somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ: Witness for the Prosecution

০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজকে যেই মুভির রিভিউ লিখছি, এটি একটি ক্ল্যাসিক কোর্টরুম ড্রামা মুভি। আমার নিজের কাছে এই জেনারটা বেশ উপভোগ্য লাগে, কোর্টরুমকেন্দ্রিক আইনের যাবতীয় মার-প্যাঁচ আর নানান লজিকের সমন্বয়ে মুভিগুলো বেশ টানটান আর জমজমাট হয়ে পড়ে যা আপনাকে টেনে ধরে রাখবে সর্বক্ষণ, তবে সবসময় এইটি যে সমান উপভোগ্য হবে তেমনটি নয়। ডিপেন্ড করে যেই ক্রাইমের উপর কোর্টরুমটি পরিচালিত হচ্ছে তার উপর। এখন আপনাকে যদি আমি বেস্ট কোর্টরুম ড্রামা মুভির উদাহরণ জিজ্ঞাসা করি তাহলে অবধারিতভাবে সবার প্রথমেই আসবে সিডনি লুমেটের বিখ্যাত টুয়েলভ অ্যাংগরী মেন মুভিটির নাম। কোর্টরুম ড্রামা মুভির ক্ষেত্রে প্লট কিংবা আক্ষরিক অর্থে সাসপেক্টের ক্রাইমটাই স্টোরিলাইনের পিছনে সবচেয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করে, সেই ক্রাইমকে ঘিরে বাদীপক্ষ বনাম বিবাদীপক্ষের যুক্তি-তর্ক গোটা মুভিটিকেই পরবর্তীতে পরিচালিত করে সামনের দিকে। সাথে স্টোরিলাইনের সমান্তরালে উঠে আসে আরো কিছু মানবীয় বিষয়, যোগ করে আলাদা মাত্রা। যেমন, টুয়েলভ অ্যাংগরী মেনের ক্ষেত্রেই দেখুন, যখন ১২ জন জুরি সেই রুমে আসামীর পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দিচ্ছিলো, তখন বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের নিজেদের জীবনের ব্যাক্তিগত বিভিন্ন ঘটনা, বিভিন্ন অনুভূতিগুলোও ভেসে উঠেছিলো সবার সামনে, যা তাদের ইনডিভিজ্যুয়াল চরিত্রকে আরো প্রস্ফুটিত করেছিলো।একই জিনিস আমরা দেখবো Witness for the Prosecution এই মুভিটির ক্ষেত্রে। আসলে প্রতিটি কোর্টরুম ড্রামা কেবল যে আইনের মার প্যাঁচই ক্যারি করে তা নয়, বরং সেই সাথে ইনডিভিজ্যুয়াল মানুষের ইমোশন ও সেন্টিমেন্টকেও ক্যারি করে।


Witness for the Prosecution একটি ব্রিটিশ কোর্টরুম ড্রামা মুভি, যা ১৯৫৮ সালে অফিসিয়ালী রিলিজ পায়। এটি বিখ্যাত ক্রাইম লেখিকা অগাথা ক্রিস্টির একটু নাটক অবলম্বনে তৈরি।প্রথমে ক্রিস্টি একটি ছোটোগল্প লিখেন, সেই ছোটোগল্পকে পরবর্তীতে নাটকে রূপ দেন তিনি। আর সেই নাটকটিকে চিত্রনাট্য হিসেবে রূপ দেন পরিচালক বিলি ওয়াইল্ডার আর হ্যারি কুরনিটজ। সিনেমার পরিচালকও সেই বিলি ওয়াইল্ডার, যেইখানে মূলগল্প অগাথা ক্রিস্টির আর পরিচালনায় বিলি ওয়াইল্ডার সেই মুভি কতোখানি দুর্দান্ত হতে পারে সেটাতো সহজেই অনুমেয়।


