somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃটিশ মেয়েরা -২

১০ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমবার কিছুদিন একসাথে কাজ করার পর জেনিফারের সঙ্গে আমার বহুদিন দেখা হয়নি। অবশেষে গত সপ্তাহে কাজের সিডিউলে জেনিফার উইলিয়ামসের নাম দেখলাম। আমার সাথে তার একই গাড়িতে যেতে হবে কিন্তু সে এবার ড্রাইভার নয়। ড্রাইভার অন্য একজন।
নির্দিষ্ট সময়ে জেনিফারের বাসা থেকে গাড়িতে তুলে নেয়া হলো। প্রাইভেট কারের পেছনের আসনে জেনিফার আমার সঙ্গে এসে বসলো। অনেকদিন পর জেনির দেখা পেয়ে খুব ভালো লাগলো। ওর পড়াশোনা, কাজ ইত্যাদির খোজখবর নিলাম। জেনে দুঃখিত হলাম, সে আমার নামটাই শুধু ভুলে যায়নি, আমার সাথে আগের পরিচয়ের সবই বেমালুম ভুলে গেছে। আমার কথা তার একটুও মনে নেই। জেনিকে জানালাম, তার সঙ্গে আমার আগেরবার পরিচয় হয়েছিল প্রায় আট মাস আগে।
পরে মনে হলো, নতুন করে পরিচয় হওয়াটাও খারাপ না। আগের চেয়ে এখন আমি বৃটিশ উচ্চারণ কিছুটা ভাল বুঝি। তাই আলোচনাটাও ভালভাবে জমানো যাচ্ছিলো। সে জানালো, গত সপ্তাহে তার নার্সিং কোর্সের অধিকাংশই শেষ হয়ে গেছে। এখন সে বিভিন্ন হাসপাতালে ইন্টার্নি করার চেষ্টা করছে। আগামী সপ্তাহেও তার একটা ইন্টারভিউ আছে। এ ফাঁকে সময়টা নষ্ট না করে পুরনো কোম্পানিতেই কিছুদিন কাজ করে কিছু পয়সা কামিয়ে নিচ্ছে।
জেনি জানালো, এখন সে ভিডব্লিউ গলফ গাড়ি ব্যবহার করছে। যদিও সে এবার কোম্পানির গাড়ি চালানোর ইন্সুরেন্স পায়নি। কারণ তার গাড়ি গত কয়েক মাসে দুইবার ছোটখাট এক্সিডেন্ট করেছে। জেনি জানালো সেসব এক্সিডেন্টে তার কোনো দোষ ছিল না। আমি শুনে হাসলাম।
জেনির মোবাইলে তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, এমনকি তার পোষা কুকুরটারও ছবি রাখা আছে। আগ্রহ দেখাতেই জেনি সবগুলো একে একে সবগুলো ছবি দেখানো শুরু করলো। জানালো জেনির জন্মের এক বছর পর থেকেই তার বাবা-মা আলাদা হয়ে গেছে। জেনি একমাত্র মেয়ে। সে এখনো তার মায়ের সঙ্গে থাকে। অবশ্য বাবার সঙ্গেও জেনির যথেষ্ট ভাল যোগাযোগ আছে। আমার সামনেই একবার ফোনে তার বাবার সঙ্গে কথা বললো। কথার শেষে খুব সুন্দর করে বললো, আই লাভ ইউ। বুঝলাম, তার বাবার বিশাল ভক্ত সে।
এক পর্যায়ে জেনি সরাসরি আমার বয়স জিজ্ঞাসা করলো। বৃটিশরা কোনো ভনিতা ছাড়াই সরাসরি এসব কথা বলে থাকে। জবাব দিতেও কোনো দেরী করে না। বয়স চুরিও করে না। আমি অবশ্য অমন হতে পারিনি। বললাম অনুমান করতে। কিন্তু সে কোনো অনুমানের ধার ধারলো না। বারবার জিজ্ঞাসা করতেই থাকলো। তাই বয়সটা তাকে বলতেই হলো। বলার পরে তার বয়সটাও সে জানালো। সে আরো জানালো, বয়সের তুলনায় আমাকে কম বয়স্ক মনে হয়। আমার অবশ্য বলা হলোনা, বয়সের তুলনায় জেনিকেও অনেক কম বয়স্ক মনে হয়।
