জানি, বাংলার সরকার আজ নিরব দর্শক। নিয়তির নির্মম পরিহাসে অসহায় মানুষগুলির পাশে আজ বাংলা নেই, বাংলাদেশ নেই। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ের বাংলাদেশ আজ মজলুমের সাথে নেই। এই মুখ আমরা কোথায় দেখাই? কত ভালবাসার ধন বাংলাদেশ, আজ যেন অচেনা আচরণ করে। সুশিল রূপি যে সব মানুষ পর্দার আড়ালে থাকত, তারা আজ মুখোশ খুলে ফেলেছে, দেখিয়ে বেরাচ্ছে তাদের আসল চেহেরা।
রেহিংগাদের আজ বাংলায় জায়গা হয় না, কত বিশ্বাস, আশা নিয়ে রেহিংগারা এসেছিল, ভাইয়ের দরজায়। কেউ কিছু না করুক, আমার ভাই পাশে দাঁড়াবে। নাহ, তাদের মন ভেঙ্গে নাফ নদীর তীরে নৌকা গুলি ভাসছে। হয়ত কেউ না খেয়ে, অসুস্থ হয়ে মারা পরবে, কিন্তু এ নিয়ে সুশিলরা কিছু বলে না, কারণ তারা যে মুসলমানের সন্তান। অন্যদিকে আবার কেউ কেউ দোহাই তোলছেন, তারা আমাদের পাসপোর্ট জালিয়াতি করে, বিদেশে আমাদের বদনাম হয়। বিদেশে বদনাম কি আমাদের কম আছে, বিপদগ্রস্থ মানুষগুলির জন্য না হয় আরেকটু বাড়লো। তাতে কি? আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারতাম, দেখ বিশ্বের জনগন আমরা বাংগালীরা সম্পদে গরীব হলেও মনের দিক থেকে আমরা অনেক বড়। নাহ, আমাদের এ সম্মান পাওয়া হল না। যদি সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ না হইতো, তাহলে হয়ত আমাদের এ আচরণ মানা যেত। আফসুস, এ কি ভয়ংকর চেহেরা সুশিলরগণ আমাদের দেখালেন। তারা গুটি কয়েক রেহেংগাদের দোষ সমগ্র রেহিঙ্গা জাতির উপর ফেলে দিলেন। বাংলাদেশের কোন প্রেমিক যদি তার প্রমিকাকে খুন করে হাজার টুকরা করে, তাহলে যে তার দায় সমগ্র বাংলাদেশীর নয়, ঠিক তেমনি গুটি কয়েক রেহিংগার দায় কেন পুরো রেহিংগা জাতি নেবে? এই প্রশ্নের উত্তর সুশীলরা না দিয়ে ঘুরিয়ে পিছিয়ে প্রশ্নকর্তাকেই ট্যাগ দিয়ে না-জাহেল করেন। আজব কিসিমের প্রাণী এই সুশিল সমাজ, যখন কিছু সংখ্যক বাংলার লোকজন নিজেদের রিফুজি দাবী করে পশ্চিমাদেশের লাল-নীল পাসপোর্ট নেন, তখন তারা কিছু বলেন না। উলটো পারলে বাহবাদেন, আর বেমালুম ভুলে যান দেশের কথা, আমাদের দেশে যে কোন যুদ্ধ নেই, সংঘাত নেই। এই সব মিথ্যা সংঘাতের দায়ে আমাদের যে অপমান হয়। যদিও আমি মনেকরি, সামান্য একটু দায়গ্রস্থ হলেও যদি একটি ফ্যামেলি ধনী দেশে যেয়ে বাচতে পারে তাতে খারাপ কি? আমেরিকার ডিভি ভিসা বন্দ হওয়াতে কতই না কষ্ট পান আপনি, আর বাড়ি ঘর হারিয়ে নৌকায় ভেসে থাকা ঐ রেহেংগা মানুষগুলিকে একমোঠো আশ্রয় দিতে চান না। গরীবের দুঃখ হয়ত গরীব-ই বুঝে, তাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কিছু বাসীন্দা নাকি, খাবার আর পানি দিতে চেয়েছিল। খবরে প্রকাশ সেটাও সেই সময় নাকি দিতে দেওয়া হয়নি। হায়রে এ কোন বর্বরতা, এ কোন নিষ্ঠুরতা। দোয়া করি, এ সেন্টমার্টিন দ্বীপের এই কাহিনী যেন মিথ্যা হয়, দ্বীপবাসী যেন বাধা পেরিয়ে খাবার আর পানি দিতে পারেন। যারা জানেন না, তারা জেনে নিন সমুদ্রের পানি খাওয়া যায় না, লবনাক্ত এবং মানুষ খাবার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে যায়।
রেহিংগারা জাতিসংঘের হিসাব মত সব থেকে নির্জাতিত জাতি। তাদের নাগরিকত্ব নেই, কেন নেই জানেন? রাখাইনরা এদের বাংগালি বলে ডাকে, তাই।





যুগান্তরের ১২ তারিখের খবরে দেখা যায়, মানুষকে মেরে লাশ ন্যারা করে এদের রাখাইনদের লাশ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। DW এর রিপোর্ট থেকে জানা যায়, "মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে সহিংসতায় গত শুক্রবার থেকে মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ২৫৷ এই হিসাব অবশ্য মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের।" অসমর্থিত সূত্রে ২০০ জন মানুষ মারা যাবার কাহিনী শুনা যাচ্ছে। তারপরও যদি বাংলাদেশ এগিয়ে না যায়, তাহলে রেহিংগা ভাই বোনেরা আমাদের ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
শেষ খবর যা পেলাম তা ভয়াবহ, ইত্তেফাকের খবরে বলা হয় "সান্ধ্য আইনের রক্ষাকবচের আওতায় পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী নাসাকার সহায়তায় মুসলিম নারী ও শিশুদের গণহারে অপহরণ করার অভিযোগ ঊঠেছে। জানা গেছে, আরকানে হত্যা, গুম ও নারী ধর্ষণ এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের আকিয়াব অঞ্চলে বসবাসকারী মুসলিম সমপ্রদায় চরম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু এলাকা থেকে প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য খবরে জানা যায়, গত ৬দিনে শুধুমাত্র মংডু ও আশপাশের প্রায় ১৫টি গ্রাম এলাকায় সংঘটিত দাঙ্গায় কমপক্ষে ৪শ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। যাদের সিংহ ভাগই মুসলিম। সরকারি বাহিনী গত ৩দিনে কয়েক হাজার তরুণ-তরুণী ও শিশুদের ধরে নিয়ে গেলেও তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তারা বেঁচে আছেন নাকি মেরে ফেলা হয়েছে তা মুসলমানদের কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। মংডুর শত শত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার চোখের সামনেই সর্বস্বহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে সবকিছু হারিয়ে আহত ও অভুক্ত অবস্থায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে বিফল হচ্ছে বিজিবির কঠোর অবস্থানে।"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




