somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: Le Samourai (1967)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মুভিটির ট্যাগলাইন, "Things suddenly go badly for a successful French assassin" -----এইরকম কোনো ট্যাগলাইনওয়ালা মুভি যে কতোখানি উপভোগ্য হবে তা বেশ খানিকটা আন্দাজ করাই যায়।ঠিক সেই আন্দাজ নিয়ে মুভিটা দেখতে বসেছিলাম, আর মুভিটা শেষ করে মনে হলো, সিম্পলি ওয়াও!!!! কোনো মুভি যদি আপনার প্রত্যাশার সীমারেখাকে মুগ্ধতা বরাবর ছাপিয়ে যায় তাহলে তো সিম্পলি ওয়াও বলতেই হয় !!!!! অনেক অনেক দিন পর একটা সিনেমা দেখলাম, আর সেই কামব্যাক মুভি হিসেবে ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম, একটু যেনো বেশিই পেলাম।

মুভিটির নাম, Le Samouraï , এটি ফ্রান্সের একটি সিনেমা যা মুক্তি পেয়েছিলো ১৯৬৭ সালে।পরিচালক Jean-Pierre Melville।রানিংটাইম ১০৫ মিনিট আর মুভিটির জেনার হলো ক্রাইম-ড্রামা-মিস্ট্রি।

প্রথমে মুভিটির প্লট সম্পর্কে একটু জেনে নেই, মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে জেফ কস্টেলো নামের ৩০ বছরের এক টগবগে যুবক।পেশায় প্রফেশনাল হিটম্যান।মানে টাকার বিনিময়ে মানুষকে হত্যা করা।জেফ কাজকর্মে বেশ গোছানো এবং ভীষন ধীর-স্থির।ভাড়া বাসায় বাসিন্দা বলতে ছিলো শুধু সে আর তার একটি পোষা পাখি।এক রাতে একটি নাইট ক্লাবের মালিককে হত্যা করার মিশনে সে ঐ নাইট ক্লাবে যায়।মালিককে হত্যা করতে পারলেও দুই তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাটি বুঝে যায়।এর মধ্যে একটি মেয়ে যে কিনা ঐ ক্লাবে পিয়ানো বাজাতো তাকে একেবারে সামনাসামনি দেখে ফেলে।খুনের পর পুলিশ আসে, প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা শুনে পুলিশ সারা শহরে চিরুনী অভিযান চালায়, সন্দেহভাজন হিসেবে জেফ কস্টেলাকে পুলিশ আটক করে।কিন্তু জেফ কস্টেলো আগেভাগেই জানতো, যদি কোনোক্রমে সে ধরা পড়ে যায় তাহলে তাকে শক্ত অ্যালিবাই দেখাতে হবে, তাই সে আগেই তার প্রেমিকাকে দিয়ে বেশ মজবুত একটা অ্যালিবাই দাঁড় করায়।কিন্তু বাধ সাজে সেই প্রত্যক্ষদর্শীরা, তাদের মধ্যে থেকে একজন তাকে সঠিকভাবে আইডেন্টিফাই করলেও আর বাদবাকি সবাই তেমন একটা নিশ্চিত ছিলো না, কিন্তু জেফ কস্টেলোকে অবাক করে দিয়ে সেই পিয়ানোবাদক মেয়েটা জেফকে না চিনবার কথা বলে।ফলে উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাব ও অ্যালিবাইয়ের কারণে ছাড়া পেয়ে যায় কস্টেলো।

কি?? ভাবছেন পুরা কাহিনীই বলে দিয়েছি কিনা?? মাত্র তো বললাম ৩০ মিনিটের কাহিনী, পুরা সিনেমার আরো এক ঘন্টার মতো কাহিনী বাকি আছে।এরপর আর কি? কস্টেলোর উপর পুলিশের সন্দেহ থাকলেও প্রমাণের অভাবে পুলিশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, কিন্তু পুলিশের চীফ অফিসারের চোখে কস্টেলোই প্রাইম সাসপেক্ট।তাই তার পিছনে টিকটিকির মতো পুলিশ লাগিয়ে দেয় সে, আর তাদেরকে বাঁচিয়ে পালিয়ে বেড়াতে থাকে কস্টেলো।কিন্তু তার সামনে ঘোর বিপদ, পুলিশের সাসপেক্ট হওয়ায় কস্টেলোর বসেরা তাকে মেরে ফেলতে চায়,এদিক দিয়ে পুলিশ ঠিক করে চাপ দিয়ে কস্টেলোর প্রেমিকার কাছ থেকে মূল ঘটনা বের করে আনবে, সবমিলিয়ে জগাখিচুড়ি অবস্থা কস্টেলোর।আর এভাবেই কাহিনী এগোতে থাকে দ্রুতলয়ে।তবে এন্ডিংয়ে একটা দারুন চমক আছে, কি চমক সেটা বলবো না, তবে সেটা আন্দাজ করা একেবারেই অসম্ভব---অন্তত আমি পারি নি একথা বলতে পারি।

