দুটো দেশ, যুদ্ধ চলছে। এক এক দেশের যুদ্ধনীতি এক এক ধরনের হয়। যুদ্ধের অঘোষিত একটা নীতি হল সিভিলিয়ানদের হত্যা এবং ধর্ষন করা। এযাবৎকাল পর্যন্ত যতটা সামরিক যুদ্ধ হয়েছে তার প্রত্যেকটা যুদ্ধই শুধু সামরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সোলজারদের খায়েশ মেটানোর জন্যে তরতাজা ব্যাবস্থা থাকা চাই।
পাকিরা কতজন বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে জানিনা, সাথে হাজার হাজার মা-বোনদের ইজ্জত। সত্যিকারের জাস্টিসের কথা বললে সেই জাস্টিস দেয়াটা এখন অসম্ভব। আত্মসমার্পন, কাহিনীর ওখানেই খতম। তখন আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম এটাই অনেক, আনন্দক্ষনে আর বিচার-সালিশের ঝামেলা মনে রাখে কে?
পাকিস্তানকে আমি ঘৃণা করি।
কেন? তার শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসে?
না।
পাকিস্তানের জনপদে মনুষের মল ভাসে?
না।
পাকিস্তানীর সব মানুষ জাতীয়গতভাবে ডাকাত?
না।
তাহলে কি?
মূলত সমস্যা হল এই প্রশ্নটাতেই। পাকিস্তানের কোন মানুষের সাথে আমাদের কোন আর্গুমেন্ট নেই, তারা আমাদের কিছু করেনি, করেছিল তাদের প্রতনিধিরা। তারপরেও আমরা তাদের ঘৃণা করি। কারন পাকিস্তানের মানুষগুলোই তাদের প্রতিনিধিত্বের আসনে বসিয়েছিল। আমরা হারিয়েছি আমাদের সবচেয়ে বড় দানটাকে। না, হাজার-লক্ষ সিভিলিয়ানরা নয়। বরং আমরা হারিয়েছিলাম আমাদের দেশের মাথাগুলোকে। ওরা আমাদের কখনোই দেশ হিসেবে দেখতে চায়নি। তাই হার নিশ্চিত জেনেও আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল। তার বিচার বাংলার ইতিহাসে কোনদিনও হয়নি, হবেওনা।
একটা দেশকে পরিচালনার জন্যে যে মাথাগুলোর প্রয়োজন ছিল সেগুলোকে তারা মাটির তলায় মিশিয়ে দিয়েছে আত্মসমার্পনের দুদিন আগেই। যার ফলাফল আমরা আজও মাথা উচু করে দাড়াতে পারছিনা। সেই মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালীন দুর্ভিক্ষ থেকে শুরু করে আজকের বাংলার এই দুধর্ষ চিত্র, সবকিছু হয়েছে শুধু ওই মাথাগুলোর অনুপস্থিতির জন্যে।
আমরা আজো রাস্তার পাশে একটু জায়গা পেলে বাড়ি বানিয়ে ফেলি কোন পরিকল্পনা ছাড়াই। রাস্তায় ময়লা ফেলি এই ভেবে যে আমার নিজের ঘর, নিজের শরীর ঠিক থাকুক। রাস্তাটা আমার না, ওটা অপরিষ্কার থাক। আরো হাজারো অমানুষিক কাজের কথা মুখে তুলতে ইচ্ছে করছেনা এখন। ঘুস, চুরি এখন সহজলভ্য ঘটনা হয়ে গেছে। আসলেই পাকিরা সফল। ওরা আসলেই পেয়েছে যা ওরা চেয়েছিল। আজকে যখন দেখি অযোগ্যরা চালাচ্ছেন দেশ, বানাচ্ছেন রাস্তা ঘাট, করছেন অর্থনৈতিক অবস্থা সমৃদ্ধ। তখন অজানা এক কষ্টে মনটা নাড়া দিয়ে ওঠে। আমরা এখনো তাদের অনুপস্থিতিকে ভীষণভাবে মিস করি।
আজ তাদের মত হাজারো বুদ্ধিজীবী তৈরি হয়েছে এ গৌড়ের বুকে। তবে সেই বুদ্ধিজীবীদের কথায় দেশ চলেনা। দেশ চলে পাড়ার গুন্ডা-মাস্তান, মাছের বাজারের আড়ৎদারদের হাতে। তাদের হাতে বেশ ভালভাবেই চলছে দেশ। আমরা আমাদের প্রতিদিনের রুটিনের মত এটাকেও গ্রহণ করে নিয়েছি। তবে আসলেই অনেক অনেক সমৃদ্ধ হতে পারত আমাদের দেশটা। শুধু আইসিটি ডিভিশন কিংবা গার্মেন্টস শিল্পের দিকে তাকিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভাবতে ভাবতে এখন আমি ক্লান্ত। আইসিটি আর গার্মেন্টস পুরো বাংলার চিত্র না, পুরো বাংলা এটাকে ডিফাইন করেনা।
আমি পাকিস্তানকে ঘৃণা করি। আমার দেশটাকে পঙ্গু করে রেখে যাওয়ার জন্যে। আমার দেশটাকে ময়লা আবর্জনার শহরে পরিণত করার কারনে। আমার দেশটাকে তৃতীয় শ্রেণীর একটা দেশে পরিণত করার জন্যে সর্বপ্রথম তুমিই দায়ী পাকিস্তান।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০১