ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়ে তোলার অন্যতম প্রধান সংগঠক
পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বরিশালের অহংকার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা)
যে জাতি তার গৌরবগাঁথার কথা, ঐতিহ্যের কথা ভুলে যায়- সে জাতি স্বীয় অধঃপতন থেকে সহজে পরিত্রাণ পায় না ! যে কোনো জাতির নবজাগরণের জন্যে প্রয়োজন অতীতের গৌরবময় অধ্যায়গুলো থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা গ্রহণ ! বড়োই অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা !
১৯৫২ র ভাষা আন্দোলনের মতো আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন ! সৃষ্টি করেছিলেন ১৯৫৪ র ‘যুক্তফ্রন্ট’ ! সে সব বীরদের ‘ভুলে যাওয়া’ কিন্তু ‘ভুলে যাওয়ার মতো নয়’ এমন একটি নক্ষত্র হচ্ছেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ! এ দেশের প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর আগমন অনেকটা ধূমকেতুর মতো ! তিনি আসলেন, দেখলেন, জয় করলেন এবং চলে গেলেন ! অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র জীবনের দৈর্ঘ ছোটো হতে পারে কিন্তু গভীরতা ও ওজন মোটেও কম নয় !
রাষ্ট্রভাষা কর্ম পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ খৃঃ দাবি দিবস পালন ও ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার ব্যপারে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে ! মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অলি আহাদ, আবদুল মতিন, গাজিউল হক প্রমূখ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে মত দেন এবং ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে সর্বাত্মক কাজ করেন !
মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ খৃঃ শহীদদের রক্ত মাখা জামা হাতে তুলে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত লক্ষাধিক মানুষের প্রতিবাদ সভার সভাপতি পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ই প্রথম তাঁর ভাষণে, ‘‘দাবি আদায় না হওয়া পর্য্ন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান’’ ! এই মহান নেতা মাত্র ৩০ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু বরণ করেন ! তাঁর জন্ম হয়েছিলো ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৬ খৃঃ বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের পেশকার বাড়িতে ! ০৬ এপ্রিল, ১৯৫৬ খৃঃ ঢাকার মিটফোর্র্ড হাসপাতালে দুরারোগ্য সংক্রামক কালব্যধি ‘জার্মান মিজেল’ (ত্বকের নিচে বসন্ত গুটিকা) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন !
আমরা ও আমাদের নতুন প্রজন্ম এই অকাল প্রয়াত মহান যুব নেতার (যুব সূর্য) নাম জানি না ! আমরা জানতে চাই আমাদের অতীত নায়কদের সম্পর্কে ! বাবা মা সৎ চরিত্রবান না হলে যেমন সন্তানরা সৎ চরিত্রবান হয় না, ঠিক তেমনি দেশের অতীত নায়ক বা গুণী ব্যাক্তিদের বিজয় গাঁথা না জানলে নতুন প্রজন্ম তার চরিত্র গঠনে দিক নির্দেশনা পাবে না !
