somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবরোহ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতদিন যা তার কাছে ঘৃন্য ছিল, আজ সেটা বড় বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়লো । অনুভূতির প্রতিটি কণিকা, প্রতিকণিকা রহস্যময় জীবনের রহস্যে পরাভূত, আহত, পর্যুদস্ত । দশদিগন্ত জুড়ে অ্ন্ধকার- ক্লান্তিহীনভাবে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে । ঘনমেঘের এই গম্ভীর ছায়ায় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য এখন ঠিক সময়ে বাসটা ধরা । বিগত কয়েকদিন ধরে যখন টানা বোঝাপড়া চলছিল যাওয়াটা উচিৎ হবে কিনা; ঠিক তখনই খবরটা এল । সিদ্ধান্ত গ্রহনের কোন অবকাশ এখন আর নেই । ত্রিশ বছরের এক সুদীর্ঘ বেদনাদায়ক অপেক্ষা শেষে যখন ঠিকানা পেল; তখন সকল অভিমান, অনুযোগ একাকার হয়ে গেল। যে কথা, যে ব্যথা অথবা প্রতিশোধের স্পৃহা জিইয়ে রেখেছিল তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট রইল না ।

বন্ধুদের কেউ তাকে রাশেদ আবার কেউ নাঈম বলে ডাকে। রাশেদ নাঈমের ভূবনে কেবল তার মায়ের বসবাস আর মাকে নিয়ে সে বেশ সুখেই ছিল । সেই সুখের স্বর্গে মা ছেলের মাঝে কোন প্রকার নোটিশ ব্যতিরেকে ঢুকে পড়ে সৈয়দ মোবাশ্বের হায়দার নামে একজন প্রায় পৌঢ় ব্যক্তিত্ব । অতি প্রিয় চেনা পৃথিবী এক ঝটকায় বদলে যেতে থাকে। নিজেকে বোঝাতে আর মাকে বুঝতে প্রতিদিন সে ঠিকানা খুঁজে বেড়িয়েছে। কিছুদিন আগেও তার যেটা ছিল, ছিল মমতাময়ী একটা ছায়া । ছায়াটির মমতা একই থাকলেও সে এখন আর তা নিতে পারেনা । প্রয়োজন, আধুনিকতা, যুক্তি দিয়ে সবকিছু ব্যখ্যা করা যায়না । যে প্রয়োজন আজ তার মায়ের, তার কাছে তা অস্পৃশ্য।

মধ্যবিত্তের সঞ্চিত আভিজাত্যে অসুস্থ আক্রোশ বাসা বাধে খুব ধীর লয়ে । নাঈম মায়ের সাথে একসাথে থেকেও অনেক অনেক দূরে চলে যেতে থাকে এবং আশ্চর্যজনকভাবে যাকে সে এতগুলো বছর ভূলে ছিল তাকে সে খুঁজতে শুরু করে । আত্মীয় বা পরিচিতদের মাঝে অনুসন্ধান চালাতে থাকে । মানুষটাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে । তাকে পেলে কি করবে, কি বলবে যদিও সে জানেনা ।

সকল অনুসন্ধানের অবসান ঘটিয়ে অমোঘ নিয়তি তাকে আজ টেনে নিয়ে যাচ্ছে, অবিসংবাদিতভাবে । সে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে শরীরটাকে শিথিল করে দিল । চোখ বুজেঁ পড়ে থাকে সীটে হেলান দিয়ে । যে মানুষটাকে সে কোনদিন দেখেনি অথবা অনেক চেষ্টা করেও যার মুখাবয়ব মনে করতে পারেনা তারই জন্য বুকের ভিতরটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে ।হঠাৎ করে কেমন যেন অর্থহীন লাগে সবকিছু ।

কিন্তু মা যেন সবকিছু ভুলে গেলেন মোবাশ্বের নামটার ঘেরাটোপে । হয়তো আসলেই ঐ লোকটিকে মায়ের খুব প্রয়োজন অথবা জীবনে তিনি আর নি:স্ব থাকতে চাননা অথবা শেষ জীবনের একটা অসহায়তা বোধ, ভয় অথবা সত্যিই ভালবাসা নামক জিনিষটা । ঝড় ঝঞ্ঝা দুপাশে ফেলে বাসটা এগিয়ে যাচ্ছে জীবনের মত । যতকিছুই ঘটুক না কেন এগিয়ে যেতেই হয় । আনন্দে ভেসে গেলেও থেমে যাবার যেমন কোন উপায় নেই তেমনি দু:খ ভারাক্রান্ত হলেও চলতে হয় ।

