ফয়সল চৌধুরী, লন্ডন থেকে: ৬ জুলাই সকালে লন্ডনে আসছেন শেখ হাসিনা। এর আগে দেশ থেকে আমেরিকা যাওয়া পথে হিথ্রোতে দু ঘন্টা ছিলেন। সাংবাদিকরা গিয়েছিলেন হিথ্রোতে, কিন্তু দেখা করতে পারেননি। গিয়েছিলাম আমিও, আওয়ামীলীগের দুজন নেতা এবং লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও ছিলেন। দীর্ঘ দুই থেকে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ও শেখ হাসিনাকে না পেয়ে বিফল হয়ে বাড়ী ফিরেছিলাম। তখন ফোন এসেছিল চ্যানেল আই থেকে এবং দৈনিক আমাদের সময় থেকেও। সেদিন চ্যানেল আই ও আমাদের সময়ে কোনো রিপোর্ট পাঠাতে পারিনি।
এবার শেখ হাসিনা লন্ডনে আসছেন আওয়ামীলীগের এক নেতা আমাকে আগেই ফোন করে বলেছিলেন, তাকে বলেছিলাম গিয়ে তো লাভ নেই, আপনাদের নেত্রী তো কথা বলেননা। তিনি বলেছিলেন এবার বলবেন। জিজ্ঞাস করেছিলাম কটায় আসছেন? বললেন ৬ জুলাই রোববার সকাল সাড়ে সাতটায় ফ্লাইট অবতরন করবে হিথ্রো চার নাম্বার টার্মিনালে। তাকে বলেছিলাম দেখা যাক কী হয়। চ্যানেল আই ইউকের নিউজ টিমের সাথে কথা বললাম, কথা বললাম চ্যানেল আই ইউকের কর্ণধার তাজ চৌধুরীর সঙ্গে। তাজ ভাই বললেন অবশ্যই যাবেন, ভালো রিপোর্ট করে ঢাকায় পাঠাবেন। শনিবার রাতে ক্যমেরাম্যানকে বললাম, ক্যামরোম্যান থাকেন প-র্ব লন্ডনের নিউহামে, আমিও থাকি প-র্ব লন্ডনে। বললাম আপনি ভোর ৬টায় মধ্যে একটি টেক্সি নিয়ে আমার বাড়ীতে চলে আসবেন। এখান থেকে আমার গাড়ী নিয়ে হিথ্রোতে চলে যাবো। ক্যমেরাম্যান বললেন তাই হবে।
শনিবার রাতে বাড়ীতে ফিরে তাড়া তাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। রোববার সকাল সাড়ে ছটায় রওয়ানা হলাম হিথ্রোর উদ্দেশ্যে। এত সকালে আমি এর আগে কখনো হিথ্রোতে যাইনি। সাড়ে সাতাটর মধ্যে হিথ্রো টার্মিনাল ফোর এ পৌছলাম। পৌছে দেখি আওয়ামীলীগের শ’দুয়েক নেতা কর্মী ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে চ্যানেল এস এর চীফ রিপোর্টার মোহাম্মদ জুবায়ের জানালেন ফ্লাইট ডিলে, ঠাট্টা করে বললাম তিনি কি বাংলাদেশ বিমানে আসছেন, জুবায়ের ভাই বললেন না তিনি বৃটিশ এয়ার ওয়েজেই আসছেন। কী আর করা অপেক্ষার পালা। আওয়ামীলীগের দুএকজন নেতা কর্মী আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন নেত্রী অসুস্থ। বেশী কথা বলতে পারবেন না। আপনারা বেশী জিজ্ঞাস করবেন না। মনে মনে বলি তিনি ত্ োকথা বলবেন না। অতএব এসব বলে কী লাভ? পোনে নয়টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বৃটিশ এয়ার ওয়েজ হিথ্রোতে অবতরন করলো। এরই মধ্যে আমার মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে। আওয়ামীলীগের এক মধ্যম সারির নেতা, পরিচয় গোপন করে ফোন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে অথবা বৃটেনের বাইরে থেকে কেউ ফোন করলে মোবাইলে সাধারনত নাম্বার ওঠেনা, লন্ডনের ভিতরে থেকে ১৪১ ঘুরিয়ে কেউ ফোন করলে নাম্বার ওঠেনা।
ঐ নেতা তাই করলেন, বললেন ভাই আমি আওয়ামীলীগ করি, শেখ রেহানার ছেলে বিয়ে করতে যাচ্ছেন ফিনল্যান্ডের একটি মেয়েকে, এর আগে শেখ হাসিনার ছেলে বিয়ে করলেন আমেরিকান এক মেয়েকে! আমি বললাম ফিনল্যান্ডের মেয়েকে বিয়ে করলো, না মঙ্গলগ্রহ থেকে কাউকে ধরে নিয়ে এসে বিয়ে করলো তাতে আপনার কী? ভদ্রলোক বললেন দেখুন তারা তো রোল মডেল, এখন জাতীর রোল মডেলরা যদি এভাবে দেশের বাইরের মেয়েদেরকে বিয়ে করে তাহলে অদুর ভবিষ্যতে দলটির ক্ষতি হবে, তা ছাড়া আমরা যারা প্রবাসে পরিবার নিয়ে বসবাস করি তাদের তো আরো সমস্যা, ছেলে মেয়েরা যদি ববি ও জয়কে ফলো করে তাহলে আমরা কি করবো? তারা না হয় (শেখ হাসিনা রেহানা) শিক্ষিত মানুষ বিদেশী বউদের সাথে ইংরেজী বলে চলে যেতে পারবেন, কিন্তু বিপদ তো আমাদের! আমরা না জানি ইংরেজী না জানি হিন্দি না জানি উদর্-। আপনি শুধু এ ব্যাপারটি জিজ্ঞাস করবেন, বলে তিনি লাইনটি কেটে দিলেন। ততক্ষনে ঘড়ির কাটা নয়টা বেজে বিশ মিনিট। সবাই রেডি নেত্রী আসবেন। আসলেন তিনি, কারো সাথে কথা বললেন না, দলের কর্মীদেরকে বললেন আমার জন্য দোয়া করবেন। সাংবাদিকদেরকে বললেন নো ক্যামেরা নো সাংবাদিক। আমার আর জিজ্ঞাস করা হলোনা শেখ রেহানার ছেলের বিয়ে এবং জয়ের বিয়ে কি আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সুদুর প্রসারী কোনো প্রভাব ফেলবে?
সৌজন্যে: দৈনিক আমাদের সময়,১৪/০৭/২০০৮
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০০৮ বিকাল ৪:৩২