দেশের কয়েক জন মন্ত্রী যখন সরকারের সম্মান বাড়ানোর চেষ্টা করতে ব্যার্থ, তখন ওবায়দুল কাদের সাহেব ভাল ভাল কাজ করে সবার নজর কারছিলেন। কিন্তু ঠিক তখনই, অবশ্যই আমার দৃষ্টিতে, তিনি খারাপ কাজের উদাহারন সৃষ্টি করলেন। মানুষ নিজের ভুল নিজে দেখতে পারে না, তাই দেশের জন্য আমার এই লেখা।
দেশে প্রজাতন্ত্রীর কর্মচারীরা কাউরো গোলাম নয়। সে কাউরো ভাত খায় না, নয় কোন উপরের অফিসার কিংবা মন্ত্রীর। সে প্রজাতন্ত্রীর চাকরি করে। প্রজাতন্ত্রীর কর্মচারী হিসাবে তার কিছু প্রাপ্য সম্মান আছে। সে যদি প্রজাতন্ত্রীর কর্মচারী নাও হয়, তবুও তার আত্মসম্মানবোধ আছে। সে কোন অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দিতে হবে অবশ্যই তা সরকারের নিয়ম অনুষারে, নিজের খাম খেয়ালীর অনুষারে নয়।
নিজের খাম খেয়ালের অনুসরণ করলে কি উদাহারণ সৃষ্টি হবে তার একটি সাধারণ বর্ননা দেই, দুটি ঘটনার মধ্য দিয়ে।
[ঘটনা- I] ধরুন জনাব ক সাহেব একজন সৎ কর্মকর্তা। তার অধীনে কর্মচারী জনাব খ, দুই জনেই সৎ। কিন্তু ঘটনক্রমে সল্প সময়ের জন্য ক এর নিকট খ খারাপ মানুষ হিসাবে বিবেচিত হল। সেই সময় খ কে ক থাপ্পর মারলেন। তাহলে ব্যাপারটি কেমন হবে ?
[ঘটনা II] ধরুন ক একজন খারাপ কর্মকর্তা, খ একজন ভাল কর্মচারী। ক কোন কাজের নির্দেশ দিল, যে কাজ নিয়ম অনুষারে খ এর করার কথা নয়। কিন্তু ওই কাজ খ না করায়, ক খকে কষে একটা থাপ্পর দিলেন, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে ? কারণ ক ইচ্ছে করলেই তার অধীনস্ত তার কথা মানেনি এমন হাজারো অজুহাত এবং কুযুক্তি দার করিয়ে নিতে পারবেন। ক্ষমতাবানদের জন্য এটা সব সময় খুব কঠিন নয়। সাথে যদি মন্ত্রীর উদাহারন থাকে তাহলে তো কথাই নেই। একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম, নেপালের এক মন্ত্রী এক ডিসিকে গাড়ী আনতে দেড়ী করায় থাপ্পর মেরেছিল।
প্রথম আলোর খবরে জানা যায়, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়ার টাকা দাবি করার অপরাধে ট্রেনের কর্মচারীকে থাপড় মেরেছেন যোগাযোগ ও রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দুঃখজনক হল কমেন্ট সেকশনে অনেকেই তাদের সমর্থন জানিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ ব্যাপারটি গভীর ভাবে তলিয়ে দেখেননি। এই অনাধিকার চর্চাকরে যে খারাপ উদাহারন সৃষ্টি হবে তা কেউ ভাবেননি।
মন্ত্রী কর্মচারী যেন মালিক গোলামের সম্পর্কে, তাও বাংলাদেশের মত দেশে, যেদেশে মানুষ স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে যুদ্ধ করে। প্রকৃত পক্ষে দেশে কোন মানুষই কাউরো গোলাম নয়, এই কথাটি সাধারণ মানুষ না বুঝলেও মন্ত্রীদের অবশ্যই বুঝতে হবে। স্বাধীনতা কি তা বুঝতে হবে। সার্বভোমত্ব কি সেটাও বুঝতে হবে। কেউ দোষ করলে তাকে নিয়ম অনুষারে শাস্তি দিতে হবে, আইন অনুষারে শাস্তি দিতে হবে। নিজের বাপ দাদার খাস তালুক মনে করে শাস্তি দিলে, বরং অন্যায় হবে। অন্যায়টা দেশের সাথেও করা হবে। তাই মাননীয় ওবায়দুল কাদের সাহেব ভেবে দেখেছেন কি থাপ্পরটা আসলে কার গালে মেরেছেন। দেশেতো আর আইয়ুব খানের শাষন চলছে না, চলছে নির্বাচিত সরকারের শাষন।
আমার দৃষ্টিতে রেলকর্মচারী বেশী ভাড়া দ্বাবী করে যে অন্যায় করেছে, মাননীয় মন্ত্রীও তাকে থাপ্পর মেরে কম অন্যায় করেননি। তাহলে যে দুজনই অপরাধী হয়ে যান। সকল মানুষের মধ্যে সুবুদ্ধির আগমন ঘটুক।