মৃতব্যক্তির জন্য ক্রন্দন
সালাফী বা ওহাবীরা মনে করেন মৃতব্যক্তির জন্য ক্রন্দর করা হারাম। এই ধরুন যেসব গার্মেন্ট শ্রমিকগণ আগুনে পড়ে মারা গেছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনরা স্বাভাবতই তাদের জন্য কাঁদছেন এই কাঁন্নাটা তাদের বিশ্বাস মতে অবৈধ। তারা যেহাদীসটির উপর ভিত্তি করে এই আকীদা লালন করছেন তা একটি ভুল চিন্তা থেকে সূত্রপাত ঘটেছে।
যে সকল বর্ণনার বলা হয় ঃ মহানবী (সাঃ) মৃত ব্যক্তির উপর ক্রন্দন করেছিলেন এবং এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছিলেন
১। সাদ ইবনে এবাদার অসুস্থতায় মহানবীর (সাঃ) ক্রন্দনঃ
সহীস মুসলিমে আদূল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ সাদ ইবনে এবাদা অসুস্থ হয়েছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাকে দেখার জন্য আব্দুর রহমান ইবনে আউফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ও অব্দুল্লাহ ইবনে মাসূদকে নিয়ে তার সাক্ষাতে গেলেন। সাদা ইবনে এবাদার শিয়রে পৌছলে তিনি বেহুশ হয়ে পড়লেন। মহানবী (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন ঃ সে কি মৃতু্য বরণ করেছে ? কেউ বললেনঃ না, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) । মহানবী (সাঃ) ক্রন্দন করলেন। রাসূল (সাঃ) -এর ক্রন্দন দেখে লোকজন ও কাঁদতে লাগলেন। তিনি (সাঃ) বলেন ঃ ওহে তোমরা কি শুনতে পাওনা ? মহান আল্লাহ চোখের জলের উপর শাসত্দি দেননা বা হৃদয়ভার হৃদয়ের উপর ও শাস্তি দেননা। কিন্তু এর ( নিজ জিহবার দিকে ইঙ্গিত করে) জন্য শাস্তি কিংবা পুরস্কার দেন। [সহীহ মুসলিম, ২য়খন্ড, পৃঃ ৬৩৬ কিতাবুল জানায়েয অধ্যায়-৬]
২। পুত্র ইব্রাহীমের জন্য মহানবী (সাঃ)-এর ক্রন্দন ঃ
সহী বোখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে ইবনে দাউদ ও সুনানে ইবনে মা'জায় আনাস বিন মালিক থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন ঃ [সহীহ বোখারীর বর্ণনা থেকে উদ্ধৃত]
আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সাথে প্রবেশ করলাম __ ইব্রাহীম মৃতু্য পথ যাত্রী ছিল। মহানবীর চোখ অশ্রুসজল হল। আব্দূর রহমান বিন আউফ বল ঃ হে আল্লাহর রাসূল আপনিও ? তিনি (সাঃ) বলেন আউফের পুত্র ! এটা হল রহমত। অতঃপর আরো বলেন ( তুমি কি ঠিক দেখতে পাচ্ছ?) আমাদের নয়ন ক্রন্দনরত, হৃদয় ভারাক্রান্ত, কিন্তু কখনোই যা কিছু মহান আল্লাহকে তুষ্ট করে তা ব্যতীত অন্য কিছুই মুখে আনবনা । হে ইব্রাহীম ! সত্যিই আমরা তোমার বিরহে ব্যাথাতুর। [সহীহ মুসলিম, খঃ ৪, পৃঃ ১৮০৮, কিতাবুস সাবিয়ন; সুনানে আবি দাউদ, খঃ ৩ পৃঃ ১৯৩ আলবোকা আলাল মাইয়্যেত, সুনানে ইবনে মা'যা, খঃ১ পৃঃ ৫০৭, সহীহ বোখারী খঃ১ পৃঃ ১৫৮]
এ বর্ণনাটি সুনানে ইবনে মাজায় এরূপ বর্ণিত হয়েছেঃ
আনাস বিন মালেক বলেন ঃ যখন রাসূলের (সাঃ) পুত্র ইব্রাহীম মৃতু্য বরণ করেন তখন তিনি (সাঃ) উপস্থিত লোকদেরকে বলেন। তাকে কাফানে ঢেকে দিও না ( শেষ বারের মত ) তাকে দেখব। এরপর তার শিয়রে এলেন ও তার উপর ঝুঁকে পড়ে তিনি (সাঃ) ক্রন্দন করলেন। [সুনানে ইবনে মা'যা খঃ১ পৃঃ ৪৭৩, কিতাবুল জানায়েয।]
সুনানে তিরমিযিতে বর্ণিত হয়েছে ঃ
জাবের বিন আব্দুল্লাহ বলেন ঃ মহানবী (সাঃ) আব্দুূর রহমান ইবনে আউমেবর হাত ধরে , তার সাথে নিজ পুত্র ইব্রাহীমের মাথার নিকট আসলেন এবং মৃতু্য পথযাত্রী পুত্রকে কোলে তুলে নিলেন এবং ক্রন্দন শুরু করলেন আব্দূর রহমান ইবনে আউফ বলল ঃ আপনি কি কাঁদছেন ? আপনি কি ক্রন্দন করতে নিষেধ করেন নি ?! তিনি (সাঃ) বললেন ঃ "না' আমি দু'দল পাপাচারী গদর্ভ ও নিবের্াধের আর্তনাদ ও আর্তচিৎকারে বাধা দিয়েছিলাম ঃ যারা মুসিবতের সময় মুখ আঁচড়ায় এবং জামার কলার ছিড়ে ফেলে ও শয়তানী ক্রন্দনে লিপ্ত হয়। [সুনানে তিরমিযি, খঃ৪ পৃঃ ২২৬,কিতাবুল জানায়েয ' আর রুখসাতু ফিল বুকা আলাল মাইয়্যেত অধ্যায়। এ হাদীসটি মাক্তাবে খোলাফার হাদীস বিশরদ আলেমগনের নিকট হাসান হাদীস হিসেবে পরিচিত।]
