Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতির অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ -
সাগরের জলরাশি এবং তলদেশের বিশাল সম্পদ কাজে লাগানোই হোচ্ছে Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি –
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতির অন্যতম অনুষঙ্গ সমুদ্রের মাছ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ আহরণ –
বঙ্গোপসারের Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতির বিবেচনা মাথায় রেখে সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’’
১৯৭৪ খৃ: সমুদ্র বিজয় অভিযাত্রার সুচনা করেন -
স্বাধিনতার ০৩ বছরের মাথায় তিনি বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের (২) নাম্বার ধারা অনুযায়ি সমুদ্রসিমা সংক্রান্ত
Territorial Water & Maritime Zones Act, 1974প্রনয়ণ করেন -
১৯৭৪ খৃ:- ১৪ ফেব্রুয়ারি যা গেজেট হিসেবে প্রকাশ পায় -
পরে তার সুযোগ্য কন্যা জননেতৃ শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক United Nations Convention on the Law of Sea (UNCLOS, 1982 গৃহিত হয় -
আন্তর্জাতিক আইন ও সমুদ্রসিমা নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলার রায়গুলোর যথাযথ প্রতিফলন ঘটিয়ে আরো যুগোপযোগি করার লক্ষ্যে
১৯৭৪ খৃ: আইনটি প্রয়োজনিয় সংশোধন পুর্বক
০৭ ডিসেম্বর ২০২১ খৃ: পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের Maritime Affairs Unit কর্তৃক প্রস্তুতকৃত Territorial Water & Maritime Zones Act, (Amendment) Bill-2021, প্রনয়ণ করে –
১৯৭৪ খৃ: বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক সমুদ্রসিমা বিষয়ক আইন পাশ হওয়ার পর পরই মিয়ানমারের সাথে সেন্টমার্টিনে ১২ মাইল Territorial Sea’’ ঠিক করে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়-
১৯৭৪ খৃ: প্রনিত আইনটি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে অনুকরনিয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে –
এর প্রতিফলন দেখা যায় ০৮ বছর পরে ১৯৮২ খৃ: যা চুড়ান্তভাবে জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে –
২০০১ খৃ: আওয়ামি লিগ সরকার ১৯৮২ খৃ: : United Nations Convention on the Law of Sea (UNSCLOS, 1982) আইনটি অনুসমর্থন করে –
ফলে পরবর্তি ১০ বছরের মধ্যে ৩৫০ মাইলব্যাপি মহিসোপানের দাবি জাতিসংঘে উত্থাপনের দায় সৃষ্টি হয় –
এরই ধারাবাহিকতায় মাননিয় প্রধানমন্ত্রি জননেতৃ শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ খৃ: দীর্ঘ ৩৮ বছর ঝুলে থাকা
বাংলাদেশের সমুদ্রসিমা চুড়ান্তভাবে নির্ধারনের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার সময়োপযোগি অ্যাক সাহসি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সফলভাবে সমুদ্রসিমা নির্ধারণ হয় –
মাননিয় প্রধানমন্ত্রি জননেতৃ শেখ হাসিনার কুটনৈতিক প্রজ্ঞায় ২০১২ ও ২০১৪ খৃ: আন্তর্জাতিক সারিশ আদালতের (P.C.A) রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসিমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয় –
ফলে ২০১২ খৃ: ১৪ মার্চ মিয়ানমার থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমপরিমান Territorial সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, অধিকার ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়-
২০১৪ খৃ: ০৮ জুলাই ভারত থেকে ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিরোমিটারের মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার পায় বাংলাদেশ -
যা মুল ভুখন্ডের ৮০.৫১ শতাংশ –
বিশ্বব্যাপি Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় বছরব্যাপি সমুদ্র ঘিরে ০৩ – ০৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকান্ড সংঘটিত হোচ্ছে -
বিশ্বের মানুষের ১৫% আমিষ জোগান দেয় সমুদ্রের মাছ, প্রানি ও উদ্ভিদ –
সমুদ্র তলের গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র থেকে পৃথিবির ৩০% গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয় –
সামুদ্রিক জিববৈচিত্রের জ্ঞান বৃদ্ধি করে সমুদ্র নির্ভর ঔষধ শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব –
ধারনা করা হোচ্ছে ২০৫০ খৃ: মধ্যে পৃথিবির জনসংখ্যা হবে ৯০০ কোটি-
এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে খাবার যোগান দিতে বিশ্বাবাসিকে সমুদ্রের মুখোমুখি হোতে হবে –
সাম্প্রতিক বছরগুলো সকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যেমন :
অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন সংস্থা (OECD )
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসুচি (UNEP )
বিশ্ব ব্যাংক,
খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO )
ইওরোপিয় ইউনিয়ন (EU ) প্রভৃতিতে
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলো –
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি জোরদার করতে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের সমন্বিত নিতি, পরিকল্পনা সহ সেমিনার, ফ্যাস্টিভ্যাল ইত্যাদি আয়োজন করে চলেছে –
বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও অধিদপ্তর সমুদ্র সম্পদ আহরণে অভ্যন্তরিণ বিভিন্ন কর্মপন্থা, পদক্ষেপ গ্রহণ, কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে –
২০১৭ খৃ: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় অধিন Blue Economic Cell গঠন করে –
২০১৯ খৃ: Maritime Zones Act করে বাংলাদেশ সরকার -
সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় সরকার সামুদ্রিক অর্থনিতি বিকাশের জন্যে ২৬ টি সম্ভবনাময় কার্যক্রম চিহ্নিত করেছে –
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি বেগবান করতে আন্তর্জাতিক, বানিজ্যিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ পুর্বক সুনির্দিষ্ট
০৯ টি খাত চিহ্নিত করে সেসব খাত বিকাশ ও বাস্তবায়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়েছে –
যথাযথ কার্যাবলি বা প্রকল্প গ্রহণ করার জন্যে মন্ত্রনালয়, বিভাগ, দফতরকে রূপরেখা প্রদান করা হোয়েছে –
০১. সামুদ্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা –
০২. সামুদ্রিক মৎস্য চাষ উন্নয়ন –
০৩. বানিজ্যিক নৌপরিবহনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন –
০৪. সমুদ্র ভ্রমণ পর্যটনের বিকাশ সাধন –
০৫. অফসোর জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সুনিল বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন –
০৬. স্থিতিতিশিল জিবিকার জন্যে ম্যানগ্রোভ বাস্তুসংস্থানগত সেবাগুলো নিশ্চিতকরণ –
০৭. জাহাজ নির্মাণ ও রিসাইক্লিং শিল্প সম্প্রসারণ –
০৮. সামুদ্রিক দুষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ-
০৯. মেরিন স্পেশাল প্লানিং বাস্তবায়ন –
বর্তামানে বাংলাদেশের অর্থনিতিতে সমুদ্রসম্পদের অবদান মাত্র ৯.৬ বিলিয়ন ডলার যা মাত্র ৬ % –
স্থলভাগের প্রায় সমপরিমান সমুদ্রসিমা এখন মুল্যবান সম্পদের ভান্ডার –
ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসিমাকে প্রেট্রোবাংলা খনিজ সম্প অনুসন্ধানে ২৬ টি ব্লকে ভাগ করেছে –
এর মধ্যে গভির সমুদ্রে ১৫ টি ও ১১ টি ব্লক অগভির সমুদ্রে –
ইজারা দিয়ে এ সব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা –
বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান বিপুল আগাছা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের ঔষধ তৈরি করা সম্ভব –
এ সব আগাছার মধ্যে “স্পিরুলিনা” অত্যাধিক মুল্যবান –
বাংলাদেশের সমুদ্র সিমার মধ্যে বিপুল পরিমান “গ্যাস হাইড্রেট”-
২২০ প্রজাতির “সি উইড”-
৪৭৫ প্রজাতির ‘‘সামুদ্রিক মাছ’’ –
৪৯৮ প্রজাতির ‘‘ঝিনুক’’-
৫২ প্রজাতির ‘‘চিংড়ি’’ –
০৫ প্রজাতির ‘‘লবস্টার’’ –
২০ প্রজাতির ‘‘কাকড়া’’ –
৬১ প্রজাতির ‘‘সি গ্রাস’’ –
১৭ প্রকার খনিজ বালু-
চিহ্নিত করা হোয়েছে –
বাংলাদেশের কিছু প্রজাতির ‘‘সি উইডে’’ প্রচুর প্রোটিন আছে যা ‘‘ফিস ফিড’’ হিসেবে আমদানি করা ‘‘ফিস অয়েলের’’ বিকল্প হোতে পারে –
