somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা রাজস্থান - দ্বিতীয় পর্ব

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজমির
জয়পুর থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টার পথ আজমির । আমি বাসেই উঠে পড়লাম । আগে থিকে টিকেট করা ছিল না তাই ঠেলাঠেলি করে একটা স্লিপার এ বসলাম । রাত ৯ টা নাগাদ আজমিরে চলে আসলাম ।
পরের দিন বের হলাম , হোটেল থেকেই একটা গাইড দিয়ে দিলো । আমাকে ভি আই পি গেট দিয়ে মাজারে নিয়ে যাবে । ভালো তো । দরগার সামনে আসতেই আমার মনে হল আমি সিলেট চলে এসেছি ।

আজমির দরগা

দুই দিকে হোটেল , খাবারের দোকান আর ফুল , চাদরের দোকান । কোন ভাবেই আলাদা করা যায়না। যাইহোক এইবার গাইড মশাই আমাকে বলল চাদর আর ফুল কিনতে ! আমি তাকে আন্তরিকভাবে জানালাম "আমি এসব নিব না, আমি শুধুই দেখতে এসেছি ।" বেচারা বেস মনঃক্ষুণ্ণ হল । তারপর তিনি আমাকে বললেন এসব না নিলে ভি আই পি গেট দিয়ে ঢুকা যাবে না । কোন সমস্যাই নাই , আমি সাধারণ গেট দিয়েই ঢুকব । ফলাফল ০ দেখে তিনি আমাকে ছেরে চলে গেলেন , আমি এতে খুশি হলাম । একাই এগিয়ে গেলাম । ফুল চাদরের বিক্রেতারা জোরে জোরে ডাকছে , ক্যামেরাম্যানরা ধরছে ছবি তুলার জন্য ।


আমি সব ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম । " এই বাঙ্গালী বাবু , ইধার আউ" আরে এরা দেখি মানুষ চিনে । কিন্তু এসব হচ্ছে ফাদ , গেলেই চাদর আর ফুল চাপায় দিবে। ভিতরে গিয়ে দেখি বিশাল একটা গামলা , টাকা, চাল লোকজন ফেলছে সেখানে । অনেকে সোনা দিয়েছে, কেউ কেউ নকিয়া ১১০০ ঝুলিয়ে রেখেছে !


ভালো ভালো । মুল মাজার দেখেই আমার বের হওয়ার কথা ছিল , কিন্তু আটকে গেলাম । প্রায় পুরাটা দিন আমি মাজারেই কাটিয়ে দিলাম । কাওয়ালী আমাকে আটকে রাখল । এক কোনে বসে মুগ্ধ হয়ে শুনে গেলাম ।



কাওয়ালী এখানেই সারাদিন চলে, নামাজের জন্য কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে । একটা দলের শেষ হলে আরেকটা দল শুরু করে। সত্যি বলতে এখানে টাকা দিতে চাইলে আগে এদের দিয়া উচিৎ । সারাদিন কাটানোয় অনেক কিছুই নজরে পড়লো । এখানে মুসলিমরা বাদেও হিন্দু , শিখ সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ আসে । কিছু কিছু বিষয় দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । যেভাবে সবাই এখনে কান্নাকাটি করে, তাতে মনে হয় তারা ভুলেই গেছে আল্লাহ বলে কেউ আছেন ।
এছাড়াও এখনে আনা সাগার লেক , আধি দিনকি ঝোপড়ি আছে ।

আনা সাগার লেক

রাত ১০ টায় বাস , বিকানীর যেতে হবে ।

বিকানীর
" আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন ?" " আপনাদের আসতে ভিসা লাগে ? " হোটেল ম্যানেজারের এসব কথা শুনে একটু বিরক্তই হলাম । জানতে পারলাম আমি নাকি তাদের হোটেলে প্রথম বাংলাদেশি । বাহ , দারুন । ভাবলাম রুম ভারায় হয়তো ছার দিবে ! কিন্তু কোন ছার না দিয়েই ৯০০ রুপি বাগিয়ে নিল !
সকাল ১০ টা নাগাত বের হলাম । বিকানীর অনেক ছোট একটা শহর , যদিও তারা গ্রাম বলে থাকে । উন্নয়ন এখনো সেইভাবে এখনে হয়নি । এবং অনেক অপরিষ্কার । আরেকটা সমস্যা হচ্ছে এখানে বেশীরভাগ সাইন বোর্ড হিন্দিতে , যা আমার মতো বাইরের মানুষদের জন্য সমস্যা । যা দেখতে এসেছিলাম টা নজরে পড়লো জুনাগড় দুর্গ ।

