নজরুলের বিদ্রোহী ভাবসত্তাটি ভেঙে ফেলতে চায়- প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী ইসলামি রেনেসাঁসের কবি নজরুলকে। তারা রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের মধ্যে দ্বন্দ্বও আবিস্কার করে ফেলেছে। তারা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে যে, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে নজরুল অনেক বড়মাপের কবি। মিথ্যাবাদী ,স্বার্থবাদী ভ-দের মুখোশ উন্মোচন করতে কাজী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক প্রতিদ্বন্দ্বীর ছিল না, ছিল গুরু-শিষ্যের মত। দেশের সবাই যখন তাকে পরিহাস করেছিলেন রবীন্দ্রনাথই তাকে যথার্থ বুঝতে পেরেছিলেন। ( আমার বন্ধু নজরুল: তার গান) তিনি আরও বলেন নজরুল প্রথম- যৌবনে রবীন্দ্রনাথের গানকে সবার উপরে স্থান দেন। প্রয়াণ দিবসে কবির স্মৃতির শ্রদ্ধা ও ভক্তি জানিয়ে আকাশবাণীতে পাঠ করেন ‘রবিহারা’।
মাঝে মাঝে মনে হয়, রাজনীতির চাপান-উতর সয়ে রবীন্দ্রনাথ কী বাংলাদেশে টিকে থাকবেন ? নাকি বিসর্জনের ঢাকের বাদ্যে পদ্মা-যমুনা- গড়াই-ইছামতির অথৈ জলে হারিয়ে যাবেন ? উন্নাসিক, গণসম্পৃক্তাহীন সংস্কৃজিীবীরা তো তাঁকে ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। কেউ কেউ তাকে আটকে রাখতে চাইছে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ড্রয়িং রুমে। কখনোও কখনোও মনের ভেতরে প্রশ্ন জাগে, তিনি কী অপ্রাসঙ্গিক - আমাদের কালের সহগামী নন? তার কবিতা কী লবনাক্ত, বিস্বাদময় ? রবীন্দ্রনাথের ‘আকুল ভক্ত’ না হয়েও বলবো, তিনি টিকে আছেন, টিকে থাকবেন। গ্রহণ-বর্জনের দোদুল-দোলায় আর যা-ই হোক রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই বেঁচে থাকবেন। তাঁর সৃষ্টির তীর্থের দিকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালিকে ফিরে তাকাতে হবেই।

তিন.
রবীন্দ্রনাথ ভালোভাবেই জানতেন যে, ‘বাংলাদেশের অনেকস্থানে এক ফরাশে হিন্দু-মুসলমান বসে না, ঘরে মুসলমান আসিলে জাজিমের এক অংশ তুলিয়া দেওয়া হয়, হুঁকার জল ফেলিয়া দেওয়া হয়।’ তারপরও তিনি হিন্দু-মুসলমান বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে তৎপর ছিলেন সব সময়। তিনি মনে করতেন, শাস্ত্রের দোহাই পেড়ে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা উচিৎ নয়। তাই সর্বান্তকরণে চেষ্টা করেছেন বাঙালি মুসলমান সমাজের সঙ্গে সখ্য-সম্পর্ক গড়ে তুলতে। মুসলমান সমাজেও তার গুণগ্রাহী ও অনুরাগীর সংখ্যা ছিল উল্লেখ করার মতো। মুসলমান এলিটদের সঙ্গে কবির পত্রবিনিময়, কবির প্রতি শিক্ষিত মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির অভিনন্দন ও সম্মাননাজ্ঞাপন তারই প্রমাণ বহন করে। শুধুমাত্র বাঙালি মুসলমান সমাজে নয়, অন্য দেশের খ্যাতিমান মুসলিম রাষ্ট্রনায়ক, চিন্তাবিদ ও প-িতদের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে কবির বৈঠক হয়েছে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এ বৈঠককে মুসলমানদের জন্য নবজাগরণ হিসেবে তুলনা করেছেন। মৌলানা জিয়াউদ্দিনকে কবি শান্তিনিকেতনের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তরুণ কবি নজরুলকে ‘বসন্ত’ নাটিকা উৎসর্গ করেন, ভূমিকা লিখে দেন লোকগবেষক মনসুরউদ্দীনের ‘হারামণি’ বইয়ের। শান্তিনিকেতনে হায়দরাদের নিজামেরর আনুকূল্যে চালু করেন ইসলামি বিভাগ। দেশে নতুন পদ্ধতির শিক্ষা প্রবর্তনের প্রস্তাব ও কবির শিক্ষা ভাবা নিয়ে সুদীর্ঘ পত্র লেখেন স্যার আজিজুল হককে। একরামউদ্দীন, কাজী আবদুল ওদুদ, তৎকালীন বাংলা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী স্যার আজিজুল হক, হুমায়ূন কবির, সৈয়দ মুজতবা আলী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাসান সোহরাওয়ার্দী, শাহেদ সোহরাওয়ার্দী, গোলাম মোস্তফা,আবুল কালাম শামসুদ্দীন , জসীম উদদীন, বন্দে আলি মিয়া,মুহম্মদ মনসুরউদ্দিন, সুফিয়া কামাল প্রমুখ ছিলেন রবীন্দ্র-সাহিত্যের সমঝদার ও বিশ্লেষক। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শুধু গীতাঞ্জলির মধ্যেই ইসলামের মর্মবাণীর সম্পূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে। এতে পত্রিকা-সম্পাদককে পত্র লিখে রবীন্দ্রনাথ সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।’ ( ভূইয়া ইকবাল, ‘রবীন্দ্রনাথ ও মুসলমান সমাজ’) তিনি রবীন্দ্র-কবিতার ভাব ও আদর্শের সঙ্গে ইসলামের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। গোলাম মোস্তফার মতে, রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিকে যেভাবে দেখেছিলেন তা ‘ইসলামে সম্পূর্ণ অনুমোদিত’, এবং ‘ পৌত্তলিকতা, বহুত্ববাদ, নিরীশ্বরবাদ, জন্মান্তরবাদ, সন্ন্যাসবাদ প্রভৃতি’ ইসলাম বিরোধী ধারণা রবীন্দ্র-সাহিত্যে নেই বললেই চলে। অথচ একই গোলাম মোস্তফা পাকিস্তান আমলে রচিত ‘ইকবাল ও রবীন্দ্রনাথ’ প্রবন্ধে সম্পূর্ণ ভিন্ন গীত গেয়েছেন। তিনি রবীন্দ্র-কাব্যের প্রেরণা ও দর্শনকে ‘মধ্যযুগীয়’ আখ্যা দিয়ে রবীন্দ্র-কাব্যকে আমল দিতে পারেননি। পাকিস্তানবাদী লেখক হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম শামসুদ্দীন ১৯২০-এর দশকে লেখা তার ‘ কাব্য-সাহিত্যে বাঙালী মুসলমান’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, ‘কবির সৃষ্টি সুন্দর হইল কিনা, তাহাতে বিশ্বমানবের মঙ্গল নিহিত আছে কিনা’ তা-ই বিবেচ্য বিষয়, অন্য কিছু নয়। যারা কাব্যে বা সাহিত্যে ইসলামি সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্ব খোঁজেন, তাদেরকে কাব্য বা সাহিত্য না পড়ে ইতিহাস পড়ার উপদেশ দিয়েছেন। অথচ এই লেখক ১৯৬৭ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে বিতর্ককালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন। কবিদের মধ্যে চারজন -বেনজির আহমেদ, তালিম হোসেন, মঈনুদ্দীন, ফররুখ আহমদ- রবীন্দ্রনাথকে কবিতা উৎসর্গ করেছেন-পরে পাকিস্তান সরকারের সমর্থনে বেতারে রবীন্দ্রসঙ্গীত বন্ধের প্রস্তাবে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। আমার নিজের ভেতরে কেবলই প্রশ্ন জাগে, এঁরা কী ইসলাম রক্ষার জন্য স্বাক্ষর করেন, নাকি রাজনৈতিক চাপে ?
