somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)
আহমেদ জী এস ।।
এক / (দ্বিতীয় অংশ )
(পূর্ব প্রকাশনার পর )

বাসের সামনের সীটগুলোতে শীলার বয়েসী কিম্বা আরো কম বয়সের মেয়েরা বসে আছে । আমার শীলার কথা মনে হলো । এদের কারো সাথেই ওর মিল নেই । শীলার মতো বুদ্ধিমতি মেয়েও সম্ভবতঃ এদের মধ্যে নেই । কী তার অনুভব, পান্ডিত্যের কী গভীরতা তার । এদের কারো সাথে মনে হয় মিলবেনা । আমি অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম একদিন – আচ্ছা , তুমি কে বলোতো ! তোমার এই ত্রিশ না পেরুনো বয়সে এতো কিছু তুমি জানলে কি করে একজন বঙ্গললনা হয়ে ?
আর একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার সারাটি দিন কি করে কাটে ।

পেছন থেকে কে এক পুরুষকন্ঠ বললেন, এই যে জানালাটা বন্ধ করুন, দেখছেন না বৃষ্টির ছাট আসছে । রাগ হলেও রাগতে পারা গেলনা । এটা পাবলিক বাস । আমার একার ইচ্ছেটা এখানে অচল । আমিতো ভিজতে চাইছিলাম, একটু ভিজতে চাইছিলাম । লোকে পাগল বলে বলুক, জানালার বাইরে একটা হাত বের করে বৃষ্টির জলও ধরছিলাম । আনমনে অনুভব করছিলাম তার ছোঁয়া । জলের মতো পেলব, কোমল, স্বচ্ছ আর কি আছে? কার আছে তারই মতো বুকের ভেতরে একাধারে উষ্ণ ওম আর শীতলতা, তারই মতো কঠিন বরফ হৃদয় ! নেই । জলের মতো আর কেউ নেই । পেছনে ঘাড়টা ঘুরিয়ে যিনি জানালাটা বন্ধ করতে বলেছিলেন, তার দিকে তাকালাম । শীলার বয়েসী হবে আবার বেশীও হতে পারে । আবেগ নেই বোঝা গেল । জীবনে কোনদিন বৃষ্টির জলে ভেজেনি এমন একটা ভাব তার মুখে, আচরনে । আবেগশূন্য মানুষ দিয়ে পৃথিবীর কিচ্ছু হবেনা । নীল-সবুজ পৃথিবীটা একদিন এদেরই জন্যে হলদে বিবর্ণ হয়ে যাবে । আমি তাকে মনে মনে ক্ষমা করে দিলাম।
বললাম , স্যরি ।
শীলা ওর মতো নয় । শীলার প্রচন্ড আবেগ ছিলো । আমাকে একবার লিখেছিলো – “ সময় হলে পালিয়ে এসো ইচ্ছা ডানায় ভেসে / আমার সঙ্গে যাবে তুমি মোন খারাপের দেশে ? ” ।
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো, তক্ষুনি ডানায় ভেসে ভেসে ওর কাছে চলে যাই । হায়, আমি যদি পাখি হতে পারতাম ! কিন্তু আমি যে ওর ঠিকানা জানিনে ।
ও আমাকে ঠিকানা দেয়নি ।

ইলেকট্রনিক প্রেমে কেউ কাউকে সত্যিকার ঠিকানা দেয়না । গভীর গোপন নিষিদ্ধ প্রেমে এটুকু রহস্য না থাকলে বোধহয় জমেনা, আকর্ষন থাকেনা । তবে ইন্টারনেটে চ্যাট করতে করতে ওর একটা ছবি মেইলে পাঠিয়েছিলো প্রথমদিনেই । মিষ্টি, ভরাট একটি মুখ । চোখে তার অসীম মায়া । ভুমধ্যসাগরের মতো গভীর নীলরঙ ছিলো সেখানে । অঁরি মাতিস্‌ এর প্রিয় গাঢ়নীল এর ছোঁয়া । তার ছদ্মনামের সাথে বেশ মিল । রাঙাঠোটে একটুকরো দুষ্ট হাসি ধরা ছিলো সে ছবিতে । আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, এ মেয়ের সাথে নিষিদ্ধ প্রেমের খেলাতেও আমি যে বড়ই বেমানান । তাকে দেখে হাযার হাযার টগ্বগে তরুন যে কোনও মূহুর্তে যুদ্ধে যেতে ও রাজী হয়ে যেতে পারতো । আমার যে যুদ্ধে যাবার বয়স নেই ! আমাকে কেন যে ও বেছে নিয়েছে !
“ কুকুরের গলায় মুক্তোর মালা ” ?
নাহ্ , এ উপমাটা আমার এখানে দেয়া ঠিক হয়নি । সাধারন্যে খুব বেশী প্রচলিত । বহু ব্যবহারে মলিন, ত্যানা ত্যানা । শীলার মতো চৌকস একটি মেয়ে যাকে মালা দিয়েছে, তার জন্যে এ উপমাটা বেশ অভদ্র অভদ্র লাগছে । শীলা যদি এই লেখাটি কোনদিন পড়ে তবে দুঃখ পাবে উপমা ভান্ডারে আমার দারিদ্রতা দেখে । একটা ভালো উপমা আমি কোথায় পাবো !

আমাকে কেন যে ও বেছে নিয়েছে জানতে দেরী হয়নি । শীলা লিখেছিলো, তোমাকে দেখে আমার আর একজনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো । য়্যুনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে প্রেমে পড়েছিলাম তার । একতরফা প্রেম । আমি তাকে বলতে পারিনি কখনো ।
বোঝা গেল আমার ভেতরে শীলা তার প্রথম যৌবনের হারানো প্রেমকে খুঁজে পেতে চাইছে ! আমি এখন কি করবো ? এক গভীর দুখঃবোধে কাতর হবো ? লজ্জাবতী পাতার মতো মিইয়ে যাবো লজ্জায় ? পুরুষমানুষের জিন এর ভেতর বোধহয় হার না মানার সহজাত একটা কোড রয়েছে । ক্রোমোসোমাল ডিফেক্ট ! কারো কম কারো বেশী ।
আমি বলেছিলাম, তোমার ব্যথায় সমব্যথী হওয়া হয়তো চলে কিন্তু আমি তো তোমাকে তোমার হারানো দিনগুলি ফিরিয়ে এনে দিতে পারবোনা ।
ও রেগে গিয়েছিলো খুব । যা গেছে তা যাক, বলেছিলো সে । বর্তমানের আমাকে আর তাকে নিয়েই ভাবতে বলেছিলো । আরো বলেছিলো, আমাকে নাকি সে তার বুকের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে, তাকে ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া যেখান থেকে আমার নাকি মুক্তি নেই আমৃত্যু।
তীব্র এক সুখের নদী আমার দু’কুল ভাসিয়ে আমার সমস্ত সংস্কারকে ডুবিয়ে একাকার করে দিয়েছিলো । বন্যার জল সরে গেলে শুনেছি, মাটিতে নাকি পলি জমে। ছোটবেলায় বইতেও পড়েছি। সেখানে তরতর করে আবার নাকি জন্ম হয় গাঢ় সবুজ দূর্বাঘাস । আমার অবহেলায় ফেলে রাখা এতোদিনকার চৌচির হয়ে থাকা মাটিতে পলি জমা শুরু হলো বুঝি। সবুজ ঘাসেরা ডালপালা ছড়াতে থাকলো একে একে ।
আমি তাকে মুঠোফোনে বললাম, আমি তোমাকে খুউব ভালোবাসি শীলা ।

( চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন চার/পাঁচ দিন )

এক / (প্রথম অংশ )
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×