somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্রিকি ফ্রাইডে

১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিন। তার একমাত্র ছেলে শিহাব। খুবই স্মার্ট। একটি নামকরা আর্কিটেকচারাল ফার্মে বেশ ভালো পজিশানে চাকরি করে। অপূর্ব সুন্দর এক প্রেমিকা আছে তার, ইচ্ছা আছে সামনের বছরেই বিয়ে করার।চাকুরিটা আরো পাকাপোক্ত হলেই তাদের বাসায় বিয়ের অফিসিয়াল প্রোপোজাল পাঠানো হবে।

শুক্রবার: রাত ১.৪৫ : অফিস থেকে বাসায় ফিরছে শিহাব। একটা প্রোজেক্টের কাজ অলমোস্ট শেষের পথে। ঠিক করেছে সামনের সপ্তাহে প্রজেক্ট শেষ হওয়া মাত্রই অফিস থেকে টানা দুইদিনের জন্য ছুটি নিবে , ঐ দুইদিনের কিছু কাজ আগেভাগে গুছিয়ে নিতে নিতেই এতোটা দেরি হয়ে গেলো। আর্কিটেকচারাল ফার্মে জব, সুতরাং দিনরাতের কোনো বালাই নাই। শিহাবদের বাসা উত্তরাতে, অফিস থেকে ড্রাইভিং ডিসটেন্স বেশ দূরের হলেও এতো রাতে খালি রাস্তা দিয়ে হু হু করে গাড়ি চলছে, এই সময়ের ড্রাইভিং করে একটা আলাদা মজা পায় শিহাব।

আনমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছে শিহাব। কিছুক্ষণ পর তার কেমন যেনো একটা অন্যরকম অনুভূতি হতে লাগলো। ব্যাপারটা অনুসন্ধান করতে গিয়েই হঠাৎ ব্যাপারটা আবিষ্কার করে সে। রিয়ার ভিউ মিররে চোখ পড়তেই দেখলো, সাদা রংয়ের একটা প্রোবক্স গাড়ি তার পিছনে রয়েছে, শিহাব বুঝতে পারে কিছুক্ষণ ধরেই এই গাড়িটি তাকে ফলো করছে। একটু অন্যমনষ্ক ছিলো বলে ব্যাপরটা বুঝতে এতোটা সময় লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর ব্যাপারটা আরো ঘোলাটে হতে লাগলো, কারণ নিরাপদ দূরত্ব থেকে সেই প্রোবক্স গাড়িটি এখনো ফলো করে যাচ্ছে। কিছুটা ভয় পেলেও খানিকক্ষণ পর নিজেকে সামলে নেয় শিহাব। একটা বড়ো করে নিঃশ্বাস নেয়। সামনে একটু এগিয়ে গাড়িটি একেবারে স্লো করে ফেলে, তারপর দেখলো সেই গাড়িটিও স্লো করছে। একপর্যায়ে সে চিন্তা করে সামনেই মহাখালি ফ্লাইওভার। গাড়িটি ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়া করায়। সেই সাদা গাড়িটিও তার চেয়ে একটু পিছনে এসে থামে। শিহাব চিন্তা করে, সময় এখন অলমোস্ট আড়াইটা, পুরো রাস্তা একদম খালি। সে যদি আমাকে ছিনতাই করতে চায়, এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না।ব্যাপারটা সে একটু বাজিয়ে দেখতে চায়। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে সেই গাড়িটি থেমেই থাকে। শিহাব তখন বুঝতে পারে, তার এই ব্যাপারটা অন্য কাউকে জানানো উচিত। মোবাইলটা হাতে তুলে কাঁপাকাঁপা হাতে চিন্তা করে বাসায় ব্যাপারটা জানাবে, হঠাৎই হেডলাইট জ্বলে উঠে প্রোবক্স গাড়িটির। তাকে অবাক করে দিয়ে গাড়িটি আস্তে আস্তে সামনের দিকে আগাতে থাকে। শিহাব ঠিক করে, গাড়িটি তার সামনে আসলে দেখবে ঘটনাটা আসলে কি? দরজাতো লকই আছে, অবস্থা বেগতিক দেখলে জোরে টান দেয়া যাবে। গাড়িটি আস্তে আস্তে কাছে আসছে, ভয়ে আতঙ্কে হাত পা ঠান্ডা হতে থাকে শিহাবের। এরপর যা ঘটলো তার জন্য কোনোক্রমেই প্রস্তুত ছিলো না শিহাব, বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে দেখলো সেই সাদা প্রোবক্স গাড়িটি তার পাশ দিয়ে আস্তে আস্তে কেটে চলে যাচ্ছে, কিন্তু সেই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে কেউ নেই। পুরো গাড়িটি খালি। পুরো ব্যাপারটি হজম করতে খানিকটা সময় লেগে গেলো, শিহাবের মনে হচ্ছিলো এক্ষুণি বুঝি সে জ্ঞান হারাবে। সাদা গাড়িটি তাকে অতিক্রম করে একটু সামনে এসে দাঁড়ালো। শিহাব কোনোরকমে সেই গাড়ির নম্বর প্লেটটি এক নজর দেখেই এক্সেলেটার যতোটা জোরে চাপা যায় সেভাবে টান দিলো গাড়িটিকে। প্রোবক্স গাড়িটিকে অতিক্রম করে শাঁ শাঁ করে কাটিয়ে গেলো, দ্বিতীয়বার আর সাহস হলোনা সেই গাড়িটির দিকে চোখ ফেরানোর। কিছুদূর যাওয়ার পর লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে বুঝলো সেই গাড়িটি আর ফলো করছে না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে, বুকটি এতো জোরে ধকধক করছে মনে হচ্ছে হার্ট মনে হয় এক্ষুণি বার্স্ট করবে। কোনোরকমে কাঁপতে কাঁপতে বাসায় ফিরলো। সময় তখন সাড়ে তিনটা। সেই রাতেই গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠলো তার। একেবারে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। বাকি রাতটুকু ঘুমাতেই পারলো না, ঘুমের ঘোরে বারবার সেই ফ্লাইওভারের ঘটনার দুঃস্বপ্ন দেখতে লাগলো সে।

