somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।।চিকিৎসক- রোগী: একটি জটিল মনঃস্তত্ব ।।

০৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


।।চিকিৎসক- রোগী: একটি জটিল মনঃস্তত্ব ।।

ইদানীং ব্লগে ডাক্তারদের বা চিকিৎসকদের নিয়ে কিছু কথা উঠেছে । কথা শুধু এখানেই নয়, হচ্ছে তামাম দেশ জুড়ে । আজই শুধু নয় হচ্ছে অনেক দিন ধরেই । একজন ডাক্তার এখোন আর “ঈশ্বর” নন, “কসাই” হয়েছেন । কেন ?
এই “কেন”র উত্তর কেউই খুঁজে দেখেন নি হয়তো তেমন করে । যদি দেখতেন তবে চিত্রটি অন্যরকম হতে পারতো । সাদামাটা চোখে যা দেখা যায় না তাকে দেখতে হয় গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপে । নতুবা ভুল থেকে যেতে পারে কোথাও না কোথাও । আমরা অনেকেই শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে দেশের বর্তমান চিকিৎসার হাল নিয়ে শংকিত । খুবই সঙ্গত শংকা । কিন্তু বিদগ্ধজন মাত্রই জানতে চাইবেন, অবস্থাটি এমোন কেন ? তাদের উদ্দেশ্যেই আমার আজকের লেখা ।
আপনার সুচিন্তিত মতামত এবং তার প্রয়োগ কিন্তু সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য খাতের এই হতাশ চিত্রটিকে বদলে দিতে পারে ।


চিকিৎসক- রোগী: একটি জটিল মনঃস্তত্ব ।।
আমি একজন চিকিৎসক। এবং একাধারে একজন বাংলাদেশীও বটে। চিকিৎসা পেশা হিসাবে এর অনেক খবরাখবর আমাকে জানতে হয় - রাখতে হয়। রোগীদের অনুযোগ শুনতে হয়। আবার দেশের একজন নাগরিক হিসাবে চিকিৎসা পেশার বাইরের খবরা খবরও রাখতে হয়, জানতে হয়। জনগনের পাল্স বুঝতে হয় একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে।
বর্তমান নিবন্ধে আমি কেবলমাত্র জনগন তথা রোগীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পাল্স নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে। বর্তমানে দেশে চিকিৎসার যে হালচাল অর্থাৎ ‘চিকিৎসক আর সেবা’ এদের সামগ্রিক দিক নিয়ে যে তর্কবিতর্ক আছে তাতে একটু আলোকপাত করতে চাই মাত্র। উদ্দেশ্য একটাই, এতে যদি কেউ উপকৃত হন এবং কেউ যদি কিছু সত্য উপলব্ধি করতে পারেন।

সেই আশির দশকের মাঝামাঝি দেশের দক্ষিনাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী খেপুপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ আমার প্রথম পোস্টিং হয় মেডিকেল কলেজের বাইরে। গিয়ে দেখি ওখানে আগে থাকতেই কর্মরত আমার কলিগ চিকিৎসকেরা হাসপাতালের মধ্যেই সরকারী দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রাইভেট প্রাকটিস্ করছেন অর্থাৎ ফি নিয়ে রোগী দেখছেন। বয়সে তরুণ, রক্ত গরম। স্বভাবতই সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করার একটা মানসিকতা ঐ বয়সে থাকে। সহযোগীদের বোঝালাম এটি মোটেও ঠিক নয়। এই প্রাকটিস্ বন্ধ করা উচিৎ। কোন রোগী যদি মনে করেন ‘ফি’ দিয়ে চিকিৎসা পরামর্শ নেবেন তবে আমরা তাকে বেলা দুইটার পরে অর্থাৎ সরকারী সময়ের পরে দেখবো। তারা মাথা নাড়লেন। আমি যা বোঝার বুঝলাম। হেডক্লার্ক সাজাহান মিয়াকে ডেকে তাকেও এ ব্যাপারে বুঝিয়ে বলে তার সহযোগিতা চাইলাম এই অনৈতিকতা দুর করতে। এখন হেডক্লার্ক কে কেন ডাকলাম? যারা অফিস-আদালতে কাজ করেন বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে তারা ভাল করেই জানেন যে, গ্রামে-গঞ্জে অফিস-আদালতগুলোর নেপথ্য পরিচালক হলেন ঐসব হেডক্লার্করাই। এক বিশেষ কারনে সাজাহান মিয়া আমার প্রতি দূর্বল, যেটি আমি জেনেছি ওখানে যোগদানের প্রথম দিনেই। কারনটি বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ঘটনা। সেই সাজাহান মিয়া আমাকে বললেন, স্যার আপনার অনুভূতিকে আমি সন্মান করি কিন্তু আপনি একা কি করবেন। এখানে বছরের পর বছর এই প্রাকটিস্ চলছে। রোগীরা ভাবে ডাক্তার সাহেব যদি টাকা নিয়ে চিকিৎসা নাই করেন তবে তো তিনি ডাক্তারই নন। নিশ্চয়ই চিকিৎসা জানেননা তাই “ফি” নিতে চাননা। আপনি টিকতে পারবেননা। রোগীদের কাছে আপনি অপ্রিয় হয়ে যাবেন।
অদ্ভুত ব্যাপার। “ফি” নেয়ার সাথে ডাক্তারের ভালমন্দের কি সম্পর্ক আছে ! আমি এ কথাটিকে মোটেও আমলে নিলামনা। হেডক্লার্ক সাহেবকে বললাম, ঠিক আছে অন্যরা করুক আমি ঐ প্রাকটিসে যাবনা। হেডক্লার্ক সাহেব ক্ষানিকটা সময় আমার দিকে চেয়ে থেকে বললেন ঠিক আছে স্যার। আর এ ব্যাপারে আপনার কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবেন।
