somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে সাবধান!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেস স্টাডি- ১
মাহফুজ সাহেব ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে অফিস- গাড়ি- বাসা এই ধারাবাহিকতায়।

রাতে বাসায় ফিরে প্রচণ্ড শীত অনুভব করলেন তিনি। বুঝতে পারেন জ্বর চলে এসেছে তার। পরদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে অফিসে। সে চিন্তা করে জ্বর যেন আরও বেড়ে গেল। পরিচিত ডাক্তারকে জানালেন শরীরের অবস্থা। ডাক্তার প্যারাসিটামল খেতে বললেন। অন্য কোনো ট্রিটমেন্টের আগে আরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বললেন।

মাহফুজ সাহেব ডাক্তারকে দ্রুত জ্বর তাড়ানোর ওষুধ দিতে অনুরোধ করলেন, যাতে পরদিনের কাজটি করতে পারেন। তার জোরাজুরিতে ডাক্তার তাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করলেন।

এতে তার জ্বর কমে গেছে। কিন্তু পরদিন অফিসে গিয়ে শরীরে দুর্বলতা অনুভব করতে থাকলেন।

এক সপ্তাহ পর আবার জ্বর এলো মাহফুজ সাহেবের। এবার ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়েই মাহফুজ সাহেব অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলেন। জ্বর কমে গেলে শরীরের দুর্বলতা আরো বেড়ে গেল তার।

ওই মাসে আবারো জ্বর এলো তার। তিনি আবার অ্যান্টিবায়োটিক খেলেন। কিন্তু জ্বর কমলো না। ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। ডাক্তার সব শুনে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন। এতে তার জ্বর কমলো বটে, কিন্তু প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গেলেন। ১০/১২ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে থাকলেন। অফিসে যেতে পারেন না সঠিক সময়ে। ক্রমে অফিসের কাছে আস্থা হারাতে থাকলেন মাহফুজ সাহেব।

কেস স্টাডি- ২
শফিক মিয়া ইট ভাটার শ্রমিক। প্রতিদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তিনি। কাজের মাঝে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর চলে আসে তার।

সংসারে ৪ জন লোক। শফিক মিয়া একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অসুস্থতা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না তার। পরদিন অর্থের প্রয়োজনে আবারো যেতে হবে ইট ভাটায়।

পাশের বাজারের পল্লী চিকিৎসক নুরুল আমীনের কাছে গেলেন তিনি। তার কাছেই শফিক মিয়া নিয়মিত চিকিৎসা করান। নুরুল আমীন তাকে সেবন করার জন্য উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন। বিনিময়ে প্রতিটা ট্যাবলেটের জন্য নিলেন ৩০ টাকা করে।

পরদিন শফিক মিয়ার জ্বর নেই, মাথা ব্যাথাও চলে গেছে। আবারো গেলেন ইটভাটার কাজে। কিন্তু বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলেন না তিনি। শরীরটা যেন ভেঙে পড়ছে তার। দুর্বল শরীর নিয়ে চলে এলেন বাসায়।

পরের দিন সকালে আবারো অসুস্থ হলেন তিনি। ডাক্তারের কাছ থেকে আবারো অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে সেবন করানো হলো তাকে। দুর্বল শরীর আরও দুর্বল হয়ে গেল। সেই সঙ্গে শুরু হলো ডায়রিয়া। তার অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।

এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে আসুন জেনে নেই অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে..

অ্যান্টিবায়োটিক কি?
অ্যান্টিবায়োটিক একধরনের বিষ। এটি কম মাত্রার একটি বিষ যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়। তবে বেশি মাত্রার বিষ যে কাউকে মারতে পারে এটাই স্বাভাবিক।

তাই, স্বীকৃত চিকিৎসক অথবা লাইসেন্সধারী ফার্মাসিস্টরাই কেবল রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।

অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের মধ্যে ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটায়
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের অন্ত্রে ৩/৪ পাউন্ড ব্যাকটেরিয়া এবং ইস্ট থাকতে পারে। এসব জীবাণু শরীর থেকে খাদ্যপ্রাণ নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করে। এখানে ব্যাকটেরিয়া অধিক শক্তিশালী হওয়ায় তাদের বাধায় শরীরে সর্বদা কম পরিমাণ ছত্রাক (ইস্ট) থাকে। আর তারা এখানে ভিটামিন ‘বি’ তৈরি করে।

যখনই আপনি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন, আপনার অন্ত্রে বসবাসরত উপকারি ছোট প্রাণীগুলোকে ধ্বংস করলেন। তখন, ইস্ট বাড়তে থাকে অনিয়ন্ত্রিত হারে।

ইস্ট সুযোগের সদব্যবহার করা একটি অনুজীব। এর অর্থ হলো- যখনই ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, ইস্ট দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিশেষ করে যখন তাদের খাবারের চাহিদা মিটে যায়, তখন তারা টেনড্রিল এবং হাইপির মাধ্যমে অন্ত্রে ফুটো তৈরি করে। এতে ‘লিকি গাট’ রোগ সৃষ্টি হয়।

মোটা হয়ে যেতে পারেন খুব দ্রুত
পরজীবী এ ইস্টগুলো আপনার খাদ্যের অভ্যাস পরিবর্তন করে দেবে। এতে আপনি বেশিবেশি শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু খেতে উৎসাহিত বোধ করবেন। আর এ খাদ্যাভ্যাস আপনাকে মোটা বনিয়ে দেবে খুব দ্রুত।

একটি উদাহরণ দিলে সহজে বোঝা যাবে- টনকে টন অ্যান্টিবায়োটিক আমেরিকার গৃহপালিত পশুদের খাওয়ানো হয় প্রতিদিন, ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রেখে দ্রুত মোটাতাজা করার জন্য। কিন্তু এই অভ্যাস মানুষের ওজন বৃদ্ধি ঘটায় আর বোনাস হিসেবে সৃষ্টি করে বিভিন্ন রোগের স্থায়িত্ব।

অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়
অ্যান্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়। তাই সর্দি- জ্বরের মতো রোগে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বোকামী (জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র)। যদিও আমাদের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব রোগে অহরহ অ্যান্টিবায়োটিকের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো- উপর্যুপুরি ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া এদের প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। সাধারণত এ ঘটনা ঘটে- ডোজ পূরণ না করে মাঝপথে সেবন বাদ দিয়ে দিলে। যদিও রোগী মনে করে তার অসুখ সেরে গেছে। এছাড়া, নিজের ইচ্ছেমতো ও অপরিকল্পিত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, রোগ যাচাই না করে সেবন এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

এতে শরীরের মধ্যে অক্ষত বাকি ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজেদের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে অধিক মাত্রায় প্রতিরোধী ও আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠে। যার ফলে ওই ব্যক্তিসহ তার আশপাশের সবাই আরো কঠিনভাবে ওইসব রোগে আক্রান্ত হতে পারেন খুব দ্রুত।

আর এভাবেই অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়ার যুদ্ধ চলতে থাকে। তাই, দুই একবার নিরুপায় হয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

লেখক: মনিরুজ্জামান, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×