যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি কি ম্লান হয়ে যাবে আমাদের ধর্মপরায়ণতা আর রাজনীতি প্রবণতার কাছে ???????????
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ঐতিহ্যগত ভাবে বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপরায়ণএবং পাশাপাশি রাজনীতি প্রবণ ও বটে। ধর্ম এবং রাজনীতি উপকরণদ্বয় এ দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচারনেরই অংশ । কিন্তু এ দেশের সাধারণ জনগণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। তাই ঈদ, পূজা-পার্বণ , বড়দিন কিংবা বৌদ্ধ পূর্ণিমার উৎসব এখানে উদযাপিত হয় সার্বজনীন আতিথেয়তার আমেজে। যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় এসব আচার অনুষ্ঠানে সব ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের মেল বন্ধন তৈরিতে রেখেছে বিরাট অবদান। জন সংখ্যার অনুপাতে এ দেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও আমাদের সংবিধানের মূলনীতিতে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ এ দেশের সকল নাগরিকের রয়েছে যার যার ধর্ম পালনের সমান অধিকার। তাই এখন পর্যন্ত এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নির্ভয়ে নিজ নিজ ধর্ম কর্ম পালন করতে পারছে।
ধর্ম বিশ্বাস যদি মুদ্রার এ পীঠ হয় তবে অপর পীঠে রয়েছে আমাদের অতি মাত্রায় রাজনীতি প্রবণতা। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ হলেও প্রকৃত গণতন্ত্রের অমিয় সুধা আস্বাদন এ দেশবাসীর কাছে এখনো সুদূরের মরীচিকাসম। তবে তাতে কি ? সব কিছুতেই আজকাল রাজনীতিকে টেনে আনা আমাদের মজ্জাগত মুদ্রাদোষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাড়া মহল্লায়, গ্রামে গঞ্জে দেখা যায় একজনের গরু ছুটে অন্যের ধান ক্ষেত নষ্ট করেছে তা নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি, একজনের মেয়ে যদি নতুন ঘর বাঁধার রঙ্গিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে আরেকজনের ছেলের হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, তার মিমাংসা করতে হয় অনেক সময় রাজনৈতিক ভাবে। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ?; তাতে ও ঢুকে পড়তে পারে রাজনীতি। ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে অফিস - আদালত, প্রশাসন দেশের এমন কোন সেক্টর নেই যা রাজনীতির ছত্রচ্ছায়া মুক্ত।
দেশের তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে শাহবাগে সূচনা করেছিল এক ভিন্নধর্মী অহিংস আন্দোলনের। দেশাত্ববোধের চেতনায় তারা উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল সমাজের সকল শ্রেণীর আপামর জনতাকে। তারই ধারাবাহিকতায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কৌশলে রাজনৈতিক প্রলেপ লাগানোর পাশাপাশি ধর্মকে এ মহান আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে এটিকে করে তুলেছে বিতর্কিত। শাহবাগের আন্দোলন কে বলা হচ্ছে নাস্তিকদের আন্দোলন!, ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলন!! কি হাস্যকর কথা। যারা এসব অপপ্রচারে লিপ্ত তারা কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন কিংবা কোন প্রকার প্রমান দেখাতে পারবেন যে গনজাগরণ মঞ্চ থেকে বিন্দুমাত্র ইসলাম সম্পর্কে কোন প্রকার কটূক্তি করা হয়েছে। অবশ্য কিছু ব্লগারের নামে অভিযোগ এসেছে ইসলাম ধর্ম এবং নবীজির নামে অবমাননাকর পোস্ট ব্লগে ছড়ানোর। যারা এসব করেছে আপনারা তাদের নামের লিস্ট তৈরি করে তথ্য প্রমাণ সহকারে বিচারের দাবি তুলুন। সরকার নিশ্চয়ই এদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু গুটি কয়েক ব্লগারের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আপনাদের ঢালাও কুৎসা রটানো অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য। আপানাদের এহেন হীন আচরণের তীব্র নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আপনাদের প্রতি প্রশ্ন – গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি এত আক্রোশ কেন আপনাদের? সেটা যুদ্ধাপরাধীদের সম্ভাব্য সাজা থেকে বাঁচানোর অপচেষ্টা না তো ? যদি না হয়ে থাকে তবে নিজেদের বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে তো ধর্মের কোন বিভেদ নেই। তাহলে অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে যারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে তারা নিঃসন্দেহে দেশ ও জাতির শত্রু।
