একটা সময় ছিল যখন আমি গরীব অসহায় মানুষকে/ভিক্ষুককে দান করতাম। তাদের বিপদে এগিয়ে যেতাম। কিন্তু পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন লেখা পড়ে টেলিভিশনে তাদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখে এসব দানের ব্যাপারে অনাগ্রহী হয়ে উঠি। কারণ জানতে পারি তাদের পেছনে কাজ করে এক প্রতারক চক্র। তাই দান করতে গেলেই ভাবনা আসে আমার দানটুকু সৎ পাত্রে যাচ্ছে কী? হয়ত অনেকের মনেই আমার মতো এমন ভাবনা আসে। তাই একটি হাদীছ শেয়ার করলাম। হয়তবা আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন হবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। (অতীত কালে) এক ব্যক্তি বলল, অবশ্যই আমি একটি দান করব, অত:পর লোকটি স্বীয় দান নিয়ে বের হল, এবং তা (অজ্ঞাতসারে) এক চোরর হাতে অর্পণ করল। সকাল হলে লোকেরা বলতে লাগল, রাতে একজন চোরকে দান করা হয়েছে। লোকটি বলল: হে আল্লাহ সকল প্রশংসা তোমার জন্য। অবশ্যই আমি আবার দান করব, এবলে লোকটি পুনরায় তার দান নিয়ে বের হলো, অত:পর তা একজন ব্যভিচারী নারীকে দান করল। সকালে লোকেরা বলাবলি করল, গত রাতে একজন ব্যভিচারী নারীকে দান করা হয়েছে। লোকটি বলল: হে আল্লাহ সকল প্রশংসা তোমার জন্য। অবশ্য আমি আবারো দান করব। এবং সে আপন দান নিয়ে বের হল, এবার সে একজন ধনী লোককে দান করল। সকালে লোকেরা বলাবলি করতে লাগল, একজন ধনীকে দান করা হয়েছে। লোকটি বলল: হে আল্লাহ সকল প্রশংসা তোমার জন্যে যে, আমি চোর, বেশ্যা ও ধনীলোককে দান করতে সক্ষম হয়েছি। অত:পর তাকে (স্বপ্নের মাধ্যমে) বলা হলো যে, তোমার যে দান চোর পেয়েছে সম্ভবত: সে তা দ্বারা চুরি হতে বিরত থাকবে। আর বেশ্যা তা দ্বারা বেশ্যাবৃত্তি হতে বাঁচতে চেষ্টা করে নিজের পবিত্রতা অবলম্বন করবে। আর মালদার এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে অত:পর নিজেও দান করতে থাকবে যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন তা থেকে। (বর্ণনায় সহিহ বোখারি)
মূলত সকল কাজের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। লোকটির অজ্ঞাতসারে নিজ দান মন্দ লোকদের হাতে চলে যাওয়ার পরও লোকটি দানে নিরুৎসাহিত হয়নি। এখলাসের সাথে দান করলে কোনো আমলই বিনষ্ট হয় না। অজ্ঞাতসারে অপাত্রে দান চলে গেলেও দাতার সওয়াবের কমতি হয় না। বরং নিয়তের প্রভাবে ঐসব খারাপ লোকও ভালো হয়ে যায়। এ হাদিস তাই প্রমাণ করে।
তবে দান বা সদকা যাচাই বাছাই করে দেওয়াই উত্তম কারণ আল্লাহ তায়ালা আল-কুরআনের সূরা বাকারা ২৭৩ নম্বর আয়াতে বলেনঃ
(সদকা) সেসব দরিদ্রের জন্য যারা আল্লাহর রাস্তায় আটকে গিয়েছে, তারা জমিনে চলতে পারে না। না চাওয়ার কারণে অনবগত ব্যক্তি তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাকেরকে চিনতে পারবে তাদের চিহ্ন দ্বারা। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না। আর তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:০০