somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিয়ে যাওয়া হাসি

০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- আজ অফিস থেকে একটু আগে ফিরো, কেমন?
- কেন?
- নাহ, তেমন কিছু না। এমনিতেই।
এই কথা বলেই খানিকটা হাতাশ হয়েই চলে গেলো ও। ও কখনো এমন আচরন করে না তাই একটু অবাকই হলাম! তবুও কিছু না বলেই অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। কিন্তু বের হয়েই কেন জানি ওর কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো। মনে হচ্ছে কোথায় যেন সুরটা কেটে গেছে।

ধুর আমি ও ও করছি কেন? এই ও হচ্ছে আমার আদরের বউ ঐন্দ্রিলা । হুম অনেক আদরের বউ। প্রায় তিন বছরের প্রেমের পরিণতি স্বরূপ ঐন্দ্রিলা আজ আমার বউ। প্রেমের শুরুটা ওই ৮-১০টা প্রেমের মতই সাধারনভাবে। দেখা, কথা বলা, ধীরে ধীরে প্রেম তবুও অন্যরকম একটা ভালোলাগা ছিলো সবসময়। ওর আরেকটা নাম আছে “মম”। ওর এই “মম” নামটাই আমার বেশি পছন্দ তাই এই নামেই বেশি ডাকি। আর ওকে “মম” ডাকি কেন সেটা নিয়ে আমার চার বছরের মেয়ে ঈপ্সার কৌতুহূলের শেষ নেই। একদিন ওর সামনে যখন মমকে ডাকছিলাম তখন ঈপ্সা হটাৎ করে বলে উঠলো,
- বাবা, তুমিও মম (MOM) কে মম ডাকো?? ওর এই কথা শুনে মম বললো, “মামনি, তোমার বাবা আমার নাম ধরে ডাকে। তোমার মতো করে ডাকে না।”
- হুম আমিও তো তোমাকে নাম ধরে ডাকি। মম তাই না?
শেষ পর্যন্ত মম ঈপ্সাকে মম (Momo) আর মম(Mom) এর পার্থক্য বুঝাতে না পেরে হাল ছেড়ে দেয়। আমিও মা মেয়ের এই তর্কবিতর্ক ভালোই উপভোগ করি।

মম বিয়ের পর খুব সহজেই সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিয়েছিলো। ওর মায়াভরা ভালোবাসা দিয়ে অনেক যত্নে পুরা সংসারকে গুছিয়ে নিলো। কখনোই তেমন কিছুই চাইতো না। ভালবেসে আমি যাই দিতাম তাতেই সে খুশি থাকতো। এমন না যে অনেক কিছুই দিতাম বা ও অনেক মূল্যবান কিছু সে চাইতো। ও শুধু আমার পাশেই থাকতে চাইতো সব সময়। কিন্তু এই সময়টাই তেমন খুব একটা দিতে পারতাম না আমি। চাকরির প্রতি এতটাই অন্তঃপ্রান ছিলাম যে খুব অসুবিধা ছাড়া কখনোই ছুটি নিতাম না। আর সেটাও হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলো মম। হাজারো কিছু ভাবতে ভাবতে কখন অফিসে চলে আসলাম বুঝতেই পারলাম না। এসেই নিজের ডেস্কে বসে চেয়ারে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। টেবিলে রাখা ছোট ফ্রেমে মম’র হাসিভরা মুখের একটা ছবি দেখে বিয়ের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো! মম সারপ্রাইজ খুব পছন্দ করতো। খুব দামি কিংবা সুন্দর কিছু না। খুব অল্প কিছুতেই অনেক খুশি হয়ে যেতো। তাই ভাবলাম বিয়েটাকেই ওর জীবনের সেরা সারপ্রাইজ করে দিই। যেই ভাবা সেই কাজ। অনেক গোপনে বাবা মাকে রাজি করিয়ে ওর বাসায় প্রস্তাব পাঠালাম। ওর বাবা-মা সবকিছু জেনে তেমন খুব একটা আপত্তি করলো না। আর আপত্তি করারও তেমন কিছু ছিলো না কারন ছেলে হিসেবে মম’র জন্য ভালোই ছিলাম। বিয়ের ঠিক এক সপ্তাহ আগে মম’র বাবা মা ওকে বিয়ের ব্যাপারে জানালো। আর তখনই সে তার বাবা মাকে আমার কথা বললো এবং এই ছেলেকে বিয়ে করবে না জানিয়ে দিলো! কিন্তু ওর বাবা মা বললো, “এখন আর কিছুই করার নেই।” তখন মম দিশেহারা হয়ে আমাকে দেখা করতে বললো। ওর সাথে দেখা করতে গেলাম ধানমন্ডি লেকের পাড়ে। আমি সেখানে যাওয়ার একটু পর ও আসলো। দেখেই বুঝতে পারলাম সারারাত কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে। ওর হাতে একটা প্যাকেট আর কিছু ফুল। আমার কাছে আসতেই বললাম,
- আমার জন্য গিফট এনেছো বুঝি???
ও কিছু না বলেই ধুপ করে প্যাকেট আর ফুল গুলা আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো,
- বাবা আমাকে না জানিয়েই আমার বিয়ে ঠিক করেছে। তোমাকে এতো করে বললাম বাবা মাকে জানিয়ে রাখি তুমি শুনলে না!
- বাহ তোমার বিয়ে, কনগ্রাচুলেশান, কবে??? কতদিন কবজি ডুবিয়ে খাওয়া হয় না!!! আহহ...আমার এই কথা শুনে মম রেগে গিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলো। ওর এই অবস্থা দেখে আমি চুপ করে প্যাকেটটা খুলতে লাগলাম যে প্যাকেটে আমাদের বিয়ের কার্ড আর আমার একটা চিঠি আছে। উপরের কাভারটা খুলতেই দেখলাম সেখানে লিখা আছে, “To My Beloved Wife”। এটা দেখে ওকে বললাম,
- বাহ, তোমার বরটা অনেক রোম্যান্টিক!!! দেখছো কত সুন্দর করে বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছে তোমাকে!!!
মম আর সহ্য করতে না পেরে প্যাকেটটা কেড়ে নিতে গেলে অনেক কষ্টে ওকে থামালাম! কার্ডটা হাতে নিয়ে খুলে একটু পর বললাম,
- এই দেখো দেখো, তোমার আর আমার বিয়ে একি দিনে। শুধু তাই না, তোমার বরের সাথে আমার সবকিছু মিলে গেছে এমনকি আমার নাম, বাবা মার নাম, ঠিকানা সব!!! আর আমার বউয়ের সাথে তোমারও সবকিছু মিলে গেছে! এটা কি করে হলো গো?????
ও আমার হাত থেকে কার্ডটা কেড়ে নিয়ে সবকিছু দেখে আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো। হটাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চার মতো কান্না শুরু করলো। একটু থামতেই অভিমানের সুরে জিজ্ঞেস করলো,
- তুমি আমাকে একটু বললে কি হতো!
- বললে এভাবে তো জড়িয়ে ধরতে না!!!
- আর ধরবোই না আর কখনো!!! হুহ
- আচ্ছা তুমি তো বাবা মাকে বলেছিলে তুমি এই বিয়ে করবে না তাই না???
- হুম করবো না তোমাকে বিয়ে!!! অসভ্য একটা!!!