এবার মুভিটিকে নিয়ে একটু বিশ্লেষন করা যাক।মুভিটি সম্পর্কে একটি কথা সবার আগে বলতে হয়, তা হলো, মুভিটির অসাধারন এবং দুর্দান্ত লেভেলের স্টোরিটেলিং।মুভিটিতে ডায়ালগ খুবই কম হলেও তা একেবারেই পারফেক্ট।কোনো বাড়তি সংলাপ নেই, ঠিক যতোটুকু দরকার ততোটুকুই রয়েছে।স্টার্টিং ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত একেবারেই কোনো ডায়ালগ নাই।কিন্তু সেই স্টোরিটেলিংটি এতোটাই চমৎকার যে একজন পেশাদার হিটম্যানের কার্যকলাপের পরিপূর্ণ এবং পরিষ্কার ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। তারপরে, পুলিশের তদন্তকাজ ও জিজ্ঞাসাবাদ খুবই ডিটেইলড আর দারুন মুন্সীয়ানার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।আর গোটা মুভিটিতে অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য একেবারেই নেই, এইরকম একটা এনগেজিং আর ইনটেন্স মিস্ট্রি ড্রামা মুভিতে যা দরকার পরিচালক তার শতভাগ দেখিয়েছেন।গোটা ১ ঘন্টা চল্লিশ মিনিটের একটু মুহূর্তও ঝুলে যায় নি তারজন্য পরিচালককে স্যালুট।আমার মুভিটি দেখার পর মনে হয়েছিলো,পরিচালক চাইলেই ডায়ালগগুলো ব্যবহার না করে অনায়াসে এইটাকে পুরোপুরি সাইলেন্ট মুভি হিসেবে উপস্থাপিত করতে পারতেন।সুতরাং বুঝতেই পারছেন মুভিটির ক্যামেরার কাজ, এডিটিং আর স্টোরিটেলিং কতোটুকু শক্তিশালী ছিলো।

পোষা পাখির কনসেপ্টটা আমার কাছে অভিনব এবং এককথায় ব্রিলিয়ান্ট লেগেছে।আমার কাছে মনে হয়েছে এইখানে সেই পোষা পাখিকে শুধুমাত্র একটি পাখি হিসেবেই দেখানো হয় নি, বরং তার মাধ্যমে জেফ কস্টেলোর জীবনটার একটা সিম্বলিক রূপও পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন।পাখিটি যেমন খাঁচাবন্দী, ঠিক জীবিকার এই কঠিনতম পথটি বেছে নেওয়ায় জেফের জীবনটাও কি এইরকম চার দেওয়ালের বাক্সবন্দী নয়?

এছাড়া মুভিটির ব্যাকগ্রাউন্ডে দারুন কিছু মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে।বিশেষ করে শুরুতে জেফ যখন বিছানায় শুয়ে ছিলো, কিংবা সে যখন গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছিলো,এককথায় ভীষনরকম মানানসই।

এইবার আসি কাস্টিংয়ের ব্যাপারে।জেফ কস্টেলোর চরিত্রে অভিনয় করা Alain Delon এর প্রশংসা আলাদা ভাবে করতে চাই।টোটালি মাইন্ডব্লোয়িং পারফরমেন্স।একজন স্মার্ট-ইয়ং হিটম্যানের এইরকম অসাধারন চারিত্রিক প্রেজেন্টেশান ভুলবার মতো না।হ্যাটস অফ টু হিম ! এছাড়া অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রিদের অভিনয়ও দারুন এবং বেশ উপভোগ্য ছিলো।

আর মুভিটির একটা অসাধারন স্টাইল রয়েছে।যে কিনা টাকার জন্য অন্য মানুষকে খুন করে তার প্রতি একটা ভালো লাগা কিংবা মনে প্রাণে চাও্য়া যেনো সে পুলিশের কাছে ধরা না খায় এইরকম অবস্থায় দর্শককে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে একটা অন্যরকম পারদর্শীতা থাকা লাগে----আর এইখানেই পরিচালক শতভাগ সফল।

পরিশেষে বলবো, Le Samourai: It's probably the best film about hit men ever made, which is a narrow classification of this film, because it is more than just the story of a hit-man.

মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.২, আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০।সবার জন্য হাইলি রেকমেন্ড করলাম।

মুভিটির সিংগেল ডাউনলোড লিংক:

Click This Link

মুভিটির এন্ডিং নিয়ে অনেকের মনে নানান ভাবনা আসতে পারে, স্পয়লারের স্বার্থে সেগুলো পোস্টে শেয়ার করলাম না।তবে আলোচনা করতে চাইলে কমেন্টের ঘরে সুস্বাগতম।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ বিকাল ৩:০৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×