যদি গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হয় তবে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে এবং গণজাগরণ মঞ্চের সকল কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা থেকে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে। ধর্মের অবমাননাকারিদের ব্যাপারে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। যতদূর জানি সরকারও বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার বড্ড বেশি দেরি করে ফেলেছে বলেই আমার বিশ্বাস। এ তদন্ত কমিটি যদি আরও আগে গঠন করা হত তবে গণজাগরণ মঞ্চের মত এত বড় একটা অরাজনৈতিক প্ল্যাটফরমকে নিয়ে কেউ জল ঘোলা করে অপরাজনীতি করার সুযোগ পেত না।
আমাদের বিশ্বাস, একমাত্র একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঝাণ্ডাধারীরাই গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করছে। তাদের উগ্রবাদিতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সন্ত্রাসবাদ তথা দেশদ্রোহিতা নগ্নভাবে জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। নিজেদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের জন্য একাত্তরের ন্যায় বর্তমানেও ধীরে ধীরে এ অশুভ চক্র হয়ে উঠেছে দেশপ্রেমিক সচেতন জনতার চরম ঘৃণার পাত্র। দলের কুখ্যাত নেতাদেরকে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের সাজা থেকে বাঁচানোর নিমিত্তে মরিয়া হয়ে তারা এখন সর্বশক্তি দিয়ে দেশব্যাপী সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়ে মরণ কামড় দিতে চাইছে। তাদের আচরণে স্পষ্ট রূপে ফুটে উঠেছে জঙ্গিবাদিতা। এ কারনে দেশব্যাপী এখন দাবি উঠেছে অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মত এ দলটিকে ও নিষিদ্ধ করার। সরকার এ দাবির সাথে নীতিগত ভাবে একমত হয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধী এ দলটির নিবন্ধন বাতিলের জন্য আদালতে রিট হয়েছে। জন নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী এ দলটি কবে নিষিদ্ধ হবে সেটা এখন নির্ভর করছে সরকারের স্বদিচ্ছার উপর। তবে অনেকে মনে করেন সরকার এ মুহূর্তে ভোটের রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এ দলটিকে নিষিদ্ধ করার রিস্ক নেবে না। বি এন পি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে ঐকমতের ভিত্তিতে তারা দলটিকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিবে! কিন্তু পরজীবী এ দলটি যে ভাবে সিন্দাবাদের ভূতের মত বি এন পি’র ঘাড়ে চেপে রয়েছে তাতে বি এন পি তাদের আছর থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে এমনটি ভাবা আকাশ কুসুম কল্পনা বৈ কিছু নয়।
গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তাগণ আন্দোলনের শুরুতেই যদি সমাজের সকল শ্রেণী এবং পেশাজীবীদের মধ্য থেকে গ্রহণ যোগ্য ব্যক্তিত্বদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করতঃ সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানোর কোন উদ্যোগ নিতেন তবে এভাবে তারুণ্যের আন্দোলনকে কেউ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা করে সফলকাম হতোনা। চিটাগাং এর মহাসমাবেশ করার ব্যর্থতা এ আন্দোলনের উপর প্রতিক্রিয়াশীলদের চরম আঘাত বলেই মনে করা হচ্ছে। জামায়াত শিবির এখন নিষিদ্ধ হওয়ার ভয়ে কূট কৌশলে বিভিন্ন রকম ফর্মেটে আন্দোলনকে স্তিমিত করে দিতে চাইবে। হেফাজত ইসলাম এর হুমকি এবং সাইদিকে চাঁদে দেখার গুজব তাদের কূটকৌশলের দুই একটি নমুনার বহিঃ প্রকাশ মাত্র। এখনো সময় আছে, সাংগঠনিক ভাবে অতি শক্তিশালী একটি দলকে মোকাবেলা করতে হলে নিজেদের সাংগঠনিক ভিত ও মজবুত হওয়া জরুরি। সংশ্লিষ্টরা কি একটু ভেবে দেখবেন বিষয়টি? সরকার জেলা , উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নে সন্ত্রাস বিরোধী কমিটি গঠন করেছে। একই ভাবে সমগ্র দেশে গণজাগরণ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
দেশপ্রেমিক জনতার প্রাণের দাবীকে নিয়ে রাজনীতির দীঘিতে আর কত জল ঘোলা হবে তা একমাত্র ভবিতব্য বলতে পারে। আমরা রাজনীতি প্রবণ জাতি, তাই বলে দেশমাতৃকার সূর্য সন্তানদের রক্তের ঋণ পরিশোধের সাথে যে বিষয়টি জড়িত সে ইস্যুকে নিয়ে আমাদের কি রাজনীতি না করলেই নয়। আমাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে কবে? সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের উর্ধে উঠে আমরা কি পারি না যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে দল মত নির্বিশেষে একটি সার্বজনীন সিদ্বান্তে উপনীত হয়ে দেশকে কলংক মুক্ত করতে ?
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে
ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন