somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন আমি ভারতকে ঘৃণা করি

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাটা এভাবে না বলে 'কেন আমি ভারতকে ঘৃণা করব না?' এভাবে বললে ভাল হত। ভারত আমাদের পরম মিত্র, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সাহায্য পেয়েই আমরা স্বাধীন হয়েছি। আমরা তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি তার মানে এতদিন আমরা পাকিস্তানের গোলামী করতাম, এবার তাদের গোলামী করতে হবে। কথাটা বোধহয় ভারত প্রেমীদের জন্যে মোটেও সুখকর নয়। ভারত আমাদের প্রতিনিয়ত শুষে নিচ্ছে, দাড় কড়াচ্ছে তাদের গোলামীর কাঠগড়ায়।

প্রথমেই আসি সীমান্ত প্রসঙ্গে। সীমান্তের কথা মনে হলে ফেলানীর লাশটা চোখে বেধে যায়। আমরা আবেগীয় জাতি, তাই ফেলানীর জন্যেই জল ফেলি। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ সাধারণ ও বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যার স্বীকার হয়েছে বিএসএফ কর্তৃক। অধিকার, একটি বাংলাদেশি এনজিও, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী দ্বারা কমপক্ষে ১৭ বাংলাদেশি হত্যা ও বিভিন্ন নির্যাতনের দৃষ্টান্ত নথিভুক্ত করে। মাসুম, একটি কলকাতা ভিত্তিক এনজিও যারা সীমান্ত এলাকার তথ্য উদঘাটন করে, তাদের তথ্যমতে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় গুলি চালনার হার কমলেও বিএসএফ সন্দেহভাজনদের আক্রমণাত্মক ভীতি প্রদর্শন, নিষ্ঠুরভাবে প্রহার এবং নির্যাতন করে।

২০১১ সালের জুলাইয়ে হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ সীমান্ত হত্যা নিয়ে বলে, "ভারত সরকারের বাংলাদেশের সীমান্তে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) দ্বারা হত্যা, নির্যাতন, ও অন্যান্য অনাচারের নতুন অভিযোগ একটি, দ্রুত পরিষ্কার, এবং স্বচ্ছ অপরাধের তদন্ত দায়িত্বগ্রহণ করা উচিত।" হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক, মিনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, "সীমান্তে মানুষের উপর অত্যধিক বল ব্যবহার ও নির্বিচারে প্রহার অসমর্থনীয়। এইসব নির্যাতনের ঘটনা ভারতের আইনের শাসনের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।"

বিগত ১০ বছরে প্রায় ১,০০০ মানুষ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নিহত হয়, যার পুরোটাই বাংলাদেশি। সীমান্ত এলাকাকে একটি দক্ষিণ এশিয়ার হত্যার ক্ষেত্রে পরিণত করে। অনেক ক্ষেত্রে নিরস্ত্র এবং অসহায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ডের পরিষ্কার প্রমাণ সত্ত্বেও, এখন পর্যন্ত কাঊকেই হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি।

ইতিপূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। বিনিময়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় বাংলাদেশের অবাধে যাতায়াতের জন্য তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভারত প্রথমে ৬ ঘণ্টা এবং পরবর্তীতে ১২ ঘণ্টা এই করিডোর বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে দেয়। অবশেষে মনমোহন সিংয়ের সফরে ভারত তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের এই সুযোগ আরো অনেক আগে থেকে পাওয়ার অধিকার ছিল।

ছিটমহল ইস্যুটি দীর্ঘদিন থেকেই দুই দেশের মাঝে অমীমাংসিত একটি বিষয়। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের মোট ১১১টি ছিটমহল রয়েছে যার আয়তন ১৭১৬০ একর। অপরদিকে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়েছে যার আয়তন ৭১১০ একর।
এই ছিটমহলগুলোর অধিবাসীরা মূলত নিজ দেশে পরবাসীর মতোই জীবনযাপন করে। ইউপিএ সরকারের আমলে মমতার আপত্তিতে বাস্তবায়িত হয়নি ছিটমহল বিনিময়। সম্প্রতি মমতা অবস্থান পরিবর্তনের ফলে চলতি শীতকালীন অধিবেশনে রাজ্যসভায় ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এরপর আসি পানি প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে যেগুলো ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশেই প্রবাহিত। কিন্তু ভারত এই নদীগুলোর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার কারণে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না।
১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার সঙ্গে বাংলাদেশের তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও ভারত কখনোই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে পানি দেয়নি। এদিকে তিস্তা নদীতেও একই অবস্থা চলছে। তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে ভারত একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশ তিস্তার পানি পাচ্ছে না।

ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনোই বাস্তবায়ন করে না। আবার বিভিন্ন সময়ে স্বাক্ষরিত চুক্তির সঠিক বাস্তবায়নেও ভারতের অনীহা লক্ষ্য করা যায়।

এরপর আসি সফটা নিয়ে। ২০০৬ সালে সাফটা কার্যকর হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেশগুলোর মাঝে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষত সাফটা বাস্তবায়নে ভারতের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে অনেকেই দাবি করেছেন।
সাফটা কার্যকর হলেও বাংলাদেশ-ভারত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতি বছরই ঘাটতি বাড়ছে। প্রতি বছরই বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির তালিকা এবং পরিমাণ বাড়ছে, কিন্তু ভারত থেকে আমদানি পণ্যের পরিমাণ বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের তুলনায় অনেক বেশি।

আমার প্রাণের প্রিয় ভারত। আমার প্রিয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র, আমার প্রিয় দোস্ত। তুমি আমাদের যে পরিমান ধর্ষণ করছো তা পাকিস্তানীরাও করে নাই। তোমাকে যদি আমি ঘৃণা না করি তবে আমার নিজের দেশকেই অপমান করা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:২৪
৩৯টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×