জুনাগড় দুর্গের দরবার হল

বিকানীর শহরের ঠিক মাঝখানে জুনাগড় দুর্গ। ১৫৮৭-১৫৯৩ খ্রীস্টাব্দে আকবরের প্রাক্তন সেনাপতি রায়সিং লাল ও গোলাপি বেলেপাথরে এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। যা ভেবেছিলাম তারচেউ বেশি মুগ্ধ হয়েছি এই দুর্গ দেখে। লাল নিবাস, চন্দ্রমহল, ফুলমহলের রঙিন কাঁচের কারুকার্য, ইতালীয় মোজাইক, জাফরির অপূর্ব কাজ, বাদলমহল, বর্ণাঢ্য সূর্যনিবাস বা দরবার হল, গঙ্গানিবাস, দুর্গানিবাস, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে যুদ্ধে হারানোর স্মারক করণমহল, শিসমহল, ছত্তরমহল, বিজলিমহল, হাজারি দরোয়াজা মিউজিয়াম, মিনিয়েচার পেন্টিং, চিনি বুরুজ ইত্যাদি – একের পর এক দেখছি । এখনে ফ্রী গাইড দিয়া হয়। একজন গাইড ১৫-২০ জন কে নিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখায় ।

পরের গন্তব্য লালগড় প্রাসাদ ও মিউজিয়াম। প্রাসাদের এক অংশ এখন বিলাসবহুল হোটেল। অন্য একটি অংশে বাস করেন রাজপরিবারের বর্তমান প্রজন্ম। যেখানে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ ।

লালগড় প্রাসাদ

তারপরে পড়লাম খাবার সমস্যা নিয়ে। দুপুর ৩ টা বাজে । কোথাও কোন খাবারের হোটেলে খাবার না পেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম । ম্যানেজারকে জানালাম । বলে এখন তো ৩ টা বাজে কোথাও কিছু পাবেন না । বলে কি ! আসে পাশে শুধুই মিষ্টির দোকান । খাবো কি ? শেষ পর্যন্ত ম্যানেজার আমাকে ৩ টা রুটি আর চানা মাসালা এনে দিলেন । তাই খেলাম । দিনের বাকিটা ঘুমিয়ে কাটালাম । রাতের বেলা একটা টং দোকানে লোকাল মানুষদের সাথে আড্ডা দিয়েই পার করলাম । বাংলাদেশ নিয়ে যে কত প্রশ্ন এদের ! না মিশলে জানতাম না ।
পরের গন্তব্য স্বপ্নের জয়সলমীর

জয়সলমীর
তখনো দিনের আলো ফুটেনি , ঠাণ্ডায় কাপছি আমি । অন্ধকারেই আমি খুঁজার চেষ্টা করলাম সোনার কেল্লাটা কই ? হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে নিলাম । সকাল ১০ টা নাগাত বের হবার আগে হোটেলের ছাদে গেলাম । সোনার কেল্লা ওই যে , দিনের আলোয় চকচক করছে । কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে চেয়েই রইলাম ।

সোনার কেল্লা

আমি পেরেছি , নিজেকে বললাম । যে স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম ৯ বছর আগে তা আজ পূরণ হল ।
অলি গলির ভিতর দিয়ে ছুটে চললাম , আমাকে ওই দুর্গে যেতে হবে । অদ্ভুত ভাবেই এখানে সব বাসার রঙ একইরকম , সোনালী! ইট নয় সোনালী পাথর দিয়ে বানানো বাসা । ২-৩ তালার বেশি উঁচু বাসা দেখাও গেলো না । অবশেষে আমি সোনার কেল্লার সামনে । মানুষের ঢল , এত মানুষ কেন ? কিছুটা বিরক্ত হলাম। যানা গেলো এখানে শুধু মানুষ বেরাতে আসে না, এখানে মানুষ থাকে ! এখানে প্রবেশের কোন টিকিট লাগে না । একটা যাদুঘর আছে , তার জন্য ১০০ রুপি লাগে । একটা গাইড নিয়ে নিলাম । যানা গেলো ৮০০ বছরেরও বেশি সময় আগে ১১৫৬ সালের দিকে গড়ে ওঠে এই কেল্লাটি। রাজপুত রাও জয়সাল এই ত্রিকূট পাহাড়ে গড়ে তোলেন তাঁর সাম্রাজ্য। তখন থেকেই বংশপরম্পরায় এখানে বাস করছেন রাজপুতরা, আর আছে স্থানীয় অধিবাসী। ১৩০০ শতাব্দীতে এই কেল্লা আক্রমণ করেছিলেন আলাউদ্দীন খিলজী। কেল্লার তিন স্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ভেঙে শত্রুরা ঢুকে পড়ে কেল্লায়। বীর রাজপুতদের রক্তে লাল হয়ে ওঠে এই সোনার পুরী। রাজমহলও আক্রান্ত হয়েছিল। তখন পুরনারীরা বেছে নেন স্বেচ্ছা মৃত্যু। শত্রুদের হাতে অপমানিত হওয়ার আগেই রাজনারীরা একসঙ্গে আত্মহত্যা করেন। আচারা সোনার কেল্লা মুভির শুটিং কোথায় কোথায় হয়েছে তাও দেখাল ।
কেল্লার ভিতরে যারা বাস করে, তারা সবাই দোকান দিয়েছে, হোটেল করেছে । কিন্তু এসব এই কেল্লার জন্য কোন ভাবেই ভালো না । কিন্তু সরকার এদের সরাতে পারছে না । এত মানুষের চাপ কতদিন এই কেল্লা নিতে পারবে তাই দেখার বিষয় । এখানে সবাই বাইক চালায় বেপরোয়া ভাবে । কখন যে এসে ধাক্ষা দিবে , তার ঠিক নেই ।

বিকালে চলে গেলাম মরুভূমিতে । শহর থিকে ৩৫ কিমিঃ দূরে যেতে হবে । রাস্তার দুই ধারে কোন বাসা নেই , খালি রুক্ষ ভুমি । ১ ঘণ্টা পরে প্রথম বারের মতো মরভুমি দেখা মিললো ।


ক্যাম্পে থেকে উটে আমাকে বসানো হল । এখানে যারা উটে নিয়ে ঘুরায় তারা দেখতে অনেকটা পাকিস্তানিদের মতো দেখতে । লম্বা , রুক্ষ চেহারা , পাকিস্তানি কুর্তা পরা। বাংলাদেশ থিকে একা এসেছি বলে অনেক অবাক হল । এরা সাকিবকে চিনে , কিন্তু আর কোন ক্রিকেটারকে চিনে না । ফাকা মরুভূমি হলেও পর্যটকদের ফেলে যাওয়া পানির , ড্রিংকের বোতল যেখানে সেখানে পরে রয়েছে। ফাকা যায়গা কিন্তু সব পাওয়া যায় , সব । সূর্য ডোবার পর ক্যাম্পে ফিরে এলাম । এখানে এখন নাচ , গান আর খাওয়া দাওয়া হবে ।


বিভিন্ন প্রকারের গান আর নাচের পর বুফে খাওয়া দাওয়া করে শহরে ফিরে এলাম ।
পরের দিন গেলাম বারা বাগ দেখতে , এটাকে কবরস্থানও বলা যায়। রাজ পরিবারের সদস্যদের কবর । এছাড়া এখানে সেলিম সিং হাভেলি , পাটওয়ানকি হাভেলি আছে । বিশেষ করে পাটওয়ানকি হাভেলি দেখার মতো ।
বিকালে যোধপুর যাওয়ার জন্য বাসে উঠে বসলাম, শহর থিকে বের হয়ে যাচ্ছে বাস কিন্তু সোনার কেল্লা এখনো দেখা যাচ্ছে । এক সময় দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেলো সোনার কেল্লা। এখন যাবো যোধপুর । যাকে বলা হয় ব্লু সিটি ।
পুরা অ্যালবাম দেখতে চাইলে

আমার দেখা রাজস্থান - প্রথম পর্ব

আমার দেখা রাজস্থান - তৃতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×