দেখা হওয়ামাত্রই দু’জন বন্ধু প্রায় নাচানাচাই শুরু করে দিল, “বন্ধু ট্রিট দে। বন্ধু ট্রিট দে।।”
ব্যাপার কি?
ট্রিটবালকগণ হঠাত্ ট্রিটিস ট্রিটিস শুরু করছে কেন?
“ট্রিট কিসের?” জানতে চাইল মদন।
“শালা, ব্রেকআপ পার্টি দে।” জবাবে ট্রিটবালকদ্বয়।
ব্রেকআপ?
কিসের ব্রেকআপ?
কখন ব্রেকআপ?
মাথা খারাপ হয়ে যায়নি তো?
“একজন হলে বলতাম বাঁশ-বুঁশের সাথে বাড়ি খেয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট হয়েছিস কিনা। যেহেতু দু’জন তোরা, তাহলে বল কি খেয়ে আবোলতাবোল বকছিস?”
“মনু, বাঁশ-বুঁশের বাড়ি মনে হয় তুমি খাইছ। তাই তোমার স্মৃতিহরণ হইছে। তোমার এক্স জিএফ মদিনার কথা ভুইলা গেছ এত তাড়াতাড়ি?”
এইবার হুঁশ হল মদনবাবুর। তার বাল্যপ্রেম। তিনবছর আগের গার্লফ্রেন্ড। তবে এই শালারা কিসের ব্রেকআপ পার্টি চায়? ব্রেকআপ তো তিনবছর আগেই হয়ে গেছে।
এখন আবার কি!
“তিন বছর ধরে ট্রিট চাস নাই, আর আজ হঠাত্ তোদের এত ট্রিটের পড়ল ক্যান?”
“আরেহ, তোর লাভস্টোরিতে নতুন টুইস্ট যোগ হইছে বাপ। পুরা গল্প শুনলেতো এখন তুই খাবি খেতে থাকবি!”
“ঠিক আছে, খাবিই খাওয়া।”
“তোর মদিনার সাথেতো আজ কদম আলির বিয়া!”
হুয়াট?
ধড়াস করে ওঠে মদনের বুক!
বলে কি!
প্রসঙ্গত বলে রাখা যাক, মদনের সাথে মদীনার সম্পর্কের সময় থেকেই কদম আলি মদীনার পিছে পিছে ঘোরে। মানে, কদম আলিও মদীনা বিবিকে ব্যাপক পছন্দ করত। মাঝখানে কাটি করে বসে মদন মিয়া। মদীনা বিবির লাইনটা এনগেজ করে দিয়ে কদম আলির লাইন ওয়েটিংয়ে ফেলে দেয়
ঘটনাচক্রে বছর দুয়েক চলার পর মদন-মদীনার সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে যায়, আর সুযোগটা কদম আলি নিয়ে বসে।
তবে আমজনতার স্রোত থেকে আমরা ভেসে আসা কিছু কথা শুনতে পাই, মদন আর মদীনার সম্পর্কচ্ছেদের পেছনে কদম আলিরই নাকি অদৃশ্য যোগ রয়েছে। কতোটুকু সত্য, সেটা আমরা জানি না। জানতে চাইও না। কারণ, 'এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার'-এই জাতীয় একটা কথার সাথে কমবেশ আমরা সবাই-ই পরিচিত। ঘটনা যদি সত্য হয়, তাহলে এক্ষেত্রে কদমের কুটনৈতিক খেলাটা একটু বেশী গভীর হয়ে গেলেও চালটা আসলে ফেয়ারই; যেহেতু ব্যাপারটা লাভ! আর, এভরথিং ইজ ফেয়ার হেয়ার।।
কথায় ফিরে আসি, বুক ধড়াস পর্ব শেষ হতেই মদন মুল ঘটনা জানতে চায়; কেমনে কি হল।
অতঃপর জানতে পারে, মদীনা বিবির পরিবার হঠাত্ করেই মদীনা বিবিকে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগে। প্রেমের মরা মদীনা অবশেষে নিরুপায় হয়ে কদম আলির কথা পরিবারকে বলে দেয়। মদীনার পরিবার কদম আলির সাথে কথা বলতে চায়। কদম আলী যোগাযোগ করে তাঁদের সাথে। তারপর তাঁরা কদম আলিকে এক সপ্তাহের মধ্যে তার পরিবারকে রাজি করিয়ে পারিবারিকভাবে বিয়ের আয়োজন করার শর্ত দেয়।
বাবাহীন (বেশ কয়েক বছর আগে তিনি গত হন) পরিবারে বড় ছেলে ও একমাত্র ইনকাম সোর্স হিসেবে মা কে রাজি করাতে কদমের বিশেষ একটা বেগ পেতে হয় নি অবশ্য। তারপরের ঘটনাতো ইতিহাস......
যদিও উপরের কথাগুলো কদম আলী ও তার পরিবারের বক্তব্য।
এদিকে বেয়াড়া জনতার মুখ থেকে আমরা এই ব্যাপারে শুনতে পাই অন্য কথা! তাদের বক্তব্য, কোন একটা বিশেষ কারণবশত কদম আলী এই বিয়েতে 'বাধ্য হয়ে' রাজী হয়। আকাইম্যা জনগণের খাইয়াতো আর কোন কাজ নাই; হুদাই অন্যের ব্যাপারে হাঁছা-মিছা আলাপ চালায়।
হাঁ! তবে জনতার কিছু পয়েন্ট আমরা একেবারেই ফেলে দিতে পারি নাঃ
১। যদি বিয়েটা বাধ্য হয়ে না করতে হয়, তাহলে কদম আলী শুধু মা আর বোনকে নিয়ে কেন বিয়েটা করতে গেল? পরিবারের অভিভাবক হিসেবে বাবার অবর্তমানে নিজের কাকাকে বা বাড়ির অন্যদেরওতো নিয়ে যেতে পারত!
২। একমাত্র ভাই প্রবাস থেকে দেশে ফেরার আগেই কেন মদীনার পরিবার অনেকটা তাড়াহুড়ো করে বিয়েটা দিয়ে ফেলল? তাও আবার নিজেদের বাড়ি থেকে অনেকটা দুরে অন্য আরেকটা বাড়িতে!
৩। বিয়েটার ব্যাপারে যেহেতু দুইটি পরিবারই সহমতে এসে গিয়েছিল, সেখানে একদিনের মধ্যে কেন তাড়াহুড়োতে বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেল? একটু সময় নিয়ে জাঁকজমক করেই বিয়েটা হতে পারত!
৪। বন্ধুবান্ধব কাউকে কিছু না জানিয়েই হঠাৎ করে এমন একটা কাজ সে কিভাবে করল? বিয়ে’র মত একটা ব্যাপার স্বল্প পরিসরে স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করলেও মানুষ বন্ধু-আত্মীয়দের এতে সামিল করার চেষ্টা করে। অথচ, কেউই নাকি এই ব্যাপারে কিছুই জানত না!
জনগণ বলছে উপরোক্ত পয়েন্টগুলোর দরুণ এই বিয়েটাতে কতগুলো 'কিন্তু', 'যদি', 'কেন'র উপস্থিতি ঘটে গেছে।
যা-ই হোক, আমজনতা আর মিডিয়া একই খামারের বয়লার।
বিনা দরকারেও গুজব রটায়।
কথা না থাকলেও কথার জন্ম দেয়।
অকাট্য যুক্তি দিয়ে কথা মোটাতাজাকরণ করে।
কথার পেট হতে কথা বের করে।
কথার বংশবিস্তার ঘটায়।।
আমরা এসবে কান দেব না। শুনলেও কালা হয়ে থাকব।
বিয়ে একটা শুভ কাজ। আমরা শুভকামনাই করব।
ফিরে আসি মদনের কথায়, বন্ধুদের কাছ থেকে এসব শুনে মদনের পেট মোচড় দিতে থাকে। যতই দুরত্ব থাকুক, শত হলেও সাবেক প্রেমিকা। একজন পুরুষের কাছে এসব সংবাদ পেটে মোচড় উদ্রেককারী হিসেবে ধরা দেয়াটাই স্বাভাবিক
রাতে খেতে বসে মদনের মুখে আর খাবার রোচে না। কোনমতে দু’ চারটা গিলে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ে।
শুয়ে কানে হেডসেট লাগায় গান শুনবে বলে।
একি!
এতদিনের শোনা প্রিয় রক গানগুলো হঠাৎ করে আজ ভাল লাগছেনা!
