somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১০০ কিংবা ১০০০ লাশের বিনিময়ে হলেও নিরাপদ থাকুক বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠিক এই মুহূর্তে যেখানে চরম বিপজ্জনক অবস্থা, জারি আছে ১৪৪ ধারা- পার্বত্য চট্টগ্রামের সেই বাঘাইহাট আমার চেনা, অগ্নিগর্ভ গঙ্গারামমুখ ধরে হেঁটেছি একদা, মাচালং বাজারে গাছপাকা কলার স্বাদ এখনো মুখে, সেই একই জায়গায় আবার উপজাতীয় দোকানির (পরে জেনেছি ইউপিডিএফের চর) আকস্মিক প্রশ্নবাণেও পড়েছি। পার্বত্য রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে গত কয়েকদিনের ঘটনা নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন, অনেক জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। ঘটনার জন্য কে বা কারা দায়ী- সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার আমি কেউ নই, সেই চেষ্টাও করছি না। হয়তো পাহাড়িরা দায়ী, হয়তো বাঙালিরাই। কিন্তু প্রায় সঙ্গোপনে পার্বত্য চট্টগ্রামে অভাবনীয় একটি ঘটনা ঘটে গেছে। যে জনসংহতি সমিতি প্রতিপক্ষ সংগঠন ইউপিডিএফের ছায়া মাড়াতে নারাজ, উল্টো সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে সদা সোচ্চার, মাত্র কদিন আগেও যে ইউপিডিএফ সন্তু লারমার গাড়ির ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে, সেই জনসংহতি এবং সন্তু লারমাই এখন ইউপিডিএফের 'খুড়তুতো ভাই' হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একযোগে তারা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে অবরোধ পালন করছে। কারণটা কী? শুধু কি প্রতিবাদই তাদের শামিল করেছে এককাতারে?

বাঘাইছড়ি ঘটনার নেপথ্যে আসলে কী?
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একেবারে লাগোয়া বাঘাইছড়ি এলাকাটি নানা কারণে নানা দিক থেকে, এমনকি ভৌগোলিক নিরাপত্তার দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আমি নিজে দেখেছি, বিশেষ করে সাজেকের দিকে সীমান্ত প্রকৃত অর্থেই খোলা, মিজোরাম থেকে যেমন অবাধে লোক ঢোকে, তেমনি বাংলাদেশের ভেতর থেকেও মিজোরামে যাওয়া-আসা চলে। পাহাড়িদের সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফের প্রতাপ এবং অঞ্চলটি দুর্গম হওয়ায় সেখানে সেনা তো দূরের কথা, বিডিআরেরও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে কার্যত ক্ষুদ্র ও ভারী অস্ত্র এবং মাদক পাচারের জন্য এর চেয়ে ভালো প্রবেশদ্বার, আমার জানামতে, দেশে হাতেগোনা। পাহাড়ের বাঙালিরা জাতিগতভাবে 'ছোট লোক' এবং ভয়ানক প্রতিহিংসাপরায়ণ হলেও অস্ত্র কিংবা মাদক পাচারের সঙ্গে পাহাড়িরা, বিশেষ করে ইউপিডিএফই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এমন এক বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে শক্তি বলতে বাঘাইছড়ি সেনা জোন এবং মারিশ্যায় বিডিআরের হেডকোয়ার্টারই সম্বল। তবে বিডিআর সেভাবে নয়, বিডিআরকে উপজাতীয়রা সেভাবে আমলেও নেয় না, মূলত সেনাবাহিনীই তাদের পথের একমাত্র কাঁটা, অনেকদিন ধরে। এখন পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করবেন, বাঘাইছড়ির ঘটনার পর প্রতিটি পাহাড়ি সংগঠনেরই মূল দাবি হচ্ছে বাঘাইহাট সেনা জোন প্রত্যাহার করে নেওয়া। সেনাবাহিনী কোথায় থাকবে কিংবা না থাকবে- সেটা একান্তই জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়। পাহাড়িদের কোনো সংগঠন কোনো অবস্থাতেই সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে না। পাহাড়িদের পক্ষ থেকে বারবার ভূমি বিরোধের কথা বলা হচ্ছে, অথচ বাঘাইছড়ির মূল কেন্দ্রে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় বাঙালি বসতি থাকলেও বাকি বিশাল অংশে বাঙালি নেই বললেই চলে, অন্তত আমার চোখে পড়েনি। যেখানে বাঙালি বসতি নেই, সেখানে ভূমি নিয়ে বিরোধই বা কোত্থেকে আসে?

পাহাড়িরা কি আমাদের বন্ধু?
আমি বলবো, পাহাড়িরা আমাদের বন্ধু, তবে বিশ্বস্ত বন্ধু নয়। বরং এই জনসংহতি, এই ইউপিডিএফ, এই উপজাতীয়রা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য কয়েক দশক ধরে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্য এমন কোনো উপায় নেই, যা তারা অবলম্বন করেনি। এখনও তারা সেই কাজই করে চলেছে। এমনকি একাত্তরেও এই উপজাতীয়রা পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ হয়েই বাঙালির বিরুদ্ধে লড়েছে। এরা কিভাবে আমাদের বন্ধু হয়?

যে জাতি সান্ত্বনা পায় নিজেদেরই তুচ্ছ করে
বাঘাইছড়ির সহিংসতার সূত্রপাত যে ঘটনা নিয়ে, সেনাবাহিনীর সদস্যকে দায়ের কোপে গুরুতর আহত করা, সেটা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। সেই সেনাসদস্য এখনও জখম গায়ে নিয়ে হাসপাতালে। তার জন্য আমাদের কোনো সমবেদনা নেই। বরং দেখেছি, আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক যে সেনাবাহিনী, তাকে ছোট করা হলে, বাইরের কেউ নয়, খোদ বাংলাদেশীদের অনেকেই আত্মতৃপ্তি পায়, নিজেদের প্রগতিশীলতা জাহির করে একধরনের বিকৃত আনন্দ লাভ করে। এবং সম্ভবত বাঙালিই একমাত্র জাতি, যারা নিজেদের সেনাবাহিনীকে তুচ্ছ প্রতিপন্ন করার জন্য, হেয় করার জন্য নিজের স্ত্রীকে বেচে দিতে পিছপা হয় না। আর আমাদের স্বভাবই তো এই যে, আকাশপথে ১২ হাজার মাইল দূরের মানুষের জন্য আমরা উৎকন্ঠিত হই, অশ্রু ফেলি, কিন্তু ঘরের দিকে ফিরেও তাকাই না একনজর।

প্রতিটি ইঞ্চিই আমার দেশ
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি ইঞ্চি আমার দেশ। দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রশ্নে পশ্চিমা পাল্লায় মাপা মানবাধিকার তুচ্ছ, 'আদিবাসী' 'আদিবাসী' বিলাপ নস্যি, ১০০ কিংবা ১০০০ লাশের বিনিময়ে হলেও চাই যে দেশের প্রতিটি ইঞ্চি নিরাপদ থাকুক, নির্বিঘ্ন থাকুক।

সংযুক্তি
যেভাবে জ্বলেছে বাঘাইহাট

ছবিতে বাঘাইছড়ির বিশাল একটি অংশ, যেখানে প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ৩:৩৪
৮৪টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×