@ আমার বিশ্বাস: সামহোয়্যারইন ব্লগে কোন রাজাকার নেই
আন্তর্জালে বাংলা ভাষার গৌরব সামহোয়্যারইন ব্লগ। নেট জগতে প্রবেশ করার পর থেকেই মনে বড় কষ্ট ছিল, বাংলায়, আমার মায়ের ভাষায় লিখতে পারছি না মনের আকুতিগুলো, ভালবাসাগুলো, অনুভবগুলো। লিখতে হয় ইংরেজী অথবা বাংরেজীতে। তারপর ইউনিকোড এলো, সামহোয়্যারইন সহ আরো অসংখ্য ব্লগ-ফোরাম এলো বাংলায়; বাংলা ভাষাকে আন্তর্জালের আওতায় পদার্পণে যাদের মেধা, শ্রম ও যোগ্যতা কাজে লেগেছে, তাদের সবাইকে সালাম এবং অভিনন্দন।
আন্তর্জালে বাংলা চর্চার শুরু থেকেই লক্ষ্য করে আসছি যে, একটা অপশক্তি কখনোই ভাল কিছু করতে দিতে চায় না; তাহলে কি তারা ভাল কিছু করতে চায়? না, তাও তাদের সীমাহীন অযোগ্যতার কারণে অসম্ভব। তাহলে তারা কি চায়? একথার বিশ্লেষণে গেলে বলতে হয় যে, প্রতিটি মানুষই চায় তার প্রচার, ভূমিকা, আধিপত্য। চাই তা তার অধঃস্তন কারো উপর ক্ষমতাবলে হোক কিংবা সম বা তদুর্দ্ধ কারো প্রতি জবরদস্তিমূলকভাবে হোক। একথাটি যেমন সত্যি কোন অযোগ্য-অকর্মা ব্যক্তির ক্ষেত্রে, তেমনি সত্য কোন শেকড়বিহীন-জনবিচ্ছিন্ন দলের ক্ষেত্রে। আর তাই আমাদের রাজপথে সময়ে সময়ে দেখা যায় এগার দলের ঘোষণায় নয়/দশ জনের বিশাল(?), মিছিল আর মুখরোচক নানাবিধ কর্মসূচীর মহড়া। সুতরাং, এই বাংলা ব্লগে এর ব্যতিক্রম হতে যাবে কেন?
অপদার্থ হলেও আত্মজাহিরের এই সব প্রক্রিয়ায় কিন্তু দেশের বড় বড় দলগুলো তেমন মূখ্যতা দেখায়নি। রাজাকার ইস্যূতে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের শাসক শেখ মুজিব সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সকল নাগরিকদের সুন্দর সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন। তথাপি উপরোল্লেখিত সেই অপদার্থের দল ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে রাজাকার ইস্যূকে আদালতে উপস্থাপন করলো; আদালত তাদের আবেদনকে খারিজ করে দিয়ে অভিযোগকৃত ব্যক্তিকে এদেশের নাগরিক বলে রায় প্রদানের মাধ্যমে এই ইস্যূর সমাধান করে দিল। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবের দল আওয়ামী লীগ তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজনীতি করে আসছিল এবং এই রাজনীতিতে তারা তাদের ঘোষিত রাজাকারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছে, করেছে নব্বুই ও নব্বুই পরবর্তী উত্তাল সময়গুলোতে। বিশ্বের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তত্ত্ববাধায়ক সরকার এখন সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য একটা বিরল ব্যবস্থা; যা বাংলাদেশেই প্রথম শুরু হয় এবং বাংলাদেশের দেখাদেখি অন্যান্য দেশও এই ব্যবস্থার প্রতি উৎসাহ বোধ করতে শুরু করেছে এবং যার রূপরেখা প্রণয়নকারী অধ্যাপক গোলাম আযম; যিনি আদর্শিক ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে একাত্তরে নিখিল পাকিস্তান বিভাগের বিপক্ষে ছিলেন কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই ছত্রিশ বছরে দেশের প্রতি ঐকান্তিক ভালবাসা ছাড়া বিরুদ্ধতার কোন নজীর তার বিরুদ্ধে কেউ দেখাতে পারবে না।
দেশের আরেক প্রধান রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি; যারা বিগত শাসন আমলে জামায়াতের সাথে জোট সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশবাসীকে একটি সুন্দর ও সফল প্রশাসন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। এর দ্বারা কি পরিস্কার হয় না যে, দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো মূলত রাজাকার ইস্যূকে বড় করে না দেখে বরং দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকেই বড় করে দেখছেন? তাহলে বিগত সরকারের আমল শেষ হবার সাথে সাথে যেই আওয়ামী লীগ তাদের শাসন আমলেও রাজাকারদের নিয়ে কোন মাথাব্যাথা অনুভব করেনি তারা কেন হঠাৎ সোচ্চার হয়ে গেল এই ইস্যূতে? কারণ, তাদের ঘাড়ে এগারটি ভুত চেপে বসেছিল, যার ফলাফল ছিল ১৪ দল এবং যাদের বিধ্বংসী তাণ্ডব দেশবাসী দেখেছিল অবরোধ ও ২৮ অক্টোবরের বিশ্বনিন্দিত ভয়াল ঘটনার মধ্য দিয়ে।
যা বলছিলাম, শুরু থেকে যতদূর দেখে আসছি, সামহোয়্যারইন ব্লগের ঘাড়েও এগার দলের এগারটি না হলেও অন্তত পাঁচ/সাতটি ভুত তো চেপেছেই। অন্যথা কমরেডদের 'লাল সালাম' চলতে পারে, 'জাযাকাল্লাহু খাইরান' চলতে বাধা ও ব্যঙ্গ হয়, নাস্তিকতা ও সমাতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতার গুণ-কীর্তন চলতে পারে ধর্মীয় লেখালেখিকে প্রতিহত করার অপচেষ্টা করা হয়; কেন? আমি কর্তৃপক্ষের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করছি না; বরং কর্তৃপক্ষের বোঝা উচিত যে, সামহোয়্যারইনে কর্তৃপক্ষ বাক-স্বাধীনতার বা সকলের নিজ নিজ মতামত প্রকাশের যে অবাধ সুযোগ রেখেছেন, এই বাক-স্বাধীনতার কণ্ঠ রুদ্ধ করে দিতে তৎপর গোষ্ঠীই একদা এই ব্লগ ধ্বংসের নীল নকশা রূপায়ন করে; যার ফলাফল সচলায়তন। বর্তমান পরিস্থিতিও তাদেরই সৃষ্ট এবং সচলায়তনের ব্যর্থতা এবার তারা কি দিয়ে পূর্ণ করতে যাচ্ছে, তাই এখন দেখার বিষয়। তারা সব পারে, মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি আর বাকস্বাধীনতার জন্য বক্তৃতা করতে পারে, আবার মঞ্চ থেকে নেমে তার মতের বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করে করে দিতেও পারে; পরন্তু এই ব্লগে তো তারা প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই বাক-স্বাধীনতার অপমৃত্যু ঘটিয়েছে।
পরিশেষে বলবো, আমার বিশ্বাস এই ব্লগে একাত্তরের কোন রাজাকার নেই। আর তৎপরবর্তী সময়ে কারো রাজাকার হবার কোন সুযোগও আসেনি। তাই এই অপশক্তি যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বা তার বিরোধিতা করেছেন কিংবা নিস্ক্রিয় ছিলেন যুদ্ধ কিংবা প্রতিরোধ থেকে তাদের সবারই বয়স অন্তত ষোল থেকে বিশ হওয়া জরুরী; যেমন আমার বাবা উচ্চমাধ্যমিকে পড়তেন আর সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। অথচ এই ব্লগে যারা ব্লগাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই যুবক বা নব্য যুবক। কেউ কেউ এমনো থাকতে পারেন যারা একাত্তরে শিশু কিংবা বালক/বালিকা ছিলেন; যাদের তখন কোন পক্ষীয় ভূমিকা রাখার বয়সই ছিল না। সুতরাং, প্রমাণিত হলো যে, যাদেরকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে, তারা কেউই রাজাকার নয়। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের সন্তান। পরন্তু তাদের প্রতি এহেন মিথ্যারোপের জন্য তারা ইচ্ছা করলে আদালতের মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নিতেও পারেন।
আরেকটি কথা না বললেই নয়; তা হলো, একাত্তরে নিখিল পাকিস্তান বিভাজনের বিপক্ষে অনেকগুলো দল ও অনেক ব্যক্তিরা অবস্থান নিলেও রাজাকার বলতে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয় কেন? একাত্তরে যারা রাজাকার ছিল তারা সে দলে আছে বলে পুরো দলটিকে কেন রাজাকার আখ্যা দেয়া হয়? তাদের সন্তানদেরকে কেন রাজাকার আখ্যা দেয়া হয়? সে দলটি তো একটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারী দল, আর সে দলের সমর্থন করলেই রাজাকার হয়ে যায়? যদি এমনটি কেউ ভেবে থাকেন তাহলে তার উদ্দেশ্য পরিচ্ছন্ন যে, সে রাজাকারদের বিরুদ্ধে বলছে না বরং ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাই দয়া করে ভেবে বলুন। অপর দিকে, আপনারাই তো চলচিত্র তৈরী করেছেন, তাতে গান লিখে সুর করে গেয়েছেন: 'মানুষ মরণশীল পৃথিবীতে আসে/ কাউকে দিওনা দোষ পিতার দোষে/ মা বলেছেন, মানুষ যদি হতে হয়/ পাপকে করো ঘৃণা; পাপীকে নয়।' অথচ আপনারা কি করছেন? পাপকে তো করছেনই ঠিক আছে, সাথে সাথে পাপীকেও, অথচ যাদের ব্যাপারে দেশকে ভালবাসা ছাড়া আর কোন উদাহরণ কেউ দিতে পারনি এই ছত্রিশ বছরে। শুধুকি তাই, আপনারা তাদের সন্তানদেরকেও আক্রমণ করছেন; এটা কি মানবতার পর্যায়ে পড়ে? না কি আপনারাই মানুষ নন?
আরিল, প্লিজ খুঁজে দেখুন, সামহোয়্যারইন ব্লগে যদি একাত্তরের কোন রাজাকার থাকে তো তাকে বের করে দিন, এটা আমারো দাবী। তারপর যারা রাকাজার নয়, তাদেরকে রাজাকার ডাকার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারী করুন এই ব্লগে। এই নীতিটি অবলম্বন করে দেখুন প্লিজ; আমার বিশ্বাস আপনি বিদেশী হলেও এবং ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই ব্লগ চালালেও বাংলাদেশী ও বাংলাভাষাভাষীদের নিকট এই ব্লগ একটি সুন্দর উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে। ধন্যবাদ।
09.01.2008, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।
![](https://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/css/images/generic-ads-580x400.jpg)
শোকের উচ্চারণ।
নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?
৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?
মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন
প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন
কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।
এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন
আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন