somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্র্যাজেডিয়াস জাতীয় শোকদিবস বনাম এক জাতীয় জন্মমানবী

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাপারটা অনেকটা 'রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল' উদাহরণের কার্বণকপি না? পার্থক্য শুধু, রোমের জলন্ত অবস্থায় নিরোসাহেব বাঁশি বাজাচ্ছিলেন; আর এদিকে আমাদের সম্মানীয়া (!) নেত্রী খালেদা ম্যাডাম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের করুণ মৃত্যুর দিনটাকেই বেছে নিলেন তাঁর অতৃপ্ত আত্মার তৃপ্তিদানের জন্য। একটা ঘটেছে ট্র্যাজেডির প্রেজেন্ট টেন্সে, আরেকটা পাস্ট টেন্সে। ব্যাপারটা আলাদা স্টোরি আর আলাদা সময়ের হলেও সিক্যূয়েল কিন্তু বিলকুল এক।

মিডিয়া এবং বিএনপি'র কিছু সিনিয়র অনেস্ট নেতার বদৌলতে এই কথা এতদিনে নিশ্চয়ই দেশ ও দশের জানা হয়ে গেছে; মহীয়ষী এই নারী মাশাল্লাহ্ একাই চার চারখানা জন্মদিনের মালিক। আপোষহীন এই নারী তাঁর জন্মদিনের সাথেও আপোষ করেননি। কার সাধ্যি কুলোয় চার চারবার জন্ম নেয়?
তবে উনার চারবার জন্মগ্রহনের রহস্য অথবা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চেয়ে আমায় লজ্জা দেবেন না। আমি ভাই মুক্খুসুক্খু মানুষ। এই ব্যাপারে উনার মতো ম্যাট্টিকে টুট টুট টুট করা সুশিক্ষিতার কাছ থেকে জানতে চাওয়াই ভাল। হাউ কুড ইউ ডিড দিস মিরাকল ফর ফোর টাইমস?
তবে এটা একটা বিরল রেকর্ড, চারবার জন্ম নেয়া আদম সন্তানেরও অস্তিত্ব এই দুনিয়ায় আছে। আর এই অমূল্য রেকর্ডের মালিক স্বয়ং জিয়া পরিবার (নট বাংলাদেশ! এই কুচ্ছিত একটা ব্যাপারকে অবশ্যই জাতীয় ইস্যুতে পরিণত করার মত নির্লজ্জতা আমি দেখাবোনা।)।
.
অতীতের জলে আরেকটু নাড়া দিয়ে এটাও জানতে পারি, এই মহিলার ভেস্তে যাওয়া সংসার বাঁচিয়েছিলেন ওই মহান পুরুষটি। ব্যাপারটা কিছুটা ব্যাক্তিগত হয়ে যায়, তবুও স্মৃতি রোমন্থনে ব্যাক্তি অথবা সমষ্টির হিসেবরক্ষণে কী-ই বা আর আসে যায়! মহান মানুষটি মহান কর্ম করলেন বটে; কিন্তু পুরস্কারও তো আর যাচ্ছেতাই পান নি! গোটা জাতির যেদিন কান্নায় ভেঙে পড়ার কথা, ঠিক ওই দিনটাতেই তাঁর দয়ার পাত্রীর ধুমধামের জন্মদিন, তাঁর উদ্দেশ্যে নীরব কটাক্ষ।
বাহ্ বাহ্।
অডিয়েন্স, তালিয়া বাজান।
আমরা আমজনতা। তালিয়া না বাজাইয়া উপায় আছে?
.
