গত ১৩/০১/২০১৬ তারিখে বাংলাদেশের বরিশাল শহরে এক ভিখারী মারা যাবার পরে তার ঘরের মালামাল সরাতে গেলে পাওয়া যায় ৭ বস্তায় ৯৭০০০ টাকা, ১০১ টি শাড়ি, ২০০টি লাক্স সাবান....। আফসোস ঐ মহিলার জন্য তিনি ভোগ করে যেতে পারলেন না, এর চেয়ে বড় আফসোস ভাগ বাটোরায় দেয়ার জন্য। পত্রিকা মারফতে জানতে পারলাম, ওখানকার হিসাব-নিকাশের পর সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ঐ টাকা থেকে বিশ হাজার টাকা এক স্থানীয় মসজিদকে মাইক ক্রয়ের জন্য দেয়া হয়েছে, যারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণনা করছে তাদের ৭ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে, ভিখারী ভদ্রমহিলা যে ঘরে ভাড়া থাকতেন তার ভাড়া বাবদ তিন হাজার টাকা নিয়েছেন, এক হাজার টাকা অন্য এক মসজিদে আর বাকি টাকা ভিখারী মহিলা আলেয়া বেগমের দুই ভাইকে হস্তগত করা হয়েছে। যাক, ভাই-বোনের সম্পর্কটা আজকে কাজে লাগলো, বোনের ভরণ-পোষন করতে না পারলেও যাবার সময় কয়টা টাকা ভাইদের দিয়ে গেলেন, ন্যূনতম ধর্মীয় জ্ঞান থাকলে একটুও না হয় দোয়া দরূদ পড়বে। তবে আমার মতে আগে ঐ ভাইদের একটা শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল, তারা কেন বোনকে ভিখারীর রাস্তায় দেখেও তার ভরণ-পোষণ করলো না, অথচ রক্তের সম্পর্ক দেখিয়ে প্রায় সত্তর হাজার টাকা নিয়ে গেল। বাড়ি ওয়ালাও কেয়মতের ময়দানে আর দাবি করতে পারবে ন, তারও হিসাব পেয়ে গেলো। আর কোন পাওনাদারের দাবিদারও মিলল না, তাই বলতে পারি মহিলা খেটে-খুটে খেলেও কারো কাছ থেকে ঋণ করেননি বা কারো কোন হক মারেন নি। দোয়া করি এই মহিলার সততার জন্য।
আলেয়া বেগম জীবদ্দসায় কোন খরচ না করে টাকা জমিয়েছেন, এমন কি হয়তো খাবার দাবারেও কোনদিন দুই টাকার উপরে খরচ করেছেন কি না সন্দেহ আছে। মানুষের বাড়িতে খেয়েছেন, যে বাসায় থেকেছেন ওখানকার ভাড়াও দেন নাই। সে যাই হোক, মিথ্যা বলে হোক আর কৃপণতা করে হোক টাকা জমিয়েছেন, এই টাকা থেকে ধর্মীয় কাজেও ব্যয় হচ্ছে। আমার জানামতে ইংল্যান্ডে মধ্যে বসবাসরত অনেক বয়স্ক মহিলা আছেন এভাবে সরকার থেকে পাওয়া টাকা জমান, ভোগ করার সময়ও পান না, কেউ জানতে পারে না, ঐ টাকা কোন ধর্মীয় কাজে ব্যবহারও হয় না, যার কাছে ঐ বাড়াল থাকে সেই একা ভোগ করে। কারণ জানাজানির সুযোগ থাকে না। কথাটা বললাম এজন্য, এখানকার অনেকে নাক ছিটকাচ্ছেন, ঐ মহিলাকে ভিখারী বলে কটাক্ষও করছেন, কৃপণ, শরীরকে কষ্ট দিয়ে মরলো ইত্যাদি। আমি অবশ্য যুক্তি দিলাম, সঞ্চয় সবাই করে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশি, আর ঐ মহিলা ভিক্ষা করে জনগণের কাছ থেকে নিয়ে জমিয়েছেন কিন্তু এই ইংল্যান্ডে অনেকে লেবার নেয়, বেনিফিট নেয় কার কাছ থেকে। কেন নেয়, যে তথ্যগুলো দিয়ে নেয় তার মধ্যে কতটা সততা আছে, এও বললাম নিজের বউকে খাওয়াচ্ছেন, হয়তো ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে দামী দামী গহনাও কিনে দিচ্ছেন, তারপরও লেবার বা বেনিফিট ঠিকই নিচ্ছেন, তাও অমুসলিম সরকারের কাছ থেকে। যাইহোক, মুখ দোষে আমি সর্বদাই দোষী। তাদের কাছেও দোষী হয়ে গেলাম।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটা কথাও বলতে হয়, আলেয়া বেগমের টাকা পাবার খবর শোনার পর মনে পড়ে গেল ফখরুদ্দিন ও মঈনউদ্দীনের সময়ের কথা। এভাবেই অনেকের কাছে টাকা মিলেছিল, কারো বালিশের ভেতর, কারো তোষকের ভেতর, কারো জুতার ভেতর, কারো কমেডের ভেতর.... তারাও টাকা জমিয়েছিল। তবে তাদের টাকার মালিক হয়ে যায় বাংলাদেশ সরকার, কারণ দেশের টাকা তারা জালিয়াতী করে, দুর্নীতি করে জমিয়েছিল। ভদ্র মহিলার মতো খেটে কুটে নয়।