somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: Das Experiment (2001),সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বুঝি একেই বলে

০৭ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ড্রামা কিংবা থ্রিলার--মুভির এই দুইটি জেনার হচ্ছে সবচেয়ে কমন।আপনি যদি রেন্ডমলি ২০ টা মুভির নাম বলেন দেখা যাবে এর অলমোস্ট ৫০% মুভিগুলো ঐ দুইটা জেনারের মাঝে পড়বে।এই ড্রামা কিংবা থ্রিলার জেনারের বেশ কয়েকটি সাবজেনার রয়েছে।যেমন ক্রাইম, হরর, মিস্ট্রি ইত্যাদি।তেমনই আরেকটি সাবজেনার হলো সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার।সাধারন দর্শকরা এই জেনারটা থেকে নর্মালি একটু দুরে থাকেন, কারন এই মুভিগুলোর প্লটগুলো সহজপাচ্য নয়।এই ধরনের মুভিগুলোর প্লটে ফিজিক্যাল রিপ্রেজেন্টেশানের তুলনায় মনস্তাত্বিক ব্যাপারগুলো অনেক বেশি হাইলাইটেড হয়,যা অনেকের মনের উপর বেশ চাপ ফেলে এবং তাদের কাছে বেশ ডিস্টার্বিং ঠেকে।

এই জেনারের মধ্যে অনেক বিখ্যাত মুভিই রয়েছে।তবে সবার আগে নাম চলে আসবে, স্ট্যানলি কুবরিকের A Clockwork Orange এর কথা।আমার মনে আছে, ঐ মুভিটি শুরু হওয়ার সময় যখন সিনেমার নাম ও ডিরেক্টরের নাম দেখাচ্ছিল তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিলো তীব্র লাল আর নীল রং,যেটা ভীষন চোখে লাগে আর কুবরিক বোধহয় সেটা ইচ্ছা করেই করেছিলেন যাতে তা অডিয়েন্সের মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে।এছাড়া অন্যান্য মুভিগুলোর মধ্যে Darren Aronofsky এর Requiem for a Dream এবং Black Swan ; David Fincher এর Se7en ; David Lynch এর Mulholland Drive কিংবা Silence of the Lambs এর নাম বলা যায়।

যাই হোক, অতি সম্প্রতি Das Experiment (2001) মুভিটি দেখলাম।বলার অপেক্ষা রাখে না, এটিও একটি সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি।টান টান উত্তেজনা আর ভীষন রকমের ইনটেন্স মুভি।মুভিটিতে একটা ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক এক্সপেরিমেন্টের কাহিনী দেখানো হয়েছে, কিন্তু পুরো ছবি দেখে মনে হল পরিচালক দর্শকদের মনের উপরই এক্সপেরিমেন্টটা চালিয়েছেন। পুরো সিনেমা দেখার পর মাথা ভোঁ ভোঁ করছিলো।যারা মোটামুটি মানসিকভাবে একটু দুর্বল তাদেরকে এই মুভিটা দেখতে নিরুৎসাহিত করছি, বিশেষ করে মেয়েদের।কারন strong violence, disturbing situations, language, sexuality and nudity এর জন্য মুভিটিতে Rated R এর ট্যাগলাইন রয়েছে।

যাই হোক, মুভিটির প্লট সম্পর্কে একটু আইডিয়া দিচ্ছি।বেশি কিছু বলবো না, কারন এই ধরনের মুভি দেখার আগে প্লট সম্পর্কে যতো কম জানবেন ততোই ভালো। Das Experiment (2001) মুভিটি জার্মানির, ভাষাটাও জার্মান।রানিংটাইম প্রায় দুইঘন্টার কাছাকাছি। মুভিটির প্লটটি ১৯৭১ সালের বিখ্যাত Stanford Prison Experiment এর ছায়া অবলম্বন করে বানানো হয়েছে।মুভিটিতে জার্মানির একটি রিসার্চ ল্যাবের একটি বিশেষ মনস্তাত্বিক এক্সপেরিমেন্টের ঘটনাপ্রবাহ দেখানো হয়।কি সেই এক্সপেরিমেন্ট? ২০ জন স্বেচ্ছাসেবিকে নিয়োগ দেয়া হয় যারা একটি জেলখানার মধ্যে থাকবে, সেখানে রয়েছে জেলখানার মতো সেল, বার এবং আরোও রয়েছে surveillance camera যা দিয়ে তারা সর্বক্ষণ কি করছে না করছে তা পর্যবেক্ষন করা হবে।এক্সপেরিমেন্টের উদ্দেশ্য, বিভিন্ন ধরনের সাইকোলজিক্যাল প্রেসারের সময় তারা কিভাবে রিঅ্যাক্ট করে তার প্যাটার্ন বের করা।সেই ২০ জনকে ১৪ দিনের জন্য সেখানে রাখা হয় এবং তাদেরকে প্রিজনার আর প্রিজন গার্ড এই দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়।প্রত্যেক গ্রুপের কিছু আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে, যেমন প্রিজন গার্ডরা সবসময় খেয়াল রাখবে প্রিজনারদের মধ্যে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করছে কিনা তা দেখা আর প্রিজনারদের কাজ হলো সেইসব নিয়ম সবসময় পালন করা।যদি কেউ নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে সে ঐ এক্সপেরিমেন্ট থেকে অটোমেটিক্যালি বাদ পড়ে যাবে,এছাড়া যে কেউ যেকোনো সময় স্বেচ্ছায় অব্যাহতি দিয়ে চলে যেতে পারে।এভাবে ১৪ দিন শেষে যারা যারা থাকবে তারা প্রত্যেকে ৪০০০ টাকা পাবে।শুরুর দিকে সবকিছুই হাসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে চললেও অচিরেই তাদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয় এবং তা রূপ নেয় ভয়াবহ সংঘাতের দিকে।