আবার কিছু “অ্যানিমেল ফিডের” মান বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হোতে পারে –
খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে : তেল, গ্যাস, চুনা পাথর প্রভৃতি –
১৭ প্রকার বালু রয়েছে যার মধ্যে ‘‘মোনাজাইট’’ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ –
তা ছাড়া সমুদ্র তলদেশে ‘‘সিমেন্ট’’ বানানোর উপযোগি প্রচুর ‘‘ক্লে’’ রয়েছে –
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হোলো
(০১) দক্ষ জনশক্তির অভাব –
(০২) প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব –
(০৩) সম্পদের পরিমান ও মুল্য সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব –
(০৪) মেরিণ রিসোর্স ভিত্তিক গবেষণা না হওয়া -
(০৫) Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগের অভাব এবং
(০৬) গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে গবেষণা জাহাজ না থাকা-
২০৪১ খৃ: উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গঠনে সমুদ্রে পাওয়া মিয়ানমার থেকে পাওয়া ০১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার ও ভারত থেকে পাওয়া ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকার যথাযথ ব্যবহারে
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখবে –
সমুদ্র গবেষণা ও মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্যে সরকার “ওসানোগ্রাফিক রিসার্স ইনস্টিটিউট” এবং একটি “মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি” প্রতিষ্ঠা করেছে –
হাতে নেয়া হোয়েছে “গভির সমুদ্র বন্দর” নির্মানের কাজ –
সমুদ্র উপকুল এলাকায় “তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র” তৈরি করা হোচ্ছে –
এ সত্বেও Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতির সুদুরপ্রসারি অগ্রযাত্রায় সরকারকে নিতে হবে কিছু গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ –
(০১) গ্যাস সহ অন্যান্য ম্যুলবান সম্পদ উত্তোলন –
(০২) মৎস্য সম্পদ আহরণ –
(০৩) বন্দরের সুবিধা সম্প্রসারণ –
(০৪) পর্যটন ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মাফিক কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে ২০৩০ খৃ: নাগাদ বছরে আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব –
(০৫) সেই সঙ্গে Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতিতে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন ও পরামর্শ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে –
যা আমাদের দেশের জন্যে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করবে –
তেল গ্যাস ছাড়াও সমুদ্র তলদেশে ১৩ স্থানে সোনার চেয়ে অধিক মুল্যবান “বালু” অর্থাৎ ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, যাতে মিশে আছে ইলমেনাইট, গানেট, সেলিমেনাইট, জিরকন, রুনটাইল, ম্যাগনেটাইট প্রভৃতি –
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের
(০১) পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় –
(০২) প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় -
(০৩) বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয় -
(০৪) নৌ পরিবহণ মন্ত্রনালয় -
(০৫)মৎস্য ও প্রানি সম্পদ মন্ত্রনালয় -
(০৬) পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় -
(০৭) বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয় – কাজ করছে –
বিশেষজ্ঞরা বলছেন মন্ত্রনালয়গুলোর সমন্বিত কাজ করা উচিৎ -
কেউ কেউ Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতিকে কাজে লাগাতে পৃথক “সমুদ্র মন্ত্রনালয়” নামে একটি পৃথক মন্ত্রনালয় গঠনের প্রস্তাব করেছেন –
একই সাথে “ মাননিয় প্রধানমন্ত্রির নেতৃত্বে “ একটি শক্তিশালি আন্ত: মন্ত্রনালয় সম্নবয় কমিটি” গঠনেরও প্রস্তাব দেন -
Blue Economic বা সুনীল অর্থনিতির অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ -
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