১৯৫৩ খৃঃ জুড়ে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্থান ছিলো মুসলিম লিগ বিরোধি গণ আন্দোলনে উত্তাল ! ঘোষিত রাজনৈতিক দল না হলেও এ গণ আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের ভূমিকা ও নেতৃত্ব ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ ! সে বছর শেষের দিকে যুবলীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বরিশাল জেলার যুবলীগের ও কৃষক নেতা শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সভাপতিত্বে গণতন্ত্রী দলের জেলা অফিসে মুসলিম লিগ বিরোধি রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সক্রিয় কর্মীদের একটি বৈঠক (সভা) আহ্বান করেন ! প্রথমেই পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) এ বৈঠকের উদ্দেশ্য ব্যখ্যা করে বলেছিলেন, ‘যে প্রকারেই হোক মুসলিম লিগকে ১৯৫৪ র প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুৎ করতেই হবে ! এ ক্ষেত্রে মুসলিমলিগ বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি ‘যুক্তফ্রন্ট’ গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন’ ! পাক ভারত উপমহাদেশে (এমন কি পৃথিবিতে কোথাও) তখন পর্যন্ত কোনো সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে একটি যৌথ প্লাটফর্ম (‘যুক্তফ্রন্ট’) গঠন করে নির্বাচন করেছে এমন নজির নেই ! তাই উপস্থিত সকলের মনে নানা প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক ! কিন্তু যৌথ প্লাটফর্ম (‘যুক্তফ্রন্ট’) র প্রয়োজনিয়তা যুবলিগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) এমন সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলেন যাতে করে সেখানকার সবাই তাতে একমত পোষণ করতে কোনো দ্বিধা করলেন না ! কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘যুক্তফ্রন্টের’ অন্তর্ভূক্ত করার বিরোধিতা করেন ! শেষ পর্যন্ত সর্র্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, (১) আওয়ামি লিগ, (২) কৃষক শ্রমিক পার্টি, (৩) গণতন্ত্রী দল ও (৪) নেজামে ইসলাম এই ৪ (চার) টি দল নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হবে ! এই ৪ (চার) দলের কেন্দ্রিয় নেতাদের সাথে যোগাযোগে করা ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দায়িত্ব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহমেদের উপর অর্পন করা হয় ! যতদূর জানা যায়, ১৯৫৪ এর ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা), অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বরিশাল থেকেই শুরু হয়েছিলো ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন ও ‘যুক্তফ্রন্ট’এর বিজয়ে তাঁর ভূমিকা ছিলো অন্যতম শীর্ষস্থানীয় !
০২
‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র ভুমিকা ছিলো অবিসাংবাদিত ও অনন্য ! একজন যুব নেতা হয়ে তিনি মওলানা ভাষানি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, শেখ মুজিবুর রহমান, শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক, নেজামে ইসলামের মওলানা আতাহার আলি, গণতন্ত্রি দলের মাহমুদ আলি প্রভৃতি জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় সাধনে অনন্য ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন !
‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) প্রথমে মওলানা ভাষানি, শেখ মুজিবুর রহমান ও আতাউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ! মওলানা ভাষানি ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম থেকেই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের ব্যাপারে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক বেশ কিছু শর্ত আরোপ করলে এ বিষয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় ! কিন্তু জাগ্রত যুব সমাজ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অচলাবস্থা দূর করার ব্যাপারে দেশব্যাপি জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয় ! এ ব্যাপারে উদ্যোগতাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র নাম শীর্ষ স্থানে উল্লেখ করা যায় ! শের ই বাংলা এ. কে. ফজলুল হক কিছু কিছু শর্ত শিথিল করার ব্যাপারে এবং তাঁকে ‘যুক্তফ্রন্ট’র প্রথম সারিতে টেনে আনতে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র ভুমিকা সর্বজনবিদিত ! অনুরোধ উপরোধ থেকে শুরু করে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক এর পদযুগল জড়িয়ে ধরা পর্যন্ত কোনো কিছুই বাদ যায়নি ! এর সাথে রাজনৈতিক যুক্তিতর্কতো ছিলোই !
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র পদচারনা দেখে শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘এই ছেলেটি কে ? কোথা থেকে নমিনেশন চায় ? একেতো নমিনেশন দিতেই হবে’ ! তিনি ডেকে বলেছিলেন, ‘তুমি এতো খাটাখাটি করছো, বলো তুমি কোথা থেকে নমিনেশন চাও ? আমি তোমাকে নমিনেশন দেবো এবং আমি তোমার নির্বাচনি এলাকায় বার বার যাবো’ ! অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বললেন, ‘এবার আমি নির্বাচন করবো না! আপনারা ‘যুক্তফ্রন্ট’র ঐক্য বজায় রেখে মুসলিম লিগকে পরাজিত করুন ! আমরা আপনাদের জেতাবার জন্যে কাজ করে যাবো ! পরবর্তীকালে দেখা যাবে কোথায় নির্বাচন করবো !
