যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে তার নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেছে ভারতের টাইমস গ্রুপের টিভি চ্যানেল টাইমস নাউ।
সংবাদভিত্তিক এই চ্যানেলে এক অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে, এ অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব মোকাবেলা করতেই বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নৌবহরের ঘাটি চাইছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক।
শুক্রবার ‘আমেরিকা আইস বে অব বেঙ্গল’ শীর্ষক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র তার সপ্তম নৌবহরের একটি বড় অংশের ঘাটি হিসেবে চট্টগ্রামকে ব্যবহার করতে চায় বলে আলোচকরা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক টাইমস নাউয়ের এডিটর ইন চিফ অর্নব গোস্বামী আলোচনার সূচনায় বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠাতে চেয়েছিল। এখন ৪১ বছর পর এই যুক্তরাষ্ট্রই চট্টগ্রামে সপ্তম নৌবহরের ঘাটি বানাতে চাচ্ছে।
কোনো সূত্র উল্লেখ না করে তিনি দাবি করেন, টাইমস নাউ নিজস্ব অনুসন্ধানে জেনেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে তার সাম্প্রতিক সফরে এ নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন।
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন ওয়াশিংটনের হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিস, বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বীণা সিক্রি, বিজেপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেশাদ্রি চারি, স্ট্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স বিশ্লেষক মাহরুফ রাজা, টাইমস নাওয়ের উপদেষ্টা সম্পাদক ওয়াসবির হুসেইন এবং হংকংভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের চীনের প্রতিনিধি অ্যান্টনি উ।
টাইমস নাও দাবি করে, দক্ষিন চীন সাগরে অনেক চীনা ঘাটি ছড়িয়ে রয়েছে যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে এশিয়ায় চীনা নৌ বাহিনী প্রভাব বিস্তার করছে। এর মোকাবেলায় চট্টগ্রামে নৌঘাটি চায় যুক্তরাষ্ট্র।
বর্তমানে জাপান, গুয়াম ও সিঙ্গাপুরে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের ঘাটি রয়েছে।
তবে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেওয়া মার্কিন পররাষ্ট দপ্তরের মুখপাত্র ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড দাবি করেন, হিলারির বাংলাদেশ সফরে এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি।
কিন্তু টাইমস নাওয়ের ওয়াশিংটন প্রতিনিধি প্রিসিলা হাফ দাবি করেন, “যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্র দপ্তর নিশ্চিত করেছে যে হিলারি সপ্তম নৌবহরের ভবিষ্যৎ ঘাটি নিয়ে আলোচনা করে এসেছেন।”
টাইমস নাউয়ের উপদেষ্টা সম্পাদক ওয়াসবির হুসেন বলেন, তার কাছে বাংলাদেশ থেকে তথ্য এসেছে যে, ২০০৮ সাল থেকেই চট্টগ্রামে নৌঘাটি করা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিমান ঘাটিগুলো নিয়ে জরিপ চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় যে তার নৌযান নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছাক।
তিনি বাংলাদেশের কয়েকজন সংসদ সদস্য এবং সেনা কমান্ডো বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জেনেছেন বলে দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার কঠোর সমালোচনার ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই আলোচনা পুরোপুরি অস্বীকার করছে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুকি নেবে কিনা তা নিয়ে আলোচকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
bdnews24.com