কৃষিতে আধুনিক কলাকৌশল ও সুষ্ঠু কৃষি বিপণন ব্যবস্থা, সংরক্ষণ ও পরিবহনের অভাবে প্রতিবছর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কৃষিপণ্য অপচয় হচ্ছে।
আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর যে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য অপচয় হচ্ছে তার আনুমানিক বাজার মূল্য অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা।
রাজধানীর এফবিসিসিআই ভবনে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ এগ্রো-বেইজড প্রোডাক্টস প্রডিউসার এন্ড মার্চেন্টস এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘কৃষি ও কৃষিখাতের আধুনিকায়ন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ এবং রফতানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
বক্তারা বলেন, কৃষি জমি সংরক্ষণ, কৃষিতে আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ করে উৎপাদন বৃদ্ধি, পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তারা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিবছর খাদ্যশস্যের চাহিদা বাড়ছে অর্থাৎ বছরে প্রায় আরো ০.৩৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের প্রয়োজন অন্যদিকে দেশে মাত্র শতকরা ৪ ভাগ চাষযোগ্য ভূমি অনাবাদি রয়েছে।
ফলে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে বক্তারা সেমিনারে আশংকা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ এগ্রো-বেইজড প্রোডাক্টস প্রডিউসার এন্ড মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মরুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি এ কে আজাদ।.।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন ও সংগঠনের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
সেমিনারে বলা হয়, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে চালের চাহিদা দাঁড়াবে বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ বেশী। এছাড়াও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর চাহিদা মেটাতে গেলে বর্তমানের চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
এক্ষেত্রে সবজীর উৎপাদন আরো সাড়ে ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ফলের উৎপাদন দেড় মিলিয়ন মেট্রিক টন, মসলার উৎপাদন ০.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন, মাছের উৎপাদন প্রায় ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন, মাংস ও ডিমের উৎপাদন ১.৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং দুগ্ধ সামগ্রীর উৎপাদন ২.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন বাড়াতে হবে। যা বড়ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
বক্তারা বলেন, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে এদেশে কৃষক তার আয়ের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ ব্যয় করে খাদ্যদ্রব্যের পেছনে। শষ্য কর্তন ও মাড়াই মৌসুমে অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য এবং সুষ্ঠু সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকার দরুণ তারা কম দামে কৃষিপণ্য বিক্রি করে দেন অথচ কিছুদিন পর একই পণ্য তাদেরকে চড়া দামে কিনতে হয়।
মন্ত্রী বলেন, শক্তিশালী অর্থনীতির মূলভিত্তি হচ্ছে শক্তিশালী কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা। তাই আমাদের কৃষিতে নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে যাতে অল্প জমিতে কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বাণিজ্যমন্ত্রী কৃষি পণ্যের রফতানির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু কৃষিতে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রির অভাবে আমরা প্রতিযোগিতাপূর্ণ রফতানি বাণিজ্যে তেমন অগ্রসর হতে পারছি না।