পূর্ব বাংলায় তখন প্রগতিশীল রাজনৈতিক ধারার জয়যাত্রা চলছে (১৯৫০-৫৪) ! এ সময় একদিন চার জেলার চার যুবলীগ নেতা সহ কারকুনবাড়ি লেনে মাওলানা ভাষানির বাড়িতে বসে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) কে বললেন, ‘শোন ইমাদুল্লাহ ! তুমি আওয়ামি লিগ নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না ! হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, আতাউর রহমান ও শেখ মুজিবুর রহমান আমার পাশেই আছে ! ‘যুক্তফ্রন্ট’র ঐক্য বজায় রাখার জন্য তোমাকেই নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে ! যুবনেতাদের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে ! ক্ষমতায় যাবার নেশা তোমাকে যেন মত্ত না করে’ ! মাওলানা ভাষানির দু’পায়ে সালাম করে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বললেন, ‘হুজুর, আমার নীতি আমি আগেই ঠিক করে রেখেছি ! ‘যুক্তফ্রন্ট’ ক্ষমতায় গেলে আমি ক্ষমতার বাইরে থেকে ‘চাবুক’ হিসেবে ঘুরে বেড়াবো ! কেউ নীতি বিচ্যুৎ হলেই আমার ‘চাবুক’ সেখানে কাজ করবে ! আমার সাথে থাকবে প্রগতিশীল যুব সমাজ ! আপনি আমাদের দোয়া করবেন’! ‘যুক্তফ্রন্ট’র নির্বাচনি প্রচারনার সময় শহরে গ্রামে গঞ্জে বক্তৃতা দিতে গিয়ে, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) চাবুকের প্রসঙ্গটি তুলে ধরতে ভুলতেন না !
মনি সিং, খোকা রায়, বরুণ রায়, মোহাম্মদ তোয়াহা, আবদুল হক, আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), গাজিউল হক, এম. আর. আখতার মুকুল, মোস্তফা নুরুল ইসলাম, অলি আহাদ, মহিউদ্দিন আহমেদ প্রমুখের সাথে তাঁর কেবল রাজনৈতিক নয় ব্যক্তি সম্পর্কও ছিলো খুব গভীর ! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ছিলো আন্তরিক বন্ধুত্ব ! রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে ছিলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ! অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) মওলানা ভাষানির ছিলেন স্নেহধন্য ! মওলানা ভাষানি প্রয়ই তাঁকে বলতেন, ‘ইমাদুল্লাহ, ক্ষমতায় যে দল বা যে ব্যক্তি যাক না কেনো তুমি কিন্তু সে দিকে হাত বাড়াবে না ! তুমি থাকবে আমার সাথে ! মনে রাখবে ক্ষমতার স্বাদ রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম থেকে প্রায়শই দুরে সরিয়ে নিয়ে যায়’ !
০৩
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) বলতেন, ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষবাষ্পে ভারত পাকিস্থান আচ্ছন্ন ! জনগনের মুক্তি সুদুর পরাহত ! বৃটিশ বিরোধি সংগ্রমের চেয়ে অনেক অনেক বড়ো এবং দীর্র্ঘ স্থায়ি রক্তক্ষয়ি সংগ্রাম আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে ! অনেক স্তর পার হতে হবে ! কোনো স্তরই সহজ সরল নয় ! বৃটিশ সরকার ভারত পাকিস্থানের জনগনের মধ্যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ও বিভেদ নীতির যে বীজ বপন করে গেছে সে বীজ এখন শক্ত গাছ হয়ে চতুর্দিকে ডালপালা ছড়াচ্ছে ! এ থেকে মুক্ত হতে কয়েক দশক কেন শতাব্দি কালও লেগে যেতে পার’! তিনি একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থাটাকে কল্পনা করেছিলেন !
