somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পড়া লেখা করে যে, রাজার নীতি শিখে সে।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়া লেখা করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে।
ঐ উক্তিটা বা ছন্দটা লিখার সময় মানুষকে পড়া লেখা করে গাড়ি চড়ার লোভ দেখানো হয়েছে। আসলে প্রত্যেক মানুষই সুখ চায়। সেটা পড়া লেখা করে হোক আর দাপটের সাথে হোক আর চালবাজি করে হোক। সেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, কোন মানুষকে শিক্ষা দানের মূল উদ্দেশ্য থাকে, তাকে হয় কোন কর্মক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে, না হয় কোন প্রভাব বিস্তার কারীর প্রভাবকে আরো প্রভাবিত করতে, কোন শোষীত শ্রেণীকে আরো শোষনের জন্য শোষনকারীর শিক্ষা নিতে, অর্থা্ৎ আমার মতে পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীকে এক স্বার্থের লক্ষে পৌঁছে যেতে। চারপাশে খুজে পাইনা যে, কেউ একজন পড়ালেখা করেছে মানবতার জন্য, প্রকৃতির জন্য। শুধু ইতিহাস থেকে জানতে পারি, মনীষিগণ যুগে যুগে এসেছেন সমাজের জন্য, বিজ্ঞানের জন্য, মানবতার জন্য....

হযরত আদম (আঃ) বা এডাম পৃথিবীতে বিতারিত হয়ে এসেছিলেন ভূলের প্রায়শ্চিত্য করতে, তার পুত্র কাবিল থেকেই শুরু হয়ে যায় মারামারি, স্বার্থ নিয়ে হানাহানি। অনেক পরে একজন আসলো হযরত শীষ (আঃ) ভ্রান্ত মানুষগুলোকে মানবতার পথে ফিরিয়ে আনতে। পরে অনেক এসেছেন ভালো কাজের জন্য কিন্তু মন্দলোক এসেছেন বেশি প্রভাব/দাপট দেখাতে। তবে এটা সত্য পৃথিবীতে যত দাপুটে লোক এসেছেন, তাদের ইতিহাস খল নায়ক (ভিলেন) হিসেবেই বিবেচনা করেছে। কোন প্রতাপশালী হিংস্র মানব পৃথিবীতে বেশিদিন ঠিকতে পারে নি, এমনও হয়েছে কোন দাপুটের কাছে প্রতারিত, নিঘৃত, শোষিত, আসহায় থাকা লোকগুলোর কাছে তার সাথে তার বংশও বিলীন হয়েছে। আবার অনেক ভালো মানুষের পরিবার-পরিজন ধ্বংস হয়েছে নষ্ট লোকদের কাছে।

অর্থাৎ যুগে যুগে, অন্যায়-অবিচার চলেছে, আবার তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাথে আন্দোলন, যুদ্ধ চলেছে। তবে সব অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যেরই জয় হয়েছে। আবার সব অসত্য উদ্দেশ্যের আন্দোলন, প্রকৃতিগত ভাবেই হোক আর স্রষ্টার হুকুমে হোক কখনো সফল হয় নি। হবেও না।

আমি এখন ইংল্যান্ডে আছি। কিন্তু জাতিতে আমি বাংলাদেশী। আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশের আজকের অবস্থানে আসতে যুগের পর যুগ শাসন-শোষন, প্রভাব-অসহায়ত্ব অর্থাৎ সমাজের নিচু শ্রেণী থেকে রাষ্ট্রীয় শ্রেণী পর্যন্ত রাজনীতি হয়েছে। যেমন সেই আদিযুগে রামের সু-রাজনীতি, রাবনের দাপটনীতি, কৃঞ্চের সত্যের লড়াই, সে সময়ের কংস বা নরকাসুর বা ধৃতরাষ্ট্রের দুর্যোধন তাদের অসেত্যর লড়াই, এর মধ্যে উল্লেখ্ যোগ্য বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ, সম্রাট আশোকা, গোত্র হিসেবে যতটুকু মনে পড়ে হরাপ্পা সম্প্রদায়, মৌর্য সম্প্রদায়, গুপ্ত সম্প্রদায়, পাল সম্প্রদায়, মুসলমান কর্তৃক মোঘল আমল-সুলতানী আমল, বৃটিশ শাসন, পাকিস্থান শোষন পরে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই এর অভ্যন্তরে যেমন দেশ চলছে তেমনি সংঘাত লেগেই আছে। আমাদের এতই দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশ সৃষ্ঠির পরই এই দেশের জাতীয় পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ, তাহের, জিয়ায়ুর রহমান সহ অনেককে হারিয়ে ফেলি। এর মধ্যে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবি, দেশপ্রেমিক হারিয়ে যায়। সে তুলনায় নষ্ট লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