তথাস্তু! এই ঘটনা আমার ওই হেলথ্ কমপ্লেক্স এ যোগদানের দ্বিতীয় দিনের। প্রথম এবং দ্বিতীয় দিনে নতুন ডাক্তার হিসাবে বেশ ভালো সংখ্যক আউটডোর রোগী দেখতে হলো। এরই মধ্যে আমি যে “ফি” নিয়ে রোগী দেখবোনা তাও প্রচার পেল। তৃতীয় দিনে আউটডোরে আমার রুমে রোগীর সংখ্যা কমলো। পাঁচ সাত দিনের মাথায় রোগীর সংখ্যা শূন্যে এসে দাঁড়ালো। তার পরের কয়েকদিন কেবল মাছি মারলাম। আমার জন্যে বরাদ্দ পিয়ন রফিককে ডেকে বললাম, ব্যাপার কি রফিক ? অন্য রুমে রোগীদের এতো ভিড় আর আমার এখানে মাছিও নেই ? রফিক ভয়ে ভয়ে আর লজ্জায় যা বললো তার মর্মার্থ এই - আমি ভিজিট নিয়ে রোগী দেখিনা বলে বিনাভিজিটের আউটডোর রোগীদেরও ধারণা আমি ডাক্তারী বিদ্যার ‘ড’ ও জানিনা। ডাক্তারী জানলে আমি পয়সা নিয়েই রোগী দেখতাম। আর তাই যারা বিনাপয়সার আউটডোর রোগী তারাও আমার মতো ‘বিদ্যা’ না জানা ডাক্তারকে দেখাতে ভরষা পাচ্ছেনা।
আমার শরীরে ঘাম দিলো। পেশাগত দ্বায়িত্বে এ পর্যন্ত অর্জিত আমার সব সুনাম এই মফস্বল শহরে এসে ডুবে যাবে ! হেডক্লার্ক সাজাহান মিয়ার কথা মনে পড়লো - রোগীদের কাছে আপনি অপ্রিয় হয়ে যাবেন। ভাবলাম চিকিৎসক হিসাবে আমার দুর্নাম হোক এটা আমি চাই কিনা। একদিকে বিবেক বোধ - নৈতিকতা অন্যদিকে কঠিন রূঢ় বাস্তব, আমার টিকে থাকা। আমিও তো শেষ পর্যন্ত মানুষ, এই ঘুনে ধরা সমাজের একজন। বাস্তবের কঠিন স্রোতে আমাকে গা ভাসাতেই হোল টিকে থাকার জন্যে।
পাঠক, ভাববেন না আমার মহত্ব তুলে ধরতেই এই গল্প ফাঁদা। এটিকে তুলে ধরলাম ডাক্তার - রোগীর মূল যে সর্ম্পক, যা মূলত মানসিক - যার সৃষ্টি পরিবেশ, ধারণা, সংস্কার ইত্যাদি থেকে তার দিকে পাঠককে ফেরাতে। ডাক্তার - রোগীর এই জটিল সর্ম্পকের কারনেই যাবতীয় তর্ক-বিতর্কের জন্ম , হাযার কোটি ডলার বৈদেশিক চিকিৎসা খাতে ব্যয় দেখে আপামর জনগনের আক্ষেপ আর চিকিৎসক সমাজের প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টি।
আমি ‘ডাক্তার - রোগীর’ এই সম্পর্কটাকে বলতে চাই ভালো মন্দে মিশিয়ে একদিকে একটি অদ্ভুত আত্মীয়তার,আবার অন্যদিকে একটি টান টান সূতোর মতোই জটিল এবং ভঙ্গুর। এই বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
আপনার বাড়ীর পাশে, আপনারই চোখের সামনে কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরী রাস্তাটি যখন বছর না ঘুরতেই খানা খন্দকে ভরে যায় আর চলাচলের অযোগ্য হয়ে পরে তখন কিন্তু আপনার কিছু যায় আসেনা। খুব বেশী হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দুর থেকেই খানিকটা গালাগালি করেন মাত্র। আর অন্যদিকে আপনার কোনও রোগীকে হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সংগত বা অসংগত, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যে কারণই থাকুকনা কেন চিকিৎসক তৎক্ষনাৎ হাজির না হলে তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলেন এমনকি চিকিৎসককে খুঁজে বের করে তার কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসতেও দ্বিধা বোধ করেননা। কেন ? কারণ রোগ-শোক, বাঁচা-মরা সৃষ্টিকর্তার হাতে থাকলেও এই একটি ক্ষেত্রে সকল স্তরের মানুষই, কি শিক্ষিত কি অশিক্ষিত সৃষ্টিকর্তার পরেই কিন্তু ভরষা করেন চিকিৎসকের উপর। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে কখনই অন্যের উপর এরকম ‘ভরষা’ স্থাপন কেউ করেন না। তাই আমি এ সম্পর্কটাকে একাধারে জটিল এবং টানটান সূতোর সাথে তুলনা করেছি। এখানে পান থেকে চুন খসলেই অমার্জনীয় অপরাধ হিসাবে গন্য করা হয়। পাঠক, ডাক্তার - রোগীর সম্পর্কের এই অধ্যায়টুকু সকল শ্রেণীকে স্মরনে রাখার জন্যে অনুরোধ করছি।
কারণ বর্তমানে ডাক্তার ও রোগী উভয়ই এই সম্পর্কের কথা ভুলে যান পরস্পরের সংস্পর্শে এলে। দীর্ঘকাল আগে এ অবস্থাটি এরকম ছিলোনা। তখন ডাক্তার রোগী সম্পর্ক ছিলো ‘ ঈশ্বর ও মানুষ’ এর মতো। এখন বিভিন্ন কারনে (যা পরবর্তীতে আলোচনা করছি) এই সম্পর্ক এসে দাঁড়িয়েছে ‘ কশাই এবং জবাই এর পশু ’ এই অবস্থায়। আপনি নিজেও এই কথাটির সমর্থনে চেচিয়ে বলবেন, ঠিক ঠিক। ডাক্তার হলো কশাই আর আমরা হলাম পশু। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন এই অবস্থার জন্যে দায়ী কোন শ্রেণীটি ? চিকিৎসক নিজে নাকি রোগী নিজে ? ব্যতিক্রম বাদে উভয় শ্রেণীই একে অপরকে দোষারোপ করবেন। এবং করেও থাকেন। কিন্তু বাস্তবে চিকিৎসকদের দিকেই ‘দোষ’ এর পাল্লাটা ঝুকে আছে। কারণ জনগনের (এখানে রোগীদের) রায়ই আসল। কিন্তু জনগন সঠিক রায়টি দিয়েছে কিনা তাও তো ভেবে দেখা দরকার।
