জিবিএস এক ভয়ানক সমস্যা (Devastating disorder)। অনেক সময় কোন লক্ষন-ই নেই, হঠাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, দুই পা নাড়াতে পারছেন না। আস্তে আস্তে হাতও নাড়াতে পারছেন না!
তবে আশার কথা হল, জিবিএস এর উন্নতি অনেক ভাল। যদিও অনেক অসময় লাগে। যত জিবিএস রোগী দেখেছি, তবে আমার দেখা সবচেয়ে এক্সক্লুসিভ হল,,,, একজন স্কুল শিক্ষক। মিরপুরে একটা হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন।
উনাকে কতভাবে যে বুঝালাম,,,,,ভাইজান আপনার একটু সময় লাগবে। আপনি ইনশাল্লাহ ভাল হয়ে যাবেন। উনি আমার কথা শুনে আশান্বিত হয়, আবার আমি চলে গেলে আশাহত হয়।
এক সপ্তাহ গিয়ে দুই সপ্তাহ যায়। উনার আর উন্নতি নাই। আমাকে দেখলেই বলে ,,,, ডাঃ সাহেব আপনার আর একটু সময়ের কত বাকি।
আমি লজ্জিত ভাবে জবাব দেই,,, জি জি আপনার উন্নতি হচ্ছে। এই তো হাত পা আগের চেয়ে বেশি মুভ হচ্ছে ইত্যাদি।
কিন্তু স্যারের রোগ আসলেই ভাল হচ্ছে না, এক মাস হয়ে গেল। সামান্য পরিবর্তন। আমি নিজেও হতাশ। যদিও জানি উন্নতি শুরু হতে দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস লাগে।
উনাকে দেখা একটু সমস্যা ছিল, উনাকে দেখার মত কেউ ছিল না। টাকা দিয়ে একটা ছেলেকে রাখত দেখাশুনার জন্য। ছেলেটাও মাঝে মাঝে থাকত না।
স্যার একদিন আমাকে বলল, ডাঃ সাহেব আমি কিন্তু অবিবাহিত। আপনাকে মিথ্যা বলেছিলাম। ছোট ভাই বোনদের পড়াশুনা করাতে গিয়ে বিয়ে করার সুযোগ হয় নাই।
আমি আকাশ থেকে পড়লাম, স্যারের কথা শুনে। শিক্ষক মানুষের আত্নসম্মান অনেক বেশি। তাই কিছু বললাম না ।
তারপর দুদিন পর স্যারকে দেখতে দেখতে বললাম, ভাইজান, আপনি ভাল হয়ে একটা বিয়ে করে নেবেন। আমার কথা শুনে উনার চোখে মুখে একটা বিশাল আনন্দ খেলে গেল।
আমি মনে মনে বললাম, ভাইজান আপনার এখন হুশ হয়েছে বিপদে পড়ে। যত সমস্যাই থাক না কেন,,, সময় মত বিয়ে করা উচিত ছিল । আজ অন্তত বউ আপনার পাশে থাকত।
আস্তে আস্তে স্যারের উন্নতি হতে শুরু করল।
তারপর থেকে স্যার প্রায় সময় তার বিয়ে নিয়ে কথা বলত। আর আপসোস করত। কত মেয়ে তাকে পছন্দ করত। কিন্তু বিয়ে করে নাই। এখন ৪০ পার হয়ে গেছে। কে তাকে বিয়ে করবে। তবে এবার ভাল হয়েচ বিয়ে করবে ১০০% প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল
৯০% উন্নতির পর স্যারকে আমরা বাসায় কিছু ব্যায়াম আর ফলো আপ দিয়ে ছেড়ে দিলাম।
বছর খানেক পর , উনি আমার ফোন নাম্বার কার কাছ থেকে পেয়ে,,,,, আমাকে কল দিল। উনার পরিচয় দিল। জিজ্ঞাসা করলাম, ভাইজান কেমন আছে,,, সম্পূর্ণ ভাল, উত্তর আসল স্যারের মুখ থেকে । আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু উনি বিয়ে করছে সেটা না জেনেই কথা বার্তা শেষ হয়ে গেল।
ইচ্ছা করেই জিজ্ঞাসা করি নাই,,, বিয়ে করলে তো বলতই! যাই হোক না জানার আপসোস টা আমারও না হয় থেকে যাক।
এবার আসি আসল কথায়,,, জিবিএস ( GBS - Gullian barree syndrome) হলে আতংকিত হবেন না। এটা এক ধরনের পলিনিউরোপ্যাথি, পেরিপেরাল নার্ভের মায়োনিল সিত ক্ষতি গ্রস্ত হয়। যেটা আস্তে আস্তে রিজেনারেশন শুরু হয় দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাসের মধ্যে। এই রোগের সঠিক কারন অজানা। তবে ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়াল ইনফেকশনের পর এটা সাধারনত হয়।
জিবিএস সবসময় দুই পা থেকে শুরু হয়, দুই পা অবশ, দুবল, ঝিন ঝিন বা ব্যথা দিয়ে শুরু হয়। আস্তে আস্তে হাতের দিকে যায়। হসপিটালাইজেশন করা টা জরুরি হতে পারে, প্রথম দিকে। নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক এই রোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অনেক জিবিএস এর চিকিৎসায় চিকিৎসকদের বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে বেশির ভাগ জিবিএস রোগী ৬ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়।
ধন্যবাদ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম
কো- অর্ডিনেটর
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা
জিবিএস হলে কেন হাত পা অবশ হয়ে যায় ?
যেকোন প্রয়োজনে যোগাযোগ
[email protected]
www.visionphysiotherapy.com
01787152872
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার , হাউজ ২৩ , লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর ৭, উত্তরা, ঢাকা । ০১৯৩২৭৯৭২২৯ এপয়েনম্যান্ট
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১১:২৯