আমি জানি না, আজকের বাংলাদেশে কত ভাগ দেশ প্রেমিক আছে। আমিই বা কতটুকু দেশপ্রেমিক। আজকাল তো মনে হয়, প্রমিক মানেই শুধু কোন মেয়েকে ভুলিয়ে-ফুসলিয়ে ভোগ করতে পারলেই হলো, দেশের প্রতি প্রেমের কথা বললে কেউতো হাসে, এখানে আবার প্রেম আছে নাকি। সত্য বলতে কি আমি যখন ২০০৪ এর মার্চে দেশ ছেড়ে সাইপ্রাস যাই, গিয়ে দেখি এমন দেশে আসলাম, যেখানেই প্রত্যেকটা জিনিসই বাহির দেশ থেকে কিনে আনতে হয়, বলতে গেলে তাদের শুধু আছে- আলু, জলপাই, আপেল, আঙ্গুর, সুন্দুরী রমনীকুলের সাথে কৃত্রিমভাবে বাহির দেশ থেকে বালু কিনে এনে বানানো দু-চারটা সমুদ্র সৈকত। সাইপ্রাসের মাটিতে গম চাষও হতো, তবে মাটিতে মাটির তুলনায় পাথরের আধিক্য ছিল বেশি। তখনি বার বার মনে পড়তো বাংলাদেশের কথা। ছুটে এলাম দেশে ২০০৬ এর শেষের দিকে। তারপর কাজ করে জমানো টাকা নিয়ে এসে লোকদের খাওয়াতে-পড়াতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। উঠলাম এক মেসে, দেখলাম শিক্ষায় সবাই কা্র উপরে ফলাফল করবে, তাই নিয়ে ব্যস্ত। সবার টার্গেট 'যাই হোক ভাই, মার্ক আমার চাই'। সারা রাত কার্ড খেলে, সিনেমা দেখে, আড্ডা মেরে কোন সমস্যা হয় না, পরীক্ষার হলে নকলতো আছে। আর বাহিরে কাজ-কর্মে আছে কমিশন, মামারদের দৈারাত্ম। যার জন্য সব হারিয়ে শেষ সম্বল কম্পিউটারের অংশাবশেষ বিক্রী করতে করতে একদিন অতীষ্ট হয়ে ২০০৮ এর শেষের দিকে ইংল্যান্ডে চলে আসা।

