অপ বাকের মূল প্রশ্ন পয়গম্বরের সংখ্যাটি কোথা থেকে এলো? সেই সাথে অপ বাক এই ব্লগ সাইটে আলোচিত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতেও আলো ফেলেছেন। অপ বাকের লেখা দীর্ঘ হলেও তার প্রশ্নগুলো বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। যদিও তিনি দক্ষ সাতারুর মত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে যাওয়া-আসা করেন, তবু বিভিন্ন ফুল দিয়ে গাঁথা তার মালাটি খুবই শিল্প শিল্প হয়।
তার লেখায় মনে হতে পারে তিনি প্রশ্নটা করেছেন জনাব সাদিককে। যদিও প্রশ্নটা পুরো ধর্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠানটির প্রতি। তবে যেকোনো মুহুর্তে জনাব রিউ এসে বলতে পারেন যে অপ বাক আরজ আলী মাতুব্বরের বই পড়ে এই প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দায়-দায়িত্ব অবশ্যই অপ বাকের।
অপ বাকের চিন্তা-ভাবনার একটি বিষয় অত্যন্ত লক্ষণীয়। তা হলো, পূর্বপুরুষ ও মুরুব্বীদের কথা, সংখ্যা, তত্ত্ব ও তথ্যের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা। তাদের কথাকে তিনি এক বাক্যে ছুঁড়ে ফেলে দেন না। বরং শিশুর সারল্যে জানতে চান এমন উদ্ভট তত্ত্বের উৎস কী? টেক্সট বুক বোর্ডের বইতে পয়গম্বরের সংখ্যাটি তিনি মনোযোগী ছাত্রের মত বিশ্বাস করেছিলেন শিশুবেলায়, অন্তত: তার প্রশ্নের ফর্ম্যাটে মনে হয়। এবং এখন আরো নানা তথ্যে ও তত্ত্বে পুষ্ঠ হওয়ার পর এসব সংখ্যা, তত্ত্ব ও তথ্যের যৌক্তিকতা নিয়ে তিনি বিনয়ী প্রশ্ন তুলেছেন। (আমি অবশ্য এসব সংখ্যা/তত্ত্বের বিষয়ে তার মত যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নই। আমি বলবো না এসব মনগড়া সংখ্যা, তবে এরকম সংখ্যা কেউ গুনেনি তা আমরা একরকম নিশ্চিত।) তবে মিস্টিকরা যখন থেকে ধর্মের নতুন একটা ব্যাখ্যা দিতে শুরু করলো, তখন থেকে এসব সংখ্যা এবং বিশদ বর্ণনার একটা নতুন তাফসির আমরা পেয়েছি। যেহেতু এসব সংখ্যা প্রমাণ করা সম্ভব নয়, সেহেতু তারা বলে যে এসব সংখ্যা/দৃশ্য আসলে সিম্বল, প্রতীক; এর অন্য অর্থ আছে।
একইরকম ভাবে আদম 60 হাত লম্বার একটি ব্যাখ্যা দেয়া হতে পারে যে প্রাচীন আরবীতে 60 শব্দের আরেকটি অর্থ হলো অনেক। আদম অনেক লম্বা বুঝাতেই 60 হাত বলা হয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
নতুবা অপ বাকের মত পোস্টারুরা এসে প্রশ্ন করবেন, 60 হাত লম্বা লোকটিকে কোথায় কব্বর দেয়া হয়েছে? সেই কব্বর কত হাত লম্বা? আর আদম যদি 60 হাত হয়, তবে বিবি হাওয়া নিশ্চয়ই 50 হাত ছিল, না হলে দুজন দুজনের সাথে যোগাযোগ করতো কি করে? তাদের বাচ্চা কাচ্চারা কি 60 হাত লম্বা হয় নাই? তারা কি হঠাৎ করেই 4 হাত লম্বা হয়ে গেল? নাকি ধীরে ধীরে ছোট হতে লাগলো? তার মানে কি মানুষ ক্রমশ: খর্বাকায় হয়ে যাচ্ছে? তাহলে চীন-কোরিয়ার লোক লম্বা হচ্ছে কেন-তারা কি একই আদমের সন্তান না?
এমন প্রশ্ন তোলা হলে তখন জনাব রিউ এসে বলবেন, এসব প্রশ্ন আপনারা আরজ আলী মাতুব্বরের বই পড়ে শিখেছেন। (জনাব রিউ সম্ভবত: এসএসসির বিভিন্ন বিষয়ের উত্তরগুলো মুখস্থ করার সাথে সাথে প্রশ্নগুলোও মুখস্থ করেছিলেন, নতুবা পরীক্ষার হলে কি করে বুঝবেন কোন উত্তর তিনি কোন প্রশ্নের জবাবে লিখবেন। অথবা তার ধারণা পৃথিবীর সব প্রশ্ন টেস্ট পেপারের মত বা প্রশ্নব্যাংকের বইতে পাওয়া যায়। তা থেকেই মানুষ প্রশ্ন করে।)
যা হোক, জনাব রিউ-এর প্রশ্নের পর দীক্ষক দ্রাবিড় এসে বলবেন, রূপকথার গল্প হলিউডের লোকজন খুব ভালবাসে। তারা রূপকথা দিয়ে এনিমেশন ছবি বানায় যা বাচ্চারা দেখে এবং একইরকম রূপকথা দিয়ে তারা ধর্ম-ধর্ম ছবিও বানায়, সেগুলো আবার বুড়োরা দেখে।
(এসব কথায় সামহোয়ারইন যথেষ্ট মাইন্ড খাবে না, কারণ তাদের আলেক্সা র্যাংক তরতর করে 96 হাজার থেকে 76 হাজারে চলে আসবে। এখানেও সংখ্যার এক জাটিল্য। সংখ্যা কমে যাওয়াও অগ্রগতি। তবে সবচে' বড় অগ্রগতি হলো প্রশ্নব্যাংকের মুখস্থ প্রশ্নের বাইরের প্রশ্ন করতে শেখা, তার উত্তর খুঁজতে শেখা। আর যারা শেখা প্রশ্নের বাইরে প্রশ্ন দেখলে মূচ্র্ছা যায় তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলা। জরুরি ভীষণ জরুরি।)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০