কাজ শেষে গাড়ি থেকে জেনির বাসায় নামিয়ে দেয়ার পরে ড্রাইভারের সিটে বসা ভারতীয় ছেলেটা বললো, জেনি তোমাকে খুবই পছন্দ করে।
জিজ্ঞাসা করলাম, কিভাবে বুঝলে?
সে জানালো, মোবাইলের ছবি দেখানোর সময় জেনি বারবার তোমার হাত ছুঁয়ে দিচ্ছিলো। তার কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
পরদিন আবার জেনির সঙ্গে গল্প করতে করতে কাজে গেলাম। জেনি জানালো, সে অ্যাডভেঞ্চার খুব পছন্দ করে। ফেসবুকে তাকে অ্যাড করতে অনুরোধ করলো। জানালো, সেখানে তার দেশ বিদেশের বহু সুন্দর ছবি দেয়া আছে।
বৃটিশ মেয়েরা নাচা-নাচিতে খুবই ওস্তাদ। গাড়িতে একটা গান ছাড়া হয়েছিলো। সেটার তালে জেনি সিটে বসেই কিছুক্ষণ নাচানাচি করলো। এক পর্যায়ে আমাকে গানের তালে কয়েকবার ঘুষিও মারলো। আমি নেহাত ভদ্র লোক বলে ঘুষি খেয়েও বেরসিকের মতো চুপচাপ বসে থাকলাম।
পরদিন গাড়ির সবার জন্যই আমি একটা করে অরেঞ্চ জুসের ক্যান গিফট নিয়ে গিয়েছিলাম। জেনি উঠার আগেই গাড়ির সবাইকে তা দিয়ে দিয়েছিলাম। জেনি উঠার পরে তাকেও একটা দিলাম। অরেঞ্জ জুস উপহার দেয়ার কারণটা সে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো। আমিও রহস্যময় হাসি দিয়ে একটু ভনিতা করার চেষ্টা করলাম। ভারতীয় ছেলেটা অবশ্য ব্যাপারটা ফাঁস করেই দিল যে, আজকে সবাইকেই আমি অরেঞ্জ জুস দিয়েছি।
বৃটিশরা এসব ব্যাপারে খুবই সচেতন। কেউ কোনো উপকার করলে বা গিফট দিলে সেটা ভালই মনে রাখে। লাঞ্চের সময়ই তার প্রতিদান পাওয়া শুরু হলো। জেনির আনা টিফিন বক্সটা দেখার মতো। অনেকগুলো খাবার তাতে। সে লাঞ্চের জন্য এনেছে একটা ইনস্ট্যান্ট নুডলস প্যাকেট। তাতে একটু গরম পানি দিলেই রেডি হয়ে যায়। এছাড়া একটা সবুজ আপেল, একটা কলা, চার-পাঁচটা বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় চকলেট (এগুলোকেই এরা সুইট বলে), এক প্যাকেট চিপস, ছোট অরেঞ্জ জুসের প্যাকেট এবং স্ট্রবেরি ফ্লেভার্ড দইয়ের ছোট প্যাকেট। লিস্ট দেখে অনেক খাবার মনে হলেও আসলে খাবারের পরিমাণ তেমন বেশী কিছু না। কারণ সবগুলি খাবারই খুব সামান্য পরিমাণ করে। তবে অরেঞ্জ জুস সংক্রান্ত খাতিরের কারণে বেশ কয়েকটা চকলেট আর চিপস আমার কাছে চলে আসলো।
--------------------------------------

আগের পর্ব: বৃটিশ মেয়েরা


জেনি


জেনির পোষা কুকুর
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৩৯
২৬টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×