somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হৃদরোগে পুনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপি

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হার্টের রোগ একজন মানুষের জীবন যাপনের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এটাঅস্বস্তি অথবা মারাত্মক ব্যথা, কাজে সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধীতা এবং বেকারত্বের দিকে ধাবিত করে। অধিকাংশ হার্টের রোগীদের তাদের প্রাত্যহিক কাজ এবং ব্যক্তিগত যত্নমূলক কাজে সাহায্যের প্রয়োজন হয়। তাই হার্টের অসুখ এবং কাজে প্রতিবন্ধকতা যাতে না আসে সেজন্য জীবনযাপন এর ধরণ পরিবর্তন করতে পারলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
একজন অকুপেশনাল থেরাপিসট হার্টের চিকিৎসায় নিয়োজিত অন্যান্য সদস্যদের সাথে সমন্বয় করে আপনাকে সহায়তা করবেন যাতে করে আপনি নিরাপদে দৈনিক কাজ সম্পাদন করতে পারেন এবং কিভাবে কম শক্তি খরচ করে কাজকে উপযোগী করে পরিবর্তন করে শেষ করবেন সেই ব্যাপারেও অকুপেশনাল থেরাপিসট সাহায্য করে থাকেন। সীমিত কর্মক্ষমতা থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জনের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।
একজন অকুপেশনাল থেরাপিসট হার্টের রোগীর জন্য কি করতে পারেন?
এসেসমেনট বা সমস্যা নিরীক্ষণ-
অকুপেশনাল থেরাপিসট হার্টের রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, অন্যান্য মেডিকেল হিস্ট্রি নেন, প্রায়োরিটি চেকলিসট, রেঞ্জ অফ মোশন, ম্যানুয়াল মাসেল টেস্টিং, বারগ ব্যালেন্স স্কেল, একটিভিটি চেকলিসট এবং রোল চেকলিসট এর মাধ্যমে সমস্যা খুঁজে বের করেন।তারপর রোগীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। চিকিৎসা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অকুপেশনাল থেরাপিসট রোগীর প্রাত্যহিক কাজে ধাপে ধাপে পরিবর্তন, পরিবর্ধন আনেন এবং তা ভালভাবে সম্পাদনের জন্য উপযোগী করেন। চিকিৎসা পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজনীয় ধাপ। রোগীর শারীরিক, মানসিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিত্তি করে অকুপেশনাল থেরাপিসট চিকিৎসা পদ্ধতি মূল্যায়ন করেন। সাধারণত দ্বিতীয় দশায় অবস্থানরত হার্টের রোগীদের ডায়বেটিক নিউরোপ্যাথি, আরথ্রাইটিস, আরথ্রপ্লাসটি দেখা যায়। এক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপিসট দৈনিক কাজের জন্য প্রায়রিটি চেকলিসট তৈরি করেন এবং সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগুতে থাকেন।
হৃদরোগীর পুনর্বাসনে অকুপেশনাল থেরাপির মূল লক্ষ্যই থাকে আক্রান্ত রোগীকে তার দৈনন্দিন কাজে যথাসম্ভব কর্মক্ষমতা উন্নত করে নিয়োজিত করা। এজন্য অকুপেশনাল থেরাপিসট যত্নমূলক কাজ, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া, নিরাপত্তা, আয়বর্ধক কাজ, বিনোদনমূলক কাজ এবং বিশ্রাম এর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
দৈনন্দিন কাজের প্রশিক্ষণ-
১) উপযুক্ত পন্থায় কাজ সম্পাদনের জন্য সহজ কৌশল শিখিয়ে দেয়া এবং নির্দেশনা প্রদান যেমন দাঁড়ানো অবস্থায় নিজের পরিচর্যা না করে বসে করা।
২) সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনের জন্য সহায়ক সামগ্রী প্রদান যেমন পরিবর্তিত টয়লেট চেয়ার, রেলিং
৩) দৈনিক কাজের সময় হার্টের ঝুঁকি বাড়াতে পারে কিংবা চাপ সৃষ্টি করতে পারে এরকম লক্ষণ সম্পর্কে রোগী এবং তার পরিবারের সদস্যদের জানানো।
৪) পারিবারিক প্রশিক্ষণ, সহযোগিতার ভারসাম্য রক্ষা করা।
কাজের জন্য এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া-
• কাজের জন্য সময়োপযোগী শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত অবস্থান ঠিক করা
• স্থানান্তর প্রশিক্ষণ (নিরাপত্তা বিবেচনা করে সময় এর সাথে বিছানা থেকে চেয়ারে, গাড়িতে স্থানান্তর)
• কাজের উদ্দেশে চলাফেরা করার জন্য সহায়ক ডিভাইস বা সামগ্রী নিরীক্ষণ, প্রদান এবং ব্যবহারের নির্দেশনা প্রদান।
• নিরাপদ লিফটিং বা ভার উত্তোলনের কৌশল সম্পর্কে নির্দেশনা প্রদান।
• পড়ে যাবার ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য প্রদান ও শিক্ষণ
• হৃদরোগে আক্রান্ত বা অপারেশনের পরে ড্রাইভিং কিংবা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ ফিরে যাবার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
• ড্রাইভিং পর্যবেক্ষণ ও পুনঃনিরীক্ষণের জন্য উপযুক্ত স্থানে পাঠানো
আয়বর্ধনমূলক কাজ-
 কাজে নিয়োজিত করার জন্য সহ্যসীমা বাড়ানো
 দৈনিক কাজে স্বনির্ভরতা বাড়ানো
 চাকুরি, নিজ উদ্যোগের কাজ, সেবা পুনরায় শুরু করা।