মুভিটির রানিংটাইম খুব একটা বেশি নয়, ১১৬ মিনিট, মানে দুই ঘন্টারও কম, এইধরনের মুভির জন্য একেবারে পারফেক্ট, জেনারতো আগেই বলেছি ক্রাইম- ড্রামা, সেই সাথে ফিল্ম নয়েরের বেশ ভালো প্রভাব আছে মুভিটিতে। এইবার প্লটটি সংক্ষেপে একটু বলে নেই, স্যার উইলফ্রিড রবার্টস- একজন বিখ্যাত ক্রাইম লইয়ার। হার্ট অ্যাটাক থেকে সুস্থ হয়ে সদ্যই ফিরেছেন প্র্যাকটিসে। ডাক্তাররা স্পষ্ট নিষেধ করেছেন, কোনো প্রকার ক্রাইম কেস এই মুহূর্তে নেয়া যাবে না, যাতে করে তার টেনশান এবং ওভার এক্সাইটমেন্ট হতে পারে, এবং সেই সাথে কোনো প্রকার মদ আর সিগারেট খাওয়া যাবে না, অবস্থা যেনো কখনোই গুরুতর না হয় সেজন্য সাথে করে সর্বক্ষন একজন নার্সও রাখা হয়েছে। কিন্তু প্র্যাকটিসে ফিরেই তার কাছে নতুন একজন ক্লায়েন্ট আসেন, ক্লায়েন্টের নাম লিয়োনার্ড ভয়েল। ক্লায়েন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি পন্চাশোর্ধ একজন ধনী বিধবা মহিলাকে খুন করেছেন।তার বিরুদ্ধে মোটিভ এতোটাই শক্তিশালী যে যেকোনো মুহূর্তেই তিনি পুলিশের কাছে গ্রেফতার হতে পারেন। প্রথমে শারিরীক অবস্থা চিন্তা করে উইলফ্রিড কেসটি হাতে নিতে আপত্তি জানান, তবে পরবর্তীতে মামলাটির গভীরতা ও সাসপেক্টের স্ত্রীর সাথে কথা বলে তিনি কেসটি হাতে নেন। এরপর আদালতে শুরু হয় ট্রায়াল। আর এইভাবেই কাহিনী এগুতে থাকে সামনের দিকে।আর পরিশেষে চমৎকার একটি ট্যুইস্টিং এন্ডিংয়ের মাধ্যমে মুভিটি শেষ হয়।


এইবার মুভিটির ব্যপারে কিছু কথা বলা যাক, মুভিটি দেখতে গিয়ে একটা জিনিস দারুন লেগেছে, আর তা হলো মুভিটিতে যেমন কিছু সিরিয়াস এলিমেন্ট রয়েছে, তেমনি ছোটোছোটো কিছু উইটি আর ফানি মোমেন্টসও রয়েছে। যেমন, স্যার উইলফ্রিড আর সেই নার্সের মধ্যে চমৎকার কিছু ছোটো ছোটো ইনসিডেন্ট রয়েছে যা ব্যাপক উপভোগ্য ছিলো। খুব সিরিয়াস মুহূর্তের মাঝে সেইসব ঘটনা দারুন ফ্লেভার অ্যাড করেছে। আর মুভিটির স্টোরিটেলিং আর স্ক্রিপ্ট এক কথায় অতুলনীয়। কাহিনীর গভীরে যেতে খুব একটা সময় নেয় নি, ব্যাকগ্রাউন্ডে লিয়োনার্ড ভয়েলের স্মৃতিচারণ,প্রত্যেকটি চরিত্রে আলাদা ডাইমেনশান---সব মিলিয়ে অসাধারন। সেজন্য পরিচালক বিলি ওয়াইল্ডারের ক্রেডিট দিতেই হবে, একটি সিম্পল কোর্টরুম ড্রামাকে এইরকম ক্ল্যাসিক কোর্টরুম ড্রামা বানানো চাট্টিখানি কথা না। মুভিটিকে তিনি গতবাঁধা সিরিয়াস না বানিয়ে বেশ সাবস্টেন্শিয়াল এবং একই সাথে এন্টারটেইনিং হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করেছেন। মুভিটির কাহিনী্তে অনেকগুলো খুঁটিনাটি দিক ফুটে রয়েছে, শুধু ক্রাইম কিংবা জাস্টিসই নয়, গল্পের ভিতরে চমৎকার একটি রোমান্টিক স্টোরিও আছে। আর সবকিছু মিলেমিশে মূল রহস্যটি নিয়ে দর্শকদের সাথে গোটা সময়টি খেলেছেন পরিচালক, যার ফল দেখতে পাই মুভিটির শেষটায় এসে।

এইবারে আসি কাস্টিংয়ের ব্যাপারে, সবার আগে বলতে হবে সেই উইলফ্রিড চরিত্রে অভিনয় করা চার্লস লটনের কথা। ব্রিলিয়ান্ট ক্যারেক্টারাইজেশানের মাধ্যমে চমৎকার অভিনয় করেছেন গোটা মুভিটি জুড়ে। অন্যভাবে বলতে হয়, চার্লস লটন ছিলেন মুভিটির প্রাণকেন্দ্র, গোটা মুভিটিকে অদ্ভুত একটা গতি এনে দিয়েছেন তিনি। আর এইরকম দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য তিনি অস্কারের নমিনেশান পান, শুধু অস্কারই নয়, বাফটা, গোল্ডেন গ্লোবেরও নমিনেশান পান তিনি। এছাড়া লিয়োনার্ডের চরিত্রে টাইরোন পাওয়ার আর তার স্ত্রীর চরিত্রে মেরিলিন ডায়েরিক আর সেই নার্সর চরিত্রে এলসা ল্যাংকেস্টার অসামান্য অভিনয় করেন।


মুভিটি শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ মুভি সহ সর্বমোট ৬ টি বিভাগে অস্কারের নমিনেশান পায়।

মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৪, আর আইএমডিবি টপ ২৫০ তালিকায় ১০৬ তম অবস্থানে রয়েছে। আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০। মুভিটি একটি টাইমলেস ক্ল্যাসিক। সবার জন্য হাইলি রেকমেন্ড করলাম। যারা সাদাকালো মুভি একটু কম পছন্দ করেন তাদেরও চমৎকার লাগবে আশা করছি।


ডাউনলোড লিংক:

স্টেজভ্যু: http://stagevu.com/video/cwfsmmajdsvg

অথবা, র‌্যাপিডশেয়ার:

Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link


যাওয়ার আগে কিছু ইনফো শেয়ার করে যাই,
১। স্যার উইলফ্রিড আর সেই নার্সের চরিত্রে অভিনয় করা Charles Laughton আর Elsa Lanchester রিয়েল লাইফে স্বামী স্ত্রী ছিলেন।
২।মুভিটি মুক্তির পর অনেক সময়ই অনেকে আলফ্রেড হিচককের কাছে গিয়ে এই মুভিটির জন্য হিচককের পরিচালনার প্রশংসা করেছিলেন, অনেকেই জানতেন না, এই মুভিটি হিচককের নয়, বিলি ওয়াইল্ডারের পরিচালিত মুভি। এইটি নিয়ে তিনি প্রায়ই বিলি ওয়াইল্ডারের সাথে মজা করতেন।
৩।এই মুভিটিই ছিলো টাইরোন পাওয়ারের অভিনীত সর্বশেষ মুভি, এই মুভিটি মুক্তির কিছুদিন পরই তিনি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মারা যান।
৪।American Film Institute এর 10 greatest films "Courtroom Drama" জেনারে এই মুভিটি ৬ নাম্বারে রয়েছে।
৫। মুভিটির ফাইনান্সিয়াল আউটকামের উপর সবাই এতোটাই সিরিয়াস ছিলেন যে মুভিটির ট্যুইস্টিং এন্ডিং যেনো কোনোভাবেই বাইরে ফাঁস না হয় সেজন্য সবাই একটা এগ্রিমেন্ট সাইন করেছিলেন যেটাতে লেখা ছিলো, "I solemnly swear I will not reveal the ending of Witness for the Prosecution."


মুভিটি দেখুন, আর দেখে কেমন লাগলো জানা্তে ভুলবেন না কিন্তু !!!


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৪২
৬২টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×