মায়াকান্না জাতীয় গানগুলোই যেন বেশী টানছে ওকে। এই গানগুলো মানুষকে শুনতে দেখলে আগে সে হেসে মরে যেত। আজ ওগুলো ওকে এত আকর্ষণ করছে কেন হঠাৎ?
ধুর! আমি মদন!
আমি আমার মতো হব।
ভাল লাগা গানগুলো যখন টানছেনা, তাহলে গানই শুনবনা আজ।
হেডসেটটা খুলে ছুঁড়ে মারে সাইডটেবিলের ওপর। চোখ বুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করে। চোখে ভেসে ওঠে মদীনা বিবির হোঁত্কা মোটা চেহারার প্রতিচ্ছবি!
মনে পড়ে তিনবছর আগের অনেক মধুর স্মৃতি; যেগুলো এতদিন ঘূর্ণাক্ষরেও ওর মস্তিষ্কে স্থান পেত না।
ইচ্ছে করে ওঠা মদীনা বিবিকে ফোন লাগায় আর বলে, “তুমি না আমার ওপর রাগ করে বলেছিলে জীবনে কোনদিন বিয়েই করবেনা? আজ কেন এ কাজটি করলে?”
আবার ধমকে ওঠে নিজেকে- ধুর শালা, তুই নিজেও করবিনা, আরেকজনকেও করতে দিবিনা? এত স্বৈরাচার কেন তুই? মেয়েটা আজীবন আইবুড়ো থাকবে তোর জন্য?
খুব ভালবাসত মেয়েটা ওকে।
চাইলে আজ কি সে নিতে পারত না ওই মেয়েটার সব দায়িত্ব?
নিজের কারণেই আজ সে বঞ্চিত।
এত করেও মনকে বুঝ দিতে পারেনা মদনা।
মন চাচ্ছে মাথায় পানি ঢালে কয়েক বদনা।
পানি ঢেলে মাথাটা ঠান্ডা করে। কিন্তু তাও যে অসম্ভব!
অতঃপর নিজেকে শান্ত করে মদন এই বলে, “অরা তো সুখী হইবনা। সমবয়সীগো বিয়া কখনওই সুখের হয় না। তার উপর আমার অভিশাপ আছে। আমি অভিশাপ দিলুম।
তয় আমি সুখী হমু। আরো পাঁচ ছয় বছর পর লাল টুকটুইকা একটা মাইয়া বিয়া করুম প্রতিষ্ঠিত হইয়া। বহুত সুখে থাকুম সবার দোয়া লইয়া।”:p
হেঃহেঃহেঃ
ক্রুর হাসি হেসে বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা বেদনাটা চাপা দেয়ার একটা প্রয়াস চালায় মদন। আর এই-ওই ভাবতে ভাবতে একটু পর চলে যায় জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি জগত্- ঘুমের দেশে।
আমরা জানিনা মদন তার বুকের ব্যাথাটা প্রশমিত করতে পেরেছিল কিনা। তবে তার অভিশাপের জন্য আমরা তাকে অবশ্যই দোষী সাব্যস্ত পারি না। কারণ, 'এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।'
তবে ট্রায়াংগল এই স্টোরির প্রত্যেকটা চরিত্রের জন্য অবশ্যই আমরা শুভকামনা করতেই পারি। মদীনা-কদম চিরসুখী হোক। ঘুমানোর আগে মদনের ইচ্ছাটার প্রথম অংশ অপূর্ণ থেকে পরের অংশটা সত্য হোক। সেও সুখী হোক আর দশজনের মতোই। ভুলে যাক তার অতীত; মদীনা।
আর হ্যাঁ, আমজনতার কথায় অবশ্যই কান দেবেন না।
কারণ, আমজনতা সদাই সত্য কথাখানা বলে। (tongue emoticon)
খুঁচিয়ে হাজারটা অযৌক্তিকতার মধ্য থেকে একমাত্র যৌক্তিকতাটা খুঁড়ে বের করে আনাটাই জনতার কাজ। তবুও কান দেবেন না। সব শুনেও কালা হয়ে থাকবেন। কারণ, 'এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড .........'
জনতার কথা শুনে কিছু কিছু আনফেয়ারলি ফেয়ার কে রিকগনাইজড আনফেয়ার করে দেয়াটা ফেয়ার না। সমাজের স্বার্থে, কিছু আনফেয়ারকে ফেয়ার সার্টিফিকেট দেয়াটাও জরুরী বৈকী।।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:১৫