 ভকেশানাল বা কাজের সমস্যা নিরীক্ষণের জন্য বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো
 গৃহ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা বাড়ানোর জন্য রোগীকে সাহায্য করা
 শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমায় সে ধরনের বাড়ি এবং কর্মস্থলের পরিবেশ তৈরির প্রস্তাবনা প্রদান।
 চাকুরি বিশ্লেষণ করা- স্থিতিশীল এবং গতিশীল কাজের পরিমাণ, বিপাক ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি, তাপমাত্রাজনিত ও মনস্তাত্ত্বিক চাপ
 দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের জন্য উৎসাহ প্রদান
অবসর ও বিশ্রাম-
 অবসরমূলক কাজের প্রতি আগ্রহ বের করা যা তার MET লেভেলের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়।
 নিরাপদ অংশগ্রহণের জন্য কাজের কিছুটা পরিবর্তন করা।
 চাপ মুক্তির কৌশল, শ্বাস প্রশ্বাসের ক্ষমতা এবং বিশ্রামের জন্য নতুন অবসরযাপনমূলক কাজের প্রতি আগ্রহ খুঁজে বের করা।
 শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাজ সম্পাদনে একটা ভারসাম্য বজায় রাখতে উতসাহিত করা।
 নিজ এলাকা বা সম্প্রদায়ে উপযুক্তভাবে পাঠানো
 হৃদরোগ পুনর্বাসন পরবর্তী প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করার জন্য লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কলাকৌশল উন্নত করা।
দ্বিতীয় দশায় অবস্থানরত হার্টের রোগীদের বিভিন্ন ধরণের অতিরিক্ত উপসর্গ দেখা দেয়। চাহিদা ভেদে এই পর্যায়ে এমনভাবে চিকিৎসা দেয়া হয় যাতে তা পুরোপুরি কার্যকর হয়। থেরাপি চিকিৎসা এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয় যাতে কাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কমে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন রোগী মাঝেমাঝে মাথাব্যাথা ও ঝিমানি অনুভব করেন কিন্তু তার কাঙ্খিত MET লেভেল পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে তার জন্য কাজে ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে তার কর্মস্থলের ঝুঁকি বের করা এবং সেখানে কিভাবে তিনি মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে পারবেন সে বিষয়ে অকুপেশনাল থেরাপিসট শিখিয়ে দিয়ে থাকেন।
অকুপেশনাল থেরাপিসটের সাথে রোগীর সেশন একটিও হতে পারে আবার প্রয়োজনভেদে কয়েকটিও হতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতিতে যদি অন্য কোন থেরাপির বা সাহায্যের প্রয়োজন হয় তবে তাও ব্যবহার করা যেতে পারে। অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসার মধ্যে রোগীর গৃহ, কাজ এবং সেই সাথে কাজের ঝুঁকি নিরীক্ষণও অন্তর্ভুক্ত থাকে। পরিবারের সদস্যদেরও নিরাপত্তা, দুশ্চিন্তা এবং কাজে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এডুকেশন দেয়া হয়। হৃদরোগের পুনর্বাসনে একজন অকুপেশনাল থেরাপিসট রোগীর জন্য একটি সুবিধাজনক ও নিরাপদ সেবা দিয়ে থাকেন।
অকুপেশনাল থেরাপিসট রোগী/ রোগীদের প্রয়োজনে গ্রুপ থেরাপিও পরিচালনা করে থাকেন। মূলত এখানে বিশেষ কোন গ্রুপকে সাপোর্ট দেবার উদ্দেশ্যে এবং এডুকেশন ক্লাস নেবার ক্ষেত্রে গ্রুপ থেরাপি কাজে লাগে। এক্ষেত্রে একজন ডায়েটেশিয়ান হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য ক্লাস নিতে পারেন এবং অকুপেশনাল থেরাপিসট রান্নার কাজে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য রান্না বিষয়ক ক্লাস নিতে পারেন যা ডায়েটেশিয়ানের তথ্যকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং সেই সাথে হাতে কলমে ব্যবহারিক শিক্ষাও হয়ে যায়।
মূল কথা অকুপেশনাল থেরাপিসট হার্টের রোগীদের সুস্থতার জন্য মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমে সমন্বয় করে রোগী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে অকুপেশনাল থেরাপিসটের মূল লক্ষ্যই থাকে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে যথাসম্ভব শারীরিক, মানসিক, সামাজিক দিকগুলো উন্নতি ঘটিয়ে দৈনিক কাজে স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি করা।
তথ্যসূত্রঃ
১) http://www.caot.ca/default.asp?pageid=3703
২) Click This Link

লেখকঃ
শ,ম ফারহান বিন হোসেন
কন্সালট্যানট অকুপেশনাল থেরাপিসট, মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম;
ক্লিনিক্যাল অকুপেশনাল থেরাপিসট, অকুপেশনাল থেরাপি বিভাগ,
সেন্টার ফর দ্যা রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি), মিরপুর-ঢাকা;
ফিচার এডিটর, হেলথনিউজবিডিডটকম;
মোবাইলঃ ০১৬৮৫৬৫৬১৯৯
ই-মেইলঃ [email protected]

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×