বাস থেকে নামতেই এক অদ্ভুদ শিহরনে কেপে ওঠে রাশেদের মন-মনন । কান্নার রোল, লোকেদের গুঞ্জরন, বিষাদময় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে । কেউ তাকে খেয়ালই করল না আর সে নিজেও চাইছেনা তাকে চিনুক। চেনা জানার কোন দরকার সে মনে করে না । অজানা এক অমীয় অনুভবে আজ সে এসেছে । নীল পলিথিনে ঘেরা পিকআপ ভ্যানে প্রবেশাধিকার তোয়াক্কা না করেই একলাফে উঠে পড়ে, ভ্যানটা যেন তারই অপেক্ষায় ছিল; ওঠা মাত্র চলতে শুরু করলো । কাঙ্খিত মুখটা এখনো সে দেখতে পারছে না । কাউকে সে বোঝাতে পারছে না বা বলতে পারছে না যে মুখটি দেখার জন্য সে এখন কতটা উতলা ।

বৃস্টিতে ভিজে যায় সাদা শার্ট, নীল পলিথিন, বৃক্ষ প্রান্তর, ভিজে যায় শহুরে অট্টালিকা, ভিজে যায় বিষাদসিক্ত মনের নিভৃত প্রদেশ । পাশে তুলে রাখা মাটি গলে গলে পড়ে, যেন খুব তাড়া; ঐ মানুষটিকে আড়াল করতে । কবরে শোয়ানোর পর মুখটা খোলা হলে সহস্র প্রাচীর অতিক্রম করে অসম্পূর্ণ একটি ছায়া শেষ অবধি ধরা দিলে ছিন্ন সূতার ঘুড়ির মত রাশেদকে আনমনা করে তোলে । এ যেন অবিকল তারই চেহারা কেটে বসানো হয়েছে ! এর একটু বয়স হলে সে হয়তো অবিকল এ রকম দেখতে হয়ে যাবে ।

নক্ষত্রের চিহ্ন ধরে নৈশব্দে ঘেরা অবাধ রাত্রি নেমে আসে গোরস্থানে, স্থানীয় দৃশ্যপটে সত্যদ্রষ্টা এক সন্তের প্রথম আবিস্কারে তলিয়ে যায় চির চেনা নৈসর্গ । আজ সে পথহারা এক শিশু । জীবনের সকল অনুযোগ, সব আহলাদ একাকার হয়ে যায় । রাশেদের মনে হতে লাগলো তার হয়তো অনেক কিছুই ছিল অথবা কখনোই কিছু ছিলনা । সম্প্রতি মরহুম উপাধিপ্রাপ্ত মানুষটি তার শত অর্জন এবং সকল মানবীয় ত্রুটি আড়াল করে নিভৃতচারী হতে হতে রাশেদকে নিবিঢ় অলক্ষ্যে কিছু একটা দিয়ে গেল। এতকাল রাশেদ নাঈম হয়তো চাঁদের দিকে পিছন ফিরে পথ চলেছে তাই কেবলই ছায়ার সাথে বসবাস করেছে, আলোর মুখ তার দেখা হয়নি । চাঁদের দিকে মুখ করে যখন আজ সে দাঁড়ালো তখন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উত্তর পুরুষের উপশিরায় নাম লেখাতে লেখাতে নতজানু হয় জীবনের বিবিধ উপযোগ এবং এর কার্যকারনে । সাথে মায়ের প্রতি ক্ষোভটা কমতে শুরু করলো । বুকের ভিতর থেকে সম্বোধনটা গুমরে গুমরে উঠছে । আজ এই ঘনঘোর বরষায় মাটি আর দেহের অন্তমিলে বিগত সকল সম্ভাবনা অন্তে সহজাত সম্বোধনটি বিলীন হয়ে যাবে চিরতরে । সম্পর্কের প্রচ্ছদে- অনন্ত পথযাত্রী মানুষটি যে তার বাবা । বাবা.......... ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:২৭
১৬টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×