এই ‘কশাই - পশু’ ধারণাটি কিন্তু রাতারাতি গড়ে ওঠেনি। আমার মতে এই ধারণাটি একটি দীর্ঘ বিবর্তনের ফল। এই বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় যে অনুঘটকগুলি জড়িয়ে আছে তা হলো - ১) জনসংখ্যা এবং তাদের চাহিদা ২) অর্থনৈতিক অবস্থা ৩) শিক্ষার মান ৪) দৃষ্টিভঙ্গি। এই দৃষ্টিভঙ্গি আবার সেবা না পেশা মনোভাব, প্রতিযোগিতা, চিকিৎসার সাথে জড়িত বিভিন্ন লোক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। দিন যতোই যাচ্ছে ততই এই অনুঘটকগুলির জটিলতা বাড়ছে।
আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা না করে আমি খুবই সহজবোধ্য ভাবে সবগুলো মিলিয়ে আলোচনা করতে চাই। ‘ মানুষ বাড়ছে নাফ নদীর বানের লাহান ’ একটি জনপ্রিয় নাটকের একটি লাইন। আসলেই তাই। মানুষ বাড়ছে আর তার সাথে তাল মিলিয়ে চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েছে কি ? অনেক মেডিকেল কলেজ হয়েছে সত্য তাতে কি চিকিৎসা ব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্রে বড় ধরনের পজিটিভ হেরফের হয়েছে কি ? বর্তমানে বাংলাদেশে লোকসংখ্যা অনুপাতে পাশ করা চিকিৎসকের সংখ্যা বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় কম। এ সংখ্যা নেহাৎই অপ্রতুল একথা বলবো না, বলবো এটি আসলেই এদেশের মানুষকে বঞ্চনার ও তাদের অধিকার হরনের চিত্র। তাহলে দেশের অগনিত মানুষ চিকিৎসার জন্যে শরনাপন্ন হচ্ছেন কাদের ? আপনারা যাদেরকে বলেন ‘হাতুড়ে ডাক্তার’ তারাই কিন্তু এই অনগ্রসর, অর্থনৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর ঈশ্বর। রোগে আর যে কোনও ধরনের স্বাস্থ্য পরামর্শে এরাই আমাদের আশা ভরষার স্থল। আবার এখান থেকেই শুরু হয় ডাক্তার রোগীর প্রাথমিক দন্ধের।
ব্যাপারটি খুলে বলা দরকার। এইসব গ্রামগঞ্জের চিকিৎসকদের একটি বৃহৎ অংশই কোন প্রকার শিক্ষা ছাড়াই এই পেশায় নিয়োজিত আছেন। সরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাপ্রাপ্ত যেমন প্যারামেডিক্স, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাপ্রাপ্ত রুরাল মেডিকেল প্রাক্টিশনার ইত্যাদি ছাড়া অন্যান্যদের সামান্যতম প্রাতিষ্ঠানিক মেডিকেল জ্ঞান নেই। অথচ দুবেলা রুটি ভাতের জোগাড়ে এরাই এই পেশায় নেমে পড়েছেন গুটিকয় রোগ আর ঔষধের উপর দেখে শেখা ধারনাকে পুঁজি করে। সরকার যেখানে পাশ করা ডাক্তার দিতে ব্যর্থ সেখানে এই হাতুড়ে ডাক্তাররাই ভরষা। জনস্বাস্থ্যের খাতিরে এদের নিয়ন্ত্রনের কথা বলা বিশাল জনগোষ্ঠীর সাথেই তামাশা করার শামিল। আর কিছু না হোক মানুষ তো একটু আধটু চিকিৎসা নামের সুবিধাটুকু এতে পাচ্ছে। আর এখানেই জ্ঞাতে অজ্ঞাতে কয়েক ধরনের মানসিকতা তৈরী হয়ে যাবার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
গ্রামে গঞ্জে ভুল ভ্রান্তি পূর্ণ চিকিৎসার কারনে সাধারন মানুষ চিকিৎসকদের প্রতি তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। এখানে গ্রাম গঞ্জের ডাক্তারদেরও কিছু ত্রুটি রয়েছে, তারা রোগটি নির্নয় করতে না পারলেও সহজে রোগীকে হাতছাড়া করতে চাননা অর্থনৈতিক কারনে। রোগটি যখন জটিল আকার ধারন করে তখন রোগী শরনাপন্ন হন শহুরে ডাক্তারদের। এক্ষেত্রে শহুরে ডাক্তারদের অর্থাৎ এম,বি,বি,এস কিম্বা পোষ্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের করার তেমন কিছুই থাকেনা অথবা তাদেরকে যেতে হয় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। এবং সমস্ত প্রক্রিয়াটিই তখন জটিল বলে মনে হয় সাধারন লোকদের কাছে। এতে করে গ্রাম গঞ্জের একশ্রেণীর লোকদের মনে প্রথম থেকেই বড় ডাক্তার (?) ই দেখানো উচিৎ, এরকম একটা মানসিকতা তৈরী হয়ে যায় অজান্তে । আর এইসব বড় ডাক্তারদের কাছে তাদের প্রত্যাশা হয়ে পড়ে বিশাল। আবার দেখে হোক বা শুনে হোক অনেকের এ ধারণাও জন্মে যে, বড় ডাক্তার দেখাতে অনেক টাকা লাগে। ঝামেলা বেশী। সুতরাং ঘরের কাছের হাতুড়ে ডাক্তারই সই। এতে টাকাও লাগেনা আর ঝামেলাও নেই। আরও এক ধরনের মানসিকতা তৈরী হয় এখানে অভিজ্ঞতা অথবা লোকমুখে শুনে - গ্রাম গঞ্জের ডাক্তাররা চিকিৎসা জানেনা, বড় ডাক্তার দেখাতে অনেক টাকা লাগে। তাই তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, আল্লাহ্তায়ালাই ভরষা। এরা ছোটেন ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ, পানি পড়াতেই আল্লাহ্র রহমতে রোগ ভালো হয়ে যাবে এই রকম মানসিকতা নিয়ে। এই সব মানসিকতা তৈরী হওয়ার পিছনে কাজ করে মূলতঃ অর্থনীতি, অশিক্ষা আর কুসংস্কার। এটি প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের চিত্র।
থানা পর্যায়ে চিত্র ভিন্ন। এখানে সরকারী হাসপাতাল আছে। ডাক্তার আছেন। যেটি নেই সেটি হলো - ঔষধ এবং সেবা।
এতে রোগীদের এই রকমের একটি ধারণা তৈরী হয়ে যায় যে, ডাক্তাররা ঔষধ চুরি করে বিক্রী করে খায় নইলে হাসপাতালে ঔষধ থাকেনা কেন। প্রিয় পাঠক, এখানে একজন চিকিৎসক এবং একই সাথে একজন ভূক্তভোগী হিসাবে আমার এবং সম্ভবত আমারই মতোন আরো হাজারো চিকিৎসকের বাস্তব অভিজ্ঞতা আপনাদের অবশ্যই জানা উচিৎ।

আমি একটি থানা হেলথ কমপ্লেক্স এ কর্মরত ছিলাম একথা আগেই বলেছি। সেখানে সেই ১৯৮৪/৮৫ সালের সত্যিকার চিত্র ছিল এই - প্রতি তিন মাস পরপর সেখানে সরকারী ঔষধ, পথ্য এবং আনুষাঙ্গিক বরাদ্দ আসতো প্রায় এক লাখ টাকার মতো। এতে কি থাকতো ? কাগজে কলমে যাই থাকুক, আমরা হাতে পেতাম হাজার খানেক টেট্রাসাইক্লিন ক্যাপসুল, পাঁচ শত থেকে হাজার খানেক এম্পিসিলিন ক্যাপসুল, কমবেশী প্রতিটি এক হাজার থেকে দুই হাজার করে মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট, এস.ডি.জেড ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, ক্রিমির ট্যাবলেট, ভিটামিন ইত্যাদি আরো অনেক ট্যাবলেট , সিরাপ এবং অপ্রয়োজনীয় ক্লোরোকুইন ইনজেকশন কয়েক হাযার। আরো থাকতো মশারী, গজ-ব্যান্ডেজ, তুলা, বরিক পাউডার ইত্যাদি। অর্থাৎ ঐ টাকার মধ্যেই আমাদেরকে ঐসকল জিনিস ঢাকাস্থ সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো থেকে বরাদ্দ করা হতো যা আমাদের একজন স্টোর কিপার ঢাকা গিয়ে নিয়ে আসতো। তার আসা যাওয়া বাবদ বরাদ্দ টি,এ/ডি,এ ছিল মাত্র দু’দিনের। অথচ সত্যিকার ভাবে তার লাগতো ৪/৫ দিন। কারণ ঢাকা গেলেই তাকে শুনতে হতো এখন বরাদ্দের সব মাল নেই, ৩/৪ দিন পরে আসুন। নতুবা ....... । এখন অংকটি আপনারাই বুঝে নিন। মজার ব্যাপার হলো টাকার অংকে হিসাবটি মিলানোর। একটি মশারীর দাম বরাদ্দ পত্রে লেখা থাকতো ২০০/২৫০ টাকা, যার সত্যিকার বাজার মূল্য ছিল ২০/৩০ টাকা। এই মশারীই আসতো বিশ ত্রিশ কিম্বা আরো বেশী সংখ্যায়। অপ্রয়োজনীয় ক্লোরোকুইন ইনজেকশন স্টোরে জমে জমে পাহাড় হয়ে থাকতো। দক্ষিনাঞ্চলের মতো জায়গায় এর ব্যবহারের সুযোগ ছিলোনা। ইত্যাকার অপ্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে বরাদ্দের ঐ টাকা পূর্ন করা হতো। এখন জীবন বাঁচানো ঔষধের হিসাবে আসি - যদি গড়ে হাসপাতালে আউটডোর রোগী হতো একশত তবে তাদের ৩০ থেকে ৪০% কেই দিতে হতো কোন না কোনও এন্টিবায়োটিক। তাহলে প্রায় ৪০ জন রোগীর জন্যে লাগতো টেট্রাসাইক্লিন ক্যাপসুল ৪ x ৪০ = ১৬০ টি মাত্র ১ দিনের চিকিৎসার জন্যে। ইনডোর বা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্যে এন্টিবায়োটিকের হিসাব এখানে নাই বা তুললাম। তাহলে বরাদ্দ তিন মাসের ঔষধে আমাদের চলতো কয়দিন ? দশ পনের দিন। বাকী দিনগুলো তাহলে আমরা কি করতাম ! শুনতাম রোগীরা বলছে, ডাক্তাররা ঔষধ চুরি করে খায়।
[ অবশ্য এই ব্যবস্থাটি বর্তমানে অনেকটাই নেই । জেলা শহরের সিভিল সার্জন এর দপ্তর থেকে এখোন বেশীর ভাগ ঔষধই ক্রয় করা হয় এবং তা পাঠানো হয় থানা হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে । এখানকার চিত্রের কথা কম বেশী আপনাদের ধারনার মধ্যে আছে হয়তো। ]

আর নিজেরা যা করতাম তা হলো এই - ফ্যামিলী প্লানিং এর লাইগেশন, ভ্যাসেকটমীর জন্যে ইউনিসেফ ( UNICEF ) এর বিনামূল্যে দেয়া এন্টিবায়োটিকের ষ্টক থেকে ঔষধ এনে হাসপাতাল চালাতাম। সে সময় ফ্যামিলী প্লানিং বিভাগটি স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রনে ছিলো বলেই আমরা এ কাজটি করতে পারতাম। তখন এ জন্যে ফ্যামিলী প্লানিং কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের একটা ঠান্ডা যুদ্ধ সবসময় লেগেই থাকতো।