এখানে এসে আবার দেখলাম, সবতো সিস্টেমে। সরকার নিচ্ছে জনগনের কাছ থেকে, আর জনগন নিচ্ছে সরকারের কাছ থেকে, সিস্টেমে। পিস্তল ঠেকিয়ে নিতে হয় না। অটোমেটিক চক্রাকারে সব চলছে। আমি বুঝে উঠতে পারলাম না, এই চক্রের ভেতরের পয়সাটা আসে কোত্থেকে? তবে বুঝতে পারলাম, বাংলাদেশের যা আছে, ইংল্যান্ডের তা নেই। বাংলাদেশ একটা স্বয়ং সম্পূর্ণ দেশ, আছে তেল-গ্যাস, খাবার, প্রকৃতি, জনবল। আর ইংল্যান্ডের আছে অনেক ঘাটতি, তাদের অনেক খাবার কিনে আনতে হয়, তেল-গ্যাস কিনে আনতে হয়, বস্ত্রও বাহির থেকে আনতে হয়, প্রকৃতিও অনুকুলে নয় এমন কি জনবলও বাহির থেকে আনতে হয়। ভাবলাম ইংল্যান্ডে যে শ্রম দিয়ে লাখ টাকা কামাবো, বাংলাদেশে নূনতম হলে অসুবিধা কি! দুই জায়গায়তো বাসস্থান, খাবার -এর দুই হিসাব। ফিরে গেলাম ২০১০ এর শেষের দিকে। এবার গিয়ে দেখি আরো অধঃপতন। চার বেড রুমের বাসায় উঠলাম, আমার এক রুম, এক রুমে থাকে সচিবালয়ে চাকরিরত এক বিসিএস ক্যাডার। সে রাত দুই/তিনটা পর্যন্ত কার্ড খেলে, আর বেনসন সিগারেট চার/পাঁচ প্যাকেট নিয়ে বসে, যারা তার সাথে খেলে তাদের সিগারেট ফ্রি। আর তো আছে গরুর মাংস ভুনা, অন্য কোন তরকারী থাকুক আর না থাকুক, গরুক মাংস ভুনা থাকতে হবে। আরো দুই রুমে থাকে উনার আশ-পাশের এলাকা উত্তরবঙ্গের আট-দশজন ছাত্র, আরো বেশি হতে পারে। আরতো লোকদের যাতায়াত আছেই। সবাই চাকরির নেশায় মত্ত, বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশ্বের ইতিহাস মুখস্ত নিয়ে ব্যস্ত। আর ঐ লোক আছে সবার সার্টিফিকেটের মার্ক দেখে কোন দপ্তরে কোন পজিশনে ঢুকানো যায়, সাথে লেন-দেনের হিসাব-নিকাশ। কিছুটা আশ্চর্য হলাম, লন্ডনে দেখে এলাম ছাত্র/ছাত্রীরা কি পড়বে, কোথায় পড়বে, কোন সাবজেক্টে পড়বে, কি চাকরি করবে প্রায় অনেকটাই স্কুল থেকেই নির্ধারিত হয়ে যায়। আর বাংলাদেশে যে লাইনেই (সাইন্স/কমার্স/আর্টস) পড়, চাকরির সময় সব সমান, কারণ টাকা বা মামা থাকলেই হবে। ইংল্যান্ডে আরো দেখলাম ছাত্র/ছাত্রীরা দেশ প্রেম নিয়ে অর্থাৎ ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত নিয়ে খুব ভাবে, সে বৃটিশ বাংলাদেশী হোক আর ইন্ডিয়ান বৃটিশ হোক আর অরিজিনাল বৃটিশ হোক। কিন্তু বাংলাদেশে বাপুরাম-সাপুরে, মুজিবুর রহমানের জীবনি, জিয়াউর রহমানের গুণগান, তারউপর ঠিক চিহ্নের দৌড়ে সবাই মার্কের পিছনে ছুটছে, আর ছাত্র/ছাত্রীদের আড্ডায় কোন চাকরিতে গেলে কত বেতন, সাথে কত উপরি কামানো যাবে। ইত্যাদি।

