সমগ্র দেশ ব্যাপী যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণ আন্দোলনের জোয়ার বইছে , একাত্তরের ঘৃণিত গণহত্যাকারীদের নেতৃত্বে পরিচালিত দল জামায়াতকে স্বাধীন বাংলার মাটিতে রাজনৈতিকভাবে নিসিদ্ধকরণের জাতীয় দাবিতে যখন সোচ্চার নারী, পুরুষ,তরুন, যুবা , বৃদ্ধসহ দেশের সব শ্রেণী ও পেশার আপামর জনসাধারণ; ঠিক সেই সময়ে একাত্তরের হায়েনাদের তল্পিবাহকেরা আবার দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও নাশকতায় লিপ্ত হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জামায়াত দেশে গৃহ যুদ্ধ সৃষ্টির হুমকি দিচ্ছে। যে দেশে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয় সেই দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রাষ্ট্র বিরোধী বক্তব্য প্রদান এবং জানমালের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডের জন্য জামায়াতের প্রতি সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবে এটাই কাঙ্ক্ষিত। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের উত্তর সূরী জামায়াতের নেতা কর্মীরা আজো অনুতপ্ত নয়, উল্টো শুনতে হয় রাজাকারদের দম্ভোক্তি – দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই! জাতি হিসাবে এটি আমাদের জন্য ভীষণ লজ্জার, ভীষণ অপমানের। আজ মনে প্রানে ঘৃণা প্রকাশেরও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি ইতিহাসের সেই সকল খলনায়কদের প্রতি, যারা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিকে কলুষিত করেছে রাজাকারদের এ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ দিয়ে। এ বিষ ফোঁড়া উপড়ে ফেলা উচিত ছিল স্বাধীনতার পর পরই। তাহলে জামায়াত আজ দেশের সুস্থ রাজনৈতিক অগ্রযাত্রার পথে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারতোনা। তারা আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরা গোপ্তা জঙ্গি হামলা ও সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ব্লগার রাজিব হায়দারকে হত্যার মাধ্যমে এ অশুভ চক্র তারুণ্যের যুদ্ধাপরাধ বিরোধী এ বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবন কে স্তব্দ করে দেবার পায়তারা করছে। এ কুলাঙ্গাররা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। তাদের পূর্বসূরীরা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যা কাণ্ড চালিয়ে কি পেরেছিল এ দেশের মুক্তিকামী জনতাকে স্বাধীনতার স্বাদ বঞ্চিত করতে? ইনশা আল্লাহ, এবারও তারা সফল কাম হবে না। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জেগে উঠেছে আজ সমগ্র বাংলাদেশ। দেরিতে হলেও দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। It is better late than never. কিন্তু কুখ্যাত রাজকার কাদের মোল্লার মানবতা বিরোধী অপরাধের রায়ে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়নি। ফলশ্রুতিতে এ রায়ের বিরুদ্ধে শাহবাগ সহ সমগ্র দেশ ব্যাপী সৃষ্টি হয়েছে গণ জাগরণ। গণদাবীর প্রেক্ষিতে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এ আইন সংশোধনের ফলেই যে কাদের মোল্লা সহ যাবতীয় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়ে যাবে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আইনবিদদের অভিমত, মামলা মামলা পরিচালনায় সরকার পক্ষের( প্রসিকিউশান) কোন পদ্ধতিগত বা আইনি দুর্বলতা রয়েছে কিনা বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার। নইলে নতুন আইনের মাধ্যমে আপীল করেই রায় নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসা যাবে এমনটা আশা করা গুঁড়ে বালি হতে পারে। কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় না হবার অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে তার সকল অপরাধকে ব্যক্তিগত হিসাবে ( Individual responsibility) বিবেচনা করা। অথচ তাকে রাজাকার বাহিনী প্রধান হিসাবে ( superior responsibility) অর্থাৎ হুকুমের আসামী হিশাবেও দোষী সাব্যস্ত করা গেলে বিচারের রায় হয়ত গনদাবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হত। ( সূত্রঃ প্রথম আলো)আশা করা যায় আপীলের ক্ষেত্রে এ আইনি দুর্বলতার বিষয়টি বিজ্ঞ প্রসিকিউশন আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