সেদিনের মতো ওকে বাসায় দিয়ে আসতে গেলাম। গিয়ে দেখি ওর বাবা মা সোফায় বসে আছে। মম’র সাথে আমাকে দেখেই মম’র বাবা ওর মাকে বললো,
- তোমার মেয়ে তো বিয়ে করবে না বলেছিলো, এখন দেখো হবু জামাইকে নিয়েই ঘুরছে!
এই কথা শুনে মম লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। আর ওর বাবা এসে বললো,“কিরে বিয়ে করবি?” মম কিছু না বলে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি দাড়িয়ে থেকে দেখলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভালাবাসার একটি!! বাবা মেয়ের ভালবাসা!

এসব কথা ভাবতে ভাবতে হটাৎ ভাবলাম আজ ওকে সারপ্রাইজ দিই! যেই ভাবা সেই কাজ। স্যারের রুমে গিয়ে একদিনের ছুটি চাইতেই স্যার অবাক হয়ে গেলেন! পরে একটু সব খুলে বলতেই স্যার বললেন, “আমার অফিস তো অনেকদিন করলে, যাও কয়েকদিন বউয়ের অফিস করো। আমি ফোন না করার আগে অফিসে আসার দরকার নাই।” স্যারকে ধন্যবাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসার জন্য রওনা দিলাম! যাওয়ার পথে ওর জন্য কিছু ফুল কিনলাম।

বাসায় পৌছে বেল না টিপে সাথে থাকা চাবি দিয়েই দরজাটা খুললাম! ড্রয়িং রুমে ঈপ্সা টিভি দেখছিলো। ওকে চুপ থাকার ইশারা করে খুব সন্তর্পনে রুমে ঢুকলাম! দেখি মম ব্যালকনির গ্রীলে হাত রেখে বাইরে তাকিয়ে আছে, আমি পেছন থেকে গিয়ে চোখ চেপে ধরতেই ও ভয় পেয়ে ঘুরে তাকালো। আমাকে দেখেই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- তুমি এখানে কেন???
- কেন? আমি কি থাকতে পারি না?
- নাহ মানে তুমি তো অফিসে থাকার কথা!
- হুম আজ অফিস বাসায় করবো! বলেই ওর হাতে ফুল গুলা দিলাম আর তা দেখে মম’র মুখে যে হাসি ফুটলো হয়তো সেটাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি!

- তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আমি রান্নাটা সেরে নিই। আজ তোমার প্রিয় খাবার গুলাই রান্না করবো। বলেই দৌড়ে ও রান্নাঘরে চলে গেলো! আমি ফ্রেশ হয়ে ঈপ্সার সাথে টিভি দেখছিলাম। রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই একটু এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে মমকে দেখতে লাগলাম! বেশ হাশিখুশি মনেই কাজ করছে ও। মনে হচ্ছে কতদিন পর ওর হাসিমুখটা দেখছি! একটু পর আমার দিকে চোখ পড়তেই ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আমি বললাম, “কিছু না।” এই শুনে ও আবার কাজে মন দিলো! হটাৎ খেয়াল করলাম ওর সামনের দিকে চুলগুলা ওর চোখে এসে পড়ছে। কিন্তু হাতে মসলা লেগে থাকায় সে কোনভাবেই ঠিক করতে পারছে না! আমি এগিয়ে গিয়ে চুল সরিয়ে দিয়ে ওর কপালে আলতো করে চুমু দিলাম আর ও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

মনে হলো কিছুক্ষনের জন্য স্বর্গটা আমার ঘরেই নেমে এসেছিলো! এই স্বর্গটা আর হারাতে দিবো না!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×