তারপর বাংলাদেশে দেখলাম, যুদ্ধাপরাধির বিচার, গণজাগরণ মঞ্চের উত্তান, মাওলানা শফি সাহেবের আন্দোলন। মাওলানা শফি সাহেবের আন্দোলনে মনে হলো, আমি ছাত্র জীবনে যা পড়েছি, যা শিখেছি, যা করছি সব অনৈসলামিক, শুধুমাত্র কওমি মাদ্রাসায় যারা পড়ছে, তারাই দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য সঠিক। উনার সংঘঠন হেফাজতের এক মিটিং-এর দিন দিনের বেলা ঢাকাতে আমার আম্মা, ফুপু, ভাই-বোন দের ডাক্তার দেখাতে বেরিয়েছিলাম, সাথে আমার স্ত্রী ও ছোট মেয়েটাকে নিয়েছিলাম, সংসদ ভবনের পাশের পয়েন্টে দাড়িয়ে দেখলাম লম্বা লাইনের মিছিল, মিছিলে প্রায় আশিভাগ মাদ্রাসার ছাত্র, তারমধ্যে অর্ধেক হবে পনের বৎসরের নীচে। কারো হাতে লাঠি, কারো হাতে পানির বোতল, কারো হাতে খাবারের প্যকেট। কেউ পানি খেয়ে বোতল ছুড়ে মারছে, বোতলটা পাশে দাড়ানো রিক্সায় পড়ছে, কখনো বা রিক্সা ড্রাইভারের উপরে, গাছের উপর পড়ছে, ফুটপাতে লোকের উপর পড়ছে। কেউ লাঠি দিয়ে রিক্সায় আঘাত করছে, রাস্তার পাশের গাছের ডালে আঘাত করে ডাল ভাঙছে, কেউ গাছের ডালের পাতায় ধরে টান মারছে।এত লম্বা লাইন যে, আমরা প্রায় আধা ঘন্টার উপরে দাড়িয়ে তাদের কান্ড-কারখানা দেখলাম। তারা হেটে হেটে চলে গেল। আমার মা-ফুপু খুবই ধার্মিক, তাদের ফরজ নামাজতো বাদ পড়ে না, সাথে যত পারেন নফল এবাদত করেন কিন্তু তাদের কর্মকান্ডে তারাও ভয় পেয়ে গেলো। আমি শুধু বললাম, এরাই আমাদের নামাজ পড়ায় আর এরাই তোমাদের জানাযা পড়াবে।

যাইহোক, মাদ্রাসার শিক্ষার কথা বাদই দিলাম। স্কুল-কলেজে ই কি হচ্ছে, তারও কোন ভরসা করতে পারলাম না। একবার শুটিং করার জন্য সিলেটের এমসি কলেজে গেলাম। বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পী সজল, মম, ফারুক আহমেদ, স্বাধীন খসরু সহ অনেকে। এমসি কলেজের হোস্টেলে শুটিং চলছে, নাটকের শুটিং-এ অডিও রেকর্ড করতে হয়। এমতাবস্থায় শুটিং চলাকালে আশ-পাশের লোকেরা কথা বলা শুরু করে দেয়। কয়েকবার বাঁধা দিলাম, অনেকে মানলো, দুজন ছেলে আরো চেঁচিয়ে উঠল যে আমরা কথা বলবো, আপনাদের সমস্যা হলে অন্য জায়গায় গিয়ে শুটিং করেন, বাঁধলো তর্ক, তারা চলেও গেল। কিছুক্ষণ পরে আসলো আট-দশজন ছেলে। তারা বলল তারা এমসি কলেজের ছাত্র, বর্তমান সরকারের স্বনামধন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, এখানে শুটিং করতে দিবে না। আমি বললাম আমিও এমসি কলেজের ছাত্র ছিলাম, আমাকে গালি গিয়ে উঠল। বলল, সে বর্তমানের নেতা। পুরাতনদের ভাত নাই। পরে আসলো বিশ-ত্রিশ জনের গ্রুপ। তারা আমাদের আক্রমণ করবে। পরে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত কমিশনার রুকন উদ্দীন সাহেবকে মোবাইল করলাম। উনি ফোর্স পাটিয়ে পাহারা দিয়ে শুটিং শেষ করালেন।

আসেন প্রাইভেট ইউনিভর্সিটির কথায়। সিলেটের এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে(বাগবাড়ির ওদিকে শামিমাবাদে পড়েছে) শুটিং করছি একটা ছেলে এসে নায়ক-নায়িকার ছবি তুলতেই আছে। শুটিং-এর শট শেষ হলেই ছবি তুলে, তাকে অনুরোধ করা হলো, এই সময় নায়ক-নায়িকা কাপড়-মেকআপ ঠিক করে, ছবি তুলতে হলে পরে আপনাকে সময় দেয়া হবে। কিন্তু সে তুলবেই, তাতে আমাদের একজন তার মোবাইল কেড়ে নিল, সে গালাগালি শুরু করলো, সে ছাত্রলীগ করে, এক্ষুণি অস্ত্র নিয়ে এসে এর শিক্ষা দিবে। আমরা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মেছবাহ উদ্দীস সিরাজ সাহেেবের ভাগিনার দ্বারস্ত হলাম, উনি আসলেন। বিষয়টা হেন্ডেল করলেন কিন্তু পরদিন বা এর পরদিন শুনলাম ঐ ছেলেটাই সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলাগুলি করতে গিয়ে মারা গেল। হায়রে ছাত্র রাজনীতি।