৩। স্বীয় নাতির জন্য মহানবী (সাঃ)- এর ক্রন্দন ঃ
সহী বোখারীতে , সহী মুসলিমে, সুনানে আবি দাউদ ও সুনানে নাসাঈয়ে বর্ণিত হয়েছে ঃ মহানবীর (সাঃ) কন্যা তাঁর জন্য সংবাদ পাঠালেন যে আমাদের কাছে আসেন। আমার ইকটি ছেলে মৃতু্য পথযাত্রী । মহানবী (সাঃ) উঠে দাঁড়ালেন এবং সা'দ ইবনে এবাদা এবং সাহাবীদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়ে তাদের নিকট এলেন। মৃতু্য পথ যাত্রী শিশুকে হযরতের (সাঃ) নিকট নিয়ে আসলেন। মহানবীর দু'চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তে লাগল । সা'দ বললো ঃ হে আল্লাহর রাসূল ! আমরা কী দেখতে পাচ্ছি ? মহানবী (সাঃ) বলেন " এটা হলো সেই রহমত ও মমতা যা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনত্দরে স্থাপন করেছেন। আর মহান আল্লাহ একমাত্র নিজের দয়ালু ও মেহেরবান বান্দদেরকেই রহমত ও ক্ষমা করে থাকেন। [সহী বোখারী, কিতাবুল জানায়েয, কেনলুন নাবী (সাঃ) অধ্যায়, কিতাবুল মারজা, এবাদাতুস সাবিয়ান অধ্যায় খঃ৪, পৃঃ৩ ও ১৯১ কিতাবুত তাওহীদ, " ইন্না রাহমাতাল্লাহি ক্বারিবুন মিনাল মুহসিনীন, অধ্যায় সহীস মুসলিম, কিতাবুল জানায়েয," আলবুকাউ আলাল মাইয়্যেত " অধ্যায় খঃ২ পৃঃ ৬৩৬ হাদীস ১১। সুনানে আবি দাউদ, কিতাবুল জানায়েয, " আলবুকাউ আলাল মাইয়্যেত" আধ্যয় খঃ ৩ পৃঃ ১৯৩ হাদীস ৩১২৫ সূনানে নাসায়ী খঃ৪ পৃঃ ২২ কিতাবুল জানায়েয " আল আমর বিল ইহতিসাব ওয়াস সাবর , অধ্যায় । মুসনাদে আহমাদ খঃ ৫ পৃঃ ২০৪,২০৬,২০৭,]
৪। নিজ চাচা হযরত হামযার জন্য হযরত মহানবীর (সাঃ) ক্রন্দন ঃ
তাবাকতে ইবনে সাদ, মাগযীয়ে ওয়াকেদী, মুসনাদে আহমদ ও মাকতাবে খোলাফার অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হয়েছে ঃ
আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-ওহুদ যুদ্ধের পর- যখন আনসারদের ঘর থেকে তাদের শহীদদের জন্য ক্রন্দনের শব্দ শুনতে পেলেন তখন রাসূলের (সাঃ) চোখ ও অক্রসজল হলো। রাসূল (সাঃ) কেঁদে বললেন ঃ কিন্তু হামযার জন্য তো কোন ক্রন্দনকারী নেই ! সা'দ ইবনে মায়ায একথা শুনতে পেলেন এবং বনি আব্দুল আশহালের নারীদের নিকট ছুটে গেলেন। তিনি তাদেরকে (মহানবীকে (সাঃ) সমবেদনা জানানো ও হামযার জন্য ক্রন্দন করতে ) আহবান জানালেন। মহানবী (সাঃ) তার জন্য দোয়া করলেন এবং তাদেরকে ফিরিয়ে দিলেন। এ ঘটনার পর আনসারদের কোন নারীই ক্রন্দন করতনা যদি না আগে হামযার জন্য কাঁদত এবং তারপর নিজেদের মৃতদের জন্য কাঁদত। [এ বণৃনাটি শাবহে হালে হামযা নিরোনামে " তাবাকাতে ইবনে সা'দ"-এর খঃ৩ পৃঃ১১ ১৩৭৭ হিজরীতে বেরুতের দারে সাদরপ প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। ' মাগাযীয়ে ওয়াকেদীওে খঃ১, পৃঃ ৩১৫-৩১৭ তে আর ও বিস্তৃতরূপে বর্ণিত হয়েছে। অুুরূপ, ইমতা উসসামা" খঃ ১ পৃঃ ১৬৩, মুসনাদে আহমাদ খঃ২, পৃঃ৪০, 'তারিখে তাবারি, খঃ৩ পৃঃ৫৩২ মিশর থেকে প্রকাশিত। 'মিরায়ে ইবনে হিশাম খঃ৩ পৃঃ ৫০ ইবনে আব্দুল বের "ইসত্দিয়াব গ্রান্থে এবং ইবনে আসির " আসাদ আলগাবা"-তে ও সংক্ষিপ্তাকারে হামযার অবস্থার বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন।]
৫। মুতার যুদ্ধে শহীদদের জন্য মহানবীর (সাঃ) ক্রন্দন সহীহ বোখারীতেত বর্ণিত হয়েছে ঃ
এহানবী (সাঃ) যায়িদ, জাফর ও ইবনে রাওহা ( কিরূপে শহীদ হবেন) শহীদ হওয়ার পূর্বেই তাদের শাহাদাতের খবর মানুষকে দিয়েছিলেন। তিনি (সাঃ) বলেন ঃ "যায়িদ পতাকা তুলে নিলেন, আঘাত পেলেন ও শহীদ হলেন! অতঃপর জা'ফর পতাকা তুলে নিলেন। তিনি ও শহীদ হলেন! অতঃপর ইবনে রাওহা পতাকা তুলে নিলেন ও শহীদ হলেন। মহানবী (সাঃ) এ কথাগুলো বলছিলেন যখন তার অখিযুগল থেকে অশ্রূধারা বইছিলো। [সহী বোখারী খঃ ২ পৃ, ২০৪ কিতাবে ফাযায়েলুস সাহাবা মানাকিবু খালেদ, ইবনে কাসিরের আলবেদায়া ওয়ান নিহারা খঃ ৪, পৃঃ২৫৫, বায়হাকির সুননুল কুবরা, খঃ ৪ পৃঃ ৭০,ইনসাবুল আশরাফ খঃ২,পৃঃ ৪৩ শরিহে ইবনে আবিল হাদিদ আলা নাহজুল বালাগা খঃ১৫, পৃঃ৭৩]
৬। জাফন ইবনে আবি তালিবের জন্য মহানবী (সাঃ)-এর ক্রন্দন ঃ
ইসতিয়াব, উসদুল গাবা, আসাবা, তারিখে ইবনে আসির এবং অন্যান্য পুসত্দকে বর্ণিত হয়েছে যে, ( সংক্ষেপে)ঃ
যখন জাফর এবং তাঁর সাহীরা শহীদ হলেন মহানবী (সাঃ) তাঁর গৃহে গেলেন ও তার সন্তানদেরকে ডাকলেন। তিনি (সাঃ) (অক্রসিক্ত অবস্থায়) জাফরের সনত্দানদের সুগন্ধ নিলেন (ও মাথায় হাত বুলালেন)। জাফরের স্ত্রী আসমা বললেন ঃ
আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, কিসে আপনাকে (সাঃ) কাঁদালো ? জাফর ও তাঁর বন্ধুদের কোন খবর কি আপনার নিকট পৌছেছে? তিনি (সাঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, আজ শহীদ হয়েছেন।" আসমা বললেন ঃ আমি উঠে দাঁড়ালাম ও আর্তনাদ করলাম ও অন্যান্য মহিলাদেরকে একত্র করে ফাতেমার ঘরে গেলাম, দেখলাম ফাতেমা কাঁদছে এবং বলছেঃ হায় আমার চাচা! আল্লাহর রাসূল (সাঃ) (এ অবস্থা দেখে) বললেনঃ
প্রকৃতপক্ষে ক্রন্দনকারীরা জাফরের জন্য কাঁদার মত করে কাঁদা উচিৎ। [তারিখে ইবনে আসির , খঃ২, পৃঃ৯০, এবং জাফরের অবস্থা বর্ণনার ইঙ্গিত ফারী অন্যান্য পুস্তক।]
৭। মা অমিনার মাযারে মহানবী (সাঃ)-এর ক্রন্দন ঃ
সহীস মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবি দাউদ, নাসাঈ এবং ইবনে মাযা বর্ণনা করেন ১০ঃ [সহী মুসলিমের বর্ণনা মতে]
আবু হুরইরা বলেনঃ মহানবী (সাঃ) তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করলেন এবং আশেপাশের সকলকে কাঁদালেন। [সহী মুসলিম , খঃ২ পৃঃ ৬৭১, কিতাবুল জানায়েয, অধ্যায়-৩৬, হাদীস ১০৮ মুসনাদে আহমাদ খঃ২ পৃঃ৪৪১, সুনানে নাসাঈ খঃ৪ পৃঃ ৯০ ফিতাবুল জানায়েয, সুনানে ইবনে মাযা খঃ ১ পৃঃ৫০১ হাদীস ১৫৭২]
নাতি হুসাইন (রাঃ) -এর জন্য বিভিন্ন ইপলক্ষে মহানবী (সাঃ) -এর ক্রন্দন ঃ
১। উম্মুল ফায্লের হাদীস ঃ
মুসতাদরাকে সহীহাইন, তারিখে ইবনে আসাকির, মাকতালে খাওয়ারেযমী এবং অন্যান্য পুসত্দকে [মোসতারাকের বর্ণনা থেকে] এসেছে ঃ
হারেসের কন্য উমমূল ফাযল থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মহানবীর (সাঃ) নিকট গেলেম ও বললেন ঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি গত রাতে দুঃখজনকে স্বপ্ন দেখলাম ! বললেন ঃ কী দেখেছ ? বলল ঃ খুব কঠিন ! বললেন ঃ কী? বললঃ আমি দেখলাম আপনার শরীরের এক টুকরা আপনার থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে আমার আঁচলে এসে পড়লো! আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বললেন ঃ তুমি খুব ভাল স্বপ্ন দেখেছ ; আল্লাহর ইচ্ছায় ফাতেমার এক পুত্র সনত্দান জন্ম নিবে এবং তোমার আঁচলে জায়গা নিবে।" ( বলা হয়) এরপর ফাতেমা ( যেরূপ মহানবী (সাঃ) বলেছেন) হুসাইনকে (রাঃ) জন্ম দিলেন এবং তিনি আমার আঁচলে স্থান নিলেন। একদিন মহানবীর (সাঃ) নিকট গেলাম এবং হুসাইনকে (আঃ) তাঁর কোলে রাখলাম, এর কিছুক্ষণ পর আমার থেকে তাঁর (সাঃ) দৃষ্টি অন্যত্র গেল। হঠাৎ দেখলাম মহানবীর (সাঃ) দু'চোখ রেয়ে বণ্যার মত পানে ঝরছে ! তিনি বলেন, আমি বললাম :হে আল্লাহর নবী (সাঃ) ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার কী হয়েছে ? তিনি (সাঃ) বললেন ঃ "জিব্রাইল (আঃ) আমার সাক্ষাতে এলেন এবং আমাকে খবর দিলেন যে, আমার উম্মত খুব শীঘ্রই আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে।" বললাম !'একে ?! বললেন ঃ হঁ্যা, সে (জিব্রাইল) আমার জন্য রক্তিম কিছূ মাটিও এনেছে।"
মোস্তদরাকে সহীহাইনের লেখক হাকিম বলেন ঃ এ হাদীসটি বোখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ হাদীস রূপে পরিগণিত। কিন্তু তারা এটি বর্ণনা করেনি। [মুসতাদরাকে সহীহাইন, খঃ৩, পৃঃ ১৭৬, এবং এর সারসংক্ষেপ ১৭৯ পৃষ্টায়, তারিখে এবনে আসাকির, হাদীসঃ ৬৩১ এবং এর নিকটবতর্ী হাদীস ৬৩০; মাজমাউল যাওয়ায়েদ খঃ৯, পৃঃ১৭৯; মাকতালে খাওয়ারেযমী, খঃ১ পৃঃ১৫৯ ও১৬২, তারিখে ইবনে আসির খঃ ৬ পৃঃ২৩০ খঃ৮ পৃঃ ১৯৯_এও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে । এমালীয়ে শাজয়া পৃঃ১৮৮; ফুসুলুল মুহিম্মাহ ইবনে সাব্বাগ মালিকী পৃঃ ১৪৫। রাওদান নাজির খঃ১ পৃঃ৮৯, সাওয়ায়েক্ব পৃঃ ১১৫ এবং অন্য প্রকাশনায় পৃঃ ১৯।; কানযুল উম্মাল, খঃ৬ পৃঃ২২৩ (পুরাতন প্রকশনায়)। আলখাসায়েসুল কোবরা খঃ২, পৃঃ১২৫। আহলে বাইতের (আঃ) মাকতাবে গ্রন্থসমূহে, মাসিরুল আহযান, পৃঃ৮ লহুফ ইবণে তাউস, পৃঃ ৬ও৭- এ বর্ণিত হয়েছে। ]
২। যয়নাব বিনতে যাহশের বর্ণনা ঃ
তারিখে ইবনে আসাকের, মাজমাউল যাওয়ায়েদ, তারিখে ইবনে কাসির এবং মাকতাবে খোলাফর অন্যান্য গ্রন্থে [ইবনে আসাবেরের ইতিহাসের বর্ণনানুসারে বিষয়বস্তু সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে।]
যয়নাব বলেন ঃ একদিন মহানবী (সাঃ) আমার ঘরে ছিলেন, নতুন হাটতে সক্ষম হুসাইনকে (রাঃ) আমি নজরে রাখছিলাম । হঠাৎ আমি অন্যমনস্ক হয়েছিলাম । এ সুযোগে হুসাইন (রাঃ) আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) নিকট গেলেম। তিনি বললেন ঃ তাকে ছেড়ে দাও। ( এর পর বলা হয় ) অতঃপর হাত উপরে তুললেন। এরপর মহানবী (সাঃ) যখন নামায শেষ করলেন বললাম ঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) । আজ আমি আপনাকে এশটি কাজ করতে দেখলাম যা এ পর্যনত্দ কখনোই দেখিনি ? তিনি বললেন ঃ " জিব্রাইল আমার নিকট আসলেন এবং বংশধরকে হত্যা করবে। বললাম ঃ অতঃএব আমার ঐ মাটি দেখান এবং তিনি রক্তিম মাটি আমার জন্য আনলেন। [তারিখে ইবনে আসাকের, ইমাম হুসাইন (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণনায়, হাদীস ৬২৯, মাজমাউল যাওয়ায়ের খঃ৯, পৃঃ ১৮৮ কানযুল এমাল খঃ ১৩ পৃঃ১১২, ইবনে কাসির ও তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে খঃ৮, পৃঃ ১৯৯ এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আহলে বাইতের অনুসারীদের গ্রন্থের, এমালীয়ে শেখ তুসী, খঃ১ পৃঃ ৩২৩, মাসীরুল আহযান পৃঃ ৭-১০, এর শেষে তাতিম্মারে মুহিম্মা,অনুরূপ লহুফ ৭-৯ পৃঃ
উমমূল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহেশ রাসূলের (সাঃ) পত্বী।]
৩। রেওয়াতে হযরত আয়েশাঃ
তারিখে ইবনে আসাকের মাকতালে খাওয়ারেযমী , মুহিমায়ূল যাওয়ায়িদ ও মাকতাবে খোলাফার অনুসাীেদের অন্যান্য পুস্তকে আবি সালামা ইবনে আব্দর রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছে ১৬ঃ [খাওয়ারেযমীর বর্ণনানুসারে]
হযরত আয়শা বলেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) হুসাইন (রাঃ) কে তাঁর উরুতে বসিয়েছিলেন। জিব্রাইল (আঃ) তাঁর (সাঃ) নিকট এসে বললেন ঃ "এআপনার বংশধর ?" মহানবী (সাঃ) বললেন ঃ হ্যা। জিব্রাইল বললেন ঃ কিন্তু শীঘ্রই আপনার উম্মত (আপনার পরে) তাঁকে (রাঃ) হত্যা করবে। মহানবীর (সাঃ) চক্ষুযুগল অশ্রুসিক্ত হল। যদি আপনি চান তবে যে মাটিতে তিনি (ইমাম হুসাইন) শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি । তিনি (সাঃ) বললেন ঃ হ্যাঁ তাই কর।" জিব্রাইলও (আঃ) তেফ (কারবালা) থেকে মাটি এনে হযরত (সাঃ) কে দেখালেন।
অপর বর্ণনায় এরূপ লেখা হয়েছে ঃ জিব্রাইল ইরাকের তেফের (কারবালা) দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং লাল রংয়ের মাটি মাটি তাঁকে দেখালেন এবং বললেন ঃ এ হল তাঁর শাহাদাত স্থলের মাটি। [তাবাকাতে ইবনে সাদ, হাদীস ২৬৯, তারিখে ইবনে আসাকির ইমাম হুসাইন (রাঃ) সম্পর্কে বণনা, হাদীস নং ৬২৭, মাকতালে খাওয়ারেযমী খঃ১,পৃঃ ১৫৯, মাজমায়ূল যাওয়ায়েদ খঃ ৯ পৃঃ১৮৭ ও১৮৮, কানযুল উম্মাল খঃ১৩, পৃঃ১০৮ (নতুন সংস্করন) ও খঃ৬ পৃঃ ২২৩ (পুরাতন সংস্করন ) । আলসাওয়ায়িকুল মাহরাকা ইবনে হাজার, পৃ ১১৫, খাসায়েসূল সুয়ূতি, খঃ২ পৃঃ ১২৫ও ১২৬, জাওহা রাতুল কালামিল কুররাহ গাউলি পৃঃ ১১৭ এবং এমালিওে শেখ তুসী (আহলে বাইতে অনুসারীদের গ্রন্থ থেকে ) খঃ১, পৃঃ ৩২৫ ও এ মালীয়ে শাজারা পৃঃ ১৭৭ বিস্তারিত]
এ বিষয়ে অন্যান্য বর্ণনা ও এসেছে যাতে ফেরেশ্তারা আল্লাহর রাসূলকে (সাঃ) ইমাম হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের খবরটি দিয়েছেন বলে সত্যায়িত হয়। যেমন ঃ
১। উম্মে সালমার রেওয়ারেত ঃ
মোসতাদরাকে সহীহাইন, তাবাকাতে ইবনে সা'দ, তারিখে ইবনে আসাকির ও মাকতাবে খোলাফার অনুসারীদের অন্যান্য কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে [মোসতাদরাক থেকে নেয়া বিষয়বস্তু অুুসারে]১৮যে রাবি বলেনঃ
উম্মে সালমা (রাঃ) আমাকে সংবাদ দিলেন যে, একরাতে মহানবী (সাঃ) ঘুমের জন্য বিছানায় শুলেন এবং (কিছুক্ষন) পরে বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলেন, পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন ও নীরব হলেন। দ্বিতীয়বার প্রথমবারের চেয়ে আর ও বেশী বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। পুনরায় হাতে রক্তিম বর্ণেও মাটি হাতে নিয়ে তাতে চুম্বনরত অবস্থায়-জেগে উঠলেন। আমি বললাম ! হে আল্লাহর রাসূল! এ মাটি কিসের ? তিনি (সাঃ) বললেন! " জিব্রাঈল আমাকে সংবাদ দিল যে, সে ( হুসাইন (রাঃ) ইরাকের মাটিতে শহীদ হবে। আমি জিব্রাঈলকে বললাম যে মাটিতে শহীদ হবে তা আমাকে দেখাও । আর এ হল সেখানকার মাটি।"
হাকিম বলেন ঃ এ হাদীস শেখদ্বয়ের (বোখারী ও মুসলিম ) শর্তানুসারে সহীহাদীস কিন্তু একে তাদের নিজেদের কিতাবে বর্ণনা করেনি। [মোসতাদরাকে সহীহাইন খঃ৪, পৃঃ৩৯৮, আলমোজামূল কাবির তাবরানী হাদীস নং ৫৫, তারিখেনবনে আসাকির, হাদীস নং ৬১৯, তাবাক্বাতে ইবনে সাদ, তাহকীক ও নাশর, আব্দুল আজীজ তাবাতাবারী, পৃঃ৪২-৪৪হাদীস নং৬২৮, তারিখুল ইসলামে যাহাবী, খঃ৩, পৃঃ১১। সেইরু এ লামুনন্নব খঃ৩ পৃঃ১৯৪,ও ১৯৫। মাকতালুল খাওয়ারেযমী খঃ১, পৃঃ১৫৮ও১৫৯, যাখায়েরুল ওক্ববা, মোহেধুত তাবারী পৃঃ ১৪৮ও ১৪৯তারিখে ইবনে কাসির খঃ৬, পৃঃ ২৩০, কানযুল উম্মাল, মোত্তাকী খঃ১৬ পৃঃ২৬৬]
২। হাদীসে আনাস ইবনে মালিক ঃ
মুসনাদে আহমাদ, আলমোজামূল কাবির তাবরামী, তারিখে ইবনে আসাকির ও অন্যান্য পুস্তকে মাকতাবে খোলাফার অনুসারীরা বর্ণনা করেন ঃ [মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বলের বর্ণনা অনুসারে।]
আনাস ইবনে মালিক বলেন ঃ'ক্বাতর' নামক এক ফেরেস্তা আল্লাহর কাছে মহানবীর (সাঃ) সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলেন । মহান আল্লাহ তাঁকে অনুমতি দিলেন। এবং সে ফেরেশতা 'উম্মে সালমার' দিবসে আসলেন। মহানবী (সাঃ) উম্মে সালমাকে বললেন ঃ সাবধান থেক, কেউ যেন আমাদের মজলিশে প্রবেশ না করে।এমন সময় তিনি যখন কক্ষে অবস্থান করাছিলেন হ্যাঁ হুসইন ইবনে আলী (রাঃ) দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। রাসূল (সাঃ) ও তাকে তুলে নিয়ে চুম্বন করলেন। ঐ ফেরেশতা বলল ঃ তাঁকে (আঃ)ভালোবাসেক ? বললেন ঃ হ্যাঁ। বললো ঃ আপনার উম্মত কুব শীঘ্রই তাঁকে হত্যা কররে। যদি আপনি চান তবে যে স্থানে তিনি শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি। তিনি বললেন ঃ হ্যাঁ দেখতে চাই। বলে ঃ ঐ ফেরেসত্দা ( ইমাম হুসাইনের (রাঃ) ) শাহাদাত স্থল থেকে এক মুষ্ঠি মাটি এনে হযরত (সাঃ) কে দেখলেন। কিছুক্ষণ পর কিছু বালি বা রক্তিম মাটি আনলেন। উম্মে সালমা তা গস্খহণ করলেন এবং নিজের কপড়ে রাখলেন। হাদীসের বর্ণনা কারী সাবিত বলেন ঃ আমরা (ঐ সময়) বলতাম ঃ এ হল কারবালা! [মুসনাদে আহমাদ, খঃ৩ পৃঃ২৪২ ও ২৬৫। তারিখে ইবনে আসাকির, ইমাম হুসাইন (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণনা, হাদীস নং ৬১৫ ও ৬১৭ এবং তাহযীবে তারিখে ইবনে আসাকির খঃ৪, পৃঃ ৩২৫, মোজামূল কাবির তাবরানী ইমাম হুসাইন (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণনা, হাদীস নং৪৭, মাক্বতালে খাওয়ারেযমী খঃ১, পৃঃ ১৬০-১৬২। তারিখে ইসলামে যাহাতী, খঃ৩, ৃঃ১০, সেইরু এলানিন নাবী খঃ৩, পৃঃ১৯৪, যাখায়িরুল ইশবা, পৃঃ ১৪৬,ও১৪৭ মাজমাউল যাওয়ায়িদ খঃ৯, পৃঃ১৮৭ ও পৃঃ ১৯০ ও অন্যান্য সনদ। তারিখে ইবনে কাসির, অধ্যায়ঃ আল আখবার বিমাক্বতালিল হুসাইন খঃ৬ পৃঃ ২২৯ এর বর্ণনাটি এরূপঃ আমরা শুনলাম যে তিনি (রাঃ) কারবালায় শহীদ হবেন। " এবং খঃ৮, পৃঃ,১৯৯। কানযুল উম্মাল খঃ১৬ পৃঃ২৬৬। আসসাওয়ায়িকুল মাহরাকা, ইবনে হাজার পৃঃ ১১৫, আব্দালায়েলু আবি নায়িম খঃ৩ পৃঃ ২০২ আল রাওযাননাদিও খঃ১ পৃঃ ১৯২। আলমাওয়া হিবুল লাদানিয়া কাসতালামী খঃ২, পৃঃ১৯৫, খাসায়েসু সূযূতী খঃ২ পৃঃ২৫, মাওযাকেদু আলদামআনা বিবাওয়ায়েদ সহীহ ইবনে হাবান, আবু বাকুর হেইতামী পৃঃ৫৫৪ আহলে বাইতের অনুসারীদের পুস্তকে ও এরূপ বর্ণনা এসেছে ঃ এমালীয়ে শেখ ত্থসী (৩/৪৬০হি )খঃ১, পৃঃ২২১যে এর বিষয়বস্তু এরূপ (মহান ফেরেস্তোদের মধ্যে এক মহান ফেরেস্তা,,,,,,,,,,,)]
যে সকল রেওয়ায়েতে বলা হয় ঃ মহানবী (সাঃ) ক্রন্দন করতে নিষেধ করেছেন এবং এ সকল রেওয়ায়েতের উৎস।
সহী মুসলিম ও সুনানে নাসাঈতে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত হাফসা ওমরের (রা.) জন্য ক্রন্দন করেছিল। ওমর (রা.) বললো ঃ শান্ত হও আমার কন্যা। তুমি কি জাননা যে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন ঃ মৃতব্যক্তি তার জন্য স্বজনের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি ভোগ করে ?! [সহী মুসলিম, খঃ২ পৃঃ ৬৩৯, কিতাবুল জানায়েয, "ধালমায়্যিতু ইউআজ্জিবু বিবুকায়ী আহলিহি আলাইহী" অধ্যায়, সুনানি নাসাঈ খঃ৪ পৃঃ ১৮, কিতাবুল জানায়িয অধ্যায়ঃ আন নাহি আনিল বুকাউ আলাল মায়্যিত।]
অন্য এক রেওয়ায়েতে এসেছে ঃ
ওমর (রা.) বলে ঃ মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন ঃ মৃতব্যক্তি তার কবরে তার জন্য বিলাপ ও ক্রন্দনের জন্য শাস্তি পায়। [সহী মুসলিম খঃ২, পৃঃ৬৩৯, সহী তিরনিবী, খঃ৪ পৃঃ২২২, কিতাবুল জানায়িয ২৪ তম অধ্যায়, সুনানি ইবনিমাযা খঃ১,পৃঃ৫০৮, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায় ঃ আল মায়্যিতু ইউআজ্জিবু বিমা নুয়িহা আলাইহী ।]
অন্য এক বর্ণনায় বলা হয় ঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন ঃ যখন ওমর (রা.) আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল তখন তিনি বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন। এজন্য তার জন্য আর্তচিৎকার ও বিলাপ করছিলেন। যখন হুশ আসলো তখন বললো ঃ তোমরা কি জাননা যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন ঃ"মৃতব্যক্তি তার জন্য জীবিতদের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি ভোগ করে ।"?! [সহী মুসলিম খঃ২ পৃঃ৬৩৯, সুনানি নাসায়ী খঃ৪ পৃঃ১৮] হাদীসের উপর হযরত আয়েশার অনুধাবন এবং ওমরের (রা.) ভ্রান্তি দূরকরন এবং প্রশ্ন ঃ
সহী বোখারীতে, সহী মুসলিম ও সুনানে নসায়ীতে বর্ণিত হয়েছে !
ইবনে আব্বাস বলে ঃ মদিনায় যখন পৌঁছলাম আমীরুল মুমিনীন (হযরত ওমর) তখন ও আঘাত প্রাপ্তির পর সুস্থ হননি। সাহীব হায় আমার ভাই ! হায় আমার সাথী ! বলে আর্তনাদ করতে করতে তার শিয়রে আসলো। ওমর (রা.) বললেন ! তোমরা কি শুননি যে, মহানবী (সাঃ) বলেছেন ঃ " মৃতব্যক্তি তার জন্য আত্নীয়স্বজনদের কিছু কিছু ক্রন্দনের কারনে শাস্তি ভোগ করে?!"
ইবনে আব্বাস বলেন ঃ আমি উঠে দাঁড়ালাম ও আয়শার (রা.) নিকট গেলাম এবং যা ঘটেছে সে সম্পর্কে হযরত আয়শাকে (রা.) জানালাম। আয়শা (রা.) বললেন ! না আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূল কখনোই বলেননি যে, 'মৃতব্যাক্তি কারো ক্রন্দনের জন্য শাস্তি ভোগ করে।' বরং তিনি (সাঃ) বলেছেন ঃ
إنَّ الکافِرَ يَز يدُهُ اللهُ بِبُکاءِ اَهلِهِ عَذا باً وَ إنَّ اللهَ لَهُوَ اَضحَکَ وَ اَبکي.. وَ لا تَزِرَةُ وِزرَ اُخري
মহান আল্লাহ কাফেরদেরকে তাদের স্বজনদের কান্নার জন্য বেশী শাস্তি দেন এবং মহান আল্লাহই হাসান ও কাঁদান এবং কেউইঅন্য কারো পাপের বোঝা বহন করে না ।"
কাসেম ইবনে মোহাম্মাদ বলেনঃ যখন ওমর ও তার পূত্রের কথপোকথন সম্পর্কে হযরত আয়শা জানতে পেলেন তখন বলেন ঃ তোমার আমার নিকট মেন কারো খবর দিচ্ছ যিনি না মিথ্যাবাদী এবং না মিথ্যাচারী, তথাপি (সে যাই হোক) মানুষ ভুল শুনে থাকে। [সহী মুসলিম, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়-৯, হাদীস-২২ও২৩, সহী বোখারী, কিতাবুল জানায়িয, "ইউআজ্জিবুল মায়্যিতু বিবুকায়ি আনৃলিহী আলাইহী" অধ্যায় খঃ১, পৃঃ১৫৫ও১৫৬, সুনানি নাসায়ী খঃ৪পৃঃ১৮, কিতাবুল জামাযির "ধানি্নয়াহাতু আলান মায়্যিনত্দ" আলইজাবাতু লা ইয়ূরাদু মা আসতাদরাকাতাহু আয়িশা আলাসা সাহাবা, যারকাশী পৃঃ৮২, এসতাদরাকা আলা উমর ইবনে খাওাব।]
সহী মুসলিম, সহী বোখারী, সুনানে তিরমিযি , মুয়াত্তা মালিক রেওয়ায়েত করেন ঃ
হিশাম বিন উরবাহ তার পিতার নিকট থেকে বর্ণনা করেন ঃ আয়শার নিকট বলা হলো যে, ইবনে ওমর বলেছেন ঃ মৃতব্যক্তি তার জন্য তার আত্নীয়-স্বজনের কান্নার ফলে শাসত্দি ভোগ করে। আয়শা বললেন ঃ মহান আল্লাহ আবা আদূর রহমানকে ক্ষমা করুন ; তিনি কিছু শুনেছেন তবে ভাল করে ধরতে পারেননি। (ঘটনাটি ছিল এরকম হয়,) কোন এক ইহুদী ব্যক্তির জানাযা ( তার জন্য ক্রন্দনরত অবস্থায়) মহানবীর (সাঃ) নিকট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। হযরত (সাঃ) বলেন ঃ " তোমরা কাঁদছ, আর সে শাসত্দি পাচ্ছে।" [সহী মুসলিম, কিতাবুল জামায়িয,অধ্যায়_৯, হাদীস ২৫, সহী বোখারী খঃ ১, পৃঃ১৫৬, কিতাবুল জানয়িয, অধ্যায়ঃ " আলমায়্যিতু ইউআজ্জাবু যিবুকায়ি বাখু আহলিহি " সহী তিরমিযি, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়-২৫, খঃ৪, পৃঃ২২৬ও ২২৭, মুয়াত্তা মালিক খঃ১, পৃঃ২৩৪, কিতাবুল জানায়িয অধ্যায়ঃ আন নাহি আনিল বোকা আলাল মায়্যিত।]
ইমাম নাভাভী (মৃতু্য ৬৭৬ হিঃ) সহী মুসলিমের ব্যাখায়, ক্রন্দন নিষেধ করা সম্পর্কে রসূল (সাঃ) থেকে যে হাদীস গুলো বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে বলেন ঃ এ রেওয়ায়েতটি শুধুমাত্র হযরত ওমর ও তার পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়শা সেগুলোকে অস্বীকার করেছেন এবং এটাকে তাদের দু'জনের ভুল_ভ্রান্তি বলে মনে করেছেন। এছাড়া এমনটি মহানবীর (সাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে এমনটি অস্বীকার করেছেন। [শারহি সহী মুসলিম, আল ইমাম আন নাভাকী, খঃ৬ পৃঃ ২২৮, কিতাবুল জানায়িয।]
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ওমরকে (রা.) (কান্নায় নিষেধ করতে বারন করেছেনঃ সুনাকে নাসায়ী, সুনানে ইবনে মাযা। ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে [বিষয়বস্তু নাসায়ীর বর্ণনা অনুসারে] যেসালমা বিশ আযরাক বলেনঃ আল্লাহর রাসূলের (আঃ) কোন এ আত্নীয় পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। নারীরা সমবেত হয়ে তার জন্য ক্রন্দন করছিলো। ওমর উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদেরকে একাজে নিষেধ করছিলেন ও সভা ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেন ঃ ওমর তাদেরকে তাদের অবস্থায় থাকতে দাও যে ক্ষেুগুলো অশ্রুসিক্ত, হৃদয় মুসিবাত দেখেছে আর কষ্ট গুলো তাজা। [সুনানে নাসায়ী খঃ২, পৃঃ১৯, "ধার রুখসাতু ফিলবুকায়ি আলাল মায়্যিত" অধ্যায়। মুসনাদে আহমাদ খঃ২ পৃঃ১১০,২৭৩,৪০৮,৪৪৪,সুনানে ইবনে মাযা খঃ১, পৃঃ৫০৫, কিতাবুল জানায়েয, অধ্যায়ঃ মা জায়া ফিল বুকা আলান মায়্যিত, হাদীসঃ ১৫৮৭ ]