পাকিস্তানের তামুদ্দনিক স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা রবীন্দ্রনাথকে মুসলিম-বিদ্বেষী বলে প্রচার করেছেন আর জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক কবিকে বিদ্যাসগরের মতো বড়মাপের মানুষ নন বলে মনে করেছেন। রবীন্দ্রনাথ কী সত্যিই মুসলিম-বিদ্বেষী ছিলেন ? ইতিহাস কী তাই বলে ? ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, ১৯০৪ সালের ১৬ অক্টোবর সাম্প্রদায়িক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে কলকাতা নাখোদা মসজিদের ইমামকে রাখি বেঁধে দেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯০৫ সালে কলকাতার মল্লিকবাজারে ব্যারিস্টার আবদুর রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মুসলমানদের সভায় কবি বক্তব্য রাখেন এবং মুসলমানদের ধন্যবাদ দেন।
রবীন্দ্রনাথ ও তার পরিবার মুসলিম-বিদ্বেষী ছিলেন না কখনই। বরং জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল অপৌত্তলিক ব্রাহ্মসমাজের অনুসারী, নিরাকার পরমব্রহ্মে বিশ্বাসী। তাদের প্রার্থনাসভায় উপনিষদ, বাইবেল, কোরআন, গীতা পড়া হতো। বিস্মিত হবার কিছু নেই যে, রবীন্দ্রনাথ ইসলামের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। ১৯৩৩ সালের ২৬ নভেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বোম্বের আনজুমানে আহমদিয়ার সম্পাদককে রবীন্দ্রনাথ একটি বাণী প্রদান করেন। বাণীটি বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়:
“ জগতে যে সমান্য কয়েকটি মহান ধর্ম আছে,ইসলাম ধর্ম তাদের মধ্যে অন্যতম। মহান এ ধর্মমতের অনুসারীদের দায়িত্বও তাই বিপুল। ইসলামের অনুসারীদের মনে রাখা দরকার, ধর্মবিশ্বাসের মহত্ত্ব ও গভীরতা যেন তাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ওপর ছাপ রেখে যায়।”
হযরত মুহাম্মদ ( সা.) জন্মদিবস উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ একটি বাণী স্যার আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দীকে প্রদান করেন। ১৯৩৪ সালের ২৫ জুন বাণীটি আকাশ বাণীতে প্রচারিত হয়। বাণীটি নি¤œরূপ :
‘ইসলাম পৃথিবীর মহত্তম ধর্মের মধ্যে একটি। এই কারণে ইহার অনুবর্তিগণের দায়িত্ব অসীম, যেহেতু আপন জীবনে এই ধর্মের মহত্ত্ব সম্বন্ধে তাহাদিগকে সাক্ষ্য দিতে হইবে।.. অদ্যকার এই পুণ্য অনুষ্ঠান উপলক্ষে মস্লেম ভ্রাতাদের সহিত একযোগে ইসলামের মহাঋষির উদ্দেশ্যে আমার ভক্তি-উপহার অর্পণ করিয়া উৎপীড়িত ভারতবর্ষের জন্য তাঁহার আশীর্বাদ ও সান্ত¦না কামনা করি।’ ((প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রজীবনী ৩য় খ-,১৩৯৭, পৃ. ৫৪০-৪১।) এ বাণী থেকে ইসলাম ও নবি করিম (সা.) সম্পর্কে কবির অবস্থান সুষ্পষ্ট হয়ে যায়। এরপরও কী রবীন্দ্রনাথকে মুসলিম-বিদ্বেষী বলা হবে ?
দিল্লির জামে মসজিদ থেকে প্রকাশিত ‘দ্য পেশওয়া’ পত্রিকার নবি সংখ্যার (১৯৩৬ ) জন্য রবীন্দ্রনাথ যে-বাণী প্রেরণ করেন, তাতেও তিনি ‘পবিত্র পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সা. এর উদ্দেশ্যে’ তার ‘ অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন’ করেন। এই বাণীতে তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের ইতিহাসে এক নতুন সম্ভাবনাময় জীবনশক্তির সঞ্চার করেন তিনি, বয়ে আনেন নিখাদ, শুদ্ধ ধর্মাচরণের আদর্শ।’ অমিতাভ চৌধুরীর ‘ রবীন্দ্রনাথ ও ইসলাম’ গ্রন্থের এক জায়গায় লেখা আছে : শান্তিনিকেতনে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপিত হতো, সেখানে প্রায়ই গাওয়া হতো-
‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ জ্বালিয়ে তুমি ধরায় আসো-/ সাধক ওগো, প্রেমিক ওগো,/ পাগল ওগো ধরায় আসো।’
ইসলাম ধর্মের মহান প্রবর্তক ও ইসলাম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ উঁচু ধারণা পোষণ করতেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে পৃথিবীর একটি মহৎ ধর্ম বলে জানতেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকার সম্পাদককে লেখা এক পত্রে কবি বলেছেন, ‘ মুসলমানদের প্রতি আমার মনে কিছুমাত্র বিরাগ বা অশ্রদ্ধা নাই বলিয়াই আমার লেখার কোথাও তাহা প্রকাশ পায় নাই।’ তারপরও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক এলিটদের একটি অংশ আজও রবীন্দ্রনাথকে মুসলিম-বিদ্বেষী হিন্দু কিংবা ব্রাহ্ম কবি হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যক্তি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ হিন্দু সমাজভুক্ত ছিলেন, এটা সবাই স্বীকার করবেন। তবে কবি হিসেবে কোনো গোত্র বা সম্প্রদায়ের ছিলেন না; ছিলেন সবার, বিশ্বমুখিন ভাবনা তার সাহিত্যের ভেতর সংগুপ্ত আছে বলেই তো তিনি ‘বিশ্বকবি’। তিনি বলেছেন, ‘আমি হিন্দু একথা বলিলে যদি নিতান্তই কোন লজ্জার কারণ থাকে তবে সে লজ্জা আমাকে নিঃশব্দে হজম করিতেই হইবে।’ ( ‘কালান্তর’, কালান্তর, রবীন্দ্র রচনাবলী ১৩৫৪। পৃ:২৪৩) তাঁর মতে, ব্রাহ্মসমাজ আসলে হিন্দুসমাজের ইতিহাসের একটি অংশ। তবে তিনি যে ধর্ম পালন করেছেন, তা আসলে শাস্ত্রশাসিত ধর্মের বাইরের ধর্ম-- কবির ধর্ম,সর্বজনীন মানবধর্ম। এই ধর্মের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের কোনোই সম্পর্ক নেই। আর হিন্দুত্ববাদীরা রবীন্দ্রনাথের ধারেকাছেও ঘেঁষেন না। না শিবসেনা, না বজরং দল, না আরএসএস। তারপরও ধর্মমূঢ়জনেরা তাঁকে ও তার ধর্মভাবনার মর্মবাণীকে বুঝতে চায়নি বা পারেনি। তারা চেয়েছে রাজনীতির মোড়কে পুরে খ-িত রবীন্দ্রনাথকে সর্বজনের সামনে তুলে ধরতে। কাজী ওদুদ তার এক লেখায় যথার্থই বলেছেন, ‘ বড় কবিকে বুঝতে হলে বড় চিত্ত চাই।’ সেই চিত্ত কী আমাদের আছে? নাই, তবে অবশ্য দরকার। নইলে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

আবদুল্লাহ আল আমিন : সহযোগী অধ্যাপক, মেহেরপুর সরকারি কলেজ, মেহেরপুর। ফোন: ০১৮১৬-০৫৬৯৩৪







সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ৮:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×