স্টুডেন্ট জীবনে আমরা পড়ালেখা, টিউশনি নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, সময় পেলে সিনেমা দেখতাম। আমাদের সময় দেখতাম, আমাদের চার/পাঁচ বছরের সিনিয়ররা ছাত্র সেজে ক্যাম্পাসে অাধিপত্য রাখতো। তাতে তারা চাঁদাবাজি করতে পারতো, জায়গা-জমি দখল করতে পারতো। এমনি এক গ্রুপ ছিল জামান গ্রুপ, সাবেক ছাত্রদলের গ্রুপ, তাদের এক সদস্য ভাইয়ের এক বাসা ছিল টিলাগড়ে, ওখান থেকে তারা মিটিং করতো, কোথায় কি করবে। আমরা দেখতাম তাদের কোন কমীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাসায় আসতে। জায়গা দখল করতে গিয়ে গুলি খেয়েছে। তখন দেখলাম আমার অনেক ক্লাশমেট অস্ত্র-পাওয়ার, পজিশন দেখে রাজনীতিতে ঢুকে পড়তে। তাদের চোখে দেখতাম, কলেজে পড়ার পাশাপাশি রাজনীতি করলে, নেতা হওয়া যাবে। টাকা কামানো যাবে, চেয়ারম্যান, মেয়র, এমপি, মন্ত্রী হতে পারবে, যার জন্য কোন মতেই পাশ করলেই হলো। সে সময় এক নকলের নাম ছিল ডেক্স নকল। দেখতাম ডিগ্রীর ছাত্ররা আগেরদিন সন্ধ্যায় তাদের সিটে ঘষা-মাজা করে লিখে আসতো। সাত-আটটা প্রশ্ন লিখলেই চার/পাঁচটা কমন পড়ে যেত। আর ওরাই এখন দেশের বেশির ভাগ স্থানে লিডিং দিচ্ছে।

যাই হোক। অনেক ঝামেলায় পড়ে আবার লন্ডন আসতে হলো। দেখলাম, মাওলানা শফি, ইসালামী আন্দোলনের নামে মাদ্রাসার ছাত্রদের বেহেশতে যেতে হলে ইসলামরে আইন লাগবে বলে আন্দোলন করেও আল্লাহর অনুমতি পেলেন না। তিনি পরে চাইলেন গার্মেন্ট খাতে পর্দা ঢুুকিয়ে দিতে, যার জন্য নারিদের নিয়ে নোংরা উক্তিও করলেন (যা লিখা ঠিক নয়), পরে শোনা যায় উনার ছেলে রাজনীতি থেকে অনেক কামিয়ে চট্রগ্রামে মোটামুটি কয়েক পুরুষের সম্পত্তি করে ফেলেছে, তাইলে আর ইসলামী আইন লাগবে না। উনার সন্তানরা দুনিয়ায় সুখ করতে পারলেই হলো, আরেখাতে একটু জ্বললেও বেহেশতেতো একদিন যাবেই, কারণ কলিমাতো বিশ্বাস করে।

খালেদা জিয়াতো বহু আন্দোলন করলেন। বিছমিল্লাহ বলতে বলতে এখন ড্রিংক খাবার সময়ও বিছমিল্লাহ বলে শুরু করেন। একটা নিউজে ছবিও দেখলাম, ড্রিংক হাতে। আরেকটা ছবি দেখলাম ফালু সাহেবকে নিয়ে হ্জ্ব করছেন, ফালু সাহেবকে নিয়ে সিঙ্গাপুর/মালয়েশিয়াতে গোপনে শপিং করছেন। তিনির স্বামীর গড়া ছাত্রদল অস্ত্র পাচ্ছে না বলে কিছুই করতে পারছে না।

