বর্তমানে পেট্রল বোমার রাজনীতি এক ভয়াবহ উচ্চতায় পৌছে গেছে। সারাদেশের সাধারন মানুষ প্রতিমূহুর্তে আতংকে থাকে কখন সে নিজে অথবা নিকট কোন প্রিয়জন আক্রান্ত হন। আর এ নিয়ে চলছে ব্লেমগেম। খুবই সংক্ষেপে কিছু গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট দেখে নেই,
১। এই পেট্রল বোমা দিয়ে মানুষ মেরে বিএনপি কি আদৌ কোন লাভ করতে পারছে? মোটেই না। বরং ৫'ই জানুয়ারী বিএনপি'কে সমাবেশ করতে না দিয়ে এবং খালেদা জিয়া'কে অবরুদ্ধ করে রাখায় এই আন্দোলনের প্রতি সাধারন মানুষের যে অসাধারন সেন্টিমেন্ট গ্রো করেছিলো, এই মানুষ মারার ঘটনায় সেই সেন্টিমেন্ট প্রতিনিয়ত বদলে গিয়ে ক্ষোভে পরিনত করছে যা কোনভাবেই বিএনপি'র রাজনীতি'র জন্য সুবিধাজনক নয়।
২। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হলো বিএনপি'র ২০১৩ এর আন্দোলন ব্যার্থ হবার অন্যতম কারনও ছিলো এই বার্ন ইউনিট। বিএনপি'র মত একটি দল যারা ৩ বার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো, ঐ একই ভুল বার বার কেন করবে সেটা একটা বড় রহস্য।
৩। আজকে এই আন্দোলনের যে সকল যৌক্তিক কারন ছিলো সবগুলোই পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছে শুধু মাত্র এই এক বার্ন ইউনিটের বিভৎসতার কারনে। কারন যেকোন সুস্থ মানুষের পক্ষে এই ভয়াবহ দৃশ্য সহ্য করা সম্ভব না।
৪। আরেকটি জিনিষ ভুলে যাবেন না এই সরকারের সময়কালে একটি নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে যে এক ইস্যু দিয়ে আরেক ইস্যু ঢেকে দিয়ে সমস্যা আড়াল করা। কয়েকটি শুধু স্মরন করিয়ে দেই। নির্বাচনের পর সীমান্তের কাছে বিপুল পরিমান অস্ত্র উদ্ধার, আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরীর বক্তব্য দেওয়া ভুয়া টেপ, রামপালের অয়েল লিক হওয়ার ঘটনার পরে হ্যাপী-রুবেলের মিডিয়া জুড়ে রগরগে কাহিনী, রানা প্লাজার রেশমা উদ্ধারের ভুয়া কাহিনী। সো এই মানুষ মারা দিয়ে যে জঙ্গীবাদের ইস্যু'কে আবার জাগ্রত করা হচ্ছে কিনা সেটাও প্রশ্ন।
এখন প্রশ্ন হতে পারে আলীগের লাভ'টা কোথায়?
১। এমনিতেই ৫'ই জানুয়ারী একটি সম্পুর্ন অগ্রহনযোগ্য নির্বাচন করে সারাক্ষন বৈধতার সার্টিফিকেট নিয়ে ঘোরা লাগছে তার উপর বিএনপি'র এই আন্দোলন কে ডিনাই করার জন্য তার যেই নৈতিক অবস্থান লাগতো সেরকম কোন অবস্থান নেই। তাদের জন্য এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক ভাবে ডিফেন্ড করা খুবই ডিফিকাল্ট। তার জন্য তাদের সুবিধাজনক অবস্থান হচ্ছে এই আন্দোলনকে সহিংশ রুপ দিয়ে সাধারন মানুষ'কে বিরোধী দলের উপর বীতশ্রাদ্ধ করে দেয়া এবং বিরোধী দলের আন্দোলন'কে কৌশলে ব্যার্থ করে দেওয়া। এবং এর জন্যই তারা তাদের মিডিয়ার সম্পূর্ন শক্তিটুকু ব্যায় করছে বার্ন ইউনিটের ভয়াবহতা প্রচার করার জন্য এবং কোনভাবেই মিডিয়াকে ফোকাস করতে দিচ্ছেনা মূল সমস্যা কোথা থেকে শুরু।
২।আলীগের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে সাধারন সমর্থক পর্যন্ত দেখবেন এখন আর কোন প্রসংগই অবতারনা করেনা। তাদের বক্তব্য'র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু একটাই প্রসংগ সেটা হলো "আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা"। এবং তারা এটা করে খুব সহজেই বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হচ্ছে।
৩। আলীগের মূল উদ্দেশ্যে হলো বিএনপি'কে চিরতরে নির্মুল করা। গতবার আন্দোলনের পরেও তারা একই মিশন নিয়ে গুম-খুনে নেমেছিলো কিন্তু এইবার আন্দোলন থামার পরে তাদের মিশন হবে বিএনপি'কে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে ফেলা। এবং এর জন্য এদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি এবং এর নেত্রী'কে সন্ত্রাসীদের দল হিসেবে চিহ্নিত করা তাহলেই আলীগের জন্য অনেক সহজ হবে বিএনপি'কে নির্মুল করা। কারন ৯/১১ এর পর থেকে বিশ্ব অঙ্গনে সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় অনেক ধরনের মেরুকরন হয়েছে যা দিয়ে খুব সহজেই অনেক ধরনের দমননীতি প্রয়োগ করা সম্ভব।
৩। ইদানিংকার ক্রসফায়ার থেকে শুরু করে অনেক নির্যাতনের ঘটনা আড়ালেই চলে যাচ্চে শুধুমাত্র এই বার্ন ইউনিটের দগ্ধ দৃশ্যর কারনে।
আরো অনেক প্রাসংগিক প্রসংগই চলে আসে কিন্তু পাঠকের সুবিধার্থে সংক্ষেপকরন আবশ্যক। আর শেষ কথা সরকারের হাতে শুধু পেট্রল বোমাই শেষ অস্ত্র নয় আরো অনেক অস্ত্রই যেগুলো সময়মত বের হতে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৩১