রাবির ৫৫ বছর নিয়ে সাংবাদিক আকাশ একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন।
আকাশ সাহেব তার লেখায় রাবির দুজন অধ্যাপক অর্থনীতির মোহাম্মদ ইউনুস ও ভূতত্ব ও খনিবিদ্যার ড. তাহের হত্যাকান্ডের সাথে শিবিরের সংশ্লিষ্টতার কথা এমন দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে মনে হচ্ছে হত্যাকান্ডের সময় তিনি নিজেই উপস্থিত ছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো এই দুজন শিক্ষক হত্যাকান্ডের পর আকাশ সাহেবরা জামাত শিবিরের দিকে তাদের আঙুল নির্দেশ করলেও আদালতের মাধ্যমে শিবিরের সবাই খালাস পেয়ে যায়। জেএমবি যখন মোহাম্মদ ইউনুস স্যার হত্যাকান্ডের দায় দায়িত্ব স্বীকার করে, পুলিশ যখন প্রফেসর ইউনুস হত্যাকান্ডের দায়ে জামাত শিবিরের পরিবর্তে জেএমবির নামে চার্জশিট দেয় তখন আকাশের মতো সাংবাদিকদের মুখে চুনকালি পড়ে। ড. তাহের হত্যা মামলা থেকেও যখন সালেহী খালাস পায়, তখনও কিছু সাংবাদিক লজ্জায় মুখ ঢাকে।
আকাশ, উজ্জ্বল আপনাদের বলি। শিবিরের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগই পরে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পরে সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে শিবির ষড়যন্ত্রের শিকার। বড় কষ্ট হয় আপনাদের একপেশে নীতি দেখে।
শিবির ছাত্রছাত্রীদের মেধা বিকাশের জন্য, ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রো বাংলাদেশী এবং প্রো হিউম্যন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কিছু নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে থাকে। এর মধ্যে আছে ট্যালেন্ট সার্চ, কৃতি সংবর্ধনা, ডিবেট কম্পিটিশন, বিসিএস কোচিং, ইংরেজি শেখার আসর, বিজ্ঞান মেলা, এ প্লাস সংবর্ধনা, বৃক্ষ রোপন অভিযান, ব্লাড গ্রুপিং, রক্ত দান কর্মসূচী, ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতা ইত্যাদি। আপনাদের লেখায় সেসব কথা মোটেই উঠে আসে না।
যেহেতু অন্য কোন দলের কর্মীরা এগুলো করে না তাই ইচ্ছে করেই আপনারা শিবিরের এই পজিটিভ কাজগুলো চেপে যান। এমনকি শিবিরের বিরুদ্ধে করা রিপোর্টের প্রতিবাদও আপনারা ব্ল্যাক আউট করে দেন।
অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ যখন হলের ডাইনিংয়ে বাকী খেয়ে টাকা দেয় না, ফেন্সিডিলের বোতলসহ ধরা পড়ে, সাধারণ ছাত্রদের মারধোর করে, ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে, অথবা নিজেদের মধ্যে অর্ন্তকোন্দলে প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করে, অথবা ক্যাম্পাসের কর্তব্যরত পুলিশকে তাদেরই লাঠি কেড়ে নিয়ে পেটায় তখন বুঝি একটুও মানবতাবিরোধী কাজ হয় না। আপনাদের লেখায় কেন সেসব কথা উঠে আসে না?
শুনুন অকাশ, উজ্জ্বল একটা কথা আপনাদের বলি, আপনারা বয়সে নবীন। রাবির হলের সিটের ইতিহাসের হয়তো অনেকটাই আপনাদের অজানা। ৮০'র দশকে রাবির একজন সাধারণ ছাত্র জাসদ-মৈত্রি করবে না আর হলে উঠবে এমনটা ছিল কল্পনা মাত্র। তখনকার ছাত্রনেতারা ত্রি সিটেড বা ফোর সিটেড রুমে ১ বা ২ জন করে থাকতো। এমনকি হলের প্রভোস্ট ছাত্র নেতাদের ডেকে ডেকে সিট দিতে চাইতো, তবু তারা সিট করতো না। কারণ তালিকাভুক্ত হয়ে হলে থাকলে তো মাসে মাসে সিট ভাড়া গুনতে হবে। এমনিতেই যেখানে হলে থাকতে পারছে, সেখানে তালিকাভুক্ত হয়ে লাভ কী। সে সময় সাধারণ ছাত্ররা হলে উঠতেই চাইতো না। নারী অস্ত্র ও মাদকের সেই নরকে গিয়ে নিজের মূল্যবান প্রাণ হারাতে কেই-ই বা চায়! তখন রাবির ছাত্রীদেরকে ছেলেদের হলে এসে বাধ্যতামূলকভাবে রাত কাটাতে হতো। সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা কেন আপনাদের পত্রিকায় তুলে ধরেন না ?
আজ এটা আর আড়াল করার কোনই উপায় নেই যে ক্যম্পাসে শিবির আছে বলেই সাধারণ ছাত্ররা নিরাপদে রাত্রি যাপণ করতে পারে। চাঁদা দিয়ে নিরাপত্তার গ্যারান্টি কিনতে হয় না। ৪ বছরের অনার্স ১২ বছরে শেষ করার দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। ক্যাম্পাসের দোকানদার, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাও শিবিরই দিয়েছে।
ঢাবিতে ও জাবিতে এখনও সাধারণ ছাত্রদেরকে বাধ্য হয়ে ক্ষমতাসীনদের মিছিলে যেতে হয়। কই রাবি, চবি, ইবিতে তো এধরনের ঘটনার নজির নেই।
আপনারা সাংবাদিক মানুষ। একটু চোখ তুলে ইতিহাসের দিকে তাকান। তাহলেই অতীতের সেই সময়ের সাথে বর্তমানের পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।
আমি বলছি না শিবিরের সবাই ফেরেস্তা। কিন্তু রাবি ক্যাম্পাসে অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার বেশি সংরক্ষিত হয়, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:৩১