somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- ফাঁদ

১১ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘স্যার, আমি বেশি সময় নিব না। জাস্ট দু’মিনিট আপনার সাথে কথা বলবো।’
‘আচ্ছা, বেশ তো! আরেকদিন আসুন না! আমি এক্ষুণি একটু বেরুচ্ছি।’
‘আমার কথাটা আপনার শোনা প্রয়োজন স্যার। এই দু’মিনিটে এমন কিছু দেরি হয়ে যাবে না আপনার। কিন্তু কথাগুলো না শুনলে হয়ত সত্যিই কিছু দেরি হয়ে যেতে পারে!’

আমি বিরক্তি চেপে রাখতে পারলাম না। দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে একটু খটখটে স্বরেই বললাম,
‘বেশ ভেতরে আসুন। দেখি আপনার কী এমন জরুরি কাজ আমার কাছে!’
লোকটা আমার বিরক্তিকে থোড়াই কেয়ার করে গট গট করে ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে পড়লো। আমার অনুমতির জন্য অপেক্ষামাত্র করলো না। আমি বেশ অবাক হলাম। একেবারে অপরিচিত একজন মানুষ! অথচ চালচলনে এত বেশি স্বচ্ছন্দ যে, মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে আমরা পরষ্পরের পরিচিত। আমি বিরক্তির পরিবর্তে বিনোদন মিশ্রিত কৌতুহলবোধ করলাম। আমার কোনো ক্রেজি ভক্ত কী না কে জানে! আজকাল আমার মতো কেজো মানুষেরও ভক্ত জুটেছে! আগে তো জানতাম, ওসব গল্প উপন্যাস লেখিয়েদের উটকো আপদ। এখন দেখছি এই আপদ সব জায়গাতেই কিছু না কিছু আছে। ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে আমি জিজ্ঞাসু মুখে লোকটার দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। সে তখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার ঘরের ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন দেখছে। আপাতত এটাই সম্ভবত তার জরুরি কাজ!

আমার সেক্রেটারি ছুটি নিয়েছে। দেশের বাড়িতে তার স্ত্রী অসুস্থ। মাঝে মাঝেই ছুটি নিচ্ছে ইদানিং। আমার কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটছে। অগোছালো মানুষ আমি। কোথায় কী রাখি, কিছুই মনে রাখতে পারি না। দেখা যায় জরুরি কাগজ মনে করে দোকান থেকে পাওয়া ক্যাশমেমো ঢুকিয়ে রেখেছি দরকারি কোনো ফাইলে। অথবা ফালতু ডকুমেন্ট হিসেবে ডাস্টবিনে চলে গেছে আমার মহামূল্যবান রিসার্চের জরুরি কাগজপত্র। কাজেই এহেন বেতাল আমাকে ঠিকঠাক লাইনে রাখার জন্যই পাঁচ বছর আগে একজন সেক্রেটারি নিয়োগ দিয়েছিলাম। সে আমার জিনিসপাতি গুছিয়ে রাখে। আলতুফালতু কাগজ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। আমার ঔষধের সময়সূচী মনে করিয়ে দেয়। এমনকি মাঝে মাঝে আমার কুঁচকানো শার্ট, যেটা গায়ে দিয়ে একটু পরেই মন্ত্রীর সাথে মিটিং এ যাওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছিলাম...সেটাকে সুন্দর পাট পাট করে ইস্ত্রি করে দেয়। অর্থাৎ জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ, সবকিছুই তার জুরিসডিকশনে। আমি শুধু মগজের নাটবল্টুটাকে মাঝে মাঝে এদিক সেদিক করে এটা সেটা উদ্ভাবন করি। কেউ কেউ সায়েন্টিস্ট হিসেবে সম্মান দেয়। গত বছর নিউজপেপারে ছবি আসার পর থেকে আচমকা বেশ পাবলিক ফিগারে পরিণত হয়ে গেছি। এমন নয় যে, ভালো কিছু গত বছরই আবিষ্কার করেছি। কিন্তু যতদিন সুধীজনের নজরবন্দী না হওয়া যায়, ততদিন ভালো জিনিসের কদর আর কে করে?

নিম গাছের ছাল আর গাঁদাফুলের পাতা দিয়ে দু’বছর আগে যে বটিকা উদ্ভাবন করেছিলাম, তা বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে। গত বছরে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর আমি কয়েকজন ডেঙ্গু রোগীর ওপরে তাদের অনুমতি সাপেক্ষে এই বটিকা প্রয়োগ করেছি। অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি। তিনদিনের মাথাতেই প্রত্যেকের জ্বর ছেড়ে গিয়েছে। প্লাটিলেট উঠে এসেছে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায়।
সরকারি যে রিসার্চ ইন্সটিটিউটে কাজ করি, তার প্রধানকে বিষয়টা জানাই। তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে আরো কয়েকজনের ওপরে পরীক্ষামূলকভাবে এই বটিকা প্রয়োগ করেন। এবারেও ফলাফল আশাতীত রকমের ভালো। ডেঙ্গু প্রকোপে ক্লিষ্ট জায়গাগুলোতে আমার উদ্ভাবিত এই বটিকার কদর হু হু করে বেড়ে যায়। খবর পৌঁছে যায় ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া প্রেস সব জায়গায়। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের ফ্রন্টপেজে ছবি সহ আমার উদ্ভাবিত ঔষধের খবর প্রকাশিত হয়। যশ কাকে বলে, তা এক জীবনে আস্বাদন করে যাওয়ার দূরাশাও করিনি। খুশিমনে নিজের কাজটুকু করে যেতে পারলেই বর্তে যেতাম। এখন কাজের অনুদান পরিবেশ সবকিছু তো পেলামই, সেই সঙ্গে পেলাম দেশের সম্ভাবনাময় শীর্ষস্থানীয় সায়েন্টিস্টের ওজনদার একখানা তকমা।

এই আমার হাত দিয়েই অতীতে আরো কিছু ভালো ভালো জিনিসও আবিষ্কৃত হয়েছে। পাট গাছের কাটুই পোকা নিধনে আমার উদ্ভাবিত বিশেষ লিকুউড মেডিসিন একেবারে জলের দরে বিক্রি হচ্ছিলো। অথচ এই মেডিসিন প্রয়োগে প্রতিটি কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে, তা আমি বাজি ধরে বলে দিতে পারতাম। ডেঙ্গুর বটিকার অভাবনীয় সাফল্যের পরে আমার সেই লিকুউড মেডিসিনের দামও ধাঁই ধাঁই করে বেড়ে গেছে। কিছু জায়গায় শুনলাম কৃত্রিম সঙ্কটও নাকি তৈরি হয়েছে। চাষীরা প্রয়োজনীয় সাপ্লাই পাচ্ছে না।
আমার গবেষণার মান সম্পর্কে এখন আর প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। আমার কাজ মানে সেটা সেরার পর্যায়েই পড়ে, এ’কথা এখন সবাই এক বাক্যে মেনে নিয়েছে।

আমার গায়েপড়া অবাঞ্ছিত অতিথি ততক্ষণে আমার ঘরবাড়ির খুঁটিনাটি দেখে ফেলেছে। এবারে বেশ কাঁচুমাচু মুখে বললো,
‘সরি স্যার, দু’মিনিটের কথা বলে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে ফেললাম!’
‘পাঁচ মিনিটেও কাজ শেষ হয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না! আপনি এখনো শুরুই করেননি!’
‘ওহ হো...সরি সরি স্যার! এক্সট্রেমলি সরি! আসলে মাঝে মাঝে এত আনমোনা হয়ে যাই! স্যার, প্রথমে নিজের পরিচয়টা দিয়ে নিই। আমার নাম গুলতামাম খান। আমার কাজের ক্ষেত্রটা একটু গোপনীয়। তবু আপনার কাছে যখন এসেছি, তখন তো বলতেই হবে। আমি স্পেশাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করি।’
‘স্পেশাল এজেন্ট! কীসের স্পেশাল এজেন্ট?’ আমার বিনোদন মিশ্রিত কৌতুহল এবারে অন্যকিছুতে রূপ নিয়েছে।
‘ডিবি পুলিশের স্পেশাল এজেন্ট, স্যার।’
আমি চরম বিস্ময়ের সাথে বললাম,
‘আমার কাছে আপনার কী কাজ?’
‘বলছি স্যার বলছি। একটু ধৈর্য ধরে শুনুন প্লিজ। আপনি আমাদের দেশের গর্ব। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে এখন আপনার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ছে। শুনতে পাচ্ছি পাশের দেশ থেকে অচিরেই আপনি স্পেশাল ইনভিটেশন পেতে যাচ্ছেন। দেশ বিদেশ থেকে আসা নামকরা সব সায়েন্টিস্টদের সাথে আপনার পরিচয় হবে। তাদের কাজের পরিধি সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন। ভাবতে পারছেন কত বড় সৌভাগ্য স্যার? কিন্তু আমাদের এই হতভাগা দেশ আর হাভাতে দেশের মানুষ আপনার মতো এমন হীরের টুকরোর যথাযোগ্য মূল্যটা কি দিতে পারবে? কখনোই নয়! দুঃখ করে বলতে ইচ্ছে করে... যে দেশে গুণীর সম্মান নেই, সেদেশে গুণী জন্মায় না!...’
আমি এই গরম বক্তৃতায় রীতিমত ঘেমেনেয়ে উঠলাম। এ কী জ্বালাতন রে বাবা! যাচ্ছিলাম একটা জরুরী কাজে! এখন বসে বসে এই জিনিস শুনতে হবে?

লোকটা আমার বিরক্তির ধারকাছ দিয়ে গেল না। সে আপনমনেই বলে যেতে লাগলো।
‘যথারীতি কিছু আবাল সায়েন্টিস্ট আর মাথামোটা লোকজন আপনার পিছে লেগে গেছে! নিজেরা তো মাথা খাটায়ে জীবনেও কিছু করতে পারবে না! যে করছে তার মাথাটাকেই নষ্ট করে দিতে পারলে এদের হাড়মাশ শান্তি পায়। আমাদের কাছে খবর এসেছে স্যার! কেউ কেউ আপনার আবিষ্কারের সূত্র হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ মোটা টাকাও নাকি ইনভেস্ট করে ফেলেছে। একবার যদি কোনোভাবে হাতাতে পারে...তাহলে তো বুঝতেই পারছেন! নাম যশ খ্যাতি সব একেবারে পায়ের কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়বে!’
‘ওহ বাবা! তাই নাকি?’ আমি নিখাঁদ বিস্ময়ের সাথেই বললাম। ছাপোষা সাদাসিধে বিজ্ঞানী আমি। অবশ্য বিজ্ঞানী নামটাও এই কিছুদিন আগে মাত্র নামের সাথে জুড়েছে। এতদিন তো রিসার্চার হিসেবেই দিন গুজরান করছিলাম! যাও বা নেমের সাথে ফেম এসে জুড়লো, ওমনি সাথে সাথে শকুনের দল হাজির হয়ে গেল?

লোকটা এবার দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বলতে লাগলো,
‘তাই নয় তো কী স্যার? আমাদের কাছে একেবারে পাক্কা খবর আছে। বিশেষ করে প্রাইভেট রিসার্চ ইন্সটিটিউটগুলোর তোড়জোড়ই বেশি। যাহোক, আপনি একদম ঘাবড়াবেন না। আমরা থাকতে আপনার দুশ্চিন্তা করার কিছুমাত্র কারণ নেই। সব একেবারে তেড়ে মেরে ডান্ডা করে দিব ঠান্ডা স্যার! হা হা হা... বুঝলেন না? আমাকে আমার বস, নামটা সঙ্গতকারণে বলতে পারছি না... বিশেষ একটা মিশন দিয়েই এখানে পাঠিয়েছেন। আপনি, আপনার আবিষ্কারের ফর্মুলা...সবকিছুকে সহি সালামতে সুরক্ষিত রাখার জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে স্যার। আপনি নিশ্চিন্তমনে কাজ করে যান। কেউ আপনার কিছুমাত্র বিগড়াতে পারবে না...আমি থাকতে!’
আমার রক্ষাকর্তা স্পেশাল এজেন্ট একেবারে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে শেষের কথাগুলো বললো।

আমি এবারে প্রশ্নটা না করে পারলাম না,
‘তা কতদিন ধরে আপনি আমার এই নিরাপত্তা বিধান করে চলবেন? যতদিন আমি চাইবো?’
‘যতদিন আপনার সেক্রেটারি না ফিরে আসে। তিনি বেশ বুদ্ধিমান মানুষ। তার উপস্থিতিতে এত সহজে কেউ আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
‘ওহ বাবা, আমার সেক্রেটারির ব্যাপারেও জানেন দেখছি! সে যে বাসায় নেই সেই খবরটাও আপনি জানেন?’
লোকটা যেন ভীষণ কষ্ট পেয়েছে এমন ভঙ্গিতে বললো,
‘এটা কী বললেন স্যার? এই সামান্য বিষয় আমাদের অবগতিতে থাকবে না? যেখানে সূক্ষ্ণাতিসূক্ষ্ণ চক্রান্ত নিয়েই আমাদের কাজ, সেখানে এটা তো অতি মামুলী বিষয়!’
‘ওহ হ্যাঁ তাই তো! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম! আপনি হচ্ছেন স্পেশাল এজেন্ট, তাও আবার ডিবি পুলিশের! তা আপনি কি এই সময়টা আমার বাসাতেই থাকবেন? মানে...আমার সাথেই?’
‘তাই তো থাকতে হবে স্যার! দূর থেকে নজরদারী করা আর আন্দাজে ঢিল ছোঁড়া প্রায় কাছাকাছি জিনিস!’
‘হুম তাও বটে!’ আমি মুখ বেজার করে উত্তর দিলাম। এ কী উটকো আপদ এসে জুটলো গলায়! আমার মতো শান্তিপ্রিয় মানুষকে একজন অপরিচিত ষণ্ডাগণ্ডা গোছের মানুষের সাথে এক বাসায় থাকতে হবে? এটা একটা কথা হলো?

আমার বন্ধুদের মধ্যে কেউই পুলিশে জয়েন করেনি। করলে এখনই এটার একটা হ্যস্তন্যস্ত করে ফেলতাম। আর তাছাড়া এই লোক যে সত্যি কথা বলছে তারই বা প্রমাণ কী? অবশ্য আমি কাঁচা কাজ করার মানুষ নই। প্রথমদিনেই তার আইডি কার্ড, ব্যাগ...সবকিছু চেক করে নিয়েছি। সেটাও তারই সামনে, তার অনুমতিক্রমে। সে অবশ্য এটার ভূয়ষী প্রশংসা করেছে। বার বার তারিফ করতে করতে বলেছে,
‘ওয়েল জব স্যার! ভেরি ওয়েল জব! আপনি সবসময় এমনই সতর্ক থাকবেন। আপনার চারপাশে শত্রুর আনাগোনা। প্রত্যেকে ঠারে ঠারে নজর রাখছে আপনার দিকে। নিজেকে এক মুহূর্তও অসতর্ক রাখবেন না। অসাবধান হলেই ওরা নিজেদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি করে ফেলবে! আপনি দেশের গৌরব। চোর ছ্যাঁচড়ের হাতে আপনার মূল্যবান আবিষ্কার কেন যেতে দিবেন? যাদের এটি উদ্ভাবন করার মগজ নেই, তারা এর কী মূল্য দেবে? দেশের শত্রুদের হাতেও যে চড়াদামে বিকিয়ে দেবে না তারই বা নিশ্চয়তা কী?’

লোকটার কথা শুনলে কানমাথা একেবারে গরম হয়ে যায়। শরীরে বেশ একটা উত্তেজনা বোধ করতে থাকি। আমি যে আবিষ্কার টাবিষ্কার করে বিশাল নামজাদা কিছু হয়ে গিয়েছি, এটা প্রতি মুহূর্তে উপলব্ধি করতে আরম্ভ করলাম।
এদিকে সে থাকে নিজের মতোই। শরীরের মতোই দশাসই নাম তার, গুলতামাম খান। আমার সেক্রেটারির সব কাজ সে দিব্যি নিখুঁত পারঙ্গমতায় করে যেতে লাগলো। উপরি পাওনা হিসেবে আছে বাজপাখির মতো ধূর্ত দৃষ্টি, বাদুরের মতো তীব্র শ্রবণশক্তি আর কুকুরের মতো ঘ্রাণ শুঁকেই মানুষ চিনে ফেলার তেলেসমাতি ক্ষমতা। আমার বাসায় আসা প্রত্যেকের দিকে সে এমন শ্যেনচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে থাকে যে, বেচারারা পালাতে পারলেই বাঁচে! একবার তো আমারই এক বন্ধুর শার্টের কলারে নাক দিয়ে কী যেন শুঁকতে লাগলো। বন্ধুটির কটমট চাউনি দেখেও তার হুঁশ ফেরার নামগন্ধ নেই। বন্ধুটি যাওয়ার আগে বললো,
‘এই চিড়িয়াকে কোথা থেকে তুলে এনেছিস? একে দিয়েও নতুন কিছু আবিষ্কার করবি নাকি?’
আমি হাস্যচ্ছলে উড়িয়ে দিয়ে বললাম,
‘আরে দূর! কী বলিস উলটাপালটা! মানুষ নিয়ে আবার কবে থেকে গবেষণা আরম্ভ করলাম?’
‘আমার তো একে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না! গরিলার পরিবর্তিত রূপ নাকি? ঠিক করে বল!’

এই হচ্ছে অবস্থা। আমার সেই বন্ধু চলে যাওয়ার পরে গুলতামাম খানকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘তুমি ঐভাবে আমার বন্ধুর শার্টের কলারে কী শুঁকছিলে?’ গুলতামামের সবিশেষ অনুরোধে আমি তাকে তুমি করেই বলি। আমার মতো দেশবিখ্যাত সায়েন্টিস্ট তাকে আপনি করে বললে তার নাকি ইজ্জত থাকবে না।
গুলতামাম আমার কথা শুনে কঠিন আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,
‘স্যার, আপনার এই বন্ধুটি যে এ্যালকোহলে আসক্ত, এটা কি আপনি জানেন?’
বিষয়টা আমি জানতাম। কিন্তু এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার এতে মাথাব্যথার কী আছে? আমার চোখের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিটাকে সে বুঝতে পারলো। ততোধিক আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো,
‘স্যার, আপনি কত রকম গাছ গাছড়া নিয়ে গবেষণা করেন! নানারকম মেডিসিনের মিশ্রণ তৈরি করেন। একজন এ্যালকোহলিক যদি আপনার ল্যাবরেটরিতে গিয়ে বসে থাকে, তাহলে একটা কেমিক্যাল রিয়াকশন হতে পারে। হয়ত এতে করে আপনার গবেষণা পণ্ডও হয়ে যেতে পারে!

অদ্ভুত যুক্তি! এমন আজব কেমিক্যাল রিয়াকশনের কথা বাপের জন্মেও শুনিনি! এসব আসলে অন্য কিছু নয়। আমার ল্যাবরেটরীর ত্রিসীমানা থেকে সবাইকে সরিয়ে রাখার বাহানা। ওহ, বলা হয়নি। আমার এই গুলতামাম খান আগের সেক্রেটারির চেয়েও এক কাঠি বাড়া। সে আমার ল্যাবরেটরীর টুকিটাকি কাজকর্মেও আমাকে সাহায্য করে। স্পেশাল এজেন্ট এতরকম স্পেশাল কাজকর্মে দক্ষ, যে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মনে মনে ভাবছি, সেক্রেটারির ছুটি দীর্ঘায়িত হলে ভালোই হয়। এমন এসিস্টেন্ট কাম সেক্রেটারী পেলে শুধু সেক্রেটারি দিয়ে কী করবো?
ফোন করে জেনেছি, সেক্রেটারির বউয়ের নাকি বাচ্চা হবে। কিছু কমপ্লিকেশন আছে। তার একটু লম্বা ছুটি প্রয়োজন। আমি উদারমনে ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছি। কাজ শেষ না হওয়া অব্দি ফিরে আসতেও বারণ করে দিয়েছি তাকে। সেক্রেটারির মুখের ভাব টেলিফোনের এই প্রান্ত থেকে দেখতে পারিনি বটে, কিন্তু উত্তর শুনে বুঝতে পেরেছি তার বিস্ময় যেন বাঁধ মানছে না। নুন আনতে পান্তার নতুন করে খোঁজ পড়ে যায় যার, সে হঠাৎ কীসের চেরাগ পেলো বেচারা সেক্রেটারি বুঝতে পারছে না!
এদিকে গুলতামাম খানকে নিয়ে আমার দিনরাত্রি বেশ কাটছে। বিশেষ করে ল্যাবরেটরিতে তার পারফরমেন্স দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ। কেমিস্ট্রিতে আমার দক্ষতা খুব আহামরি কিছু নয়। সেজন্যই গবেষণা কাজে সবসময়ই কিছুটা অতিরিক্ত সময় লেগে যেত। দশটা কাজের জায়গায় পাঁচটা কাজ করেই তৃপ্ত থাকতে হতো। গুলতামাম খান তার কেমিস্ট্রির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমার গবেষণায় বেশ গতিসঞ্চার করে দিলো। কোন এসিডের সাথে কোন গুল্মের রিয়াকশনে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, তা সে একেবারে খাতা কলম এনে দেখিয়ে দিলো আমাকে। আমার নিরাপত্তা বিধানকারী সাময়িক এই সেক্রেটারির কেমিস্ট্রিজ্ঞানে আমি আক্ষরিকভাবেই হতভম্ব হয়ে গেলাম।
জিজ্ঞেস করাতে ঈষৎ লাজনম্র গলায় উত্তর পেলাম,
‘স্যার, কেমিস্ট্রিটা বরাবরই ভালো বুঝতাম। ইচ্ছে ছিল, আপনার মতো সায়েন্টিস্ট হবো। এমনই কপাল! হয়ে বসে আছি তিনশ ষাট ডিগ্রি বিপরীতের অন্য পেশার মানুষ। দিনরাত চোর ছ্যাঁচড় আর বদমাশদের পেছনেই লেগে আছি। কেমিস্ট্রির সেই মজা অনেকদিন পর আপনার কাছে এসে পেলাম স্যার!’
‘কেমিস্ট্রির মজা আর পেলে কোথায়? আমি তো উদ্ভিদবিজ্ঞানী! গাছপালা শেকড়বাকড় নিয়ে কাজকারবার। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে কেমিস্ট্রির বিদ্যা কাজে লাগাই বটে! কিন্তু পুরোপুরি কেমিস্ট্রির মজা পেতে হলে তো তোমাকে প্রাণীবিজ্ঞানীর সাথে কাজ করতে হবে! তেমন কারো নিরাপত্তাবিধানের দিকে মন দিলেই তো পারতে! আমার চেয়েও বিখ্যাত কোনো প্রাণীবিজ্ঞানী কি নেই দেশে?’
গুলতামাম খান একেবারে জিভ কেটে বলে,
‘স্যার, এই মুহূর্তে আপনার যশের কাছাকাছি আর কোনো প্রাণীবিজ্ঞানী, মৎস্যবিজ্ঞনী, খাদ্যবিজ্ঞানী...যাই বলেন না কেন, কেউ নেই স্যার! দেশের সব ক’টি পত্র পত্রিকায় আপনাকে নিয়ে কী পরিমাণ মাতামাতিটা হয়েছে, একবার দেখেছেন? ডেঙ্গুর মতো একটা রোগ, যা কী না আমাদের দেশের অর্থনীতিকেই একেবারে তুলে আছাড় মারতে বসেছিল আপনি তাকে ধরে একবারে নীলডাউন করে রেখেছেন। এটা কি কম গৌরবের বিষয় স্যার?’

গুলতামামের প্রশংসার জোয়ারে ভাসতে ভাসতে আমি প্রায় মঙ্গলগ্রহে পৌঁছে যেতাম। বুকের মধ্যে লাল নীল ধুমকেতু ছোটার উল্লাস অনুভব করতাম। আহা! এই তো জীবন! এভাবেই একদিন নোবেল বিজয়ীও হয়ে যেতে পারি! বিশ্বসেরা বাঘা বাঘা সব সায়েন্টিস্টের পাশে একই সারিতে আমার নামেও মশাল জ্বলবে!

গুলতামামের তোড়জোড়ে কল্পনার রাজ্যেও বেশিক্ষণ ভেসে বেড়াতে পারতাম না।
আমার পরবর্তী গবেষণার জন্য আমাকে তাড়া দেওয়ার গুরুদায়িত্বটাও সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। এবারে আমি হাত দিয়েছি আরেক যুগান্তকারী আবিষ্কারের কাজে। জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কৃত অনুরণন মাপক যন্ত্রের সাহায্যে এবার ভিন্ন ধরনের কিছু আবিষ্কার করার চেষ্টায় আছি। এই অনুরণন মাপক যন্ত্রের সাহায্যেই জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, উদ্ভিদের প্রাণ আছে। এটি অনেক পুরনো কথা। এবারে এই যন্ত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে উদ্ভিদের দেহে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করবো। অর্থাৎ এই যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদ তার ভালোলাগা মন্দলাগাকে নিজের ভাষায় ব্যক্ত করার পাশাপাশি রোগ হওয়ার পূর্ব অনুভূতিও জানাতে পারবে। সন্দেহ নেই, খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী গবেষণা। আমার বস জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। টাকা পয়সা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে একেবারে নিষেধ করে দিয়েছেন। কাজেই আমার হাতে অফুরন্ত সময়, সুযোগ আর অর্থ।

গুলতামাম খানকে আমার গবেষণার বিষয়টা বলতেই সে মাথা দুলিয়ে নিজের উত্তেজনা বোঝাতে বোঝাতে বললো,
‘স্যার, ইউ আর আ জিনিয়াস! আপনি নিশ্চয়ই পারবেন!’
‘দেখা যাক গুলতামাম। সেই চেষ্টাতেই তো আছি। তুমি আমার পাশে থেকো।’
‘সেটা নিয়ে একদম ভাববেন না স্যার। আমার দিক থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা পাবেন। কী করতে হবে, শুধু আদেশ করবেন!’
‘আচ্ছা বেশ। শুনে খুশি হলাম। তুমি আমায় কিছু সূত্র লেখার কাজে সাহায্য করো। এবারে শুধু কেমিস্ট্রি না, ম্যাথমেটিক্সের জ্ঞানও কাজে লাগবে। তা ম্যাথে তোমার পারদর্শীতা কেমন?’
দেখা গেল, গুলতামাম ম্যাথমেটিক্সেও যথেষ্ট ভালো। বড় বড় সিরিজ সমাধানেও তার পারঙ্গমতা আমাকে প্রায় হকচকিয়েই দিলো। তবে এবারে কাজ করতে গিয়ে বেশ বড় বড় বাধার সম্মূখীন হলাম। এক পর্যায়ে পুরো ব্যাপারটাই গাঁজাখুরী মনে হতে লাগলো। ‘ধুত্তুরী...কিচ্ছু হচ্ছে না’ বলে বারকয়েক হাত থেকে এটা সেটা ফেলেও দিলাম।

সেই দুঃসময়ে গুলতামামই বড় বাঁচা বাঁচালো। সে একবারে ধন্বন্তরীর মতো সমাধান বাতলে দিয়ে বললো,
‘স্যার, আমার তো মনে হচ্ছে এখানে রোগ বহনকারী ফাঙ্গাসের জীবনপ্রণালীর রহস্য কাজে লাগতে পারে। সেটা হাতে পেলে হয়ত কাজ অনেকটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’
আমি আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। চোখমুখ ঝলসে উঠলো আনন্দে। কিন্তু পরক্ষণেই পিন ফোটানো বেলুনের মতো চুপসে গিয়ে বললাম,
‘কিন্তু সেটা তো বিজ্ঞানী আবদুল হকের নিজস্ব গবেষণার বিষয়। আমি সেই গবেষণার ফর্মুলা কোথায় পাবো?’
গুলতামাম খান এক মুহূর্ত দ্বিধা না করে বললো,
‘সেটা আমার ওপরেই ছেড়ে দিন স্যার!’
আমিও নির্দিধায় সবকিছুই বলতে গেলে গুলতামাম খানের হাতে ছেড়ে দিলাম। সে সবজান্তা শমসেরের মতো আমার গবেষণার তরি তরতর করে এগিয়ে নিয়ে চললো। অনেকখানি কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরে একদিন খবর পেলাম, আমার সেক্রেটারির স্ত্রীর নাকি বাচ্চা হয়েছে। অচিরেই সে কাজে যোগ দিতে আগ্রহী। সেক্রেটারি চলে আসা মানে তো গুলতামামেরও ছুটি হয়ে যাবে। বেচারার মুখ ভার। কাজের গতি আরো দশগুণ বাড়ানোর পরামর্শ দিলো আমাকে। সে থাকতে থাকতেই বড় একটা অংশ যাতে করে ফেলা সম্ভবপর হয়। আমি নিজের তালেই কাজ করি। সেক্রেটারির মতো দশভূজা হয়ে কাজ করলে মগজের ধারে শান দেবে কে?

সেদিন ছিল শুক্রবার। রকিং চেয়ারে বসে বসে দোল খাচ্ছি। হাতে একটা গল্পের বই।
সপ্তাহের এই দিনটিতে আমি সাধারণত কাজ করি না। গুলতামামকেও এইদিন ছুটি কাটাতে বলি। সে একটু বাইরে যায়। সিনেমা দেখে, বন্ধু বান্ধবদের সাথে দেখা সাক্ষাত করে। আর কী কী করে, আমি অতশত খবর নিতে যাই না। সেদিনও বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো গুলতামাম। হাতে ছোট একটা ব্যাগ। ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছে কেন জিজ্ঞেস করতে জানালো, আমার কিছু অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাওয়ার সময়ে বাসার লনে পুঁতে রেখে যাবে। আমি কিছু বললাম না। গুলতামামের এসব ব্যাপারে বাড়াবাড়ির অন্ত নাই। আমার কাজের খুঁটিনাটিও যাতে বাইরের লোকে জানতে না পারে, সেজন্যই তার এতসব সতর্কতা। নিষেধ করে দেখেছি। বিশেষ ফল হয় না। তাই এখন আর বলতে যাই না।

গুলতামাম বাসার দরজা খুলতেই বাইরে আমার সেই এ্যালকোহলিক বন্ধু্টিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। সে একা নয়। সাথে অফিসিয়াল ড্রেসে একজন পুলিশ অফিসারকেও সাথে নিয়ে এসেছে। অফিসারটি ঘরে ঢুকেই আমাকে দেখে সশ্রুদ্ধ সালাম ঠুকে গুলতামামকে দেখে দাঁত বের করে ফেললো। তারপর সহাস্যে বললো,
‘এই যে বাছাধন! যাচ্ছো কোথায়? ব্যাগের ভেতরে ওসব কী? স্যারের গবেষণার নথিপত্র কি? এবারে কোথায় বিক্রি করবে? বিজ্ঞানী গ কে নাকি খ কে? কে এবারে তোমার দরদাম চুকালো শুনি?’

আমি রকিং চেয়ারের আরাম থেকে গা তুলে বললাম,
‘অফিসার, বেচারাকে বেশি কষ্ট দিয়েন না। সে আমাকে কম সাহায্য করেনি কিন্তু! গত দুইটা মাস বিনা বেতনে বেগার খেটে গেল। কতগুলো সিরিজ আর রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমাধান করে আমার কাজে কতটা গতি এনে দিলো! সাথে কতরকম বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত ফর্মুলাও চেখে দেখার সুযোগ পেলাম! এসবের একটা মূল্য আছে না? আর ও বেচারা নিয়েই বা যাচ্ছে কী? ওগুলো সব রদ্দি কাগজপত্র। আসল কাজে নামার আগে ওয়ার্ম আপ করে নিতে হয় না? ওগুলো হলো ওয়ার্ম আপ পেপারস। কিছু প্রাক্টিস করলাম। এবারে আসল কাজে নামবো। বেচারা তো জানেই না, আমার পরের আবিষ্কার কী নিয়ে। ওকে যেটা বলেছি, সেটা তো আমার আরেকজন বন্ধুর কাজ। শুনেছি কাজ অনেকখানি এগিয়েও নিয়েছে সে। এতদিন ভগিচগি দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলাম বেচারাকে। বেশ বসে ছিল। একেবারে লক্ষ্ণী ছেলের মতো! একটুও বিরক্ত করেনি আমাকে!’
পুলিশ অফিসার চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
‘আপনি জানেন না স্যার! এ কতবড় ক্রিমিনাল! লেগে থাকলে নিজেও ছোটোখাট বিজ্ঞানী হতে পারতো। কিন্তু হলো কী? চোর! আরেকজনের মগজ থেকে বের করা জিনিস চুরি করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়! এর আগেও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে আরেক বিজ্ঞানীর ঘাড় মটকাতে গিয়েছিল। এর আসল নাম কেউ জানে না! কোন এক প্রাইভেট অরগানাইজেশন নাকি আছে এর পেছনে। সেবার পিছলে গেছে। এবারে সবকটার চামড়া ছিলে ছাড়বো! এরা দেশের সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানীদের ফর্মুলা চড়া দামে বিক্রি করে দেয় বাইরে। দেশের শত্রু সবক’টা!’

আমি চশমাটা চোখ থেকে খুলে শান্তভাবে সেটাকে পরিষ্কার করে নিলাম।
সন্দেহটা হয়েছিল সেদিনই, যেদিন গুলতামাম বাবাজি কেমিস্ট্রির জ্ঞান কপাকপ কপচে দিল আমার সামনে। ঐ জ্ঞানের পিছে ধাওয়া না করলে এত পুরনো জিনিস মনে থাকে কারো? বন্ধুকে বলতেই সে জানালো,
‘একদম ভাবিস না! যেভাবে চলছে চালিয়ে যা! তোকে ফাঁদে ফেলছে তো? তুইও ফাঁদে ফেলে দে। ব্যাটাকে দিয়ে গুচ্ছের কাজ করায়ে নে এই চান্সে। কতকিছু জানে! এমন এসিস্টেন্ট কি সবসময় পাবি? আমি যা করার করছি ব্যাটাকে!’
বন্ধুর পরিকল্পনা মাফিকই এগিয়েছি। ফলাফল দুর্দান্ত!

গুলতামাম খান অবিশ্বাসীর চোখে আমাকে দেখছে। নিজের চোখ আর কানকে বেচারা আর বিশ্বাস করতে পারছে না।
আহারে! ওরই আর দোষ কী? এতদিন শুধু চুরি করা দেখেছে। নিজেও তো একজন চোর!
চোরের ওপরে বাটপারীর দেখা কি সবসময় মেলে?

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৪:১৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×