আর শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ, সব অস্ত্রের কন্ট্রাক্ট নিয়ে রেখেছেন। আগে ছাত্র শিবির যে অস্ত্র রামদা-ছুরি-কুড়াল ব্যবহার করতো, তারও কন্ট্রাক্ট তিনি ছাত্রলীগকে দিয়ে রেখেছেন।

আর ছাত্র শিবির বড় সমস্যায় আছে। অনেক কর্মী নিয়েছিল, যার জন্য অনেক মোটর সাইকেল দিতে হয়েছিল, ইসলামী ব্যংক থেকে অনেক ঋণ ও দিতে হয়েছিল। আমার চোখের সামনে দেখেছি, যে ছেলে স্কুলে স্যান্ডেল পড়ে আসতো, শিশিরের মিটিং-এ সেন্ডেল পড়ে যেতো, সেও আজ কয়েক লাখপতি, কোটিপতিও হতে পারে। দল সরকারের যাক আর না যাক, আখেরাতের সাথে নিজেও কোটিপতি হতে পারবেন।

যে লেখা লেখতে গিয়ে অনেক লেখা। বর্তমানের শিক্ষকদের প্রায় নব্বই ভাই হবেন, বিভিন্ন রাজনীতি করে পড়ালেখা করেছেন। যার প্রভাব আমরা প্রত্যেকটা স্কুল/মাদ্রাসা/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পাচ্ছি। এমনও দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকার দলের শিক্ষক নেতা হঠাৎ কোন আন্দোলনের ডাক দিয়ে দিলেন, দাবি আদায় হোক আর না হোক, মিডিয়ায়তো পরিচিতি পাওয়া যাচ্ছে। আর ছাত্র/ছাত্রী কয়েদিনের ছুটি পেল, যত কম পড়বে তত ব্রেইন ভালো থাকবে, উপরি ভালো কামানোর কৌশল নিয়ে ভাবতে পারবে। এখন হচ্ছে বেতন কাঠামো নিয়ে আন্দোলন। সেদিন দেখলাম এক শিক্ষক নেতা বলছেন, বেতন বাড়ানোর আগে কেন তাদের পরামর্শ নেয়া হলো না। আসলে বর্তমান সরকার মনে হয় বোকা সরকার, ঐ শিক্ষকদের চাহিদা কি বুঝতে পারে না।

সব শেষে। ১১.০১.২০১৬ তারিখ দিবাগত রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায় মাসউদ আহমদ নিহত প্রসঙ্গে। দাবি উঠেছে, বর্তমান সরকারের স্বনাম ধন্য ছাত্রলীগ হামলা করে এই ঘটনা গঠিয়েছে। প্রশ্ন হলো, ছাত্রলীগ কি জানে না, বর্তমান বিশ্বে মাদ্রাসা, হুজুর, মাদ্রাসা ছাত্র- এরা তুমুল ফর্মে আছে! যাই হোক, এই মাদ্রাসার এক ছাত্র একটা দোকানে গিয়ে কথা কাটাকাটি করে এসেছে। শান্তির ধর্ম ইসলামের ভবিষ্যৎ দাবিদার, যে হয়তো নামাজ পড়াবে, খুৎবা পড়াবে, জানাযা পড়াবে, সে একটা দোকানে গিয়ে ঝগড়া করে আসলো। হয়তো শান্তিমতো সহ্য করে আসতে পারে নি, কারণ মার খেয়ে যে আরেকটা মার খাবার যুক্তি হিন্দু মহাত্মা গান্ধি দেখিয়েছেন, তাই এই শান্তি আমরা বর্তমান মুসলমানরা পালন করতে বাঁধা আছে, শান্তির কথা হিন্দু মহাত্মা বলে গিয়েছেন। আমরা ভুলে গিয়েছে, হযরত মুহাম্মদা (সাঃ)-এর কথা বাদ ই দিলাম, আমাদের দেশের হযরত শাহজালাল (রঃ) অহিঞ্চু আন্দোলন শুরু করে গিয়েছিলেন, দিল্লী সালতানাত কর্তৃক গভর্নর ক্ষমতা দেবার পরও ক্ষমাতারোহন করেন নি, উনি মানব সেবাটাই বেঁচে নিয়েছিলেন। যাই হোক, মাদ্রাসার ছাত্রটি ঝগড়া করে মাদ্রাসার ফিরে আসলো, জানি না শিক্ষক জেনেছেন কি না! সাথে তার অনেক সহপাটি নিয়ে ঐ দোকানে আক্রমণ করতে গেল, যাতে তারাই দেশের কর্ণদার। তারা যা করবে, তা সঠিক, বাকি সব অনৈসলামিক। সেখানে জড়িয়ে পড়ল রনি নামের এক ছাত্রলীগ। মাঝে থেকে রণি ছেলেটা কয়েয়টা থাপ্পড় খেল। হায়রে অপমান, তাও ছাত্রলীগ কর্মীকে। যার ফল রনিরা এসে মাদ্রাসা আক্রমণ করলো। অন্যদিক থেকে মাদ্রসা ছাত্ররা আক্রমণ করলো। আর বাকি রইল কারা, সাধারণ জনগণ যারা সব চেয়ে বেশি পন্ডিত। বাংলাদেশের সাধারণ জনগনের মত পন্ডিত জনগন আমি আট/দশটা দেশ ঘুরেছি, এই রকম পন্ডিত দেখিনি। মাদ্রসার মাইকে থেকে ইসলামের রক্ষক মাদ্রাসার উপর হামলা হয়েছে শোনেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। এবার শহীদ হবার পালা, শীত কালে দৌড়াদৌড়ি করে গা গরম করার পালা, সেই সুযোগ করে দিল পুলিশ। তাদের দৌড়ালো। কয়েকদিনের জন্য চায়ের টেবিলের টপিকসও মিলে গেল। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে বহির্বিশ্বও দেখে নিল মাদ্রাসা ছাত্ররা কত উগ্র লাঠি নিয়ে এখনো রাস্তায় বেরুয়। তাই, তাদের দুচারটা না মারলে, গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

আমার প্রশ্ন-
১। মাদ্রসা শিক্ষায় ইসলামের মানবতা নামে কোন পুস্তক পড়ানো যায় না।
২। আন্দোলন করতে হলে, রাস্তায় বেরিয়ে গাড়ি আটকিয়ে সাধারণ যাত্রীদের/ অনেক সময় রোগীদের আটকিয়ে বেহেশতের পথে কি দু পা আগে যাওয়া যায়।
৩। জিহাদ করতে হলে রাস্তায় রিক্সা ভেঙ্গে কেন। রনির অন্যায়ের জন্য শেখ হাসিনাকে গালাগালি কেন। রনিকে খুজে পাওয়া যায় না, তার বাড়ি ঘর নাই। ঐ বাড়ির উঠোনে গিয়ে শোয়ে পড়। ওর বাড়ি ঘেরাও করে রাখো, একদিনতো বাড়ি আসবে। তারপর ওর শাস্তি ওরে দাও। তখন আর কেউ এমন করবে না।
৪। অনেক পয়েন্ট না লিখে বলি, মাদ্রাসার প্রত্যেক শিক্ষকের বিবরণ লিখে রাখতে হবে। যার ছাত্র উগ্র আচরণ করবে, ঐ শিক্ষককে শাস্তি দিতে হবে, কারণ ঐ শিক্ষকেরই শিক্ষার কমতি আছে।

ধন্যবাদ। বিরক্ত করার জন্য। আর আমি বসে আছি শহীদ হবার জন্য, আমার জন্য দোয়া কামনা করি। কাদের মোল্লা, কামরুজ্জাম, সালাউদ্দীন কাদের মানুষ মেরে, নারী লাঞ্ছনা করেও ফাঁসি প্রাপ্ত হয়ে যদি শহীদ হতে পারে, আমিও বার বার দেশের জন্য কিছু করতে যেয়ে বার বার ধরা খেয়ে নিরবে চলে যাবো কেন, একটু দুঃখ ভাগ করেই মরি।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:১৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×