পরদিন সে পুরো ঘটনা বাসায় খুলে ফেললো। পুরো ঘটনা শুনে কারোরই বিশ্বাস হতে চায় না, এই ঘটনা কি করে সম্ভব? এর ব্যাখ্যা কীইবা হতে পারে? সবাই মনে করলো, হয়তো কাজের চাপে কিংবা অন্য কোনো কারণে এতো রাতে একাকী নির্জনে ড্রাইভ করায় মনটা কিছুটা অস্থির ছিলো, তাই হয়তো কিছু একটা দেখে আচমকা ভয় পেয়েছিলো, সেজন্যই হয়তো এইরকম হ্যালুসিনেশান হচ্ছিলো।


টানা কয়েকদিন ঘুমের বেশ প্রব্লেম হতে লাগলো শিহাবের। তার বাবা ডিবির হাই প্রোফাইল অফিসার। পুরো ঘটনাটাই তার কাছে কেমন জানি ইনকমপ্লিটেড মনে হলো, তিনি ভাবলেন ব্যাপারটি একটু খতিয়ে দেখা দরকার।আর ক্লুতো হাতে আছেই। সেই গাড়ির নাম্বারপ্লেট। খোঁজখবর নেয়া শুরু করে দিলেন তিনি। অবশেষে পাওয়া গেলো সেই গাড়ির মালিকের খোঁজ, ঠিকানা- পান্থপথের একটি বাসা ও মালিকের নাম মোহাম্মদ শফিকুল হক। ঠিকানা পাওয়ামাত্রই সেদিন সন্ধ্যায় ঐ বাসার ঠিকানায় হাজির হলেন তিনি।শফিকুল হককে নিজের পরিচয় দিয়ে সোজাসাপ্টা জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনার সেই রাতে ঐ গাড়িটি কে ড্রাইভ করছিলো। এমন প্রশ্ন শুনে পুরাই তাজ্জব বনে যান শফিকুল হক। তিনি জানান, ঐরাত কেনো কোনো রাতেই সেই গাড়িটি কেউ ব্যবহার করে না, কারণ ঐ গাড়িটি ছিলো শফিকুল হকের একমাত্র ছেলের অত্যন্ত সাধের গাড়ি। আজ থেকে তিন মাস আগে আশুলিয়া থেকে বাড়ি ফিরবার সময় রাতের বেলা মহাখালি ফ্লাইওভারের সামনে এই প্রোবক্স গাড়িটি একটি মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে,ঐসময় মালিকের ছেলে নিজেই গাড়িটি ড্রাইভ করছিলো । ঘটনাস্থলেই ভয়ংকরভাবে মারা যায় সে। এই দূর্ঘটনার পর গাড়িটি হয়ে উঠে হক সাহেবের চক্ষুশূল, হাতে গোণা কয়েকবার ছাড়া এই গাড়িটি নিয়ে তেমন কেউই কখনো বাইরে বের হন নি । তিনি জানান,"গাড়িটি সারিয়েছি বেশ কয়েকদিন হলো, ডিসিশান নিয়েছি এই অপয়া গাড়িটি বিক্রি করে দিবো।"বলতে বলতে গলার স্বর একটু কেঁপে উঠলো। এরপর আমিন সাহেব সেই গাড়িটিকে একবার দেখানোর জন্য অনুরোধ জানান শফিকুল হককে। গ্যারেজে গিয়ে আমিন সাহেব দেখলেন, নাম্বারপ্লেট এবং গাড়ির রং ও মডেল শিহাবের কথার সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে। গাড়িটির দিকে কিছুক্ষণ একটানা তাকিয়ে রইলেন, কেমন জানি ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেলো মেরুদন্ড দিয়ে। এপর্যায়ে শফিকুল হক জিজ্ঞাসা করলেন, "কেন স্যার, কোন সমস্যা?"
আমিন সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীচু স্বরে্ জবাব দিলেন, "না, কোনো সমস্যা নয়। মনে হয় আমাদের ইনফরমেশানেই ভূল ছিলো।"

--------------------------------------------------------------------

ক্রিং ক্রিং !!!!
ক্রিং ক্রিং !!!!



দরজা খুললেন শিহাবের মা। দেখলেন হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আমিন সাহেব।চোখদুটো টকটকে লাল। টলটে টলটে বললেন, "শিহাবের মা, দেখো তো কিছু ঔষধ পাও কিনা, আমার ভীষণ জ্বর জ্বর লাগছে !!!!"



সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:৫৮
২৭টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×