বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত, শোকাহত এবং মর্মাহত ব্রাজিলের সমর্থক বৃন্দ প্রথমেই আপনাদের প্রতি আমাদের গভীর এবং আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এককালে আমরাও ব্রাজিল সাপোর্ট করতাম যখন নাকি ব্রাজিল পেন্টাও জিতে নাই। ৯৪'এর বিশ্বকাপে রোমারিও, বেবেতো আর ডুঙ্গার ব্রাজিল যখন টাই-ব্রেকারে ইতালি'কে হারিয়ে শিরোপা জয় করে তখন আপনাগো লগে আমরা অনেকেও লাফ দিছিলাম যদিও ম্যারাডোনার বিদায়ে ছিলাম দুঃখ ভরাক্রান্ত। শুধু তাই না, বেবেতো আর রোমারিও'র ভিউ কার্ডও যত্ন কইরা রাখতাম। তারপরে আসলো ৯৮'এর বিশ্বকাপ যেখানে ব্রাজিল ছিলো ফেভারিট এবং রোনাল্ডো ছিলো ক্রেজ। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ দর্শক'কে দুঃখ দিয়ে ফ্রান্স ওয়ার্ল্ডকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। কিন্তু ২০০২ সালে ফেভারিট না হওয়া সত্ত্বেও ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয় এবং সেই বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেওয়াতে অনেক আর্জেন্টাইন সমর্থকের পছন্দ ছিলো ব্রাজিল। আর ব্রাজিলের ক্রেজ ছিলো রোনাল্ডো, রিভালদো আর রোনাল্ডিনহো।
এরপরেই সম্ভবত ইতিহাসের চাকা ঘুরে যায়। আগে ব্রাজিলের সমর্থক'রা বড় গলায় কিছু না বল্লেও পেন্টা জয়ের পর থেকেই তাদের হাব-ভাব বদলে যেতে থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই তারা তাদের দল'কে সুপিরিয়র ভাবতে শুরু করে (যদিও ভাবাটা দোষের না) এবং তাদের ব্যাঙ্গাত্বক আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দু'তে পড়ে যায় আর্জেন্টিনা। তাদের ভাব-সাব দেখে মনে হয় আর্জেন্টিনা নামে ওয়ার্ল্ডকাপে কোন দল নাই, আর্জেন্টিনা ওয়ার্ল্ডকাপ কখনোই জয় করতে পারে না। আর ম্যারাডোনা তো কোন ছাড়, তার যেন কোন অবদানই নেই বিশ্ব ফুটবলে। আর বাতিস্তুতা, ক্রেসপো, স্যাভিওলা, রিকুয়েলমে এরা যেন কোন প্লেয়ার'ই না কারন ঐ যে ওয়ার্ল্ডকাপ জিততে পারেনি এরা আর সেখানে ব্রাজিল জিতেছে এই এত্তবার, পাচঁবার। আর এই অহংবোধের কারনে তারা অঘোষিত তবে সম্মিলিতভাবে তৈরী করে বুশের নীতি'র সম্তরাল আরেক নীতি, হয় তুমি ব্রাজিলের সাপোর্টার আর না হয় ব্রাজিলের বিরোধী শিবির। তোমার প্রথম পছন্দ যদি হয় আর্জেন্টিনা তবে তুমি নির্ঘাতভাবেই ব্রাজিল বিরোধী। এবং সেই নীতি'র সফল প্রয়োগ ঘটায় প্রতিবার আগেভাগেই বিশ্বকাপ থেকে ফেরত আসা আর্জেন্টাইন সমর্থদের উপর। আর্জেন্টাইন সমর্থকবৃন্দও পড়েছে বিপদে। এ যেন এমন অপমান, বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী'র বিশাল ল্যান্ড ক্রুজার দ্রুত গতিতে চলে যাওয়ার সময় মাখিয়ে দিয়ে যায় একরাশ কাদা। কিন্তু কিছুই বলার নেই।
আর তার ফলেই আজকের এই সাত গোলের পরাজয়ে সমগ্র আর্জেন্টিনা সমর্থকবৃন্দের এই চাপা হাসি, সেই হাসিতে বাহ্যিকভাবে আমি সক্রিয় অংশগ্রহন করলেও সত্যিকার'ভাবে বলতে গেলে একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে আমি নিজেও কিছুটা ব্যাথিত এবং হতভম্ব। বরং এই ৭ গোল যদি জার্মানী কিংবা ইংল্যান্ড খাইতো তাহলেই সত্যিকারের খুশী হইতে পারতাম
ফেবু
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৬