২৭ ও ২৮ মার্চ ১৯৫১ খৃঃ ১৪ দফা দাবি নিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক দলের লেজুড় বৃত্তি ছাড়া পূর্ব পাকিস্থান যুবলীগের প্রথম সভাপতি হন মাহমুদ আলি, সহ সভাপতি মোহাম্মদ তোয়াহা, সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মতিন ও রুহুল আমিন, ঐ বছরই ৩০ ও ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৫১ বার্ষিক সম্মেলনে মোহাম্মদ তোয়াহা সভাপতি, অলি আহাদ সাধারণ সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ও মোহাম্মদ সুলতান ! ১৯৫২ খৃঃ যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ তোয়াহা, সহ সভাপতি অলি আহাদ এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) !
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) সহযোদ্ধা সত্য কিরণ আদিত্য (সত্যদা) স্বজন হারানোর বেদনায় প্রলেপ দিতে নেত্রকোনায় গড়ে তুলেছিলেন ‘ইমাদুল্লাহ পাঠশালা’ ও ইমাদুল্লাহ স্মৃতি পাঠাগার’ ! কিছুদিন পরই (১৯৫৮ খৃ সামরিক সরকার পাঠাগার ও পাঠশালা ভেঙ্গে দেয় ! তার (সত্যদা) আক্ষেপ, ‘আজ সুদিন এসেছে কিন্তু সুযোগ নেই ! ব্যধিতে আমার মৃত্যূ হয়নি, কিন্তু দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্য দেশে ! আমার প্রত্যয়েরও নির্বাসন’ ! (সত্য কিরণ আদিত্য বর্র্তমানে ভারতে বসবাসরত)!
তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও স্বজনদের মন্তব্য, ‘তিনি ছিলেন খাপখোলা তলোয়ারের মতো’ ! ‘এমন মেধাবী ছেলে জীবনে কম দেখেছি’! ‘এরকম বিদ্যুতের ঝলকের মতো ছেলে কম দেখেছি’ ! ‘ Friend, Philosopher & Guide’ ! ‘সে ছিলো একজন সাহসি, আদর্শবান এবং বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ’ ! ‘তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বে আরাম আয়েস বলে কিছু ছিলো না’ ! ‘যেটুকু কাজ করেছে সবটাই ছিলো দেশ ও জনগনের জন্যে এবং এটাই ছিলো তাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য’ ! ‘তার সাথে পরিচিত হবার এবং নিবিড় সান্নিধ্য লাভের সুযোগ নিঃসন্দেহে আমার জীবনের এক পরম পাওয়া’ ! ‘আমার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম পথ প্রদর্শ হিসেবে তিনি আজও আমার স্মৃতিতে অম্লান’ ! ‘দুনিয়াটাকে বদলাতে গেলে যে চরিত্র যে মানসিক দৃঢ়তা ও যোগ্যতা লাগে মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) তার প্রত্যেকটি ধারণ করতেন’ ! ‘আমি যদি কারো নিশান বহণ করে থাকি সে মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) নিশান’! ‘তিনি ছিলেন পুরো ৬ (ছয়) ফুট লম্বা সুন্দর সুদর্শন ও সুঠাম দেহের অধিকারি’ ! Tall, well built, funed & cultured’. Where the dark is deepest the light is brightest - এই প্রবাদ বাক্য সত্য প্রমানিত হয়েছিলো অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) জীবনে’ ! ‘তিনি জানতেন যে রাজনীতি তিনি করতে যাচ্ছেন সেখানে আছে দুঃখ কষ্ট জীবন সংগ্রাম আর মৃত্যুর হাতছানি ! যেনে শুনে বিষপান করার মতো ! তবু এই দুঃসহসিক যুবক থেমে থাকেনি তাঁর আদর্শের পথ পরিক্রমায়’ !
