সেলুনে গেলাম চুল ছাঁটতে। বেশ লম্বা একটা লাইনের পর আমার সুযোগ এল। টুপ করে বসে পড়লাম। কারণ এখানে লেট করলেই দেরি হয়ে যাবে। আমার জায়গায় আরেকজন বসে পড়বে।
সেলুনের লোকটা জিজ্ঞেস করল, "কি কাট দেব?"
বললাম, "দিয়ে দেন যেকোন একটা। তবে দেখতে যেন অভদ্র মনে না হয়।" (আমি আবার কাটছাটের নাম মনে রাখতে পারিনা। একটাই কাট জানি, 'দেখতে যেন অভদ্র না লাগে'
যথানির্দেশ তথাকর্ম!
কাঁচি দিয়ে দুই পোঁচ দিতে না দিতেই মনে পড়ল আজ বেশ কয়দিন চুল ঝরছে ব্যাপকহারে! আর খুশকির আক্রমনেও দিশেহারা অবস্থা!!
সাথে সাথে এটেনশান হয়ে গিয়ে লোকটাকে বললাম, "কাকু আমার চুল ঝরছে অনেক আর খুশকিও আক্রমণ দিচ্ছে। চুলটা এমন কাট দিবেন, যেন সেটা টাকশত্রু ও খুশকিঅবান্ধব হয়।" :p
কেমন যেন বুদ্ধিজীবি একটা ভাব নিয়ে আপাদমস্তকদর্শন করলেন। তারপর 'আমি থাকতে আপনার কোন চিন্তা নাই' ভঙ্গিতে বললেন, "ভাতিজা, তুমি কোন টেনশন নিওনা। চোখ বন্ধ কইরা আরাম কর। চোখ খুললেই দেখবা তোমার ফকফকাইন্না চেহারা।"
মনে মনে ভাবলাম, ব্যাপারটা একটু অতিরঞ্জন হয়ে গেল না? আজ পর্যন্ত কতবার কতরকমের কাট দিছি, কখনোই তো নিজেকে 'ফকফকাইন্না' মনে হয় নাই!
যাই হোক, নিশ্চিন্তে বসে পড়লাম নরসুন্দরের কাঁচিতলে। চুলহন্তারক তাঁর কাঁচি রেখে একটা বিশেষ যন্ত্রের আশ্রয় নিলেন। মেশিন দিয়ে চুল কাটতে লাগলেন। মেশিনের আওয়াজটা কেমন যেন তন্দ্রাজাগানো। তার উপর মাথায় লাগলেই মেশিনটা কম্পন দিয়ে ওঠে।
ঘুমের জন্য বেশ আরামদায়ক একটা অবস্থা। এসেও গেল ঘুম।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা। একটু পর ঘুম ছেড়ে উঠে আয়নার দিকে তাকিয়েই ছ্যাবড়া খেলাম!
এ কি দেখছি আমি!
একদম ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল। কেমন যেন গ্যাংস্টার ভাব। মাথার দিকটা দেখলেই এলাকার বিশিষ্ট গুণ্ডা 'ধোঁয়া সোহেল'-এর কথাই মনে পড়ছে বারবার; যার চুলগুলো একদম এতটুকু করে ছাঁটা। পার্থক্য এইটুকু যে, ও চুলে বিন্দাস টাইপ কতগুলো দাগ দিছে, আমার ওইগুলো নাই।
"ভাতিজা, সব ছাঁইটা দিছি।" বলে উঠলেন আমার সাধের কাকু।
"আর সমইস্যা হইবনা। চুলে একটু মেন্দি আর লেবুর রস দিয়া দিবা আইজ।"
"চুল আর রাখছেন কই? লেবু-মেহেদী এইসব দিমু কিসে?" আহত একটা ভাব নিয়ে জবাব দিলাম, যদিও মনে মনে নিহত হয়ে গেছি।
"টাকের ওপর দিলেই চলব।" ফেকলুর মত হাসতে হাসতে বলে উঠলেন।
কেউ আবার আমাকে 'টাক/টাকলা' টাইপ সম্বোধন করলে আমার ব্যাপক লাগে। মেজাজ খারাপ হবার আগেই ওকে টাকা দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
বন্ধুবান্ধব-পরিবার এমনকি আমার প্রাক্তন হাই স্কুলের টিচাররাও নাকি আমার মাথার দিকে তাকালেই আমার মধ্যে বিশিষ্ট সন্ত্রাসী 'ধোঁয়া সোহেল'-কে দেখতে পাচ্ছিলেন!
মনে মনে পণ করলাম অতিভদ্র আর সাজতে যাব না কোনদিন।
মোরালঃ অতিস্মার্ট হতে যাওয়াটা যেমন অভদ্রতা, তেমনি অতিসভ্য হতে যাওয়াটাও অবশেষে অভদ্র পরিণতি দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৬