somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অণুগল্প- সময়

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চঞ্চলা কিশোরীর মতো শপিংমলের এক্সেসরিজ সেকশনের পুরো ফ্লোর জুড়ে চক্কর কাটছিল মেয়েটি।
নামীদামী শপিংমল। এখানে আসেই সব বড়লোকেরা। কী দারুণ দারুণ সব ব্যাগ, চুড়ি, মালা...আর কী দারুণ সব ইয়ারিং। সেই ছোটবেলা থেকেই ইয়ারিং এর দিকে ঝোঁকটা তার বড্ড বেশি। মধ্যবিত্ত বাবার দেওয়া হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে মাসে দু’মাসে কিছুমিছু কিনত। কিন্তু সেসবও সব ফুটপাত থেকে। চটকদার, বাহারি নকশা...কিন্তু ভেতরে সব ফাঁপা। ওপরের সৌন্দর্যটা মেকি, দুইদিনও সেই চটকের মেয়াদ থাকত না। মেয়েটা তবু অনেক ভালোবাসা নিয়ে গুছিয়ে রাখত সবকিছু। সেই ইয়ারিংগুলো তার কাছে অমূল্য ছিল।
বিয়ের পর স্বামী আর তার নিজের স্বল্পবেতন দিয়ে টেনেটুনে সংসার চালাতে হয়। ইয়ারিং পরতে এখনো ভালো লাগে। ফুটপাতের জায়গায় উঠে এসেছে সাদামাটা শপিংমল। দুই তিনমাসে অনেক কষ্টের পয়সা বাঁচিয়ে এখনো কিছু কেনা হয় বটে, কিন্তু এইরকম দামী শপিংমল থেকে কিছু কেনার স্বপ্ন এখনো অধরা।
তবু এখানে প্রায় নিয়মিতই আসে সে। এসে একা একা ঘুরতে ভালো লাগে। হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে ভালো লাগে অবিশ্বাস্য সুন্দর সব ইয়ারিং! কানের কাছে ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। ইস! এই ইয়ারিংগুলো পরলে তার চেহারাটাই কেমন পালটে যায়! কী দারুণ সুন্দর লাগে ওকে দেখতে! এত দাম! আহা! কবে যে বেতনটা আরেকটু বাড়বে!
ইচ্ছেমত ইয়ারিং কিনে নিজের ভান্ডার ভরিয়ে ফেলবে সেদিন!

বাইশ বছর পরের কথা।
সেদিনের সেই মেয়েটি এখন নামকরা একটি ফার্মের উচ্চপদস্থ এক্সিকিউটিভ। প্রতিদিন বিশাল গাড়িটাতে চড়ে অফিস যাওয়ার পথে সে এখনো ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে থাকে শপিংমলটার দিকে।
শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো নামীদামী আরো কত শপিংমল গজিয়ে উঠেছে! এই শপিংমলটি এখন ওগুলোর তুলনায় ম্লান, পিছিয়ে পড়া। বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনের জন্য উপহার সামগ্রী কিনতে নতুন মলগুলোতেই যাওয়া হয় এখন।
তবু কী মনে করে আজ ড্রাইভারকে পুরনো এই শপিংমলটার পার্কিংএ গাড়িটা পার্ক করতে বলল। গাড়ি থেকে নেমে ধীর কুন্ঠিত পদক্ষেপে ভেতরে প্রবেশ করল সে।
আজ সে মধ্যবয়সী এক নারী। চেহারা বেশভূষা চলনবলনে বয়স এসে অনির্বার্য ছোবল হেনেছে। হিজাবের অন্তরালে ঢেকে রাখা সাদাপাকা চুলগুলো ওকে প্রতিনিয়তই পলাতক সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

হাঁটতে হাঁটতে কসমেটিক্স আর এক্সেসরিজের সেকশনে চলে আসে সে। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে সবকিছু। অনেকটা আগের মতোই আছে। খুব বেশি পরিবর্তন ঘটেনি এখানে। আজ থেকে বাইশ বছর আগে যেমন ছিল, এখনো অনেকটা একইরকম। সেই লম্বা কাঁচের বক্সগুলোর ভেতরে সারি সারি ইয়ারিং। সামনে দাঁড়ানো সেলস গার্লগুলোও আগের মতোই অল্পবয়সী। শুধু তাদের চেহারাগুলো বদলে গেছে।
একটা ইয়ারিং একটু পছন্দ হতে হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে সে। কানের কাছে ধরতে গিয়ে হাত আটকে যায় কাপড়ের বন্ধনে। একটু যেন হোঁচট খায় মনে মনে। এখানে তো... কান থাকার কথা!
অকস্মাৎই বুঝি মনে পড়ে যায়, কান ঢাকা পড়ে আছে হিজাবের আড়ালে। বয়স হয়েছে, সময় পেরিয়ে গেছে অনেক...মূল্যবোধগুলো এখন অন্যরকম হয়ে গেছে। হাতে ধরে রাখা ইয়ারিংটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নিজের অজান্তে। বক্সের পেছনে স্কচটেপ দিয়ে সেঁটে রাখা দামের ট্যাগটা দেখে। এর চেয়ে মূল্যবান কত কিছুই এখন প্রায় নিয়মিতই কেনা হয় তার।

ইয়ারিং এর বক্সটা সেলসগার্লকে ফিরিয়ে দিতেই মেয়েটি হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে, ‘ম্যাম, পছন্দ হয়নি? অন্যকিছু দেখাব?’
সে মুখ খোলে। ক্লান্ত স্বরটা নিজের কাছেই কেমন অপরিচিত শোনায়। নাকি দুর্বোধ্য! ম্লান হাসি হেসে স্বগতোক্তির মতোই সে বলে ওঠে,

‘নাহ্‌! আরেকটু ক্লাসি কিছু চাচ্ছিলাম!’

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×