কেনো শেষ বারের মতো একবার দেখার সুযোগ দেয়া হলোনা ? যে দুজন মানুষ ইমাদুল্লাহ (লালা) র কাছে সব চেয়ে প্রিয় ও প্রধান ছিলো ! তার মা ও স্ত্রী ! তাদেরকে বাদ দিয়ে ইমাদুল্লাহ (লালা) র কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত কারা নিয়েছিলো ? ইমাদুল্লাহ (লালা) র কাছে শেষ বিদায় নেয়ার সুযোগ যারা দিলো না তারা ক্ষমার অযোগ্য - তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের কাছে আজ ৫০ বছর পরেও (২০০৭ খৃ ! এই সমাজে আজো প্রতিদিন গুরুত্বপূর্র্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় মা মেয়ে এবং স্ত্রীকে বাদ দিয়ে ! এর পরিবর্র্তন কবে হবে ?
বরাবর,
১. মাননীয় মেয়র, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ), নগর ভবন, ফুলবাড়িয়া, ঢাকা-১০০০।
২. মাননীয় মেয়র, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, নগর ভবন, বরিশাল-৮২০০।
বিষয় ঃ ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) র নামে সড়কের নামকরণ করার আবেদন।
জনাব,
যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনত নিবেদন এই যে, মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও যুক্তফ্রন্ট গঠনের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং ২২ ফেব্রয়ারি, ১৯৫২ খৃঃ প্রতিবাদ সভার সভাপতি পূর্ব পাকিস্থান যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) ও নামে তৎকালিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ চাঙ্খারপুল হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টি এস সি ও সড়ক দ্বীপ পর্যন্ত সড়কটির নাম ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) সড়ক নামকরনের বিনত আবেদন জানাচ্ছি।
অনুরূপভাবে তার জন্ম স্থান কৌশোর যৌবন (আবাস স্থল) বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের চৈতন্য স্কুল থেকে সদর রোড পর্যন্ত সড়কটির নাম ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) সড়ক নামকরনের সবিনয় অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
যে জাতি তার গৌরবগাঁথার কথা, ঐতিহ্যের কথা ভুলে যায়, সে জাতি স্বীয় অধঃপতন থেকে সহজে পরিত্রান পায় না । যে কোনো জাতির নবজাগরণের জন্যে প্রয়োজন অতীতের গৌরবময় অধ্যায়গুলো থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা গ্রহণ।
মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও যুক্তফ্রন্ট গঠনের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং ২২ ফেব্রæয়ারি, ১৯৫২ প্রতিবাদ সভার সভাপতি পূর্ব পাকিস্থান যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) মাত্র ৩০ বছর বয়সে - ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯২৬ খৃঃ বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের পেশকার বড়ি জন্ম গ্রহণ করেন। ৬ এপ্রিল, ১৯৫৬ খৃঃ ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে- দুরারোগ্য গুটি বসন্ত রোগে অকাল মৃত্যু বরণ করেন। আমরা ও আমাদের নতুন প্রজন্ম এই অকাল প্রায়াত মহান যুব নেতার নাম জানি না। আমরা জানতে চাই আমাদের অতীত নায়কদের সম্পর্কে। বাবা মা সৎ চরিত্রবান না হলে যেমন সন্তান ভালো হয় না, ঠিক তেমনি দেশের অতীত নায়ক বা অতীত গুণী ব্যক্তিদের বিজয় গাঁথা না জানলে নতুন প্রজন্ম তার চরিত্র গঠনে দিক নির্দেশনা পাবে না।
অতএব মহাত্মন সমীপে বিনত আবেদন, তৎকালিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ চাঙ্খারপুল হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টি এস সি সড়ক দ্বীপ পর্যন্ত সড়কটির নাম “ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) সড়ক” নামকরনের বিনত আবেদন জানাচ্ছি।
অনুরূপভাবে তার জন্ম স্থান কৌশোর যৌবন (আবাস স্থল) বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের চৈতন্য স্কুল থেকে সদর রোড পর্যন্ত সড়কটির নাম “ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ ইমাদুল্লাহ (লালা) সড়ক” নামকরনের সবিনয় অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৪