আবার জামায়াত প্রসঙ্গে আসি। জামায়াত শিবিরের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সন্দেহাতীত ভাবে এটি প্রমাণিত যে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বিন্দুমাত্র আনুগত্য নেই তাদের। তারা এ দেশের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ। অতএব এ দেশে রাজনীতি করার সব ধরনের নৈতিক অধিকার তারা হারিয়েছে। উপরন্তু দেশের ধর্মপ্রান মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে তারা ধর্মকে রাজনীতির মাঠে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। জামাত শিবির কিছুতেই এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে রিপ্রেজেন্ট করে না। তাদের অনেক কর্মকাণ্ড ইসলামের সাথে সাঙ্ঘরসিক। তাদের কুলাঙ্গার নেতারা একাত্তরে ধর্ম রক্ষার নামে যে গনহত্যা,নির্যাতন, আর গনধর্ষণ চালিয়েছিল তা কিছুতেই ইসলাম সাপোর্ট করেনা। তাই একমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের সংক্রমণ মুক্ত হয়ে জাতির কাছে অতীতের সকল কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতঃ সুস্থ ধারার রাজনীতি করবে মর্মে মুচলেকা দিলেই জামায়াতের নতুন প্রজন্মকে এ দেশে রাজনীতি করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু জামায়াত যে বিষধর কাল সাপ। তাই এদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দেওয়ার পক্ষে আজ দেশের উদীয়মান তরুণ সমাজ তথা জাগ্রত জনতা একতাবদ্ধ । এখন এ গন দাবীকে উপেক্ষা করার আর অন্য কোন উপায় নেই। বিষয়টা সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে জামায়াত নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তারা দেশে জঙ্গি রূপে আবির্ভূত হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই এ ধরনের সংঘবদ্ধ জঙ্গিদের মোকাবেলার জন্য পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে। জামায়াতের নাশকতা মূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত করে তাদের মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। জামায়াতের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে পুলিশকে ইস্পাত কঠিন অনমনীয়তা প্রদর্শন পূর্বক সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশনা জারি করতে হবে। জামায়াতের চোরা গোপ্তা হামলা বন্ধে সারা দেশে সর্বোচ্চ গোয়েন্দা নজরদারি জারি রাখতে হবে। জগণকেও জামায়াত শিবিরের যে কোন গোপন সমাবেশ বা সন্দেহ মূলক গতি বিধি দেখলেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা কারি বাহিনীকে অবগত করার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এভাবে ঘরে ঘরে জলে স্থলে সর্বত্র জামাত শিবিরকে প্রতিরোধ করতে পারলেই দেশ এ দুষ্ট চক্রের রাহু মুক্ত হবে। পাশাপাশি অনেকে জামায়াতকে সামাজিকভাবে বয়কট এবং এদের আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং এসব প্রতিষ্ঠানে সব ধরণের লেনদেন হতে বিরত থাকার জন্য ব্যাপক জন সচেতনতা সৃষ্টির কথা বলেছেন। এ সবের সুদূর প্রসারী প্রভাবে জামাত ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে যেতে বাধ্য।
দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান- ভোটের রাজনীতির ক্ষুদ্র স্বার্থে জামায়াতকে আঁকড়ে ধরে না থেকে আপনারা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজেদের অবস্থান খোলাসা করুণ। দেশের ভোটের রাজনীতির ভবিষ্যৎ এ তরুণরাই নির্ধারণ করবে। তরুন প্রজন্মের আবেগ অনুভূতিকে মূল্যায়ন করুণ, বিনিময়ে তারাও আপনাদের মূল্যায়ন করবে। জামায়াতের সংসর্গ পরিত্যাগে আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়বে বৈ কমবে না। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধ ইস্যু কোন দলের রাজনৈতিক ইস্যু নয়। এটা এখন গণ মানুষের দাবি, দেশের জাতীয় দাবি
পরিশেষে বলব, এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের কোন দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। তাই সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা সকল যুদ্ধাপরাধীকে আইনের আওতায় এনে যথা যোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। এ ইস্যুতে দল মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য আজ ভীষণ জরুরি। আমি সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি, যে দিন সকল রাজনৈতিক দল ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে দেশ প্রেমের মূলমন্ত্রে উজ্জেবিত হয়ে সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস থেকে এ দেশের বাতাসকে দূষণ মুক্ত করবেন। রাজাকার ও তাদের উত্তরসূরীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাসে বাংলার আকাশ বাতাস আজ বড্ড বেশি ভারাক্রান্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪৬