somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@ সকল নবী-রাসূলের দাওয়াতের মূল ভিত্তি: তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

@ তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ-এর প্রমাণাদি (৩)
সুমহান স্রষ্টা এ জগৎ সংসার সৃজন করার পর প্রথম যে মানুষটিকে সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাকে নবুয়তের মর্যাদাসহ, তারপর সঙ্গিনীসহ তাদেরকে দিয়েছিলেন জীবন চলার বিধিবিধান। যে কথাটি বলে আল্লাহ্ আদম 'আলাইহিস্ সালামকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, তা হলো-
قُلْنَا اهْبِطُواْ مِنْهَا جَمِيعاً فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَهُدَايَ فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ.
((আমরা আদেশ করলাম, তোমরা সবাই নিচে নেমে যাও। অতঃপর তোমাদের নিকট যদি আমার পক্ষ হতে কোন হেদায়াত পৌঁছে, তবে যে আমার হেদায়াতের অনুসরণ করে চলবে, তার উপর না আসবে কোন ভয় এবং তারা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। [সূরা আল-বাকারাহ্: ৩৮]
অবশেষে আল্লাহ্ আদম 'আলাইহিস্ সালামের নিকট হেদায়াতসহ বিধান পাঠিয়েছেন, তার অনুসরণ করলে কোন ভয় থাকবে না, কোন দুঃশ্চিন্তাও থাকবে না। হেদায়াত বলতে বুঝায় 'দেখানো', কিন্তু কি দেখানো? অবশ্যই 'পথ', 'সঠিক রাস্তা', 'জীবন চলার বিধান'। কার দিকে? অবশ্যই 'আল্লাহর দিকে'। আর আল্লাহকে জানতে, মানতে ও ভয় করতে হলে নিঃসন্দেহে তাঁর একত্ববাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে এবং সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে তাতে। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাওহীদুর্ রুবুবিয়্যাহ্ বা আল্লাহ্ তা'আলার প্রভুত্বে একত্ববাদ সম্পর্কে মানুষেরা বিভিন্ন মাধ্যম হতে ধারণা লাভ করে থাকে, আবার নবী রাসূলগণের মাধ্যমেও সঠিক তথ্যাবলী পেয়ে থাকে। কিন্তু তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার সুমহান লক্ষ্যেই আল্লাহ্ তা'আলা যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ প্রেরণ করেছেন, কিতাবসমূহ পাঠিয়েছেন এবং শরীয়তসমূহ প্রনয়ণ করেছেন।

এক কথায় নবী-রাসূলগণের দাওয়াতের মূল ভিত্তি হলো তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ। এটাই তাদের মিশনের মূলমন্ত্র, এর প্রতিষ্ঠাই আসল উদ্দেশ্য। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَوَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ.
((আর নিশ্চয় আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর এবং তাগূতকে বর্জন কর।)) [সূরা আন্-নাহ্ল: ৩৬]
আদম 'আলাইহিস্ সালাম থেকে শুরু করে ঈসা 'আলাইহিস্ সালাম পর্যন্ত প্রত্যেক জাতির মধ্যেই আল্লাহ্ তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং সর্বশেষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত মানুষ, জিন এমনকি সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন-যাঁর পরে আর কোন নবী বা রাসূল আসবেন না-যাতে তারা মানুষকে একমাত্র ও এককভাবে আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য আহ্বান করতে পারেন এবং তাঁর অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী সকলপ্রকার তাগূতকে অস্বীকার ও বজর্ন করার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করতে পারেন। অর্থাৎ, প্রত্যেক রাসূলের প্রতিই আল্লাহর এ নির্দেশ ছিল যে, তারা তাঁর বান্দাদের মাঝে তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা তাঁর ইবাদাতে একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার সাধনা করবেন যাবেন।
আল্লাহ্ আরো বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَإِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
((আমরা আপনার পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করিনি তাঁর প্রতি এ ওহী প্রেরণ ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত কর।)) [সূরা আল-আম্বিয়া: ২৫]
কথাগুলো আল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছেন যে, তাঁর পূর্বে আগমনকারী প্রত্যেক রাসূলই এ ওহী নিয়ে এসেছিলেন মানুষের নিকট যে, আল্লাহ্ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ্ নেই অতএব তোমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর।

তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদের প্রতি আহ্বানই নবীগণের শ্বাশত দাওয়াতের উদ্বোধনী বিষয় ছিল। তারা মানুষকে সর্বপ্রথমেই যে বিষয়টির প্রতি মানুষকে আহ্বান করতেন, তাহলো আল্লাহকে একক বলে স্বীকার করা অর্থাৎ একত্ববাদ এবং ইবাদাতসমূকে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য খালেছ করা; অন্য কারো জন্য বিন্দু পরিমাণও অবশিষ্ট না রাখা। আল্লাহ্ বলেন:
وَإِلَى عَادٍ أَخَاهُمْهُوداً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ أَفَلاَ تَتَّقُونَ
((আর 'আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য মা'বূদ নেই।)) [সূরা আল-আ'রাফ: ৬৫]
এভাবে আল্লাহ্ কুরআনুল কারীমে যে ক'জন নবী-রাসূলের উল্লেখ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতিই তিনি এমন ধারার নির্দেশ জারি করেছেন, যার মূল কথা হলো তাঁর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সমগ্র ইবাদাতে তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার স্থাপন না করা। নিম্নে আরো দু'টি উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
وَإِلَى ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحاً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَمَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
((আর সামূদ জাতির নিকট তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই।)) [সূরা আল-আ'রাফ: ৭৩]
وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْباً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُواْ اللّهَمَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ
((আর মাদয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভাই শু'আইবকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন: হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ব্যতীত তোমাদের জন্য অন্য কোন সত্য ইলাহ্ নেই।)) [সূরা আল-আ'রাফ: ৮৫]

এ বিস্তারণ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারি যে, সকল নবী-রাসূল 'আলাইহিমুস্ সালামের দাওয়াতের মূল ভিত্তি ছিল 'তাওহীদুল্ উলুহিয়্যাহ্ বা ইবাদাতে একত্ববাদ'। এর প্রতিষ্ঠাকল্পেই তাঁদের এ নবুয়তি মিশন।
২৭.০২.২০০৮, মদীনা মুনাওয়ারা, সউদী আরব।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ৮:১৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×