বসন্তের মেঘ মাঠ-ঘাট সবুজ অরণ্য হয়ে দূরে উড়ে যাচ্ছিল। ঘনো হয়ে ওঠা দিনের আলো ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছিল। শেষ বিকেলের আধমরা আলোর দিকে পশ্চিমমুখী তাকিয়ে আছে বৃদ্ধা রমনী। সেই কবে, পঁয়ত্রিশ বছর আগে এমন এক বসন্ত দিনে তার প্রাণপ্রিয় স্বামী ভালোবেসে অধর চুমেছিল।
আমরা যখন দিয়াতলী দুধমেহের বিবির বাড়ি পৌঁছলাম তখন শেষবিকেল। পশ্চিমের জড়ো হওয়া সাদা মেঘ রক্তাভা রং ধারণ করেছে। দুধমেহের বিবি তার ডেরার পাশে চুপকরে বসে আছেন আনমনে। তিনি জীবনের কঠিণ পরাজয়ে আহত হয়ে যন্ত্রণা যাপন করছেন সেই কবে থেকে। পঁয়ত্রিশ বছর আগে গত হয়েছে প্রাণপ্রিয় স্বামী।বিয়ে হয়েছিল ব্যাংকার বরের সাথে। অফিস থেকে ফেরার পথে দৈত্যের মতো জম এসে কেড়ে নিল তাজা প্রাণ। সেই থেকে নিস্তব্ধ নিরালার ভিষণ বিরহের জীবন তার। আশ্রয় পেয়েছে ভাইয়ের ভিটায়। সেই ভাইও পরাপারে চলে গেছেন বছর কয়েক আগে। এখন এ বাড়ির এক চিলতে উঠানের এককোণে সকাল গড়িয়ে রাত হয় তার।
ঘরের ভেতরে চেয়ে দেখি ভাঙাচৌকি, গলাভাঙা মাটির সানকি, দলানো কাপড়, পুরনো ছেঁড়া কাঁথা ইত্যাদি স্যাঁতস্যাঁতে ঘরের এককোণে জমা করে রেখেছে। বরের কথা জিজ্ঞেস করতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। চাহনি দেখে যথেষ্ঠ সম্ভ্রান্ত মনে হল। সুঠাম দেহের তরাঙ্গায়িত যৌবনের প্রচ্ছায়া দেখে ভুল হয়না; এককালে কত সুন্দরী ছিলেন তিনি।
তার চোখ আমার সাথে কথা বলতে শুরু করল। কোনো এক সময় তার জীবনেও পরম সুখ ছিল, বলিষ্ঠ প্রিয় পুরুষ তাকে ভালোবেসে বুকে জড়িয়েছিল, কত যুবক তার চারপাশে ঘুরত সামান্য ইচ্ছেটি পুরণ করতে। প্রিয়জন হারিয়ে সেসব কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে এখন।
আমি বিশ্বাস করি, আমৃত্যু তিনি স্বামীর স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকবেন। দুধমেহের বিবির প্রেমকে আজন্ম স্যালুট জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