মুসনাদে আহমাদে ওহাব ইবনে কায়সান থেকে, তিনি মোহাম্মাদ ইবনে আমর থেকে বর্ণনা করেন যে, সালমা ইবনে আরযাক আব্দুল্লাহ ইবনে ওমারের সাথে বাযারে বসেছিল। একদল লোক জানাযা নিয়ে যাচ্ছিলেন ও তার জন্য ক্রন্দন করছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর এ কাজটিকে অপছন্দনীয় মনে করত ! তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলেন। সালমা ইবনে আরযাক তাকে বললেন ঃ এমনটি বলনা ! কারণ আমি স্বয়ং সাক্ষী ছিলাম ও আবু হোরায়রা থেকে শুনেছি _মারওয়ানের পরিবারের এক মহিলা মৃতু্য বরণ করেছিলো এবং মারওয়ান এ আদেশ দিচ্ছিলো যে, যেসমস্তু মহিলানা তার জন্য ক্রন্দন করে তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দাও । আবু হোরায়রা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বললেন ঃ হে আব্দুলমালেকের পিতা। তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দাও। কারণ একবার এক জানাযা মহানবীর (সাঃ) সম্মুনয দিয়ে অতিক্রম করছিল। আমি ও ওমর ইবনে খাওাব (রা.) ও হযরত (সাঃ) এর পাশে ছিলাম। ওমর (রা.) ঐ জানাযার নিকট থেকে ঐ সমস্তু মহিলাকে তাড়াচ্ছিলেন যারা তার জন্য ক্রন্দন করছিলেন। আল্লাহর রাসূল বললেন হে খাত্তাবের পুত্র ! তাদেরকে তাদের মত থাকতে দাও তাদের প্রান মুসিবত দেখেছে তাদের চক্ষুগুলে অশ্রুসিক্ত এবং তাদের কষ্ট তাজা। [মুসনাদে আহমাদ খঃ২, পৃঃ২৭৩ও ৪০৮ এবং এর নিকটর্বতী পৃঃ ৩৩৩]
বর্ণনা সমূহের তুলনা ও এর ফলাফল
প্রথম অংশের রেওয়াযেতে প্রমাণিত হয়েছে যে, মরনোম্মুখ মৃতু্য পথযাত্রী ও মৃতের জন্য ক্রন্দন করা ; অনুরূপ মৃতদের মাযারে (শহীদ অথবা শহীদ নয়) ক্রন্দন করা মহানবী (সাঃ)-এর সিরাতে আছে।
দ্বিতীয় অংশের রেওয়ায়েতে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল একাধিকবার তার শহীদ বংশধরের (হুসাইন (রাঃ) জন্য ক্রন্দন করেছিলেন। আর এ প্রমাণের ভিত্তিতে হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য হযরতের (সাঃ) ক্রন্দন প্রথম অংশের সাথে মিলে যায় এবং মহানবীর (সাঃ) সুন্নত ও সিরাতের অন্তভুর্ক্ত বলে পরিগণিত হয়।
তৃতীয় অংশের রেওয়ায়েত সমূহে প্রমাণিত হয়েছে যে, মৃতব্যক্তির উপর ক্রন্দন নিষিদ্ধ সম্পর্কিত রেওয়ায়েত কেবলমাত্র দ্বিতীয় খলিফা ও তার পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে। অপরদিকে উমমূল মু'মিনীম আয়শা কর্তৃক তাদেরকে বুঝিয়ে বলেছিলেন ঃ " মহান আল্লাহ আবা আদূররহমানকে ক্ষমা করুন, তারা কিছু শুনেছ, কিন্তু অনুধাবণ করতে পারেনি।" এবং অন্যান্য সাহাবার বক্তব্য যেমনঃ আবু হোরায়রা ও ইবনে আব্বাস এ বিষয়টি সম্পর্কে বলেন ঃ মৃতের উপর ক্রন্দন সম্পর্কে দ্বিতীয় খলিফা ও তদীয় পুত্র আব্দুল্লাহ যা মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তা ছিল ভুল।
অতত্রব, মৃতু্যপথযাত্রী কারো জন্য ক্রন্দন করা, মৃতের জন্য ক্রন্দন করা, মৃতের মাযারে ক্রন্দন করা মহানবীর (সাঃ) সুন্নত ও সিরাতেই আছে। ফলে হুসাইন (রাঃ)-এর উপর ক্রন্দনও আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সিরাত ও সুন্নতের মধ্যে আছে।
আলোচিত ব্লগ
জামাত/ শিবির কারনামা-১✅

জামাত শিবির ২০০১ নির্বাচনের পরে নাজিরহাট বাজারে চল্লিশ জনের নামের তালিকা ঝুলিয়ে দিয়েছিল । যাদের হত্যা করবে তাদের নাম। বাবা কথাগুলো বলছিল মাকে, আমি ওখানেই ছিলাম। মা রান্না করছিলো,... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামাজিক আলাপ
সেদিন দেখলাম নায়িকা বুবলি কোন এক প্রোগ্রামে জ্ঞান দিচ্ছেন কিভাবে সংসার করতে হয়, কিভাবে সঠিক লাইফ পার্টনার চয়েজ করতে হয়। অথচ তার নিজের লাইফ পার্টনার চয়েজ, সংসার কোন কিছুরই ঠিক... ...বাকিটুকু পড়ুন
ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাষ্ট্রপতি হিসাবে ড. ইউনুসের বিকল্প বাংলাদেশে নেই !

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাহেবের মন ভালো নেই। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে তিনি রীতিমতো কোণঠাসা! শেখ হাসিনা ভারতে প্রস্থানের পূর্বে তাকে জানিয়ে যান নি। শেখ হাসিনা চুপ্পু সাহেবকে উনার দুরবস্থার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।