অথচ এই সেবাটুকু প্রদান করেও চিকিৎসকদের ভাগ্যে কি জুটেছে ? চুরি করে খাওয়ার ধিক্কার। সাধারন মানুষের তো ভিতরের এই কাহিনী জানার কথা নয়। সুতরাং দোষ তাদেরও নয়। অথচ এইসব বিভিন্ন সমস্যার কারনেই রোগীদের মনে চিকিৎসক সমাজের প্রতি একটি নেগেটিভ মানসিকতা বহু বছর আগে থেকেই তৈরী হয়ে গেছে। এবং আজও আছে। কোন পক্ষই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে কখনও চেষ্টা করেছে কিনা আমার জানা নেই।
জেলা শহরে আবার অন্য চিত্র। এখানে স্বাস্থ্য সেবার আয়োজন বেশী। আয়োজন যতো বেশী, সত্যিকার এবং সুষ্ঠ নীতির অভাবের কারনে ফাঁকিও ততো বেশী। এছাড়া বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলির বিশেষ করে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের শ্রমিক অধিকারের নামে লাগামহীন আধিপত্য এবং টু-পাইস কামানোর মনোবৃত্তি চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর জনগনের অবিশ্বাস তৈরীতে বড় ভূমিকা পালন করছে। এতে একদল চিকিৎসকদের মনে এই ধারণাই গড়ে ওঠা স্বাভাবিক যে, ভালো কিছুই যখন করা যাবেনা তখন ব্যর্থ পরিশ্রম কেন ? তখনই এদের এক বৃহৎ অংশের মধ্যে সেবা প্রদানের একটি ঢিলেঢালা ভাব চলে আসছে। আর তার ছায়া পড়ছে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর। এবং সন্দেহ নেই, এর প্রকোপ দিনদিন বাড়ছে। জনগন মনে করছে সরকারী হাসপাতালগুলো হচ্ছে নরকের আখড়া। কিন্তু কারোরই দায় নেই এটা ভেবে দেখার যে, এই ছবির পেছনে রয়েছে আমাদের সীমাবদ্ধতা, সরকারী নীতিমালার অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক বিষবাষ্প এবং অপমানসিকতার মূল ক্যামেরাটি। এই সামগ্রিক আবহাওয়ার ফলে চিকিৎসকগন যেমন সেবা প্রদানে অনীহা প্রকাশে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তেমনি জনসাধারনও চিকিৎসদের প্রতি আস্থাহীন হতে শিখে গেছেন । আসলে দু’পক্ষের কেউই কিন্তু এই ধারণা তৈরীতে সরাসরি ভূমিকা রাখেননি। এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার একটি মিথষ্ক্রিয়া।

অর্থনৈতিক অবস্থাও আমাদের অনেক বিশ্রী মানসিকতার জন্ম দিয়ে থাকছে। অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের শোচনীয় হলেও দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষই রোগে-শোকে আক্রান্ত হলে যেভাবেই পারুক অর্থ সংস্থানের একটা প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। এই অর্থ সংস্থানটি হয় তার হাস-মুরগী, গরু-ছাগল বিক্রয় অথবা চাষের জমি বন্ধক রেখে। এই অর্থ সংস্থান করার পর সে চায় তার একটি রিটার্ন বা প্রতিফল। অর্থাৎ রোগটি ভালো হওয়া। কিন্তু রোগটি যে ভালো হবেই এমন গ্যারান্টি কে দেবেন এক কথায় ? সম্ভব নয়। কারন তা নির্ভর করবে রোগটির ধরন এবং সময়ের উপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই জাতীয় অর্থনৈতিক সমস্যায় ভোগা রোগী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরনাপন্ন হন একদম শেষ সময়ে। এক্ষেত্রে প্রায়ই চিকিৎসা ফলাফল মোটেও রোগীর অনুকুলে যায়না। যে আশা নিয়ে তারা অনেক ত্যাগ বা কষ্ট স্বীকার করে শহরে বড় ডাক্তারের কাছে আসেন তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশায় পরিণত হয়। আর একজন চিকিৎসক যদি আন্তরিক ভাবেও চেষ্টা করেন যে তার রোগীটি ভালো হোক সেক্ষেত্রে আজকাল আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির কারনে তাকে যেতে হয় বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় যার সবই পেতে হয় টাকা দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এই অর্থের সংস্থান করে উঠতে পারেননা। রোগটিও ঠিকমতো নির্ণিত হয়না। ফলাফল যা হবার তাই ই হয়। এক্ষেত্রে পাঠকের মনে রাখা দরকার - আজকাল রোগের ধরন, আচার-আচরন অনেক পাল্টে গেছে, রোগের প্রকার বেড়েছে, বেড়েছে জটিলতা আর তা নির্ণয়ের জন্যে বেড়েছে ল্যাবরেটরী ইনভেষ্টিগেশনের প্রয়োজনীয়তা আর তার সুযোগ। এখানেও একটি বিরাট অবিশ্বাসের প্রক্রিয়া সক্রিয়। একদল (শিক্ষিত কি অশিক্ষিত) ভাবছেন ডাক্তার সাহেবেরা অনর্থক বেশী বেশী ল্যাবরেটরী টেষ্ট দিচ্ছেন। কারণ বেশী টেষ্ট করতে দিলে টেষ্টিং ল্যাবগুলো থেকে ডাক্তার সাহেবেরা বেশী বেশী কমিশন পেয়ে থাকেন। এখানে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারটির যে সম্পৃক্ততা নেই তা এককথায় উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। ভাবনাটি ঠিক বেঠিক যা ই হোক একদল এতে ডাক্তারদের চরিত্র হনন করে চলছেন। এইসব ডায়াগনোষ্টিক পরীক্ষাগুলো সম্পর্কে আসলে রোগীদের কোনও ধারণা নেই। অশিক্ষিত বা অবুঝ শ্রেণীর ধারণা, রক্তের একটিমাত্র টেষ্ট করলেই সব রোগ ধরা পড়ার কথা। সুতরাং তাদের সন্দেহজনিত প্রশ্ন , ডাক্তার রক্তের এতোটি টেষ্ট কেন দিলো। আসলে রক্তের যে বিভিন্ন ধাঁচের কয়েক ডজন টেষ্ট আছে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্যে এটাতো রোগীর জানার কথা নয়। সুতরাং ঐ শ্রেণীর রোগীরা একটির বেশী টেষ্ট করার কথা শুনলেই অবিশ্বাসের দোলায় দুলতে থাকেন। এখানে সাধারন মানুষের রোগ-শোক এবং শরীরবিদ্যা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং অসচেতনতাই দায়ী, যা আমাদের আর্থসামাজিক এবং শিক্ষাব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একান্তভাবেই স্বাভাবিক| একজন চিকিৎসকের ঠিক এখানটাতেও একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।
পাঠক, সবার জন্যে বলছি - চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট এর সফলতা পেতে সর্বপ্রথম এবং গুরুত্বপূর্ন শর্তই হচ্ছে “কনফিডেন্স” অর্থাৎ চিকিৎসকের উপর বিশ্বাস। তাই দেখা যায় এই সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসকের উপর অবিশ্বাসের কারনে ক্ষেত্র বিশেষে একটি নেগেটিভ ধারণা তৈরী হয়ে যায় রোগীর মনে, এমনকি চিকিৎসার ফলাফলেও। আর তা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। আবার কোথাও কোথাও এই “কনফিডেন্স” এর কারনে, তা দেখেই হোক বা লোকমুখে শুনেই হোক ; কোনও কোনও চিকিৎসকের চেম্বারে লাইন লেগে থাকে। সেখানের চিত্রেও আছে কিছু তিক্ততা। সেটায় আমি পরে আসবো।
এখানেও আছে অর্থনৈতিক অবস্থার ভূমিকা। যারা চিকিৎসকের “ফি” আর ল্যাব টেষ্টের খরচ যুগিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন তাদের দু’টি রাস্তা খোলা থাকে। এক, রোগী ভালো হলে ( যেটি রোগের ধরনের কারনেও হতে পারে যা আপনা আপনি ভালো হয়ে যায় সময়ের ব্যবধানে অথবা চিকিৎসকের বিচক্ষনতার কারনেও হতে পারে ) চিকিৎসকের সুনাম করেন। দ্বিতীয়টি, রোগী ভালো না হলে চিকিৎসকের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করা। দেশের সব চিকিৎসকদের কশাই আখ্যা দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানো।
এই দ্বিতীয়টি বেশী বেশী পরিমানে ঘটছে বলে সারা দেশের চিকিৎসক সমাজের উপর একটি অনাস্থা (যার সবটাই আসলে চিকিৎসকদের প্রাপ্য নয়) তৈরী হয়ে গিয়েছে জনগনের ভিতরে। আর যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন না তাদের ভেতরে অন্যরকম মানসিকতা জন্ম নেয়। তারা অন্যদের মধ্যে ভুল ধারনা ছড়ায় এই বলে যে, এদেশের ডাক্তাররা মোটেও চিকিৎসা জানেনা। এই এত্তোগুলি টাকা খরচ করলাম আমার রোগীকে ভালো করতে পারলো না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা আসল সত্যটি ( অর্থনৈতিক অক্ষমতার কথাটি ) প্রকাশ করেন না। এটা স্বাভাবিক, মানুষ নিজের অক্ষমতা বা দোষ স্বীকার করতে চায়না কিছুতেই। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায় এবং তা ডালপালা ছড়ায়।
এর বিপরীতে আবার কিছু রোগী আছেন যারা আবার ল্যাবরেটরী টেষ্ট না দিলে ডাক্তারের উপর আস্থা রাখতে পারেন না। তাদের ধারণা , ল্যাবরেটরী টেষ্ট করা ছাড়া ডাক্তারসাহেব সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন কি ভাবে ? অথচ অনেক রোগ আছে যাদের ক্লিনিকাল সাইন সিম্পটম দেখেই বোঝা যায় ল্যাবরেটরী টেষ্টের প্রয়োজন পরেনা। এজাতীয় রোগীদের বোঝানো বা তাদের আস্থা অর্জন করা বেশ কঠিন।
সকল রোগীদের আস্থা অর্জন চিকিৎসকদের জন্যে তার পেশার একটি অংশ। ডাক্তারদের একটি হাদিসের বই আছে “হাচিনসন’স ক্লিনিকাল প্রাকটিস অব মেডিসিন”। তাতে একজন চিকিৎসক কি কি ভাবে রোগ নির্ণয় করবেন এবং রোগীকে ‘হ্যান্ডল’ করবেন তার বিশদ বর্ননা আছে। মোটামুটি ভাবে তা এরকম - রোগীর নিজ মুখে তার নিজস্ব ভাষায় রোগের সকল বর্ণনা শোনা, রোগটির ইতিহাস জেনে নেয়া, অন্য কোন রোগের পূর্ব ইতিহাসের খোঁজ নেয়া, রোগীর পেশা সম্পর্কে ধারণা নেয়া, রোগীর পারিবারিক ইতিহাস নেয়া, রোগীর সাথের লোকজনের কাছ থেকে রোগীর দেয়া বর্ণনার সত্য-অসত্য যাচাই করে নেয়া; যা কিছু এতোক্ষন শোনা হলো প্রশ্ন করে তা যাচাই করার