মুভিটি খুবই পাওয়ারফুল আর বেশ টান টান।একবার দেখা শুরু করলে মুভি শেষ না করে উঠা যাবে না।সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং যে জিনিসটা লেগেছে তাহলো, মুভিটির কাহিনীর টার্ন এরাউন্ডটা।এতো কম সময়ের মধ্যে পুরা সিনেমার স্টোরিটি যেনো পুরোপুরি উল্টে গেলো।প্রিজনার আর প্রিজন গার্ডের মধ্যে যে পারষ্পরিক সম্পর্ক তার গতিবিধি মুহুর্তের মধ্যে স্বাভাবিক থেকে সংঘাতে রূপ নিল, এটা এতোটা অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য পরিচালকের মুন্সিয়ানার প্রশংসা আলাদা করে করতেই হবে। এছাড়া মুভিটির কাস্টিংটাও বেশ ভালো, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় চরিত্রে Moritz Bleibtreu এর অভিনয় বেশ ভালো ছিলো।Moritz Bleibtreu কে রান লোলা রানেও বেশ ভালো লেগেছিলো।মুভিটির কিছু জিনিসের কথা না বললেই নয়, যেমন রাতের বেলা লাইট বন্ধ হবার সময় যে সবুজ আলোর ব্যবহার করা হয়েছে কিংবা চশমার মাধ্যমে সাদাকালো ভিডিও এবং ব্ল্যাকবক্সের ভিতরের দৃশ্যটা এককথায় দুর্দান্ত।তবে Maren Eggert (নায়িকা !!) এর হঠাৎ হঠাৎ উপস্থিতিটা একটু অন্যভাবে হ্যান্ডেল করলে ভালো লাগতো।তবে মুভিটির অলমোস্ট ৯০% দৃশ্যই সেই জেলখানার ভিতর হওয়ায় পরিচালক সেই এনগেজিং ভাবটা সহজেই ধরে রাখতে পেরেছেন। পরিচালক Oliver Hirschbiegel এর সম্পর্কে কিছু বলে নেই, Das Experiment ছিলো তার ডেব্যুট্যান্ট সিনেমা, এর আগে তিনি কিছু টিভি পর্দার জন্য বানালেও Das Experiment সিনেমাটি ছিলো বড়ো পর্দায় তার অভিষেক। এরপর ২০০৪ সালে হিটলারের জীবনের শেষ কয়েকটি দিন নিয়ে আরেকটি বিখ্যাত সিনেমা বানান, নাম Downfall।আপনারা হয়তো অনেকেই এই সিনেমটাটি দেখে থাকবেন।

যাই হোক, মুভিটির প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত গোটা অ্যাটমোস্ফিয়ারটাই অন্যরকম।বিশেষকরে এন্ডিংয়টা ভীষনরকম ফাস্ট আর টানটান।গোটা মুভিটিতে মিউজিক্যাল স্কোর তেমন বলতে গেলে নাই, তবে মুভির একেবারে শুরুতে একটা রয়েছে, পুরাই মাইন্ডব্লোয়িং !!

মুভিটির মাধ্যমে বেশ কিছু মরালিটি ইস্যু ফুটে উঠেছে,যেমন আপনি যদি কোনো জায়গার বিধাতা কিংবা অশেষ ক্ষমতার অধিকারী হন, তাহলে নিজেকে কন্ট্রোল না করে আপনি যদি স্বে্ছাচারী হয়ে উঠেন তা কতোটুকু বিপদজনক কিংবা ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে----তার পারফেক্ট উদাহরণ এই মুভিটি। মুভিটিতে বেশ কিছু ডিস্টার্বিং এবং শকিং দৃশ্য রয়েছে তাই এই মুভিটি সবার জন্য রেকমেন্ড করলাম না।মুভিটির আইএমডিবি রেটিং বেশ ভালো, ৭.৯। আর আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বোধকরি এইরকমই হওয়া দরকার।আমার পার্সোনাল রেটিং ৮/১০।মুভিটির হলিউডি একটা ভার্সন রয়েছে The Experiment (2010) নামে যাতে Adrien Brody এবং Forest Whitaker অভিনয় করেছিলেন।ঐ মুভিটা আমি দেখি নাই, আর দেখার ইচ্ছাও নাই।

মুভিটির ডাউনলোড লিংক: Das Experiment (2001) 720p - 600MB - scOrp


Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

পাসওয়ার্ড: ultrascor

অথবা মিডিয়াফায়ার : Das Experiment (2001) - 480p BD-Rip by NDTN

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:০৯
৩০টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×