somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুদ্ধতম পরকীয়া (উপন্যাসিকা)

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশনার পর )
চতুর্থ অধ্যায় / (শেষ অংশ)

পরেরদিন সকালে অফিসে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম রোজকার মতো । দু’টো মৃদু মৃদু ধ্বনি ভেসে এলো আমার মুঠোফোন থেকে । যা ভাবছিলাম তাই । এ সময়টাতে একমাত্র শীলা ছাড়া আর আমাকে এসএমএস করার কেউ নেই । শীলা ই । শীলার এসএমএস । লিখেছে, “দ্য বিউটি অব লাইফ ডাজন্ট ডিপেন্ড অন হাউ হ্যাপী য়্যু আর…. বাট হাউ হ্যাপী আদারস ক্যান বি …. বিকজ অব য়্যু .. গুড মর্নিং” ।

শীলার এমোন কথার কি অর্থ করবো আমি ? আমার জন্যেই সে কি সত্যিকারের সুখী ভাবতে শুরু করেছে নিজেকে ? নইলে একথা লিখলো কেন সে ! যে মেয়ে আমাকে বলতে পারে “তোমাকে ছেড়ে আমি কি করে যাই বলো” সে মেয়ে তো এমোনটা লিখতেই পারে ! আমি যে আরো গভীর ভাবে বাঁধা পড়ে গেলাম ওর কাছে । এটাকে কি আমার “পরকীয়া” অর্থেই পরকীয়া ভাবা উচিৎ নাকি আরো গভীর কোনও ভালোবাসার অতল আহ্বান !
সমুদ্রের অতলে আলোহীন নীল জলের ভেতর সাতরঙা প্রবালের যে দ্যুতি খেলা করে যায় সোনালী মাছেদের গা’য়ে; তেমনি কায়াহীন এক ভালোবাসা আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে গেল যেন । আমি যেন শীলা নামের এক অদৃশ্য মেয়ের হৃদয়ের গভীর গোপনে মুখ ডুবিয়ে খুঁজে পেলাম এক দিঘী তৃষ্ণার জল । শীলার মানবী শরীর, তার কায়া ছাড়িয়ে এক অশরীরি শীলা যেন উঠে এলো আমার কাছে । এ অনুভব আমার জপের মালাটি হয়ে থাকুক । আমার সব ।

অফিসে যেন উড়ে এলাম । বড় ইচ্ছে হলো, ওর সাথে কথা বলি । আমি কখনও ওকে আগ বাড়িয়ে ফোন করিনি যদি ওকে কোনও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলি কিম্বা ওর সাংসারিক কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে ওকে অন্যমনষ্ক করে তুলি এই চিন্তা থেকে । আজও এটা ভেবে বিরত থাকতে হলো । এ এক অন্যরকম ভালোবাসা । তীব্র অথচ মধুর সংযম ভালোবাসাকে গাঢ় রসেই সিক্ত করে , ব্যতিব্যস্ত করে তরল করে ফেলেনা । হাতে কাজ ছিলো বেশ, কাজের মধ্যেই ডুব দিতে হলো । এর মধ্যেই শীলার ফোন, “অফিসে পৌঁছেছ, ব্যস্ত ?”
ভেসে গেলাম । কাব্যিক হয়ে উঠতে ইচ্ছে হলো, বললাম – “যব রাত আঁয়ে তো নিদ আঁয়ে / যব নিদ আঁয়ে তো খাঁব আঁয়ে / যব খাঁব আঁয়ে তো তুম আঁয়ে / আওর যব তুম আঁয়ে তো নাহ নিদ আঁয়ে, নাহ খাঁব আঁয়ে ।।
“তুমি কবি হয়ে উঠলে যে” শীলার গলায় আহ্লাদী আমেজ ।
“কি করবো বলো ? এই যে তুমি এলে, কাজ থাকুক একদিকে পড়ে, পৃথিবী অন্যদিকে । কবি হয়ে ওঠা তো এখোন শুধু আমাকেই মানায় ।”
“তুমি তো আমাকে পাগল করে দেবে……” শীলার কন্ঠে ভেজা বসন্ত খেলা করে যায় ।
কথা হয় অনেকক্ষন । কবিতা থেকে ওর ঘর-গৃহস্থালীতে কথাকে নিয়ে যাই সন্তর্পনে । যাতে শীলা, একজন পরস্ত্রী-একজন মা , না ভেবে বসে নিষিদ্ধ এক খেলায় মেতে আছে সে । এ বোধ থেকে তাকে ফেরাতে চাই আমি, অসীম ভালোবাসায় । আমি জানি, আমার ভালোবাসায় কোনও অশুচি নেই, নিষেধের গন্ধ নেই, প্রচলিত পরকীয়ার শরীর নেই । প্লেটনিক ভালোবাসার মতো তার অবয়ব । কঠিন বটে কিন্তু একেবারেই অসম্ভব নয় । তাই স্বাভাবিক বন্ধুর মতো তার ঘর-সংসারের কথা জিজ্ঞেস করি । কি রান্না করছে সে এখোন, জিজ্ঞেস করি তাও । হাসিতে ভেঙে ভেঙে কথারা এগোয় । পৃথিবীর সব ভালোবাসা উজার করে আমরা দু’জন অন্যরকম এক খেলায় মেতে উঠি ।
শেষমেশ হাল ছাড়ে শীলা – “তুমি কি আমাকে কোনও কাজ করতে দেবেনা, সোনা ? আমার কি তোমার প্রশ্নের জবাব দেয়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই ?” প্রশ্রয়ী শাসন ওর গলায় ঝরে পড়ে বৃষ্টির শব্দের মতো ।
হিমাদ্রী শিখরে সূর্য্যের আলো লেগে যেমন বরফ গলে গলে পড়ে , আমার ভেতর এক কিশোর হৃদয়ও তেমনি করে গলে গিয়ে আদ্র হতে থাকে । কানে বাজে শীলার কথাটিই – “আমার কি আর কোনও কাজ নেই ?” যেন জন্ম-জন্মান্তরের অধিকার নিয়ে আমার চপলতাকে দুষ্টু শাসন করা তার । এ পাওয়াকে আমি কোথায় রাখি !

লাঞ্চ সেরে শীলার সাথে সকালে বলা কথাগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে মুঠোফোনের অডিওতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছিলাম চোখ বুজে । এমোন সময় পি পি করে শব্দ তুলে মুঠোফোনের গান বন্ধ হয়ে গেল । কারো এসএমএস । এই এক ঝামেলা, জিপি অফার অথবা সরকারী মেসেজ , দিন নাই ক্ষন নাই – গভট ইনফর্মেশান… বা জিপি অফার । গানের বাটনে হাত লাগাতে গিয়েই থমকে গেলাম । শীলার মেসেজ । হঠাৎ আবারো শীলা । পড়লাম । শীলার প্রতিটি মেসেজই যেমন হৃদয়ে উন্মাতাল ঝড় তোলে এটিও তাই । এবার ঝড় নয়, তান্ডব –
“ ম্যায়নে হাওয়া কো এক মেসেজ দিয়া / উও হাওয়া ঝুমতি হুয়ি বাদল কি পাস গ্যায়ী / আউর মেরা মেসেজ বাদল কো দে দিয়া / আউর ও বরসনে লাগা / গিরনে ওয়ালী হর বুন্দ সে আওয়াজ আঁয়ি “আই মিস য়্যু” ।।”
আমি এখোন কি করি ! “আই মিস য়্যু” এই কথাটি যেন কাল বোশেখীর তান্ডবের মতো আমার নাজুক হৃদয়খানাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গেল । আমার প্রচন্ড ইচ্ছে হলো শীলাকে একবার দুচোখ ভরে দেখি । হায় যদি দেখতে পেতাম ! শুধু লিখলাম, “ তোমার মতোন এই এতোটুকু এক মেয়ে এতো শক্তি কোথায় পেলে ?” উত্তর এসেছিলো ঝটপট, “ সে আমার প্রেম ” ।

আজ ইচ্ছে করেই দেরীতে বাসায় ফিরলাম । ফুল্লরা একবার শুধু জানতে চাইলো দেরীর কারন । পথের গাড়ী-ঘোড়ার জ্যামের কথা বলে এড়াতে চাইলাম । “সে তো প্রতিদিনই থাকে” - ফুল্লরার গলায় কি একটু অবিশ্বাসের ছোঁয়া ! ফুল্লরাও কি আমাকে মিস করছে ? ওর জন্যে বুকের ভেতর থেকে উঠে আসতে চাইলো একরাশ মমতা-ভালোবাসা । যে ভালোবাসার স্রোতে আমি ভেসে যাচ্ছি তেমন ভালোবাসার স্রোতে ফুল্লরাকেও ভাসিয়ে নিতে ইচ্ছে করলো । বিশুদ্ধ ভালোবাসার স্পর্শ তো এমনি করে ভালোবাসতেই শেখায় । আদর করে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম ফুল্লরার তীর্যক দৃষ্টির দিকে চোখ পড়তেই । ভেতরের ধেঁয়ে আসা ভালোবাসা যেন একটা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল ।
“এককাপ চা দেবে ?” ফুল্লরার দিকে তাকাই । ফুল্লরা মেয়েকে ডাকে, তোর বাবাকে এককাপ চা করে দে তো । জিনিয়া খুব ব্যস্তসমস্ত হয়ে দৌড়ে এলো ।
“বাবা, আর একটু পরেই তো খেতে বসবে, এখোন চা খাওয়ার দরকার কি ? আমি এখোন ব্যস্ত বাবা । তুমি একটু নিজে নিজে করে খাওনা ।” আদুরে ঢঙে বলতে বলতে জিনিয়া নিজ ঘরের দরজার ওপারে । চা খাওয়া একটা অজুহাত মাত্র । ইচ্ছে ছিলো ফুল্লরাকে নিয়ে একটু বসি, ছেলেমেয়েরা থাকলে আরো ভালো । কতো কিছু যে সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে ! দেশের কথা, রাজনীতির কথা, নিজের কথা, অফিসের, বাইরের, ঘরের কথা । সারা বিশ্বে কোথায় কি ঘটেছে তার কথা, মানুষের কথা, কবিতার কথা, সবুজ গা-গ্রামের কথা । ফুল্লরার ভরা যৌবনে, ছেলেমেয়েরা যখোন ছোটো ছোটো ছিলো কত কথাই তো একজোটে বসে করেছি আমরা । ওপানটি বাইস্কোপ এর মতো বাপ-ছেলেমেয়ে পরপর কোমড় জড়িয়ে টেবিল চেয়ার এর চারদিকে ঘুরে ঘুরে গান গেয়েছি – আজ জোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে..... । খুব কি বুড়িয়ে গেছি আমরা এখোন ! অতি বাস্তবতা কি আমাদের ভেতরের নরম মোমের মতো কোমল নান্দনিকতাকে চটের দেয়ালের ওপারে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে ? যেখান থেকে ফাঁক-ফোকড় দিয়ে পিছনের দিনগুলির ছবি ছেঁড়া ছেঁড়া, অস্পষ্ট দেখা যায় ?
গল্পের মতো দিনগুলো ফুরিয়ে গেলো এতো তাড়াতাড়ি ? কি দোষে আমরা নত হয়ে আছি প্রাত্যহিকতার কাছে ?
দিনের রং মুছে গেলে সব পাখি ঘরে আসে । শূন্য একটি নীড় যেন অপেক্ষায় থাকে কারো । একটি গল্পের জন্যে কিশোরী রাত তরুনী হতে থাকে ধীরে ধীরে । আকাশের আঙ্গিনা থেকে নেমে আসে এক “আর্টেমিস” আলোর দেবী । অন্ধকারের মাঝেও যে রাত্রিবাসে নীল সবুজের আলো জ্বেলে বসে থাকে । যার দেখার চোখ আছে শুধু সে ই দেখতে পায় ।
এমোন একটি মরমী সন্ধ্যার জন্যে আর কতো অপেক্ষা মানুষের !

(চলবে..... অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন)

চতুর্থ অধ্যায় / (প্রথম অংশ)
Click This Link

চতুর্থ অধ্যায় / (দ্বিতীয় অংশ)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×