সাথে সাথে শারীরিক লক্ষনগুলো দেখা এবং বিশদ শারীরিক পরীক্ষা করা, রোগীর পেশা এবং সামাজিক আচার আচরনের সাথে এইগুলোর সম্পর্ক নির্ণয় করা, সব মিলিয়ে সন্দেহভাজন রোগগুলির একটি তালিকা করা,এবার ল্যাবরেটরী টেষ্ট এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সন্দেহভাজন রোগগুলির মধ্যে থেকে সঠিক রোগটি নির্ণয় করা, রোগীকে তার রোগটি এবং তার গতিপ্রকৃতি সর্ম্পকে পূর্ণাঙ্গ ধারনা দেয়া, এই ক্ষেত্রে রোগীর করনীয় কি তা রোগীকে বুঝিয়ে বলা, রোগটি নির্মূল করতে বা তাৎক্ষনিক ভাবে সারিয়ে তুলতে ব্যবস্থাপত্র দেয়া, রোগীকে আশ্বস্ত করা, রোগ পরবর্তী রোগীর পূনর্বাসনের ব্যবস্থা বলে দেয়া ইত্যাদি।
সত্যিকার চিকিৎসার খাতিরে ও রোগীর আস্থা অর্জনে এই প্রক্রিয়াগুলোর ভেতর দিয়ে অবশ্যই একজন চিকিৎসককে যেতে হবে। দুঃখের বিষয় এই যে, এখানে চিকিৎসকদের ঘাটতি বা গ্যাপ রয়েছে প্রচুর। আর এই গ্যাপটি দিন দিন বাড়ছেই বেশ কিছু কারনেই। এই গ্যাপটুকুর কারনেই বাজারে প্রচলিত ধারণাটি এই- “আমাদের দেশের ডাক্তাররা একদম কশাই, কথা শুনতেই চায়না। অথচ বিদেশের ডাক্তাররা কতো আন্তরিক, কি মধুর তাদের ব্যবহার। এদের কথা শুনলে রোগ আগেই অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। কি সুন্দর ভাবে সব বুঝিয়ে বলে।” এক্ষেত্রে দায়ী একমাত্র চিকিৎসকরা নিজেরাই। কারণ একজন চিকিৎসককে অবশ্যই রোগীর কথা রোগীর নিজের ভাষাতেই শুনতে হবে তা সে যতোক্ষন ধরেই তা বলুক না কেন। তারপরে চিকিৎসক রোগীর কথার সত্যাসত্য যাচাই করবেন বিভিন্ন আঙ্গিকে, তাকে শারীরিক ভাবে পরীক্ষা করবেন এবং সম্ভাব্য রোগটি নির্ণয় করবেন। চুড়ান্ত নিস্পত্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসককে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তারপরেই হবে চুড়ান্ত রোগ নির্ণয় বা ফাইনাল ডায়াগনোসিস। এরপরে চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট এবং আনুষাঙ্গিক।
এই প্রক্রিয়াটুকুতে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা কেন যেতে পারেন না ?
এর কারণ নানাবিধ। নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়; সত্যিকার শিক্ষার অভাব; ধৈর্যের অভাব; আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার প্রতিযোগিতার সংস্কৃতি ইত্যাদি। চিকিৎসক সমাজ এটাকে স্বীকার করুক আর নাই করুক, বাস্তবতা হলো এই। এসবই কিন্তু দীর্ঘকালের অব্যবস্থাপনার ফল। একক ভাবে কেউ দায়ী নয় হয়তো। প্রত্যেকে প্রত্যেক কে অনৈতিক হতে সাহায্য করেছে বা বাধ্য করেছে নিজের অজান্তেই।
আমাদের দেশের বড় বড় ডাক্তার, প্রচলিত অর্থে যাদের চেম্বারে একশো দেড়শো কিম্বা তারও বেশী রোগীর লাইন পড়ে থাকে সেখানের চিত্র কি , কেনই বা চিত্রটি আপনি যে ভাবে দেখছেন সে রকম ? কিন্তু চিত্রটি তৈরী হওয়ার পেছনে আছে আমার আগে বলা সূত্রটি - রোগে শোকে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিৎ। শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক কারা ? এখানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর প্রফেসর শ্রেনীর চিকিৎসকবৃন্দ এক নম্বরে আছেন। এরপর শ্রেণী ভেদ অনুযায়ী। জ্ঞানে এবং একাডেমিক শিক্ষায় এরা প্রথম শ্রেণীর সন্দেহ নেই। কিন্তু একজন “চিকিৎসক” হওয়া ভিন্ন জিনিষ। আমার সমগোত্রীয়রা একথা শুনে হয়তো আমাকে মারতেই আসবেন। তাদের জন্যে বলছি, আগে উল্লেখিত “হাচিনসন’স” বইটির কথা মনে করুন। সেখানে আপনি নিশ্চয়ই পড়েছেন, কি ভাবে একজন চিকিৎসককে এগুতে হবে ? আসলে সে ভাবে আমাদের চিকিৎসক সমাজ এগুচ্ছেন কি ? হাতে গোনা কিছু সম্মানিত , বিরল চিকিৎসক ছাড়া বাকী সবার চেম্বার একবার ঘুরে আসুন। এক মাস থেকে দুই মাস আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে রোগী দেখানোর সিরিয়াল পেতে। ততোক্ষন কি রোগটি বসে থাকবে ? প্রতিদিন একশো’র বেশী রোগী দেখা এখন স্ট্যাটাস সিম্বল চিকিৎসকদের জন্যে। এবার ভাবুন, আসলেই এখানে একজন জ্ঞানী চিকিৎসকের পারদর্শীতা দেখানোর কি আছে ? তিনি প্রতিটি রোগী দেখার জন্যে সময় পাচ্ছেন সর্ব্বোচ্য মাত্র ৩ থেকে ৪ মিনিট। এ সময়টুকুতে রোগীর কি শোনা বা দেখা সম্ভব ? কিছুই না। তাহলে এই চিকিৎসকের চেম্বারে ভীড় কেন ? এই ভীড়ে নতুন মুখ আর পুরানো মুখের ছবি দেখলেই উত্তরটি আপনি জেনে যাবেন। এই