চলুন, এবার তেনার পয়দা দিবস নিয়ে কিছু কাটাছেঁড়া কথার জোড়াতালিদানকৃত পুর্নাঙ্গ তথ্য পেশ করা যাকঃ
বেগম জিয়ার মা-বাবা প্রদত্ত সাক্ষাত্‍কার অনুযায়ী তাঁর জন্ম হয় ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে এবং লেখাপড়া হাইস্কুল পর্যন্তই।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের রেকর্ডে দেখা যায় বেগম জিয়া ১৯৫৪ সালের ১লা জানুয়ারী দিনাজপুর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ভর্তি রেজিষ্টার অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল। তিনি ঐ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এবং অত্র বোর্ডের আওতাধীন দিনাজপুর কেন্দ্রের দিনাজপুর বালিকা বিদ্যালয় হইতে ১৯৬১ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করিয়া অত্যন্ত সফলতার সহিত অকৃতকার্য হন। তাঁর রোল নম্বর ছিল 'দিনা নং এফ-৭৯২'। রেকর্ডমূলে তাঁর জন্মতারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল।
বেগম জিয়ার বিয়ের কাবিনে দেখা যায় তাঁর জন্মতারিখ ৫ আগস্ট ১৯৪৪ সাল। এর কারণ হচ্ছে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বেগম জিয়ার প্রকৃত জন্মতারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সাল বা শিক্ষা সনদের জন্মতারিখ ৫ সেপ্টম্বর ১৯৪৬ সাল অনুযায়ী বিয়ের সময় তাঁর বয়স দাঁড়ায় যথাক্রমে ১৪ বা ১৫ বছর; যা বিয়ের জন্য আইনসিদ্ধ নয়। তাই আইনসিদ্ধ করার জন্য জন্ম তারিখ এমনভাবে পিছানো হয়, যাতে বয়স ১৬ বছর হয়। এখানে কাবিনের প্রয়োজনে জন্মসাল এবং মাস পরিবর্তন করা হলেও তারিখ ৫ ঠিক রাখা হয়।
১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী ফরমে এবং নির্বাচিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকার অফিসে এবং রেডিও ও টেলিভিশনে সরকারী ভাবে পাঠানো তাঁর জীবন বৃত্তান্তে জন্ম দিন ১৯ আগস্ট ১৯৪৫ সাল উল্লেখ করে প্রচার করা হয়, যা ঐ সময়কার পত্র-পত্রিকায় লিড নিউজ আকারে ছাপানো হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে সরকারীভাবে ছাপানো প্রধানমন্ত্রীর জীবন বৃত্তান্তে এবং তাঁর লাল কূটনৈতিক পাসপোর্টে জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ সাল। তাছাড়া অন্যান্য আরো অনেক সরকারী রেকর্ডপত্রে তাঁর জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর উল্লেখ আছে।
গত তত্তাবধায়ক সরকারের সময় প্রণীত জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায় বেগম জিয়ার জন্ম তারিখ ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সাল!
পয়দা দিবস ইস্যুতে চতুর্থ টুইস্ট!! তবে এই সন-তারিখ যে একেবারে সঠিক নয় তার প্রমাণ তাঁর শিক্ষা সনদ এবং বিয়ের কাবিন। শিক্ষাসনদ অনুযায়ী তিনি ১৯৬১ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেন এবং বিয়েও হয় সেই ১৯৬১ সালে। শিক্ষা বোর্ডের নিয়মানুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সাধারণভাবে ১৬ বৎসর বয়সে মেট্রিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে। বিশেষ কারণে এক দুই বৎসর বেশকম হতে পারে। তবে ১৪ বৎসরের কম বয়সে মেট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায় না। আবার ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ের কনের বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর পূর্ণ হতে হবে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার জন্ম হলে ১৯৬১ সালে তাঁর বয়স দাঁড়ায় মাত্র সাড়ে ১৩ বছর। এই বয়সে মেট্রিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বা বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রি করা মোটেও সম্ভব নয়।
সবশেষে ব্যারিষ্টার মিঃ মওদুদ আহমেদ রচিত 'কারাগারের দিনগুলি' বইয়ে বেগম জিয়ার জন্মদিনকে বিতর্কিত জন্মদিন বলে উল্লেখ করার বিষয়টি না বললেই নয়।
.
যাই হোক, ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার প্রকৃত জন্মদিন নয়। এটা তাঁর বানানো জন্মদিন এবং এই জন্মদিনের শুরু ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর। উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ঘোষিত জাতীয় শোক দিবসের শোক প্রকাশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, কটা ও খাটো করা।
একজন মানুষ কি করে এতটা অকৃতজ্ঞ হতে পারে তা আমার বোধশক্তির বাইরে। যেই মানুষটা দেশের কথা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, এমনকি যিনি না বললে তিনি হয়তো তার স্বামীর ঘরে আবার উঠতে পারতো না কোনদিন, সেই মহান মানুষটার মৃত্যুদিবসে কি করে নিজের ভূয়া জন্মদিন পালন করে আমি বুঝি না।
.
ওয়েল ডান ম্যাডাম।
ক্ল্যাপস ফর ইউ।
ইউ ফিডেলড হুইসেল হোয়াইল আওয়ার হার্টস বার্নড।
আমজনতার একাংশ হিসেবে আপনাকে আপনার ডুপ্লিকেট জন্মদিনের ঘৃণাভরা শুভেচ্ছা জানাই।
.
তথ্যসূত্রঃ তালপাতারসেপাই এবং ইন্টারনেট।।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×