বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই একটা জিনিস খেয়াল করলাম, মা-বাবা সালমান শাহ বলতে অজ্ঞান!
ছোটবেলায় কার্টুন দেখে দেখে বড় হয়েছি, আর বড় হবার পর বিদেশী মুভি। বাংলা মুভির সাথে পরিচয়টা আমার খুব একটা হয়নি কখনো। যা একটু দেখতাম বা দেখি, তাও কমেডি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না কখনো।
একদিন ভাবলাম কে এই সালমান শাহ; আমার বাবার মত খুঁতখুঁতে মানুষ পর্যন্ত যার এতবড় ফ্যান?
কি আছে বাংলাদেশী লক্কড়-ঝক্কড় ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রীর এই অভিনেতার মাঝে?
গুগল সার্চ দিয়ে কয়েক পেজ টানা একের পর এক ফটো দেখলাম। স্টাইল, গালে হাত দেয়া, ঠোঁটের কোণ কামড়ে ধরার পোজগুলো দেখে দারুণ লাগল। মনে মনে ঠিক করলাম এর কিছু সিনেমা দেখতে হবে। মা-কে বলে রাখলাম এর কোন মুভি টিভিতে দিলে আমাকে যাতে এলার্ট করে।
তার সাথে আমার প্রথমদর্শন হল 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ফিল্মটা দিয়ে।
এককথায়, অসম্ভব ভালো লাগল ফিল্মটা!
তারপর একে একে স্বপ্নের পৃথিবী, এই ঘর এই সংসার, অন্তরে অন্তরে, আনন্দ অশ্রু, মায়ের অধিকার, স্বপ্নের নায়কসহ আরো কয়েকটি ছবি দেখে ফেলি। মুগ্ধ হয়ে দেখি।
এত সিম্পল একটা মানুষ, অথচ স্টাইলের ওয়্যারহাউজ!
বুঝলাম, কেন আমার মা বাবাসহ নির্দিষ্ট একটা জেনারেশন ঢাকাই সিনেমার নির্দিষ্ট একটা সময় তথা সালমান শাহ-এর এতবড় ভক্ত!
.
অবাক হয়ে ভাবি, এই শতাব্দির বলিউডি লিজেন্ডারি স্টাইলের হাওয়া ঢাকাই সিনেমাতেও একদা বয়ে গেছিল; সেই নাইন্টিজে!
নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাংলা সিনেমাকে টিটকারী করার সুযোগ হয়তো এই লোকটা দিত না কখনোই। নিন্দুকদের একেকটা নিন্দার উচিততম জবাব ছুঁড়ে দিতেন অকপটে।
আজ বাংলা সিনেমাকে নিয়ে জোক করার সাহসও হয়তো করতে পারতামনা।
.
আজ এই লোকটির ১৯তম মহাপ্রয়াণ দিবস। আজ থেকে ১৯ বছর আগে এই ব্যাক্তির অকাল প্রয়াণ ঘটে। এক তারকার যবনিকাপাত। অমূল্য একটা জিনিসের অস্তিত্ব ঢালিউড পাড়া থেকে মিসিং, সেটা এই পাড়ার প্রত্যেকটি বাসিন্দাসহ দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে স্বীকার করতেই হবে।
জানিনা আবার কোন সালমান শাহ ঢালিপাড়ায় আবির্ভূত হবে কিনা। অসুস্থ এই ঢালিউডের সুস্থাতার দায় কেউ নেবে কিনা।
নাহ।
হয়তো তেমন কেউ আর আসবেনা।
কারণ কিছু কিছু জিনিসের অভাব অপূরণীয়ই থেকে যায়। কিছু কিছু অভাব কখনোই মেটেনা।
.
যাক, যেখানেই থাকুন খুব ভাল থাকুন। সৃষ্টিকর্তা তাঁকে অনেক ভাল স্থান দিন।
মন থেকে এই দোয়াই করি।।