সমগ্র ইউরোপ যখন অশিক্ষায় নিমজ্জিত ছিল তখন জ্ঞান ছিল তাদের শত্রু। সক্রেটিসকে বিষ খাইয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। গ্রিসের গ্যালিলিওকে ‘পৃথিবী সূর্যে চতুষ্পার্শ্বে ঘুরে,’ বলাতে একই ভাগ্যবরণ করতে হয়। এদেশের প্রাকৃতিক দার্শনিক খনা সঠিক জ্ঞান বিতরণের জন্য তার জিহ্বা কেটে ফেলা হয়েছিল। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত সকল নবী-রসূলদের উপর মূর্খদের আক্রমণ তো ছিল চিরন্তন বাস্তবতা। দুর্ভাগ্য আজকের দিনের তথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণীর জন্য যারা মনে করে ইহুদীরা অত্যন্ত জ্ঞানী, অনেক আবিষ্কার আর অনেক নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কারণে। আসলে এই ইহুদীরাই আজ পর্যন্ত আগত সকল নবী-রসূলদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করেছে, যুদ্ধ করেছে। সত্তর হাজার নবী-রসূলকে শহীদ করেছে।
বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে- আমেরিকার মতো দেশ প্রযুক্তিতে সর্বশ্রেষ্ঠ কিন্তু মূর্খতা তাদেরকে পরাধীনতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে ঠেকিয়েছে। ৯/১১, ওয়ার অনটেরর, এনডিএন এবং সর্বশেষে ‘টিএসএ’, এসবই হচ্ছে পরাধীনতার এক একটি কঠিন রজ্জু। সামান্য কিছু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন আমেরিকান বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারলেও জাতি যেখানে ইহুদীদের গোয়েন্দা এবং মিডিয়ার মাধ্যমে আষ্টে-পৃষ্ঠে বাঁধা সেখানে সম্পূর্ণ পরাধীনতা একটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। একই অবস্থা পৃথিবীর প্রায় সকল খ্রিস্টান দেশগুলোর। ইহুদীদের প্ররোচনায় তারা সিভিলাইজেশন থেকে দ্রুত এনিমেলাইজেশনের দিকে ধাবমান। তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত প্রতিটি নিয়মের বিরুদ্ধাচরণই হচ্ছে সত্যিকারের স্বাধীনতা। ফ্রি সোসাইটি বিষয়টি যে, খোদায়ী গযব আকৃষ্ট করার এক ভয়ঙ্কর উপলব্ধিগত অবস্থা তা ওবামা-ক্যামেরনকে কে বোঝাবে? ওরা যে বিষয়টা একেবারেই বুঝছে না ব্যাপারটি তেমনও না। আসলে ইহুদীদের গোলাম হিসেবে তাদের কিইবা করার আছে!
এবার দেখা যাক, আমাদের দেশের অবস্থা! বিভিন্ন জাতীয় দিবসে স্বাধীনতার হাজার হাজার গান, নাটক আর বিভিন্ন দেশাত্ববোধক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু রাতের আঁধারে ইহুদী গোলামদের কাছে নাকে ক্ষত দিয়ে আমাদের গণতান্ত্রিক সরকারেরা ক্ষমতায় আসন গ্রহণ করে।
এক কঠিন বাস্তবতা। মহান আল্লাহ পাকের প্রেরিত জ্ঞানই যে সত্যিকারের জ্ঞান এবং উনার প্রতিটি হুকুম মানার মধ্যেই যে আছে মানবজাতির প্রকৃত স্বাধীনতা, এ বিষয়টি ক্ষমতার আশেপাশে অবস্থানরত মূর্খ চাটুকারদের বোঝানো যাবে না কস্মিনকালেও। প্রযুক্তিই যদি একমাত্র জ্ঞান হতো, তবে বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে অবস্থানরত বহু সভ্যতা মাটিচাপা পড়তো না। প্রযুক্তি দিয়েই তারা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারতো। খোদায়ী গযবের সামনে প্রযুক্তি খড়কুটা নয়, এমনকি ধূলিকণাও নয়। যে এই বিষয়টি অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পারবে সেই হচ্ছে সত্যিকারের জ্ঞানী, তার বাহ্যিক কোন সনদ বা সার্টিফিকেট থাকুক বা না থাকুক।
নবী যেহেতু আর আসবেন না, ওই উপলব্ধি অর্জনের জন্য বর্তমান সময়ে একমাত্র পথই হচ্ছে বেলায়েত (উলিল আমর) এর পথ। এটা একটা সহজ পথ, তবে অত্যন্ত কঠিন ওই পথ খুঁজে পাওয়া কিংবা নির্বাচন করা। ওহীপ্রাপ্ত জ্ঞানের শত্রুরা ওই পথের আশেপাশে বিছিয়ে রেখেছে হাজারো ফাঁদ, সিওর সাকসেস নোট বই, বিসিএস গাইডের মতো সহজে বেহেশত প্রাপ্তির গাইড, ভন্ডপীরদের ভাঁওতাবাজি, বছর বছর ধরে গাট্টি নিয়ে রাস্তায় আর মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়ানোর দল, আছে আহলে হাদীস/সালাফি চেতনার আত্মঘাতী বোমারু, আছে জিন্সের প্যান্ট পরে সিগারেটে টান দিয়ে খিলাফত দাবিকারী হিযবুত তাহরীর, সেই সাথে আছে জাকির (কাফির) নায়েকের মতো বিখ্যাত তথাকথিত হিদায়েতের পথ প্রদর্শকরা।
সত্যিই বর্তমান যুগে মুসলমান সমাজে মূর্খতা থেকে মুক্তি যেমন কঠিন, তেমনি কঠিন নাজাতের জন্য জ্ঞান আহরণের সঠিক মাধ্যমটি খুঁজে পাওয়া। ব্যক্তি কিংবা জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিপ্রাপ্তি কিংবা স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে শত্রুর মগজধোলাই কার্যক্রম থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতেই হবে নতুবা ফলশ্রুতিতে গন্ডমূর্খতা অতঃপর পরাধীনতাই একমাত্র গত্যন্তর/পরিণতি।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের অন্তরে শুভবুদ্ধির উদয় করুন, হিদায়েতের সঠিক পথটি চিহ্নিত করতে সহায়তা করুন। (আমীন)