প্রসঙ্গে বাস্তব উদাহরন দিতে চাই চিত্রটি বোঝার জন্যে যা বাহুল্য হবেনা। বর্তমানে আমি “জিপি” হিসাবে প্রাকটিস্ করে থাকি। “প্রায়ই” বলা যাবেনা, মাঝে মাঝে কিছু রোগী আসেন কথা বলার জন্যে। এরা একটা প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দেন, ডাক্তারসাহেব এটা একটু দেখেন। নেড়ে চেড়ে দেখি। কোনও বড় (?) ডাক্তারসাহেবের প্রেসক্রিপশন। বলি, দেখলাম এখন কি করবো ? রোগীর ভাষ্য- পাচঁ’শ টাকা ভিজিটের ডাক্তার দেখালাম, হাযার হাযার টাকা পরীক্ষায় খরচ করলাম। অনেক ঔষধ খেলাম অথচ আমার রোগ তো ভালো হলোনা। আপনি বলেন আমার কি হয়েছে। বলি, আপনার ডাক্তারসাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করেন নাই আপনার কি হয়েছে ? রাগ, ক্ষোভ আর একটা অসহায় মুখে রোগী বলে, ডাক্তারসাহেবের সাথে তো কথাই বলা যায় না। ডাক্তারসাহেবের কথা শোনার সময় কই ? রোগীর যে ভীড়। সেই বিকেল তিনটা থেকে বসে সিরিয়াল আসতে আসতে রাত্র নয়টা। প্রথমে এ্যাসিস্টান্ট আমার অসুবিধার কথা একটা কাগজে লিখলো। ডাক্তার ....... বাচ্চা আমার কিছুই শুনলোনা, এ্যাসিস্টান্ট কি কি বললো আর ......... পুতে এত্তোগুলো পরীক্ষার কথা লিখে দিলো। চারদিন পরে আবার রিপোর্ট নিয়ে গেলাম। বললো কিছু হয় নাই। ঔষধ লিখে দিলো আর দুই’শ টাকা রেখে দিলো। ডাক্তার সাহেব এবার আপনিই এটা (প্রেসক্রিপশন) দেখে বলেন আমার কি হয়েছে। বলি, আপনার কি হয়েছে সেটা কি আমার বলার কথা। আমার মতামত শুনতে হলে তো আমার প্রাপ্য ফি আপনাকে দিতে হবে।
রোগী - আপনার কয় টাকা ভিজিট ?
ফি এর পরিমানটা বলি। এর পরের কথোপকথন বেশ মজার।
রোগী : ভিজিট ছাড়া বলতে পারবেননা ?
আমি ঃ আমি কেন ভিজিট ছাড়া বিনা পয়সায় আপনাকে পরামর্শ দিতে যাবো ?
রোগী ঃ তা হলে আপনি কি মানুষ না ? ডাক্তার হয়েছেন কোনও দয়া মায়া নেই? ডাক্তার হয়েছেন তো মানুষের উপকার করার জন্যে।
আমি ঃ (মুচ্কি হেসে) আপনাদের কি ধারণা, আমরা ফেরেস্তা ? আমাদের ভাত খেতে হয়না ? আপনার বড় ডাক্তার সাহেব ও তো মানুষ ছিলো। এই বললেন হাযার হাযার টাকা খরচ করেছেন, কিছূই লাভ হয় নাই। এখন আমাকে আমার ভিজিটের সামান্য কয়টা টাকা দিতে পারবেন না ? আচ্ছা ঠিক আছে, কত আছে ?
রোগী ঃ টাকা থাকলে তো বড় ডাক্তারের কাছেই যেতাম। টাকা নেই বলেই তো আপনার কাছে আসা। সরকার আপনাদের কতো টাকা খরচ করে ডাক্তার বানিয়েছে মানুষের সেবার জন্যে। আপনারা .... ইত্যাদি ইত্যাদি।
পাঠক, এই হলো অধিকাংশ চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আরেক ধরনের সম্পর্কের ধ্যান ধারণার চিত্র। আমাদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা, জ্ঞান-বুদ্ধি ও সর্বোপরি বিবেচনার দৈন্যতা রোগীকে একজন চিকিৎসকের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে দেয়ার অনুঘটক। এটি যখন দেশের ব্যাষ্টিক পরিধিতে চিত্রিত হয় তখন দেখা যায় চিকিৎসক ও রোগী পরস্পরের অনাস্থা আর অবিশ্বাসের পাত্র হিসাবে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছেন।
চিকিৎসকদের প্রতি রোগীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ; চিকিৎসকরা রোগীদের কথা শোনার সময় পান না, কেবল ফি এর দিকেই তাদের নজর। ভালো করে দেখেন না বলেই ভুল ডায়াগনোসিস হয়। বিদেশে গেলেই আমাদের ডাক্তারদের অজস্র ভুলগুলো ধরা পরে। এবং এখানকার খরচের তুলনায় অর্ধেকেই আসা যাওয়া আর পুরো চিকিৎসা হয়ে যায়। বিদেশে চিকিৎসা সুযোগ গ্রহণকারী অধিকাংশেরই আক্ষেপ আর ক্ষোভ এ ভাবেই প্রকাশিত হয় - “আমাদের দেশের ডাক্তাররা আমার রোগীকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল”।
তাহলে প্রশ্ন , আমাদের চিকিৎসকেরা কি আসলেই অযোগ্য ? আমরা এই অভিযোগগুলোর সত্যি-মিথ্যা একটু খতিয়ে দেখি।
ডাক্তাররা রোগীদের কথা শোনার সময় পান না, কথাটি (ব্যতিক্রম বাদে) একেবারেই ঠিক। পাবেন কি ভাবে? যিনি রোজ পঞ্চাশের উর্দ্ধে রোগী দেখেন তার পক্ষে কোনও রোগীকেই সর্ব্বোচ্য পাঁচ মিনিটের বেশী সময় দেয়া সম্ভব নয়। এই যে এতো রোগী দেখা এবং সময় দিতে না পারা, এটি কি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত ? অনেকের হয়তো এ ব্যাপারটিতে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা বা মত থাকতে পারে , আমি আমার ধ
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×